প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর শহরের বাবুরহাটে আমার জন্ম। বাবুরহাট প্রাইমারি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করি। পরে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিকে ভর্তি হই। ১৯৯৩ সালে আমি চাঁদপুর সরকারি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে এবং ১৯৯৬ সালে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। আমরা হলাম, চাঁদপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। যেহেতু আমরা কলেজের অনার্স প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী, স্বাভাবিকভাবেই নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে আমরা শিক্ষাগ্রহণ করি। তবে শিক্ষকদের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় কোনো সীমাবদ্ধতা আমাদের পড়ালেখা বিন্দুমাত্র ছেদ পড়েনি। কারণ শিক্ষকরা আমাদের তাদের সন্তানদের মতো পড়িয়েছেন। সে সময় ছোট্ট একটি কক্ষে আমরা পাঠগ্রহণ করতাম। পাশাপাশি একটি কক্ষে ব্যবহারিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা হতো। এককথায় বলা যেতে পারে, সহপাঠী ও শিক্ষকরা মিলে ছোট্ট পরিবারের মতো ছিলাম আমরা। ডিপার্টমেন্টের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে আমাদের শিক্ষকরা নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছেন। এজন্যে আমরা শিক্ষকদের কাছে ঋণী।
ছাত্রজীবনে আমাদের বন্ধুত্বের পরিধি ছিলো বিশাল। প্রায় প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো। তাই আমরা শিক্ষাজীবনটা খুব উপভোগ করেছি। বর্তমানে যেখানে ভলিবল গ্রাউন্ড রয়েছে এখানে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিলো। এ গাছের নিচে আমরা আড্ডায় মেতে উঠতাম। সে স্মৃতি কখনো ভোলার নয়।
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে অমায়িক কিছু সহপাঠী পেয়েছি। যাদের সাথে বহু স্মৃতি রয়েছে। প্রিন্স, মাহবুব, টিটু, মুহিব, জাবের, আরমান, কামরুল ও মামুন নামে বন্ধু পেয়েছি। যারা সরকারি বিভিন্ন পদে দায়িত্বসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
আসাদুল হাসনাত স্যার, সুশীল কুমার নাহা ও ইকবাল স্যার আমার ভীষণ প্রিয়। তাদের স্নেহ-আদর পেয়েছি। আগেই বলেছি, আমরা যেহেতু কলেজের প্রথম ব্যাচ, সেহেতু স্যারদের আদরও পেয়েছি বেশি। নানা সঙ্কটের মধ্য দিয়ে আমাদের পড়াশোনা করতে হয়েছে। কিন্তু স্যাররা আমাদের সে সঙ্কট কখনোই বুঝতে দেননি।
আমরা যখন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে পড়ি, তখন অনেকেই এ বিভাগটিকে ভালো দৃষ্টিতে দেখেনি বলেই আমি মনে করি। কিন্তু বর্তমানে সে দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। অন্যান্য বিভাগের চেয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান বহুগুণ এগিয়ে। প্রতি বছর এ বিভাগ থেকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন হচ্ছে।
উদ্ভিদ আমাদের জীবনেরই অংশ। উদ্ভিদ ছাড়া প্রাণের সঞ্চার হয় না। স্বভাবতই জীবনের প্রয়োজনে উদ্ভিদবিজ্ঞান পড়া উচিৎ বলে আমি করি। মানবজীবনে উদ্ভিদের যে প্রয়োজনীয়তা তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে আমরা ‘প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিষদ’ গঠন করেছি।
আমাদের ডিপার্টমেন্টে পুনর্মিলনীর আয়োজন করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। দীর্ঘদিন থেকে এমন পরিকল্পনা মাথায় ছিলো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিসহ পারিপার্শ্বিক কারণে তা বিলম্ব হয়েছে। কিন্তু মোহাম্মদ কামরুল হাছান (বর্তমানে ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক) এবং প্রাক্তন ছাত্র এইচএম জাকিরের আগ্রহ ও আন্তরিকতায় আমরা পুনর্মিলনীর আয়োজন করতে পেরেছি। এ পুনর্মিলনীর ফলে ডিপার্টমেন্টের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের পুরোনো দিনের স্মৃতি মনে পড়েছে। আনন্দণ্ডউচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেছে, এতেই আমাদের সার্থকতা।
সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রত্যাশা, চাঁদপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান একটি পরিবার। পরিবারে আমরা সবাই এক। আমাদের বন্ধন চির অটুট থাকুক। প্রত্যেকেই ভালো পড়াশোনার মাধ্যমে ডিপার্টমেন্টের সুনাম অর্জনে মনোযোগী হতে হবে। সবসময় শিক্ষকদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে ও সহপাঠীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
মোঃ কাউছার আহমেদ সোহাগ : আহ্বায়ক, পুনর্মিলনী উদ্যাপন পরিষদ; সাবেক শিক্ষার্থী।
অনার্স শিক্ষাবর্ষ ১৯৯৬-১৯৯৭।