সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

শিক্ষা জাতীয়করণের গুরুত্ব
মাছুম বিল্লাহ

বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের ১৭টি সংগঠনের মোর্চা ‘এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট’ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেছে ১০ জানুয়ারি থেকে। ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর এ মোর্চার নেতারা সরকারের কাছে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করার দাবি জানিয়েছিলেন। তারা এই ঘোষণাও দিয়েছিলেন যে, তাদের দাবি মানা না হলে ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করবেন। তারই অংশ হিসেবে তাদের এ লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, দেশের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলো বিষয়টিকে খুব একটা হাইলাইট করেনি। এ থেকে বোঝা যায়, দেশের শিক্ষা আসলে কতটা অবহেলিত। তবে দৈনিক আমাদের বার্তা ব্যতিক্রম।

বাংলাদেশে শিক্ষার জাতীয়করণ নিয়ে বহু আগে থেকেই আলোচনা-সমালোচনা, উত্তেজনা-আলোড়ন-আন্দোলন চলে আসছে। বেসরকারি শিক্ষকগণ সে সরকারি ত্রিশ টাকা অনুদান দিয়ে শুরু করে আজ মূল বেতনের একশত ভাগ সরকারি কোষাগার থেকে পাচ্ছেন। এটি সহজে হয়নি বা কোনো সরকার ইচ্ছে করেই এটি তাদের দেয়নি। এটি শিক্ষকদের বহুদিনের আন্দোলনের ফসল এবং এ পর্যন্ত আসতে তাদের বহু কাঠখড় পোরাতে হয়েছে। বহু বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমরা বলি ‘শিক্ষা জাতির মেরুদ-’, ‘শিক্ষকরা প্রাইভেট কেনো পড়াবেন’, ‘শিক্ষকতা মহান পেশা’ ইত্যাদি। কিন্তু আমরা চিন্তা করি না শিক্ষকদেরও তো সংসার আছে, মৌলিক চাহিদা আছে। সেগুলো পূরণ করতে অর্থের প্রয়োজন হয়। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের কথা আসলেই আমরা অর্থের কথা বলি। কিন্তু একটি বিষয় আমরা খেয়াল করি না যে, আমরা বহু জাতীয় প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছি, আর সেই লোকসানের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জনগণের ট্যাক্সের মাধ্যমে মেটাচ্ছি, অথচ শিক্ষা যে একটি অতি জরুরি বিষয়, তা কেবল মুখে বলেই খালাস। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা জাতীয়করণ করা বহু আগেই উচিত ছিলো। কারণ শিক্ষাক্ষেত্রে যে আকাশসম বৈষম্য, তা বেশিদিন জিইয়ে রাখা ঠিক নয়। যেমন একজন সরকারি স্কুলের বা কলেজের শিক্ষক, তার পাশে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো একজন বেসরকারি স্কুল বা কলেজের শিক্ষককে। দেখা যাবে কেউই যেনো তাকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। সরকারি কোনো কর্মকা-ে তাকে সহজে ডাকা হচ্ছে না। কারণ তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। অথচ দেখা যাবে দুজনের মধ্যে একাডেমিক, বুদ্ধিবৃত্তিক বা জ্ঞানগত কোনো পার্থক্য নেই। একজন সৌভাগ্যক্রমে সরকারি চাকরি পেয়ে গেছেন অথবা তার প্রতিষ্ঠানটি কোনো কারণে সরকারি হয়ে গেছে। নয়তো বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে তিনি উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে। কিন্তু সে সুযোগটি হয়তো বেসরকারি কলেজের শিক্ষক পাননি।

এরশাদ সরকার দেশে প্রথম উপজেলা পদ্ধতি চালু করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। শুনেছিলাম, ওনার আমলেই সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হবে। যিনি এতো বড় একটি কাজ করেছেন, তার দ্বারা সম্ভবও হবে এটি। কারণ এটি একটি সাহসী পদক্ষেপ। যেমন প্রাইমারিকে জাতীয়করণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেটা নিশ্চয়ই একটি সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ, যা সকলের দ্বারা সম্ভব হয় না। তিনি যখন প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করেন, তখন আমাদের জিডিপির আকার ছিলো প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার, আর এখন তা ৪০০ বিলিয়নের ওপর। তাহলে কেনো আমরা শিক্ষায় প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করবো না? কেনো নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত, দক্ষ ও আলোকিত মানুষ হিসেবে তৈরি করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করবো না? পরে শুনলাম তৎকালীন শিক্ষা সচিব এটি চাননি। তাই এরশাদ সরকারের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আর জাতীয়করণ করা হয়নি। তখন জাতীয়করণ করা হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বিরাট পবিরর্তন আসতো, তার সুফল দেশবাসী সবাই পেতেন, দেশের চেহারা পাল্টে যেতো।

শিক্ষা জাতীয়করণ করা না হলে যে কোয়ালিটি শিক্ষার কথা আমরা অহরহ বলছি, তা করা সম্ভব হবে না। কারণ বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ কীভাবে হয়, আমরা এদেশের মানুষ তা জানি। যখন একজন লোক জানে যে, এলাকার প্রভাবশালী কাউকে টাকা দিলেই চাকরি হয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা জানা না জানার বিষয়টি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, তখন পড়াশোনা জানা মানুষ কেনো শিক্ষকতায় আসবেন? কাজেই মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমে শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগ বহু কিছুর প্রভাব থাকা সত্ত্বেও অনেকটাই মানসম্মতভাবে হয়। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঘটে তার পুরো উল্টোটা। এটি চলতে দেয়া যায় না। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে শিক্ষক নিয়োগ। শিক্ষাসংক্রান্ত কার্যাবলির সঙ্গে যুক্ত নয় তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্তৃত্ব ফলাতে আসেন, ফলে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে ঘটে মারাত্মক বিঘœ। তবু কিছুটা হলেও আশার কথা যে, বর্তমানে এনটিআরসি-পরীক্ষার মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। এতে মান পূর্বের চেয়ে নিশ্চয়ই অনেকটাই ভালো হচ্ছে, যদিও এখানেও অনেক ধরনের সমস্যা আছে। প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ এবং দুর্নীতি এখনও বিদ্যমান।

একটি স্বাধীন দেশে এটি কেমন নিয়ম যে, বহু বছর ধরে মাত্র ৩১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিলো সরকারি! বর্তমান সরকার যেসব উপজেলায় সরকারি বিদ্যালয় ছিলো না, সেগুলোকে সরকারি ঘোষণা করায় বর্তমানে ৬৮০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। অর্থাৎ এগুলোর পুরো দায়দায়িত্ব সরকারের, বাকি প্রায় বিশ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় বেসরকারি। মাধ্যমিক পর্যায়ের আরও নয় হাজারের মতো মাদ্রাসাও রয়েছে। এতো বৈষম্য নিয়ে সামনে আগানো যায় না।

দেশের শিক্ষার দায়িত্ব সরকারের। অথচ দেখা যায় সরকার এমন কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি করে, যাতে সরকারের কোষাগার থেকে অতিরিক্ত কোনও অর্থ খরচ করতে না হয়। আবার উল্টোটিও দেখা যায়। কোনও প্রভাবশালী নেতা তার এলাকার কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল বা কলেজ), তার অবস্থা যতোই খারাপ থাকুক না কেনো, জাতীয়করণ করে ফেলেছে। ফলে আর এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে অসমতা ও নিয়মনীতিবহির্ভূত কাজ। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে জমা নিলে প্রতি বছর সরকারের আয় হবে ২৬ হাজার কোটি টাকা। তাই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ করা হলে সরকারের অতিরিক্ত কোনও অর্থ খরচ করতে হবে না। তারপরও এটা কেনো হচ্ছে না, সেটি একটি বড় প্রশ্ন।

শোনা যায় বর্তমান সরকার ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি করার পরিকল্পনা করছিলো। অর্থাৎ প্রথম উপজেলার প্রতিষ্ঠান, পরে উপজেলার বাইরে। এটি আরেক ধরনের বৈষম্য। কারণ উপজেলা সদরে বা জেলা সদরে যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকে, সেগুলোর অবস্থা এমনিতেই একটু ভালো থাকে। সেখানে অর্থের সমস্যা থাকে কম, শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় মোটামুটি ভালো দেখে। সেগুলো আগে জাতীয়করণ করার অর্থ হচ্ছে তেলে মাথায় তেল দেয়া। গ্রামীণ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অবহেলার শিকার। এগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়, নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষক নেই, কারণ মানসম্মত শিক্ষকগণ সেখানে যেতে চান না। ফলে গ্রামের লাখ লাখ শিক্ষার্থী উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জাতীয়করণ করা হলে অবহেলিত এ জনগোষ্ঠীর শিক্ষার অধিকার ও মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তাই জাতীয়করণ করা যদি এক সঙ্গে সবগুলো সম্ভব হয়, সেটিই সবচেয়ে ভালো প্রস্তাব। আর তা না হলে গ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সর্বাগ্রে জাতীয়করণ করা দরকার। উপজেলা ও জেলা সদরের প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরে করা যেতে পারে।

অবসরে যাওয়া শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি দেশের বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগুলো জাতীয়করণ করা হলে সরকারের অতিরিক্ত সর্বমোট কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে, তা তার কাছে জানতে চান। জানা যায় সচিব বলেন, ‘দেশের ৩০ হাজার প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হলে সরকারের অতিরিক্ত এক হাজার কোটি টাকা খরচ হবে।’ বিষয়টি শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খানের মাধ্যমে প্রচারের পর দেশের শিক্ষা জাতীয়করণ করার বিষয়টি আবার আলোচনায় চলে এসেছিলো। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও শিক্ষা জাতীয়করণের বিষয় একটু পেছনে ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাই, আশি ও নব্বইয়ের দশকে আন্দোলনের সময় প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের চেয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের স্কেল অনুযায়ী শতভাগ বেতন প্রদান এবং অন্যান্য আর্র্থিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টিই বেশি গুরুত্ব পায়। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রথমবারের মতো জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করে জিয়াউর রহমান সরকার। এ সময় রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর তাদের যার যার স্কেল অনুযায়ী ৫০ ভাগ অর্থ দেয়া শুরু হয়। পরে এরশাদ সরকার (১৯৮২-১৯৯০) ২০ ভাগ বাড়িয়ে তা ৭০ ভাগে উন্নীত করে। সে সময়ে শোনা যাচ্ছিলো সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারি করা হবে। খালেদা জিয়া সরকার তাঁর প্রথম মেয়াদে (১৯৯১-১৯৯৬) এর পরিমাণ বাড়িয়ে ৮০ ভাগ করে। শেখ হাসিনা সরকার তাঁর প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) আরও ১০ ভাগ বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করে এবং সর্বশেষ খালেদা জিয়া সরকার (২০০১-২০০৬) সব ভগ্নাংশ উঠিয়ে দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন স্কেলের ১০০ ভাগ অর্থ প্রদান নিশ্চিত করে। এ সুবিধাগুলো পেতে শিক্ষকদের বহু আন্দোলন করতে হয়েছে, বহু ভয়ভীতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। অথচ এগুলো শিক্ষকদের পাওয়ার কথা ছিলো স্বাভাবিকভাবেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে (২০০৯-২০১৪) সরকার গঠন করলে এমপিওভুক্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে এবং জাতীয়করণ করা হলে সরকারের অতিরিক্ত ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে বলে বলা হয়। তবে বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা বিভিন্ন সময় বলেছিলেন, চাকরি জাতীয়করণে বর্তমানে বরাদ্দের তুলনায় বাড়তি কোনো অর্থেরই প্রয়োজন হবে না। বর্তমানে সরকার শিক্ষকদের যে টাকা দেন তার সঙ্গে প্রায় দুই হাজার পাঁচশ কোটি টাকা হলেই শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ করা সম্ভব। শিক্ষা জাতীয়করণ করা হলে সরকারের অতিরিক্ত অর্থ যদি ব্যয়ও হয়, সেটা তো এক ধরনের বিনিয়োগ। শিক্ষায় যে জাতি বেশি বিনিয়োগ করবে, সে জাতি ততোই এগোবে। কাজেই আমরা অর্থনৈতিক বিষয়টি সামনে নিয়ে এসে এ কাজে পিছিয়ে যাচ্ছি কেনো?

তবে সবশেষে এটিও খেয়াল রাখতে হবে যে, দেশে এখনও নামকরা যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলো প্রায় সবই বেসরকারি খাতে পরিচালিত। অর্থাৎ সেখানে জবাবদিহি আছে, পড়াশোনা ভালো হয়। আর সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা অনেকটাই বেহাল। নেপালের শিক্ষকগণ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা পান, কিন্তু সরকারি স্কুলে সচেতন জনগণের ছেলেমেয়েরা যেতে চায় না। সব ভালো স্কুল-কলেজ বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত। আমি একাধিকবার নেপালে গিয়েছি, শিক্ষকদের সাথে বসেছি, কথা বলেছি। তারা বলেছেন, ’স্যার, আমরা এখন সরকারি কিন্তু আমাদের স্কুলে পড়ে বাসার কাজের বুয়াদের ছেলেমেয়েরা।’ সেখানে সচেতন অভিভাবকগণ সরকারি স্কুলে বাচ্চাদের পাঠাতে চান না। আমাদের শিক্ষা জাতীয়করণ করা হলে অবস্থা এমনটি হবে, আমি তা বলছি না। তবে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। সবশেষে আবারো বলতে চাই, শিক্ষায় বৈষম্য দূরীকরণের জন্যে এবং মান ফিরিয়ে আনার জন্যে বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোকে জাতীয়করণ করা অবশ্যই দরকার। এর পেছনে আরও একটি বড় যুক্তি হচ্ছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে প্রভাবশালী, রাজনৈতিক ও শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই এমন সব ব্যক্তিবর্গ থাকেন, যা মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা তো দূরের কথা, সাধারণভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার ক্ষেত্রেও বিশাল এক বাধা। সরকারি কোষাগার থেকে যে পরিমাণ অর্থই খরচ করা হোক না কেনো, শুধু বেসরকারি হওয়ার কারণে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের চাপে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা শিক্ষকদের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিকে এই অভিষাপ থেকে মুক্তি দিতে হবে।

মাছুম বিল্লাহ : সাবেক শিক্ষক, ক্যাডেট কলেজ

ও রাজউক কলেজ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়