শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে চলছে তারুণ্যনির্ভর স্বরলিপি নাট্যগোষ্ঠী
অনলাইন ডেস্ক

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বরলিপি নাট্যগোষ্ঠী সমাজের উন্নয়নে মঞ্চনাটকের মাধ্যমে সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছে। এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে ২০১০ সালের পহেলা ডিসেম্বর। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অদ্যাবধি বেশ সুনামের সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে নাটক পরিবেশন করে আসছে সংগঠনটি। ইতোমধ্যে স্বরলিপি নাট্যগোষ্ঠী বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সহযোগী সদস্য পদ লাভ করেছে।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এম.আর. ইসলাম বাবু বলেন, অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ এ অবস্থায় এসেছি। নাটকের প্রতি আমার একটা ভালোবাসা ছিলো। ১৯৯৭ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষে অগ্নিতরুণ নাট্যগোষ্ঠীর মাধ্যমে আমার নাট্যজীবন শুরু। পরে নানাবিধ কারণে উন্মুক্ত ভাবনাকে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রত্যাশায় ২০০৯ সালের দিকে পরিকল্পনা করি একটি তারুণ্যনির্ভর নাট্যদল তৈরি করবো। জল্পনা-কল্পনা থেকে একসময় মনে মনে ‘স্বরলিপি’ নামটিও ঠিক করে ফেলি। অগ্নিতরুণ থেকে সরে এসে ২০১০ সালের জুন মাসের দিকে ১ম সভা করি কোড়ালিয়া রোডস্থ আমার নতুন বাসায়। সে সভায় কোড়ালিয়া এলাকার কিছু ছোটভাইকে আহ্বান করি। কিন্তু তারা তেমন সাড়া দেয়নি। নিরাশ হলাম না। সীমা ভাবী, আমার ছাত্র সাইফুল, আমার ছোটবোন ও আমিসহ মাত্র ৪ জন নিয়ে আমার বাসায় বসলাম। তারপর ২য় সভা করলাম কোড়ালিয়া এলাকার সীমা ভাবীর বাসায়। সীমা ভাবী, বন্ধু নাহিদসহ আরো ক’জন নিয়ে ২য় সভা করলাম। এভাবেই শুরু হলো পথচলা।

বন্ধু কবি ও নাট্যকার জসিম মেহেদীর সম্পর্কে বিভিন্ন জনের কাছে শুনেছি, তিনি নাকি ভালো নাটক লিখেন ও অভিনয় করেন। তার শরণাপন্ন হলাম। খুবই বন্ধুসুলভ আচরণ করলেন। তিনি যে নাটকপাগল মানুষ তা প্রমাণ পেলাম। স্বরলিপির জন্যে উদার মনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। জসিম মেহেদীর কাছে মঞ্চায়নের জন্যে নাটক চাইলাম। তিনি ‘একাত্তরের তারামন’ নাটকটি লিখে দিলেন। খুবই চমৎকার একটি নাটক। ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর স্বরলিপি আত্মপ্রকাশের মাত্র ৮ দিনের মাথায় ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় জসিম মেহেদীর লেখা ‘একাত্তরের তারামন’ নাটকের মধ্য দিয়ে প্রথম নাটক মঞ্চায়ন হলো। লোকবল ও নানা ধরনের পারিপাশির্^ক সমস্যার কারণে যদিও প্রথম নাটকটি দক্ষতার সাথে মঞ্চে আনতে পারিনি, দলের নাটক মঞ্চায়নের স্বার্থে ও কিছুটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে উক্ত নাটকে আমি নিজে ৮টি চরিত্রে অভিনয় করেছি। যদিও অভিনয়ের মান বলতে অনেকাংশেই দুর্বল ছিলো। তবুও মঞ্চায়ন করতে পেরেছি, সেখানেই সার্থকতা। প্রতিষ্ঠার পরপরই স্বরলিপির পথচলায় অভিনয় ও সাংগঠনিক কাজে যাদের আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছি এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, তাদের মধ্যে রয়েছেন কবি ও নাট্যকার জসিম মেহেদী, লেখক আলমগীর হোসেন আঁচল, শেখ আল-মামুন, তাফাজ্জল হোসেন তাফু, নাট্যাভিনেতা মেহেদী হাসান জীবন, গীতিকার কবির হোসেন মিজি, নাট্যাভিনেতা হোসাইন ইয়াছিন, সুমন, মিল্টন, লতা, ইশা, দুলাল সরকার, হ্যাপিসহ অনেকে।

পরে দর্শকদের ভালোবাসা নিয়ে একের পর নাটক পরিবেশন চলমান থাকে। বর্তমানে স্বরলিপিতে যারা অভিনয় ও সাংগঠনিক কাজে নিরলসভাবে ভূমিকা পালন করছেন তাদের মধ্যে তাফাজ্জল হোসেন, মাইনুল হোসেন, মাসুম বেপারী, মোখলেছুর রহমান, নাজমুল, গৌতম, নাসিব, মিরাজ, শ্রাবণী, সবুজ, ফাতেমা, রুবি, ইভা, মরিয়ম, রিফাত, জিদান, রত্না, সাকিব, মিলি, সানজিদা, সানিসহ অনেকে আছেন।

ইতোমধ্যে স্বরলিপি একাত্তরের তারামন (রচনা : জসিম মেহেদী), দ্যা ম্যাড (রচনা : জসিম মেহেদী), ধানমন্ডি ৩২ (রচনা : এম. আর. ইসলাম বাবু), বিদ্যামন্ত্র (রচনা : আক্রাম খান), তিনটি আপেল (রচনা : জসিম মেহেদী), কদমফুল (রচনা : এম. আর. ইসলাম বাবু), সন্দেহ (রচনা : এম.আর. ইসলাম বাবু), পথনাটক পরিত্রাণ (রচনা : এম. আর. ইসলাম বাবু), কংসবধ (রূপান্তর : এম. আর. ইসলাম বাবু), মহিসাসুর বধ (রচনা : এম. আর. ইসলাম বাবু), স্মৃতিতে অম্লান বঙ্গবন্ধু (রচনা : আবু হানিফ) নামের নাটকগুলোর বিভিন্ন মঞ্চে শতাধিক প্রদর্শনী হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আপদ’ নাটকটির মহড়া চলমান।

বাবু বলেন, নাটক করতে গিয়ে জীবন-জীবিকায় অনেক সমস্যা হয়েছে। বহু সময় ও নিজস্ব অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। তারপরও নাটক করছি। সমাজ বিনির্মাণে নাটকের খুবই প্রয়োজন। ইতিহাস-ঐতিহ্য, ঘটে যাওয়া ঘটনা নাটকের মাধ্যমে দর্শকদের সামনে তুলে ধরা যায়। যা থেকে দর্শক ধারণা পায়। স্বরলিপির পথচলায় যাদের সহযোগিতা পেয়েছি তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আক্রাম খান, শহীদ পাটোয়ারী, শুকদেব রায়, মঈনুদ্দিন লিটন ভূঁইয়া, হারুন আল রশীদ, তপন সরকার, শরীফ চৌধুরী, রুমা সরকার, অনিমা সেন চৌধুরী, রূপালী চম্পক, অ্যাডঃ আবুল কালাম সরকার, গোবিন্দ মণ্ডল, মৃণাল সরকার, মাহাবুব আলম, নূর মোহাম্মদ মুন্না, অজিত দত্ত, কার্তিক সরকার, বিরেন সাহা, বন্ধু নয়ন, মরহুম ইয়াহিয়া কিরণ, প্রয়াত হরি মণ্ডল, কেশব চন্দ্র সুরসহ অনেকে। এছাড়াও জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার, মাসুদ দেওয়ান, মামুন, জুয়েল, সফিকুলের প্রতিও স্বরলিপি পরিবার কৃতজ্ঞ।

২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর স্বরলিপি চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে নাট্যপ্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। উক্ত প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক ছিলেন নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক মঈনুদ্দিন লিটন ভূঁইয়া। স্বরলিপি নাট্যগোষ্ঠীর সর্বশেষ নাটক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে ১৫ আগস্টের কালো রাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের উপর রচিত। নিজস্ব পরিবেশনায় নাটক ‘ধানমন্ডি ৩২’ ২০২১ সালের মার্চ মাসে এবং তার আগে ১২, ১৩ ফেব্রুয়ারি নিজস্ব আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে মঞ্চায়ন হয়। নাটকটির কোরিওগ্রাফি, উপস্থাপন, অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এ পর্যন্ত নাটকটির ১১টি প্রদর্শনী হয়েছে। ১৫ আগস্ট ২০২২ চাঁদপুর জেলা শিল্পকলায় জেলা প্রশাসনের আমন্ত্রণে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় ‘ধানমন্ডি ৩২’ নাটকটির ১২তম মঞ্চায়ন হয়। স্বরলিপির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুদের মধ্যে মূল্যবোধ জাগ্রত করা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আবেদনকে তুলে ধরা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আদর্শ প্রজন্ম গড়ে তোলা, বাঙালি সংস্কৃতির চর্চাকে শিশুর বিকাশে কার্যকর করে তোলা, অভিভাবক মহলে দেশপ্রেম তৈরি করা, দরিদ্র মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় সহায়তা করা, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার করা, ইভটিজিং, মাদকমুক্ত করতে সচেতনতা তৈরি করা ইত্যাদি। নাটক মঞ্চায়নের পূর্বে শিল্পীরা অনেক পরিশ্রম করে থাকে।

সবশেষে দর্শকদের উদ্দেশে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এম.আর. ইসলাম বাবু বলেন, মঞ্চনাটক দেখুন, সমাজ সংস্কারে অংশ নিন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়