প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুরে অত্যন্ত সুপরিচিত ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শংকর আচার্য্য। তিনি নজরুল, রবীন্দ্র ও আধুনিক গান পরিবেশন করে স্বীয় মেধার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত শিল্পী হয়েছেন। দীর্ঘ ২৭ বছরের অধিক সময় ধরে চাঁদপুরে শুদ্ধ সংগীত চর্চার অন্যতম পুরানো প্রতিষ্ঠান সংগীত নিকেতনে সংগীত পরিবেশন করছেন এবং শিক্ষকতা করছেন। এছাড়া কুমিল্লাস্থ উষষী সংগীত বিদ্যালয়ে সাত বছরের অধিক সময় ধরে গান পরিবেশন ও শিক্ষকতা করছেন। চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিরও তিনি প্রশিক্ষক এবং এখানেও তিনি গান পরিবেশন করছেন। নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার সাথেও তাঁর সক্রিয় সম্পৃক্ততা রয়েছে।
শংকর আচার্য্য সংগীতে নিজের মেধার পরিচয় ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি উদীয়মান শিশু-কিশোর কণ্ঠশিল্পীদের কৃতিত্ব প্রমাণে অত্যন্ত আন্তরিক একজন শিক্ষাগুরু হিসেবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৮৬ সাল থেকে অদ্যাবধি তাঁর সংগীত শিক্ষার্থীদের অন্তত ১৫জন জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পেয়েছে এবং জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ কর্তৃক রাজধানীতে আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় ৪০-৫০ জন প্রথম মান ও দ্বিতীয় মান অর্জন করেছে। আর জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অর্ধশতাধিক সংগীত শিক্ষার্থী প্রথম স্থান ও দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। সংগীত গুরু হিসেবে এখন পর্যন্ত তাঁর সবচে’ বড় সফলতা হচ্ছে, তাঁর শিক্ষার্থী মৌমিতা আচার্যী ভারতের কলকাতাস্থ রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীতে মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে শুধু চাঁদপুর নয়, বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তাঁর আরেক মেধাবী সংগীত শিক্ষার্থী, চাঁদপুরের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রূপালী চম্পকের মেয়ে স্বর্ণালী সাহা, যে কিনা দেশে ও ভারতে মিউজিকের ওপর একাধিক স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। স্বর্ণালী ও শংকরের আরেক ছাত্রী অনন্যা আচার্য্য বিটিভিসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গান করেছে এবং করছে। এছাড়া বেতারে গান করছে তার আরো বহু শিক্ষার্থী।
শংকর আচার্য্য চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়া রোডে সাহাবাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও তিনি মূলত হাজীগঞ্জ উপজেলার আদি বাসিন্দা। তাঁর বাবা কবিরাজ সহদেব আচার্য্য (বর্তমানে প্রয়াত) ও মাতা দীপালী রাণী আচার্য্য। শংকরের জন্ম ১৯৬৯ সালের ১ নভেম্বর হাজীগঞ্জের মকিমাবাদ গ্রামে পৈত্রিক নিবাসে। তাঁর বাবা সহদেব আচার্য্য চাঁদপুরে সাধানা ঔষধালয়ে চাকুরির সুবাদে চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়াস্থ সাহাবাড়িতে একখণ্ড জমি কিনেন এবং এখানেই স্থায়ী বসতি গড়ে তোলেন। চাঁদপুর শহরেই তাঁর বেড়ে ওঠা। তিনি চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে বিএসএস পাস করেন। সংস্কৃতিতে ব্যাকরণ ও কাব্যতীর্থে কোর্স সস্পন্ন করেন এবং গাজীপুরস্থ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীতে ডিপ্লোমা কোর্স সমাপ্ত করেন।
সংগীতে শংকর আচার্য্যের প্রথম শিক্ষা সংগীত নিকেতন, চাঁদপুর। এখানে সম্পন্ন করেন সাত বছরের সিনিয়র কোর্স। তাঁর সংগীত গুরুর তালিকা একেবারে ছোট নয়। এঁদের মধ্যে রয়েছেন : সংগীত নিকেতনের অধ্যক্ষ স্বপন সেনগুপ্ত, ঢাকায় কর্মরত বেতার ও টেলিভিশন শিল্পী মানস কুমার দাস, চট্টগ্রামের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী আব্দুর রহীম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উমেষ রায় (বর্তমান প্রয়াত), ঢাকার ওয়াহিদুল হক ও সুমন চৌধুরী, চাঁদপুরের শীতল ঘোষাল (বর্তমানে প্রয়াত), ইতু চক্রবর্তী ও সুরেশ দাস ঝন্টু।
সংগীত শংকর আচার্য্যের পেশা নয়, এটি তাঁর নেশা এবং স্বীয় সৃজনশীলতা প্রকাশের উদগ্র বাসনা। তিনি পেশায় একজন ইউনিয়ন পরিষদ সচিব। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার আওতায় তিনি চল্লিশ বছর ধরে কর্মরত। বর্তমানে তাঁর কর্মস্থল চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদে।
ব্যক্তিগত জীবনে শংকর আচার্য্য বিবাহিত। তাঁর স্ত্রী সাথী রাণী আচার্য্য সুগৃহিণী। তাদের তিন সন্তান। এক ছেলে অনিন্দ্য আচার্য্য, দু মেয়ে নন্দিনী আচার্য্য ও স্নিগ্ধা আচার্য্য।