শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২১, ০০:০০

শিক্ষকতার প্রথম দিন ছিলো রোমাঞ্চকর
অনলাইন ডেস্ক

কামাল হোসেন। তিনি চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে কর্মরত রয়েছেন। দায়িত্ব পালন করছেন সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে। সম্প্রতি শিক্ষাঙ্গনের মুখোমুখি হন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফিরোজ আলম।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?

কামাল হোসেন : আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষকতা পেশায় কিভাবে এলেন?

কামাল হোসেন : মানুষের জীবনের একটা লক্ষ্য থাকেই। কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কেউ আইনজীবী অথবা আর সব পেশা গ্রহণ করে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখে থাকে। আমি দেখলাম যে, এইসব পেশার লোকজনসহ সব শ্রেণি পেশার লোকজনকে তৈরি করে দেন শিক্ষকরা। অথচ এই শিক্ষকতায় আসে তারাই যারা অন্য কোনো পেশায় যাওয়ার সুযোগ পায় না। এজন্যে ভাবলাম এই পেশাকে জীবন গড়ার মাধ্যম করে নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুস্থ আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বিনির্মাণ উপযোগী নাগরিক সৃষ্টির মহান কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করাটাই উত্তম। এছাড়া আমি মনে করি শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। মানব জাতির পথ প্রদর্শকরা প্রত্যেকেই ছিলেন এক একজন মহান শিক্ষক। সেই চিন্তা-ভাবনা থেকেই আমি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষক হিসেবে প্রথমদিন কেমন লেগেছিল?

কামাল হোসেন : উহ্ দারুণ। আমার কাছে সেদিন মনে হয়েছিল আমি যেন নতুন করে অনেক কিছু শেখার সুযোগ নিয়ে শ্রেণিকক্ষে পুনরায় প্রবেশ করতে যাচ্ছি। তো প্রথম দিন হিসেবে আমার যতটুকু জড়তা থাকার কথা ছিল ইনশাআল্লাহ আমার তা ছিল না। আমি সবকিছু বুদ্ধিমত্তার সাথে সামলে নিয়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছিলাম। এ যেন আমার নিকট এক রোমাঞ্চকর ঘটনা।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার ছাত্র জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।

কামাল হোসেন : আমার ছাত্রজীবন খুব একটা সুখকর ছিল না। বাবার বড় সংসার। আমাদের আট ভাই-বোনের সংসার সামলিয়ে আমার লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহ করার মত যোগান তিনি দিতে পারতেন না। অনেকটা নুন আনতে পান্তা ফুরানোর ঘটনার মতনই আমার ছাত্রজীবন। তবে বাবা মা পাঠাতেন তা যথাযথ ব্যয়ের মাধ্যমে কষ্টের সাথে আমার লেখাপড়া চালিয়ে যাই। আমার মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া সম্পন্ন করি যশোর দাউদ ক্যান্ট পাবলিক স্কুল থেকে। তারপরই এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ের লেখাপড়া সম্পন্ন করি চাঁদপুর সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করি জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে। তারপর শিক্ষকতা পেশায় এসে আনন্দের সাথে পেশাগত ডিগ্রি বিএড ও এমএড অর্জন করি ঐতিহ্যবাহী ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে। পেশাগত ডিগ্রি অর্জনকালে আমি স্বাবলম্বি ছিলাম বলে আনন্দের সাথে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলাম। ফলস্বরূপ উভয় পরীক্ষাতেই আমি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করতে পেরেছিলাম।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা এবং বর্তমান সময়ের শিক্ষাব্যবস্থায় কী পার্থক্য লক্ষ করছেন?

কামাল হোসেন : পার্থক্য তো যথেষ্ট রয়েছে। পাঠ্যসূচিতে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে নিঃসন্দেহে। আমাদের সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ের পাঠ্যসূচি অনেকটা যুগোপযোগী। বিশেষ করে গণিত, বিজ্ঞান বিষয়সমূহ বিশ^মানের পাঠ্যসূচিতে সাজানো হয়েছে। আইসিটির মত একটা যুগোপযোগী বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার সুযোগ সুবিধাও হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। আমরা পুরাতন বই দিয়ে যেখানে লেখাপড়া করতাম বর্তমানে সেখানে ছেলেমেয়েরা বছরের প্রথমেই নতুন বই হাতে পেয়ে যায়। উপবৃত্তি কার্যক্রম চালু হওয়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। জনগণ আগের তুলনায় অনেক সচেতন। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। কম্পিউটার ল্যাব, সমৃদ্ধ বিজ্ঞানাগার, উন্নত পাঠাগার এসব প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে যা আমাদের সময় তেমনটি ছিল না। শিক্ষকদের জীবন মানেরও উন্নতি হয়েছে, বেড়েছে পেশাগত দক্ষতাও। প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাতেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তা-সত্ত্বেও অনেক কিছু করার বাকি। শিক্ষকদের মন-মানসিকতায় আনতে হবে যুগোপযোগী পরিবর্তন। মানবিক আচার-আচরণ সমৃদ্ধ শ্রেণি ব্যবস্থাপনার অভাব পরিলক্ষিত হয়। এতে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। কাজ করতে হবে ক্রমহ্রাসমান মানবিক মূল্যবোধ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি শিক্ষামন্ত্রী হলে যে তিনটি কাজ করতেন তা কী কী?

কামাল হোসেন : আমার তো শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এই মুহূর্তে দেখছি না। তবে আপনার কথামত যদি কোনোদিন সেই সুযোগ পাই আমার প্রথম করণীয় হবে বৈষম্যমূলক শিক্ষার অবসান ঘটিয়ে একমুখী জীবননির্ভর বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা। দ্বিতীয়ত, যে কাজটি আমি করব তা হচ্ছে শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের হাত থেকে রক্ষা করা। তৃতীয়ত, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে শিক্ষা সার্ভিস কমিশন গঠন করে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতাম এবং তাদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে বিশ^মানের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতাম।

চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষার্থীদের জন্যে খেলাধুলা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

কামাল হোসেন : ‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন’ প্রবচনটি যথার্থ। আর এই সুস্থ দেহ অর্জনের জন্য খেলাধুলার বিকল্প নেই। খেলাধুলার মাধ্যমে নিত্য শরীরচর্চার কাজটি সম্পন্ন হয়। শরীরচর্চা সুস্থ দেহ গঠনের পূর্বশর্ত। শিক্ষার্থীর মন মানসিকতায় পারস্পরিক সহমর্মিতা-সহনশীলতা সৃষ্টি করে এই খেলাধুলা। শরীরচর্চার মাধ্যমে সুস্থ দেহ গঠনের সাথে সাথে সুস্থ মনেরও বিকাশ ঘটে। শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশ সাধনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। খেলাধুলায় শিক্ষার্থীকে অন্যায় কাজ থেকে দূরে রাখে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার বিদ্যালয় সম্পর্কে কিছু বলুন।

কামাল হোসেন : আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ বিদ্যামান। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত। তা সত্ত্বেও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়ানোর অবকাশ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে সৌহার্দ্যমূলক ভাব বিদ্যমান। প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের সাথে শিক্ষক-কর্মচারীদের সুসম্পর্ক বিরাজমান। দলীয় উপদলীয় কোন্দলমুক্ত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এলাকার জনশিক্ষা বিস্তারে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবক এবং ব্যবস্থাপনা পরিষদের মধ্যে আন্তঃসুসম্পর্ক বিরাজমান। এখানে সংশ্লিষ্ট সকলে একটি সুসংগঠিত টিমের সদস্য হিসেবে নিজ নিজ দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে থাকে। শিক্ষার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা এখানে বিদ্যামান। শিক্ষার্থীদের জীবন-মান উন্নয়নে এ প্রতিষ্ঠান নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। আমি আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ববোধ করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রিয় ছাত্র কারা?

কামাল হোসেন : একজন বাবার নিকট তার সব ছেলেমেয়েই প্রিয়। তা সত্ত্বেও কথা থাকে। আর যে কথাটি থাকে তা প্রকাশযোগ্য নয়। কেননা ওটা প্রকাশ পেলে ভাইবোনদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। তবে যে ছেলেটি বা মেয়েটি বাবার আদেশ-নির্দেশ সর্বশক্তি দিয়ে মেনে চলে, সে নিশ্চয়ই বাবার কাছে সর্বাধিক প্রিয়। আমার বেলায় সব শিক্ষার্থীই আমার নিকট সমান স্নেহ-মমতা পাওয়ার দাবিদার। তা-সত্ত্বেও যারা শ্রমে মননে শৃঙ্খলার অধীনে জাতির জন্য একজন প্রতিশ্রুতি নাগরিক হওয়ার সংগ্রামে নিয়োজিত আছে তারা সবাই আমার প্রিয়।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সময় দেয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।

কামাল হোসেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়