শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

মৎস্যকন্যার দেখা

পরিবারের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে এসে আমি একা তীরে হাঁটছি; সব চাপ দূরে সরিয়ে। ছোট ছোট ঢেউ আছড়ে পড়ছে পায়ে। হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ নীল রঙের একটি লেজ চোখে পড়ে। ভাবি, এখানে তো বড় মাছ আসার কথা নয়। তাই লেজটিকে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টোপথে হাঁটা শুরু করি। আর তখনই কে যেনো আমার পা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে! আতঙ্ক আর ভয়ে পায়ের দিকে তাকাই। একি; একটা মেয়ে দু হাতে আমার পা ধরে আছে। আরেকটু পিছে তাকিয়ে দেখি, মেয়েটির পায়ের জায়গায় লেজ-সেই নীল লেজটি! এ যে রূপকথার মৎস্যকন্যার লেজ! ভাবতাম, তারা থাকে রূপকথাতেই-বাস্তবে মৎস্যকন্যা বলে কিছু নেই। কিন্তু আমার এ বিশ্বাস ভেঙে গেলো।

‘আমি আয়শা, ভবিষ্যৎ থেকে তোমাকে সতর্ক করতে এসেছি।’ মৎস্যকন্যার মতো দেখতে মেয়েটি বললো।

আমার মাথায় রাজ্যের প্রশ্ন ওলটপালট ঘুরছিলো। সব ভুলে যাচ্ছিলাম। শুধু দুটো শব্দ বলতে পারলাম-‘তুমি কে?’

মেয়েটি মুচকি হাসি দিয়ে বললো, ‘আমি ভবিষ্যতের আয়শা। তুমি আর আমি একই মানুষ। তবে আমি ২০৪১ সাল থেকে এসেছি। আমাকে দেখতে একজন মৎস্যকন্যার মতো লাগছে। কারণ আমি আসল মৎস্যকন্যাদের সাহায্য নিয়ে সময় ভ্রমণ করেছি। আমাদের সময় সীমিত। তাই যেতে যেতে আমরা কথা বলি।’

এই বলে সে আমাকে সমুদ্রের পানিতে টেনে নিয়ে গেলো। আমি বেশ হকচকিয়ে উঠলাম। তবু বাধা দিতে পারিনি। আমি তার হাত ধরে সাঁতার কাটতে থাকলাম। গভীর পানিতে গিয়ে দেখি, একটি প্রবেশপথ জ্বলজ্বল করছে। আমরা সেই পথে ঢুকে পড়ি। ঢোকার পর বুঝতে পারি, শূন্যতায় এসে পৌঁছেছি। বলি, ‘আমায় কোথায় নিয়ে এলে?’

আমার কপালে ঘাম জমা হতে থাকে। ভবিষ্যৎ আমার হাত শক্ত করে ধরে বলে, ‘আমরা এখন সময়ের শূন্যতায় আছি। আর এটি সময় ভ্রমণের দরজা। একটু পর আমরা ২০৪১-এ পৌঁছাবো।’ ভবিষ্যৎ আয়শার লেজ অদৃশ্য হয়ে দুটো পা দেখা যাচ্ছে। ‘মৎস্যকন্যারা কি আসলেই আছে?’ আমি প্রশ্ন করলাম।

‘হ্যাঁ, কিন্তু তারা অনেক গভীর সমুদ্রে থাকে। তাই মানুষ তাদের খুঁজে পায় না। মৎস্যকন্যারা পৃথিবীর অভিভাবক! তারা সময় ভ্রমণ করে পৃথিবীর খেয়াল রাখে। ভবিষ্যতে অনেক বড় বিপদ আসছে। তাই মৎস্যকন্যারা তোমাকে বেছে নিলো।’

তখনই আরেকটি জ্বলন্ত পথ দেখা গেলো। আমরা সেই পথে ঢুকে পড়ি। প্রবেশপথ পার হওয়ার পরই একটি ঘরের উপর পড়ে গেলাম। ঘরটা বেশ সুন্দর-গাছপালা দিয়ে সাজানো।

‘এটি আমার ঘর’-ভবিষ্যতের আয়শা বললো। সে আরও বলে, ‘তুমি আরাম করে বসো, এইখানে তোমার অক্সিজেন মাস্ক লাগবে না, গাছগুলোর জন্যে। বাইরের আবহাওয়া অনেক দূষিত। তাই কেউ মাস্ক ছাড়া বের হতে পারে না।’ এই কথা সে এতো সাধারণভাবে বললো যে, আমি অবাক হলাম।

সে একটি হলোগ্রাম খুলে বললো, ‘এটি এই কালের কম্পিউটার। আমি তোমাকে দুনিয়ার খবর সার্চ করে দেখাই।’ সে কিছু একটা টিপলো এবং পৃথিবীর মানচিত্র ভেসে উঠলো। মানচিত্রে সব মহাদেশ দেখতে ছোট এবং অন্যরকম দেখাচ্ছে। ‘যুগ যুগ ধরে মানুষ পরিবেশদূষণ করে চলছে এবং তার ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন হয়েছে। তোমাদের সময়ের ৩০ শতাংশ ভূমি এখন আর নেই-পানিতে ডুবে গিয়েছে। বাংলাদেশ কিছুদিন পর পানির নিচে চলে যাবে। তাই আমি ও আমার পরিবার অস্ট্রেলিয়ায় চলে এসেছি। দেশের অন্যরা একে একে পালাচ্ছে। যারা পালাতে পারবে না, তারা পানিতে ডুবে মারা যাবে। মাতৃভূমি হারানোর কষ্ট দুনিয়ায় আস্তে আস্তে সবাই পাবে। যেই দেশগুলো ডোবেনি, সেগুলো আগুনে পুড়ছে। মানুষ যা ক্ষতি করার তা করে ফেলেছে। আমরা এখন আর পৃথিবীকে ঠিক করতে পারবো না।' ভবিষ্যৎ আয়শা ঢোক গিললো। আমি আমার বিজ্ঞান ক্লাসের কথা বললাম, ‘আমার শিক্ষক বলেছেন যে, আমাদের আরও সময় আছে-২০৩০ পর্যন্ত।’ ভবিষ্যৎ আয়শা বললো, ‘তাই আমি আজ তোমাকে নিয়ে এসেছি। তোমাদের আরও অনেক সময় আছে। দয়া করে পরিবেশদূষণ কমিয়ে জলবায়ুর পরিবর্তন থামাও। আমাদের আর সময় নেই। তোমাকে এখন ফিরে যেতে হবে। আমরা সবাই তোমার ওপর আশা রেখেছি। মানুষদের ঠিক পথে নিয়ে গিয়ে এই পৃথিবীকে বাঁচাবে তুমি।’

ভবিষ্যৎ আয়শা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর আমার কানের কাছে এসে ২০২১ বলে আমার চোখ বন্ধ করে দিলো। চোখ খোলার পর দেখি, আমি আবার সেই সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে আছি। আমি আবার হাঁটা শুরু করি-এবার আমি বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে হাঁটছি। আর ভাবছি, অনেক বড় দায়িত্ব আমার। আসলেই কি এই দুনিয়ার পরিণতি এখন আমার হাতে?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়