রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

শিক্ষকদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন প্রসঙ্গে
মাছুম বিল্লাহ

৫ অক্টোবর, ২০২১ ছিলো বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দিনটি শিক্ষকদের মূল্যায়ন, গুরুত্ব দেয়া এবং তাদের অবদানের কথা স্মরণের দিন। দুনিয়াব্যাপী করোনার হানা গোটা বিশ্বের শিক্ষাখাতকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। মহা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে। এখানে থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে শিক্ষকদেরই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। আর তাই ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবসে’র প্রতিপাদ্য হচ্ছে : ‘ঞবধপযবৎং ধঃ ঃযব যবধৎঃ ড়ভ বফঁপধঃরড়হ ৎবপড়াবৎু’ অর্থাৎ শিক্ষার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মূলে রয়েছেন শিক্ষকরাই।

পৃথিবীর অনেক দেশই জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়েছে, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালীও হয়েছে; কিন্তু শিক্ষকদের এবং শিক্ষার বিষয়টিকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। খুব কমসংখ্যক দেশে শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান দেয়া হয়। ওইসব দেশে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও ভিন্ন, যে কেউ ইচ্ছে করলেই শিক্ষক হতে পারেন না। অনেক দেশ ওইসব দেশের মতো শিক্ষকদের মান-মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় সুবিধা দাবি করে। কিন্তু গ্যাপটি পূরণ করার কথা বলেন না। শিক্ষকের পদমর্যাদা বাড়ানোর জন্যে রাষ্ট্রের তরফে শিক্ষকদের সঠিক প্রতিনিধি থাকতে হয়, তাহলে কাজ কিছুটা সহজ হয়। রাজনীতিবিদরা, যারা নির্বাচিত হয়ে দেশের আইন-কানুন তৈরি করেন, তারা তো স্বভাবতই নিজেদের সম্মানের জায়গাটি ধরে রাখা এবং পাকাপোক্ত করার জন্যে চেষ্টা করবেন, তারা শিক্ষকদের জন্যে করতে যাবেন কেনো?

শিক্ষকরা তো শুধু বই পড়ান, তারা কেনো এতো উপরে থাকতে যাবেন?Ñএমন একটি ভাবনা প্রচলিত আছে সমাজে। আর শিক্ষকরাও সে ধরনের উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেননি, দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। আমরা জানি, অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিতে পারেন, বৃত্তি প্রদানের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি রাষ্ট্রকে সুপারিশ করতে পারেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্র সেটিকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেন। কিন্তু আমাদের দেশের অধ্যাপকদের কী অবস্থা? তারা কি এ ধরনের সুপারিশ করতে পারেন? এক প্রভাবশালী মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ছাত্র নেতাদের কথায় ওঠেন আর বসেন।’ এ অবস্থা তো আমরা কম-বেশি সবাই জানি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের যেখানে এ অবস্থা সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে শিক্ষক দিবস পালন করে কতটা এগিয়ে যাওয়া যাবে, সেই প্রশ্নের মুখোমুখি আমরা।

আমাদের দেশের শিক্ষকদের বিরাট অংশ বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে শিক্ষাদান করছেন। ফলে প্রতিষ্ঠান কমিটি, সভাপতি শিক্ষকদের ওপর, প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষদের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেন। সেই বিচারে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাই চান, এসব কমিটির হাতে যেনো শিক্ষার মতো মহান দায়িত্ব অর্পণ করা না হয়। কিন্তু কায়েমি স্বার্থের তাগিদে সেটিই যেনো চলছে। এ থেকে শিক্ষকদের মুক্তি কিসে? শিক্ষাকে সরকারিকরণ করা হলেই সমস্ত শিক্ষক তাদের সম্মানের জায়গায় অধিষ্ঠিত হতে পারবেন? অর্থনৈতিক মুক্তি ও অনেকটাই নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে তারা এটি চাচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি যাই হোক, শিক্ষকদের অর্থনৈতিক নিরপত্তা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে। সেটি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকেই হোক আর রাষ্ট্র ও কমিউনিটির যৌথ উদ্যোগেই করা হোক না কেনো, শিক্ষকদের যাতে অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে না হয়। শিক্ষা সরকারিকরণ করার অর্থ হচ্ছে, শিক্ষার সার্বিক দায়িত্ব রাষ্ট্রের। শিক্ষকদের চাকরি, চাকরির শর্তসমূহ, সুবিধা-অসুবিধা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা, অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করা এ সবকিছুই রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এই বিষয়টি কিন্তু হচ্ছে না সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, শিক্ষার মানের সাথে এগুলোর সম্পর্ক রয়েছে, তাই মানসম্মত শিক্ষা কিন্তু নিশ্চিত হচ্ছে না।

আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক এবং দেশের প্রায় ৬৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি। সেখানে কি মানসম্মত শিক্ষাদান হচ্ছে? শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তা বিধান করা হয়েছে, কিন্তু পুরো ব্যবস্থপনায় তার প্রতিফলন ঘটেনি, আর তাই মানসম্মত শিক্ষাদানও হচ্ছে না। সরকারি করায় অনেক ভালো ভালো শিক্ষক কিন্তু এখানে যোগদান করেছেন, এটি আনন্দের সংবাদ। কিন্তু পুরো ব্যবস্থাপনায় তার ছাপ এখনও পড়েনি।

পেশাগত উন্নয়নের বিষয়টি জীবনব্যাপী। ব্যতিক্রম ছাড়া অনেক শিক্ষকের ভেতর এ ধরনের তাড়না দেখা যায় না। নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্যে, শিক্ষার্থীদের আনন্দদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্যে দুনিয়ার অন্যান্য দেশে কী হচ্ছে, আধুনিক শিক্ষা মতবাদ কী কী চালু রয়েছে, নতুন কী আবিষ্কৃত হয়েছেÑএগুলো জানার জন্যে অনন্য ব্যতিক্রমধর্মী দু-চারজন শিক্ষক ছাড়া বাকিদের কাছে এসব বিষয় নিছক তুচ্ছ কিংবা অনাকাক্সিক্ষত বলে মনে হয়। তার মধ্যে কিছু শিক্ষককে দেখেছি, অনেক বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও উন্নত বিশ্বের অনুকরণে নিজেদের প্রচেষ্টায় এ করোনাকালেও শিক্ষার্থীদের জন্যে, নিজেদের পেশাগত উন্নয়নের জন্যে, দেশের শিক্ষার জন্যে ম্যাটেরিয়ালস্ তৈরি করে ক্লাস করিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেছেন। তারাই প্রকৃত শিক্ষক।

শিক্ষক নেতাদের কাছে একাডেমিক কোনো বিষয় খুব একটা গুরুত্ব পায় না। শিক্ষাবিষয়ক দেশের একমাত্র প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা ও ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম ও শিক্ষকদের ফেসবুক গ্রুপ খুললেই দেখা যায় শিক্ষকদের শুধু আর্থিক লাভের বিষয় ছাড়া শিক্ষক নেতারা সেখানে আর তেমন কিছু লেখেন না, বলেন না। শিক্ষকদের অর্থনৈতিক ও বৈষয়িক দাবি-দাওয়া আদায়ের কথা ছাড়া শিক্ষক নেতাদের তেমন কোনো কথা দেখা যায় না। দেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষায় পাঠদানরত শিক্ষকদের মানের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে বহু বছর ধরেই। এ বিষয়টি আজকের দিনে আমাদের মনে রাখতে হবে। আমরা যাদের জন্যে, যে প্রজন্মকে শিক্ষিত করবো তাদের সন্তষ্টির বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে এবং নিজেদের সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে।

‘আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে বড় একটা অংশ ঘটনাচক্রে শিক্ষক। অন্য কোনো পেশায় অনেকেই যেতে পারেননি, শিক্ষকতা কোনোদিন তারা চাননি। আমাদের প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রয়োজন। যিনি শিক্ষকতা পেশায় আসবেন, তার জীবনের লক্ষ্যই হবে শিক্ষকতা পেশা। তিনি সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে আসবেন।’এ কথা বলেছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী। ঘটনাচক্রে শিক্ষক অর্থাৎ অধিকাংশ শিক্ষিতরাই শিক্ষক হতে চান না, আবার যারা শিক্ষক হন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও মেরুদ-হীন এবং ছাত্রনেতাদের কথায় ওঠেন আর বসেন। এ অবস্থা তো জাতির জন্যে চরম অবমাননাকর, চরম অবক্ষয়ের কথা। কিন্তু শিক্ষকরা আমাদের সমাজের আলোকবর্তিকা। শিক্ষকদের আলোকবর্তিকার মতো জ্বলতে দিলে সমাজও আলোকিত হবে। রাষ্ট্রকে সেই উদ্যোগ নিতে হবে।

স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ, বদলি থেকে এমপিওভুক্তির জন্যে মাধ্যমিকে সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে পনের লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে। এসব দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধের দায়িত্বে থাকা পরিচালনা কমিটি এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এ অবৈধ সুবিধা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে টিআইবি। দুর্নীতির দুষ্টচক্র থেকে বের হয়ে আসতে করণীয় নির্ধারণে কিছু সুপারিশও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ‘মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকের যোগদান, সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা, পাঠদান অনুমোদন, স্বীকৃতি নবায়ন থেকে শিক্ষক বদলিতে ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া প্রতিবেদনে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতাসহ অনিয়ম, সীমাবদ্ধতা ও ভালো-মন্দ নানা চিত্র উঠে আসে। শিক্ষা বিভাগ থেকে ঘুষদানের সংস্কৃতি পুরোপুরি নির্বাসনে দিতে হবে। পবিত্র শিক্ষাঙ্গনকে যদি আমরা পবিত্র রাখতে চাই, তাহলে যে কোনো মূল্যে এসব ঘুষ ও অনিয়ম চলতে দেয়া যাবে না। এটিও হোক ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবসে’র আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য দিক।

শিক্ষকদের পেশাগত ও বিষয়ভিত্তিক উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির নিবিড় পরিচিতি ও একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্যে এবং শিক্ষার্থীদের সেভাবে প্রস্তুত করার জন্যে নিজেদেরই প্রস্তুত করতে হবে। প্রতিষ্ঠান কখন এটি করে দেবে, রাষ্ট্র কখন করবে সে আশায় বসে থাকলে হবে না। কিছু কিছু শিক্ষকদের মধ্যে এ ধরনের আগ্রহ বেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের মধ্যে বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আবার ‘আমি পেশাগত উন্নয়নের জন্যে চেষ্টা কেনো করবো, আমার বেতন কি বাড়বে?’ এ রকম কথাও শোনা যাচ্ছে। এ রকম কথা যখন শিক্ষকদের মুখে শোনা যায়, তখনই পেশার প্রতি তাদের অনুরাগ কতটা আছে তা বোঝা যায়। আবার কিছু কিছু অথরিটি আছেন যারা শিক্ষকদের বিভিন্ন পেশাগত উন্নয়নের প্লাটফর্মে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করেন, এমনকি বাধা দেন। এ যুগে এটি ঠিক নয়। একজন শিক্ষক আধুনিকতার সঙ্গে পরিচিত না হলে শ্রেণিকক্ষে তিনি কী পড়াবেন? শুধু বইয়ের পাঠে নিবদ্ধ থাকলে যে একজন শিক্ষকের চলবে নাএ বিষয়টি বুঝতে হবে শিক্ষকদের এবং শিক্ষক প্রশাসকদের। বিশ্বের ধনী দেশের শিক্ষকরা কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আগে থেকেই শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে পরিচিত এবং সাধারণভাবেই তারা এগুলো ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশের শিক্ষকরা এগুলোর সঙ্গে একেবারেই পরিচিত ছিলেন না। কোভিড-১৯ আসার পর পৃথিবীব্যাপী যখন বিদ্যালয়ের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে গেল তখন গুগল মিট, জুম, ব্যবহার করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে শহর, গ্রাম, উপশহরসহ সমস্ত এলাকার শিক্ষকরা বিষয়টি আয়ত্ত করে ফেলেছেন। তারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে এগুলো ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরিচালনা করেছেন। এটির অর্থ হচ্ছে, তারা নতুন ডিভাইস ব্যবহার করার চমৎকার দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন যা এই যুগের শিক্ষকদের একান্তই প্রয়োজন।

আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা যায়, মানসম্মত শিক্ষার ২০ শতাংশ নির্ভর করে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ এবং অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ওপর। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষার শতকরা ৮০ ভাগ নির্ভর করে শিক্ষকের ওপর। একজন যোগ্য শিক্ষক গাছতলায় বসেও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন। তার মানে হচ্ছে, প্রকৃত শিক্ষকরা সমাজকে পরিবর্তন করতে পারেন। আমরা সমাজ, দেশ ও বিশ্বের কাক্সিক্ষত ও ইতিবাচক পরিবর্তন চাই। আর এ পরিবর্তনের মূল কারিগর হচ্ছেন শিক্ষকরা। তারা যে ধরনের মানবসম্পদ সৃষ্টি করবেন, সমাজে সরবরাহ করবেন, সমাজও সে ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাবে।

ইউনেসকো পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মানদ-ে বাংলাদেশের শিক্ষার মান ২ দশমিক ৮ শতাংশ, ভারত ও শ্রীলংকায় ২০ দশমিক ৮ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। এটিরও মূল কারণ কিন্তু শিক্ষক। অর্থাৎ সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে, মানুষের জীবন-মান পরিবর্তন করতে হলে শিক্ষকদের উন্নয়ন অপরিহার্য।

মাছুম বিল্লাহ : ব্রাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত, ইংলিশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়