প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুর সদরের পর একসময় ফরিদগঞ্জ উপজেলা সংস্কৃতি বিষয়ে ভালো এগিয়ে থাকলেও ক্রমশ তা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। উপজেলায় হাতেগোণা ক’টি সংগঠন ছাড়া আর বাকিগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। সংস্কৃতিপ্রেমীদের মতে, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার অভাবের সাথে সাথে নিয়মিত অনুষ্ঠানমালার আয়োজন না থাকায় ক্রমশ তা সঙ্কুচিত হচ্ছে। বলতে গেলে বর্তমানে ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে ফরিদগঞ্জের সংস্কৃতি অঙ্গনের কর্মকাণ্ড। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর বাইরে দু-একটি প্রতিষ্ঠান এসব বিষয়ে কিছুটা সচেতন থাকায় জাতীয় অনুষ্ঠানমালায় মুখ রক্ষার কাজ চলছে।
ফরিদগঞ্জ সদরে বর্তমানে শতফুল খেলাঘর আসর, নবীন কচি-কাঁচার মেলা, ফরিদগঞ্জ সঙ্গীত একাডেমী ও নাট্য থিয়েটারের কার্যক্রম চোখে পড়ে। এর বাইরে চান্দ্রায় খেলাঘর আসর এবং রূপসায় একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। এছাড়া গাজীপুর মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে সংস্কৃতি চর্চার জন্যে শিক্ষক থাকায় সেখানে নিয়মিত সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা হচ্ছে। এর বাইরে বস্তুত আর কোনো প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে।
সরকারের বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও অনুষ্ঠানমালায় উপজেলা সদরের ক'টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে থাকে। সেটা সম্ভব হচ্ছে নিয়মিত চর্চার কারণেই।
ফরিদগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমি নামে ১৯৯৮ সালে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ভালোভাবে প্রতিষ্ঠানটি সংস্কৃতি চর্চা শুরু করলেও কিছু লোকের কারণে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব টেকসই হয়নি। অথচ ফরিদগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমি তাদের কার্যকালে উপজেলার গণ্ডি পেরিয়ে জেলা সদরেও সাড়া ফেলেছিল। সরকারিভাবে উপজেলা পর্যায়ে শিল্পকলা একাডেমি স্থাপনের প্রক্রিয়া থাকলেও ফরিদগঞ্জে তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। যদিও শিল্পকলা একাডেমি নামে একটি কমিটি রয়েছে। যার সভাপতি পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা শিক্ষা অফিসার। কয়েক বছর পূর্বে কমিটি গঠনের পর ক'টি সভা হয়। এরপরই তার কার্যক্রম থেমে গেছে।
ফরিদগঞ্জের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারছে না স্থানাভাবে। উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম থাকলেও সাউন্ড সিস্টেম না থাকায় সেটিও তেমনটি ব্যবহার উপযোগী নয়। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো চিত্রাঙ্কন, সঙ্গীত এবং নৃত্য প্রশিক্ষণ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকছে। নাটক নিয়ে অদ্যাবধি কেউ কাজ শুরু করতে পারে নি।
ফরিদগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে উপজেলা সদরে আয়োজিত বিজয় মেলায় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বছরে অন্তত একবার তাদের পারফরমেন্স উপস্থাপন করতে পারলেও বিজয় মেলাও নিয়মিত হয় না। ফলে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর শিল্পীরা তাদের প্রতিভা তুলে ধরার উপযুক্ত কোনো মাধ্যম খুঁজে পাচ্ছে না।
ফরিদগঞ্জ নবীন কচি-কাঁচার মেলার সংগঠক শামীম হাসান ফরিদগঞ্জের সংস্কৃতি অঙ্গন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, আমাদের সংগঠনে প্রতি সপ্তাহেই চিত্রাঙ্কন ও সঙ্গীতের ক্লাস হচ্ছে। আমরা সংগঠনের পক্ষে ফরিদগঞ্জে একটি বিজ্ঞান মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছি। এছাড়া ঢাকায় কচি-কাঁচার মেলার কেন্দ্রীয় মঞ্চে গীতি আলেখ্য অনুষ্ঠান হয়েছে। আমাদের শিশু শিল্পীরা প্রতিভাবান হলেও তাদের প্রতিভা উন্মেষের জন্যে প্রয়োজন তার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু ফরিদগঞ্জে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। আমাদের জন্যে একটি স্থায়ী মঞ্চ প্রয়োজন। যেমনটি চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে জেলা সদরের সংগঠনগুলো তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারছে।
ফরিদগঞ্জ সঙ্গীত একাডেমী ও নাট্য থিয়েটারের সভাপতি আমান উল্যাহ আমান আক্ষেপ করে বলেন, শুধুমাত্র সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকার কারণে আমরা দিনের পর দিন পিছিয়ে পড়ছি। এখন সরকারি বিভিন্ন দিবসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যে সকল শিক্ষার্থী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে, তাদের সকলেই আমাদের কোনো না কোনো সংগঠন থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। বিভিন্ন দিবসে আমরা নিজেরাই খোলা আকাশের নিচে অনুষ্ঠান করে থাকি।
রূপসা সঙ্গীত নিকেতনের পরিচালক কার্তিক কুরী বলেন, আমরা কোনো সহযোগিতা পাই না। সঙ্গীত চর্চা করি এবং চেষ্টা করছি নিজের এলাকায় ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে। সরকারিভাবে সংগঠনগুলোকে তাদের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করলে ভালো হতো।
চান্দ্রা খেলাঘর আসরের পরিচালক আহসান হাবিব নেভী বলেন, আমরা নিজেদের উদ্যোগে নিয়মিত সঙ্গীত, নৃত্য ও সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এসব সংগঠনকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা। নিয়মিত অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রয়োজন মঞ্চ । কিন্তু গ্রাম তো বটেই, উপজেলা সদরেও এর কোনো ব্যবস্থা নেই।
ফরিদগঞ্জ শতফুল খেলাঘর আসরের পরিচালাক গোলাম হোসেন রাব্বী বলেন, আমরা নিজেরাই অভিভাবকদের সহযোগিতা নিয়ে নিয়মিত চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, নৃত্য এবং সঙ্গীত চর্চা অব্যাহত রেখেছি। প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে এবং নিয়মিত এসব বিষয়ে অনুষ্ঠানমালা হলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতো এবং অভিভাবকরাও তাদের শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি চর্চায় আরো অগ্রসর করতে অগ্রণী হতেন।
ক'জন অভিভাবক বলেন, সরকারিভাবে শিল্পকলা একাডেমির কমিটি রয়েছে। কমিটি তাদের কার্যক্রম চালাতে হবে এবং উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামকে সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী গড়ে তুলতে হবে। নচেৎ ঘরেই সীমাবদ্ধ থাকবে ফরিদগঞ্জের সংস্কৃতি অঙ্গন এবং ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়বে।