বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

যুক্তিতর্ক মানুষের জ্ঞান অর্জনের সহজ উপায়

যুক্তিতর্ক মানুষের জ্ঞান অর্জনের সহজ উপায়
জমির হোসেন

মানুষের জ্ঞানের পরিধি বা তথ্য-উপাত্ত বৃদ্ধির জন্যে শুধু মাত্র পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। চলমান শিক্ষা জীবনের সাথে বাহ্যিক কিছু অতিরিক্ত পাঠ, সামাজিক যোগাযোগ স্থাপন এবং ভ্রমণের মতো এ রকম স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এতে করে ভিন্ন ভিন্ন উপলব্ধি জ্ঞান কোষে এসে জমা হবে, যা পরবর্তীতে নিজের জন্যে অসাধারণ সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

বিশ্বায়নের যুগেও আমরা একটু পিছিয়ে রয়েছি, কারণ যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করি তাই। পাঠ্যবইয়ে নিজের জীবনকে এমনভাবে সীমিত করে রাখি, পৃথিবী সম্পর্কে অনেক ধারণা আমরা রাখি না। যুক্তিতর্ক তথা বিতর্ক এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা, যা মানুষের জীবনকে ত্বরিত গতিতে চলতে সাহায্য করে। তার মধ্যে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সাথে বিতর্ক করতে হলে অবশ্যই পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আরও অনেক রকমের বইয়ের সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। এর ফলে প্রতিপক্ষের সাথে বিতর্কে জয়লাভ করা সহজ হতে পারে। আধুনিকতার এ যুগে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলতে অধিক পড়াশোনার বিকল্প নেই। আর যুক্তিতর্ক সেই ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ যে বিষয়ের উপর বিতর্ক করা হয় নিশ্চয়ই সেই বিষয় সম্পর্কে ততো বেশি তথ্য-উপাত্ত এবং প্রমাণ উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে পরাজয় করার চেষ্টা করা হয়। তাই পাঠ্যবইয়ের মতো এখানে কোনো ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকে না, যা বলতে হবে তা সবই ডকুমেন্টারি হতে হবে।

একদা ছাত্রজীবনে আমাদের স্কুলে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম। ক্লাসের মোটামুটি ভালো ছাত্র হিসেবে আমিও সেই বিতর্কে এক পক্ষের হয়ে অংশ নিই। একটি ব্যাপার সুস্পষ্ট, আমার প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন করতে আমাকে কতটা তথ্য-উপাত্ত প্রমাণ মজুদ রাখতে হবে, তা কিন্তু বোঝার বাকি থাকে না। এজন্যে কতোটুকু পড়াশোনা দরকার বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার পর তা টের পাওয়া যায়।

কীভাবে একটি বিতর্ক শেষ হয়? বিতর্কের শুরু এবং শেষ উভয়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিতর্ককে শ্রোতাদের যুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হয়। একটি পর্যায়ে তাদের যুক্তিকে সাবস্ক্রাইব করে যথাক্রমে আরেকটি বন্ধ করে দেয়--এটাই সরল এক প্রক্রিয়া।

এভাবেই বিতর্কের মাঝে একটি দল জয় নিয়ে ঘরে ফিরে। এর ফলে বিজয়ী-বিজিত উভয় দলই তাদের জ্ঞান আহরণ করার পরিচয় শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হয়। আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো দলের অন্য সদস্যদের ভূমিকা কোনো অংশই কম হলে চলবে না। এমন হলে প্রতিপক্ষের সাথে জয় পেতে কঠিন হয়ে যাবে। এটি অবশ্যই দলনেতাকে মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।

বিতর্কের জন্যে কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয় থাকে যে, কীভাবে শেষ করতে হবে তার পাঁচটি সংক্ষিপ্ত ধারণা হিসেবে নেয়া যেতে পারে। আর এগুলো উভয় গ্রুপের জানা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। এক. বিতর্কের শেষ মুহূর্তে চলমান বিতর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো অবশ্যই পুনরাবৃত্তি করা। দুই. যুক্তির স্বাভাবিকভাবে শেষ টানা। তিন. আপনার চলমান বিতর্ক সম্পর্কে বিচারকরা যেনো মনে রাখে সেভাবে কাজ করা। চার. আপনার কেস সম্পর্কে চূড়ান্ত বিবৃতি দেয়া। পাঁচ. একটি বিতর্কের নমুনা উপসংহার অন্বেষণ করা। বিতর্কে সফলতা পেতে অবশ্যই এই স্টেপগুলো মাথায় রেখে যুক্তিতর্ক সম্পন্ন করতে হবে।

অ্যারিস্টটলের তিনটি যুক্তি, যা বিতর্কের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি নির্ধারণ করেছিলেন যে প্ররোচনা তিনটি আবেদনের সমন্বয়ে গঠিত : লোগো, প্যাথোস এবং এথোস। যে কেউ একজন যদি শ্রোতাকে প্ররোচিত করতে চায় তার বার্তাটি তথ্য (লোগো) দিয়ে তৈরি করা উচিত, একটি যুক্তির মানসিক দিক (প্যাথোস) ট্যাপ করা উচিত এবং তার আপাত নৈতিক অবস্থান (এথোস) উপস্থাপন করা উচিত।

জেলার সবচেয়ে পাঠকপ্রিয় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠকে বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের মতো সাহসী ভূমিকার জন্যে ধন্যবাদ। একই সঙ্গে জেলার শিক্ষার্থীরা নিশ্চয়ই অদূর ভবিষ্যতে এ অভিজ্ঞতা যথাযথ কাজে লাগাবে এবং এই বিতর্কের রেশ ধরে চাঁদপুর কণ্ঠের এমন আয়োজনকে তারা মাইলফলক হিসেবে তুলে ধরবে। এই বিতর্কের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন, যেনো এভাবেই তারা আলোকিত মানুষ গড়ার কাজ অব্যাহত রাখে।

লেখক : সভাপতি, ইউরোপ বাংলাদেশ প্রেসক্লাব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়