প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
শিক্ষা নিয়ে, শিক্ষার প্রয়োজন নিয়ে এবং গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে অনেক আলোচনা করা দরকার, লেখালেখি করা দরকার, কথা বলা দরকার। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সবাই সবকিছু নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। সব কিছু নিয়ে কথা বলার সমস্যা আমাদের আছে। আমরা সবাই সবকিছু বুঝতে চাই, কথা বলতে চাই। টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে তাকালে আমাদের এই সমস্যা ভালোভাবে চোখে পড়ে। এতে করে শুধু কথাই বলা হয়, কোনো কিছুই আর ঠিকমতো করা হয় না। বিষয়ের সমগ্র রূপটা বোঝা যায় না; দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কর্মযজ্ঞের পটভূমিতে এবং বৈশি^ক পরিস্থিতির আলোকে কোনো বিষয়ই স্পষ্ট রূপ পরিগ্রহ করে না। এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয়েছে শিক্ষায়। আমাদের সমাজে এই পরিস্থিতিা বেশ ভালো বোঝা যায় যদি আপনি কারো কাছে আপনার অসুস্থতা নিয়ে কথা বলেন। তিনি আপনাকে একগাদা ডাক্তারি পরামর্শ দিয়ে দেবেন এবং ঔষদের প্রেসক্রিপশন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করবেন না। আত্মীয়তান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থার এই হলো ঐতিহাসিক সমস্যা। আপনজন হিসেবে কিংবা শুভাকাক্সিক্ষ হিসেবে তিনি এইসব পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু ক্ষতির দিকটা তিনি বিবেচনা করছেন না। বুঝতে চাচ্ছেন না যে, ডাক্তার ছাড়া স্বাস্থ্যগত পরামর্শ দেওয়ার যোগ্যতা ও অধিকার অন্য কেউ রাখেন না। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকলেও এ কাজের জন্য রাষ্ট্র তাদেরকেই প্রস্তুত করেছে এবং অসুখ-বিসুখে তাদের পরামর্শ নেওয়াই আমাদের কর্তব্য।
আমাদের দেশে শিক্ষার পরিস্থিতিাও তথৈবচ, বলা যায় আরও নাজুক। ডাক্তারি বিদ্যার মতো শিক্ষাও যে একটি বিজ্ঞান এবং এই বিজ্ঞানে পারদর্শী না হলে কথা বলার, আলোচনা করার, লেখালেখি করার অধিকার তৈরি হয় নাএই বিষয়টি আজও আমরা বুঝতে পারিনি, অনুভব করতে পারিনি। এমন কি একজন শিক্ষকও যে শিক্ষা নিয়ে কথা বলতে পারেন না তা কিছুতেই আমরা মানতে নারাজ। কারণ বিষয়টা এমন যে, শিক্ষা নিয়ে কথা তো শিক্ষকরাই বলবেন। অথচ শিক্ষকতা একটি জ্ঞানকা-ের বিষয় আর শিক্ষাবিজ্ঞান অন্য জ্ঞানকা-ের অন্তর্গত। একজন শিক্ষক গণিত পড়াতে পারেন, সাহিত্য পড়াতে পারেন কিংবা অন্য কোনো বিষয়। এর মানে এই নয় যে তিনি শিক্ষাতত্ত্ব নিয়ে কথা বলবেন। কারণ গণিত বা সাহিত্যের মতো শিক্ষাতত্ত্বও আলাদা একটি বিষয়, একটি বিজ্ঞান। এই জ্ঞানে যার পড়াশোনা নেই, পা-িত্য নেই তিনি শিক্ষা নিয়ে কথা বললে ভুল বলবেন, ভুল তথ্য সরবরাহ করবেন। তবে যে কোনো শিক্ষক শিক্ষাতাত্ত্বিক বা শিক্ষাবিদ হতে পারেন কিংবা জীবনে কোনো দিন শিক্ষকতা না করে বা শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে কোনো সংশ্রব না রেখেও শিক্ষতাত্ত্বিক বা শিক্ষাবিদ হতে বাধা নেই। কিন্তু শিক্ষকমাত্রই যে শিক্ষাতাত্ত্বিক নন, শিক্ষাবিদ নন এই বাস্তবতা এদেশে অধিকাংশ মানুষ বুঝতে চান না। অবস্থা এমন হয়েছে যে, শিক্ষকতা করেন, সাহিত্য-সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করেন কিংবা নানাভাবে পরিচিত হয়েছেন তাকেই আমাদের দেশে শিক্ষাবিদ বলে অখ্যায়িত করা হয়। তিনি নিজেও শিক্ষাবিদ সম্বোধন শুনতে পছন্দ করেন। গোড়ায় যদি এত বড় গলদ থাকে তা হলে শিক্ষার কী অবস্থা? পরিচয়ের এই সংকট শিক্ষাবিভাগ ছাড়া আর কোথাও আছে কি না তা আমার জানা নেই। আর এই সংকটের জন্য আমাদের দেশে শিক্ষাতাত্ত্বিক তৈরি হয়নি, শিক্ষাবিদ তৈরি হয়নি। কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের খ্যাতিমান শিক্ষকগণ শিক্ষাবিদ হয়ে বসে আছেন আর তারাই নির্ধারণে করেন যে, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কী হবে। এদের অধিকাংশই দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সাহিত্য-গবেষক, প্রাবন্ধিক, গণিতের শিক্ষক, পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক ইত্যাদি। এই সব শিক্ষকদের ভেতরে দু-একজন শিক্ষাতাত্ত্বিক থাকলেও তাদের তেমন কোনো প্রভাব শিক্ষার ক্ষেত্রে কখনোই পরিলক্ষিত হয় না।
রোগীরা যেমন অনেক সময় রোগ চিহ্নিত করতে পারেন কিংবা ডাক্তার রোগ সম্পর্কে রোগীর কাছ থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেন, তেমনি শিক্ষকতার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ঠ আছেন সেই শিক্ষকগণ শিক্ষার অনেক সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে জানেন এবং প্রতিনিয়ত সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হন। সুতরাং একজন রোগীর মতোই তিনি কিছু ধারণা দিতে পারেন। শিক্ষা সম্পর্কে ওইসব তথ্যাদি খুই গুরুত্বপূর্ণ। সে সব তথ্য শুধু যে শিক্ষকরাই দিতে পারেন তা নয় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অন্যান্য পেশার মানুষের কাছ থেকেও শিক্ষা সংক্রান্ত ভাবনা সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। কিন্তু শিক্ষা নিয়ে কাজ করবেন মূলত শিক্ষাবিদগণ, শিক্ষতাত্ত্বিকগণ।
ইতোমধ্যে অনেকটা সময় আমরা পার হয়ে এসেছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে জাতি আর জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “সুষ্ঠু সমাজ-ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাখাতে পুঁজি বিনিয়োগের চাইতে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর হতে পারে না।” শিক্ষার দিকে তাকালে দেখব মানুষ কতা তাৎপর্যের সঙ্গে ওই বাণী হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছেন। এখন অভিভাবকগণ কষ্ট হলেও তার সন্তান-সন্তুতিকে পড়াশোনা করানোর জন্য টাকা ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। আর সেই সঙ্গে আছে সরকারের বিচিত্রমুখী পরিকল্পনা ও প্রণোদনা। বিশেষ করে নতুন শিক্ষাবছরের শুরুতে নতুন পাঠ্যপুস্তক বিনা মূল্যে শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়ায় ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় গতি সঞ্চারিত হয়েছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে দেশের সর্বত্র শিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার হার যেভাবে বেড়েছে তার কোনো তুলনা হয় না। তা হলে সমস্যা কোথায়?
সমস্যাটা চর্মচক্ষে দেখার মতো নয়। কিছু রোগ রোগী দেখতে পান, রোগীর আপনজনেরা দেখতে পান আর ডাক্তার তো দেখতে পানই। কিছু রোগ শুধু ডাক্তার দেখতে পান, রোগী কিংবা অন্য কেউ দেখতে পান না। আর কিছু রোগ আছে কেউই দেখতে পান না। শুধু অনুভব করতে পারেন। শিক্ষার অনেক সমস্যাই চর্মচক্ষে দেখা যায়। কিছু দেখেন শিক্ষক, কিছু দেখে শিক্ষার্থী এবং কিছু দেখেন অভিভাবক আর কিছু দেখেন সবাই। যা দেখা যায় না, শুধু অনুভব করা যায় তা কিন্তু সবাই অনুভব করেন না। কারণ অনুভব করার জন্যও শক্তি থাকা দরকার। আর ওই দেখাটা দেখতে পারেন একজন নিষ্ঠাবান শিক্ষাতাত্ত্বিক। শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকার যে বিপুল গুরুত্বারোপ করেছে তার সাফল্য দেখতে হলে শিক্ষাতাত্ত্বিকদের শরণ নেওয়া দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশে তেমন কোনো শিক্ষাতাত্ত্বিক তৈরি হয়নি।
শিক্ষা দুই ধরনের মানুষ তৈরি করে। এক ধরনের মানুষ সৃষ্টিশীল আর অন্য ধরনের মানুষ দরকারী। সমাজে কোন ধরনের মানুষ বেশি প্রয়োজনÑসৃষ্টিশীল মানুষ নাকি দরকারী মানুষ সেই বিতর্কে যাব না। কবি, কথাসাহিত্যিক, লেখক, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, বিজ্ঞানীÑমোটাদাগে এরা হলেন সৃষ্টিশীল মানুষ। আর বাকি সবাই প্রয়োজনের মানুষ এবং এরাই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এদের বসবাস। এবং সারা পৃথিবীতে শিক্ষার আয়োজ হয় মূলত এদের কথা বিবেচনা করে। আর সেই বিবেচনাটাই আলোচ্য।
একটা সময় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার লক্ষ্য ছিল জ্ঞান আহরণ। পাঠ্যপুস্তক নির্ভর জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করাই ছিল পড়াশুনার লক্ষ্য। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে তো বটেই সারা পৃথিবীতেই ছিল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার এই লক্ষ্য। শিক্ষকগণই ছিলেন সে সময় সর্বেসর্বা। শিক্ষার্থীদের মেরে-কেটে মানুষ করাই ছিল তাদের দায়িত্ব। এবং সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা কতা নিষ্ঠুর আচরণ করতেন তার পরিচয় আছে শীবনাথ শাস্ত্রীর লেখা রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ নামক গ্রন্থে। ডেবিড কপারফিল্ড নামক উপন্যাসেও তার কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। আরও কত গল্প-উপন্যাসে, প্রবন্ধে, গবেষণা, স্মৃতিচারণায় যে সে সময়ের নির্মম শিক্ষাব্যবস্থার পরিচয় আছে তার ইয়ত্তা নেই। ওই শিক্ষাব্যবস্থা এখনো পৃথিবীর অনেক দেশে আছে এবং এমনকি আমাদের দেশেও আছে। আইন করে শির্ক্ষাীদের শারিরিক শাস্তি বন্দ করা হয়েছে। দরকার ছিল বলেই বাইরে থেকে এই বিধান চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর জন্য শিক্ষকগণ প্রস্তুত ছিলেন না এবং আজও তাদের অনেকেই প্রস্তুত হননি। এই জন্য শারিকি ও মানসিক শাস্তিহীন শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কৃতি এখনো তৈরি হয়নি। তারপর দুর্বিনীত, উচ্ছৃখল, অমনোযোগী এবং নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু-সুন্দর বিকাশের জন্য স্কুলে কোনো কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা নেই। ফলে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীকে সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে পাঠদানের পরিবেশ অনেক প্রতিষ্ঠানেই বিঘিœত হচ্ছে। এমন পরিবেশে এখনো শিক্ষকগণই সর্বেসর্বা। তাদের অনেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুর মতো, পথপ্রদর্শকের মতো, দার্শনিকের মতো, শুভাকাক্সক্ষীর মতো, আপনজনের মতো সম্পর্ক তৈরি করে শিক্ষার একটি অত্যন্ত আনন্দদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারেননি। পৃথিবীর অনেক দেশে শিক্ষাদান এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কে বিপুল পরিবর্তন সাধিত হলেও আমাদের দেশে এই পরিবর্তন অতি সামান্য। মূলত শিক্ষাক্রম ও তা বাস্তবায়নে কোনো একটি দেশ কতা আধুনিকতার পরিচয় দিতে পারল তার উপর নির্ভর করে একটি দেশের শিক্ষা দান ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের বনিয়াদ।
আমাদের শিক্ষাক্রম ও শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধিত কাদের দ্বারা তৈরি হয়েছে তার ইঙ্গিত ইতোমধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। খ্যাতিমান বিশ^বিদ্যালয়ের খ্যাতিমান প-িতদের দ্বারা, বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা তৈরি হয় আমাদের দেশের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক। এদরে সঙ্গে স্কুল-কলেজের যে সব শিক্ষকগণ থাকেন তারা আদিষ্ট হয়ে কাজ করেন। সুতরাং সেই শিক্ষাক্রমে ও পাঠ্যপুস্তকে যাই থাকুক না কেন তার বাস্তবায়নে আমরা কী দেখতে পাই? গত অর্ধ শতকে কোথায় কোথায় আমাদের পরিবর্তগুলো হয়েছে? বিশেষ করে স্বাধী দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাকে আশ্রয় করে যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং বিজ্ঞানী কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে যে শিক্ষাক্রম রচনা করেছিলেন শুধু সেই শিক্ষাক্রমের আলোকেই যদি বিষয়টি বিবেচনা করা হয় তা হলেই বা আমাদে অগ্রগতি কতটুকু? কাউকে বা কিছুকে দোষারোপ করে নয়Ñখুব বস্তুনিষ্ঠভাবে এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। শিক্ষকদের হাত থেকে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক শিক্ষাবিজ্ঞানী ও শিক্ষাতাত্ত্বিকদের অধিকারে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীল নাগরিক ও নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য এবং রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একটি শিক্ষাবিজ্ঞানীর কর্মসংস্কৃতি তৈরি করা জরুরি। বৈশি^ক পরিস্থিতিতেও তারা যেন যোগ্যতার পরিচয় রাখতে পারে সেই দিকটিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, তারা যেন মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। দেশপ্রেম, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িক জীবনাদর্শ, সংস্কৃতিমনস্কতা, রুচি ও সৌন্দর্যবোধে তাড়িত হয়ে তারা যেন জীবনযাপন করতে পারে তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে শিক্ষকদের ভূমিকার কথা আমার অনেক লেখায় বলেছি। এখানে বলতে চাই যে, পাঠ্যপুস্তক ও ফলাফল নির্ভরতা আমাদের শিক্ষাব্যস্থাকে প্রভূত ক্ষতিসাধন করছে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফলাফল নির্ভরতা থেকে কী করে অন্য কোনো পদ্ধতিতে নিশ্চিত করা যায় তার ব্যবস্থা করা এখন খুবই জরুরি। আমাদের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে যদি তথাকথিত ভালো রেজাল্ট করার সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে না পারি। ভালো রেজাল্টের গুরুত্ব পৃথিবীর সব দেশেই আছে। আমাদের দেশেও থাকুক। কিন্তু তার পটভূমি আলাদা। অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ভালো রেজাল্ট অনিবার্য নয়। সুতরাং রেজাল্ট নয়Ñচাই লার্নিং, চাই ভালো মানুষ।