প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
আধুনিক শিক্ষাক্রমের প্রবক্তা Ralph Tylor ১৯৫৬ সালে শিক্ষাক্রমের একটি ধারণা দেন। এর মূল কথা হচ্ছে-‘শিক্ষার্থীদের সকল শিখন যা শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিদ্যালয়ের দ্বারা পরিকল্পিত ও পরিচালিত হয় তাই শিক্ষাক্রম।
(All the learning of students which is planned and directed by the school to attain its educational goals.) তিনি চারটি প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষাক্রমের ধারণাটি স্বচ্ছ করার চেষ্টা করেন। প্রশ্নগুলো হচ্ছে (ক) শিক্ষা কী কী উদ্দেশ্য অর্জন করবে (খ) কী কী শিখন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিদ্যালয় উল্লেখিত উদ্দেশ্য অর্জন করবে (গ) এ সকল শিখন অভিজ্ঞতা কী উপায়ে সংগঠন ও বিন্যাস করা যাবে এবং (ঘ) উদ্দেশ্যগুলো অর্জিত হয়েছে কি না তা কীভাবে যাচাই করা যাবে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য-বিষয়বস্তু-সংগঠন-মূল্যায়ন এই চার স্তর মডেল বলা হয়ে থাকে টেলরের ধারণাকে। ১৯৭০ সালে Mauritz Johnson বলেন, ÒCurriculum is concerned not with what students will do in the learning situation, but with what they will learn as a consequence of what they do. Curriculum is concerned with results. ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) শিক্ষাক্রমের একটি ধারণ প্রদান করে। এতে শিখন-শেখানো প্রক্রিয়াকে প্রাধ্যান্য দেয়া হয়। এখানে বলা হয়, A curriculum is an educational project defining: (a) the aims, goals and objectives of an educational action; (b) the ways, means and activities employed to achieve these goals; (c) the methods and instruments required to evaluate the success of the action.
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর তৃতীয় বছর থেকেই অতি উচ্চাশা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ পাঁচ থেকে আট বছরে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ২০২১ সালে এসেও আমরা এ শিক্ষার মেয়াদ অধিকাংশ দেশের মতো ষষ্ঠ শ্রেণিতেও উন্নীত করতে পারিনি। এটিকে কি বলবো-বাস্তবতা না আমাদের অপারগতা? প্রাথমিক শিক্ষা এখনও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত থাকার ফলে মাধ্যমিক স্তরের ব্যাপ্তি হয়েছে সাত বছর। এখানে উল্লেখ্য যে, মাধ্যমিক স্তর কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। সেটিও আমরা আজ পর্যন্ত ঠিক করত পারিনি। কারণ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিকে আমরা কলেজ বানিয়ে আলাদা শিক্ষক্ষেত্র তৈরি করে রেখেছি। এগুলো শুধুমাত্র একাডেমিক সিদ্ধান্ত নয়, এর সাথে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একাডেমিক সিদ্ধান্ত যারা নিতে পারেন, মতামত দিতে পারেন তাদের তো আর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা নেই। তাই বিষয়টি অবহেলিত কিংবা সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যেই রয়ে গেছে। সাত বছরের মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর আবার তিনটি উপস্তরে বিভক্ত : নিম্ন মাধ্যমিক তিন বছর (৬ষ্ঠ থেকে ৮ম), মধ্য-মাধ্যমিক (আমরা একে শুধু মাধ্যমিক নামে ডাকি। দু বছর (৯মণ্ড১০ম শ্রেণি) এবং উচ্চমাধ্যমিক (১১-১২ শ্রেণি) দু বছর। আধুনিক বিশ্বের সব দেশেই ১৭-১৮ বছরের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ এই তিনটি স্তরে বিন্যস্ত।
স্তুরগুলোর ব্যাপ্তিও প্রায় সমান (৫ থেকে ৭ বছর)। অস্ট্রেলিয়ার মতো যেসব দেশে একশ্রেণির প্রাক-প্রাথমিক (যাকে জিরো ইয়ার নামে ডাকা হয়) শিক্ষা ছয় শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একীভূতি, সেসব দেশে মোট সাত শ্রেণির প্রাথমিক, ছয় শ্রেণির মাধ্যমিক এবং পাঁচণ্ডছয় বছরের উচ্চশিক্ষার ব্যপ্তি (৭+৬+৫) একটি সুন্দর পিরামিডের আকৃতি ধারন করে। আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে যদি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত করা যেতো, বাকি সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক তাহলে অনেক ঝামেলাই চুকে যেতো। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আর একটি শ্রেণি বৃদ্ধি করলে শিক্ষকদের পাঠদানেও খুব একটা সমস্যা হতো না, ইনফ্রাস্ট্রকাচারেও খুব বেশি একটি খরচ হতো না। আর সপ্তম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তো আমাদের একটি মডেল ইতিমধ্যে আছে-যেতন ক্যাডেট কলেজ। এভাবে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও তারপর উচচশিক্ষা-এই তিনটি স্তরে বিভক্ত করা হলে বৈশ্বিক শিক্ষাস্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো।
আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার প্রান্তিক যোগ্যতা ধরা হয়েছিলো ৪৯টি। এটিও সম্ভবত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাকে ধরে করা হয়েছিলো। বর্তমানে এগুলোকে কমিয়ে ২৯টি করা হয়েছে। যেমন-(১) সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা/সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসস্থাপন, সকল সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসায় উদ্দীপ্ত হওয়া। (২) নিজ নিজ ধর্ম প্রবর্তকের আদর্শ এবং ধর্মীয় অনুশাসন অনুশীলনের মাধ্যমে নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন করা (৩) সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্দীপ্ত ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া। (৪) কল্পনা, কৌতুহল, সৃজনশীলতা ও বুদ্ধির বিকাশে আগ্রহী হওয়া (৫) সংগীত, চারু ও কারুকলা ইত্যাদির মাধ্যমে সৃজনশীলতা, সৌন্দয্যচেতনা, সুকুমারবৃত্তি ও নান্দনিকবোধের প্রকাশ এবং সৃজনশীলতার আনন্দ ও সৌন্দর্য উপভোগে সামর্থ্য অর্জন করা। (৬) প্রকৃতির নিয়মগুলোর জানার মাধ্যমে বিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করা (৭) বিজ্ঞানের নীতি ও পদ্ধতি এবং যৌক্তিক চিন্তার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের অভ্যাস গঠন এবং বিজ্ঞানমনস্কতা অর্জন করা (৮) প্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা ও প্রয়োগের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা (৯) বাংলাভাষার মৌলিক দক্ষতা অর্জন এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা (১০) বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষার মৌলিক দক্ষতা অর্জন ও ব্যবহার করা (১১) গাণিতিক ধারণা ও দক্ষতা অর্জন করা (১২) যৌক্তিক চিন্তার মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারা (১৩) মানবাধিকার, আন্তর্জাতিকতাবোধ, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বসংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া (১৪) স্বাধীন ও মুক্তচিন্তায় উৎসাহিত হওয়া এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুশীলন করা (১৫ নৈতিক ও সামাজিক গুণাবলি অর্জনের মাধ্যমে ভালো-মন্দের পার্থক্য নিরূপন এবং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা (১৬) ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও সংরক্ষণে যত্নশীল হওয়া (১৭) বিশেষ চাহিতসম্পন্ন শিশুসহ নারী-পুরুষ, জাতি-ধর্মণ্ডবর্ণ নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের মানসিকতা অর্জন করা। (১৮) অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার মাধ্যমে ত্যাগের মনোভাব অর্জন ও পরমসহিষ্ণুতা প্রদর্শন ও মানবিক গুণাবলি অর্জন করা। (১৯) সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং নিজের দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া। (২০) প্রতিকূলতা ও দুর্যোগ সম্পর্কে জানা এবং তা মোকাবেলায় দক্ষ ও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া। (২১) নিজের কাজ নিজে করা এবং শ্রমের মর্যাদা দেয়া। (২২) প্রকৃতি, পরিবেশ ও বিশ্বজগত সম্পর্কে জানা ও ভালোবাসা এবং পরিবেশের উন্নয়ন ও সংরক্ষণে উদ্ধুদ্ধ হওয়া। (২৩) আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবিলায় ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণে সচেষ্ট হওয়া। (২৪) মানুষের মৌলিক চাহিদা ও পরিবশের ওপর জনসংখ্যার প্রভাব এবং জনসম্পদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা। (২৫) শরীরচর্চা ও খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধন এবং নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করা। (২৬) নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস গঠন করা। (২৭) মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত হওয়া এবং ত্যাগের মনোভাব গঠন ও দেশ গড়ার কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা। (২৮) জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা এবং এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। (২৯) বাংলাদেশকে জানা ও ভালোবাসা। প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাদান, মূল্যায়ন এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা কি এগুলো নিশ্চিত করতে পারছে।
প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির স্তরের একটি মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুদের পড়তে, লিখতে ও অনুসন্ধান করতে শেখাকে নিশ্চিত করা। শিশুরা যেহেতু এই স্তরেও ঠিকমতো মুক্ত পাঠের দক্ষতা অর্জন করেনা তাই এই স্তরের মূল শিখন-শেখানো সামগ্রী হচ্ছে শিক্ষক নির্দেশিকা। শিক্ষক নির্দেশিকাতে উল্লিখিত নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন খেলা, কাজ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখন যোগ্যতাসমূহ অর্জন করবে। বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক নির্দেশিকার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী ওয়ার্কবুক, পাঠ্যপুস্তক, সম্পূরক পঠন-সামগ্রী, চার্ট ও কার্ডের উন্নয়নসহ খেলনাসামগ্রী, অডিও-ভিজ্যুয়াল ও বিভিন্ন উপকরণ প্রচলন করা প্রয়োজন সেটি আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি? কে করবেন এগুলো? প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনে এর সঠিক উল্লেখ ও দায়িত্ব বণ্টন করা আছে কি না সেটিও দেখার বিষয়। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক ও আবেগ-অনুভূতির বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্মবোধে, বিজ্ঞানমনস্কতায়, সৃজনশীলতায় ও উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্ধুদ্ধ করা। প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় হচ্ছে শিশুদের পরবর্তী শিখনের জন্যে প্রস্তুতিমূলক পর্ব, প্রাথমিক হচ্ছে ভিত্তি, মাধ্যমিক হচ্ছে সামাজিকীকরণ, উচ্চ মাধ্যমিক হচেছ বিশেষায়নের জন্য প্রস্তুতি আর উচ্চশিক্ষা হচ্ছে বিশেষায়ন পর্যায়। এই উদ্দেশ্যগুলো দেখলে মনে হয় আমাদের শিক্ষার এত স্তর ও উপস্তর ঠিক আছে-কিন্তু আমাদের মেলাতে হবে বৈশ্বিক স্তর ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে। আমাদের দেশের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যখন বলে যে, আমরা কলেজে পড়ি তখন বাইরের যে কোন দেশ মনে করবে তারা স্নাতকের শিক্ষার্থী। আসলে বিষয়টি তো তা নয়। আবার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যখন বলে যে, আমরা হাইস্কুলে পড়ি তখন অনেক দেশেই সেটিকে মনে করা হবে নবম/দশম/একাদশ শ্রেণি। এই বিষয়গুলোকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুবিন্যস্ত করা প্রয়োজন।
যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের মূল কৌশল হচ্ছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক সক্রিয় শিখন-যা শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদান প্রক্রিয়া বা সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষার্থী বিভিন্ন কৌশলে শ্রেণিকক্ষে, বিদ্যালয়ে, বাড়িতে, নিকট পরিবেশে বিভিন্ন কার্যক্রম ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখন সম্পন্ন করে নির্ধারিত যোগ্যতাসমূহ অর্জন করে। এরূপ নানাবিধ শিখন শেখানো কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনা করতে হলে পর্যাপ্ত শিখন সময় থাকা প্রয়োজন তবে তা শুধু শ্রেণিকক্ষভিত্তিক নয়। বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রমে শিখন সময়কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
ইউনেস্কোর শিক্ষাক্রম পরিভাষায় শিখন সময়ের বিভিন্ন পরিভাষা ও তার ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। যেমন : কনট্যাক্ট পিরিয়ড বলতে শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সক্রিয় শিখন শেখানো সময়কে ধরা হয়েছে। ইন্সট্রাকশনাল টাইম বলতে সেই নির্দিষ্ট সময়কে বোঝানো হয়েছে যেখানে শ্রেণিকক্ষে বা ভার্চুয়াল পরিবেশে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছ থেকে সরাসরি শিখনের জন্য সহায়তা পেয়ে থাকে। আবার শিখন সময় বলতে সেই নির্দিষ্ট সময়কে বিবেচনা করা হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে কোনো শিখন-সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত থাকে অথবা কার্যকর শিখনে নিবিষ্ট থাকে। বর্তমান যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম উদ্দেশ্যভিত্তিক শিক্ষাক্রমে বিধৃত উদ্দেশ্যাবলির ওপর প্রধান তিনটি উপাদান অতিরিক্ত যুক্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ১) মাস্টারি লার্নিং অর্থাৎ শিক্ষণীয় বিষয়ের পুরোটা শেখা ২) শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় সব শিক্ষার্থীর বিচিত্র চাহিদার প্রতি খেয়াল রাখা যা অন্তর্ভুক্তি নামে পরিচিত এবং ৩) শিখনকালীন অবিরত মূল্যায়নের মাধ্যমে সব শিক্ষার্থীর প্রয়োজনমতো নিরাময় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার সময় শিক্ষক যদি এসব শর্ত মেনে চলেন তবে এ স্তরে ‘সিস্টেম লস’ অনেক কমানো সম্ভব। এসব অর্জন করতে হলে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশ কম হতে হয় যাতে শিক্ষক প্রত্যেক শিক্ষার্থীর চাহিদার প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন, কিন্তু সেটি কিভাবে ও কতটা পালিত হচ্ছে সে খবর কি আমরা রাখতে পারছি?
মাছুম বিল্লাহ : শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক।