শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

চেষ্টাই সফলতার পথ দেখায়

ইশরাত জাহান তন্নি
চেষ্টাই সফলতার পথ দেখায়

আমাদের আশেপাশের যোগ্য মানুষদের নিয়ে লিখতে গেলে অনেক কিছু ভাবতে হয়। কারণ তারা তাদের এ সাফল্যের পেছনে কঠোরতম অধ্যাবসায় করে আজ সম্মানিত ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। তাই তাদের নিয়ে লিখতে গেলে ভয় তো একটু হওয়ারি কথা। যাক মূল গল্পের সূচনাতে যাই। দেখি কি লিখতে পারি তাদের জন্য।

নিহারি বিভাগের রায়পুরে ঝুমুরদের গ্রাম। তার বাবা ব্যবসায়ী জোসেফ হাওলাদার। ঝুমুরদের পরিবারে লোকসংখা ৬ জন। তারা দুইভাই দুইবোন। ঝুমুর, নিপুন, নিহারন, নিহরাফ ও তার বাবা মা। ঝুমুর সবার ছোট। মোটামুটি জোসেফ হাওলাদার তার ছেলেদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ করে সমাজ সেবায় নিয়জিত করেছেন এবং তার ছেলে দুইজন ও মেয়ে একজনকে সমাজতান্ত্রিক নিয়মে বড় অনুষ্ঠান করে বিবাহ দিয়েছেন। যেহেতু উনি বড় ব্যবসায়ী সে সূত্রে অনেক লোকের সাথে আলাপন। তাই অনুষ্ঠান ও খুব ঝাঁকঝমক করে করতে হয়েছে। বাকি আছে শুধু ঝুমুর। এখন ওর বয়স আঠারো পেরিয়ে উনিশ পড়বে। জোসেফ হাওলাদার এর সাথে চলাচল করা অনেকে ওর বিয়ের প্রস্তাব এনেছে। উনি রাজি হননি কারণ উনার মেয়ে ঝুমুর পড়াশোনা করতে চায়। সে চায় পড়াশোনা করে জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করুক। আর তার জন্য তাকে অনেক দূর যেতে হবে, পড়তে ও হবে। ঝুমুরের বয়স যখন উনিশ পড়ে ছয় মাস হল তখন একজন আবার আসল তার বিয়ের সমন্ধ নিয়ে। ছেলে খুব ভালো, পাকাপোক্ত ঘর। একটা কোম্পানিতে ম্যানাজার পোস্টে আছেন এবং তারা কোন যৌতুক দিতে ও রাজিনাহ বা নিতে ও রাজিনাহ। তখন জোসেফ হাওলাদার বলেন আমি বাড়ি গিয়ে কথা বলে জানাবো।

সন্ধ্যায় চা খাওয়ার আড্ডায় জোসেফ হাওলাদার তার সহধর্মিণীর সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তখন উনি বলে মেয়ে যখন আছে সমন্ধ আসবেই। ভালো হলে কথা বলেন আর আমাদের ঝুমুরের যেহেতু একটা ইচ্ছে সে পড়াশোনা করে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত হতে চায় তাকে সে সুযোগ দিতে হবে। পড়াশোনা বন্ধ করা যাবেনা। তখন জোসেফ হাওলাদার পরের দিন সমন্ধ আনা ব্যক্তির সাথে সকল কিছু বলেন। তখন উনি বলে সমস্যা নেই পাত্র যেহেতু শিক্ষিত চাকুরীজীবী মানুষ সে বুজবে। দুইপক্ষের কথা একমত। এখন ছেলে পক্ষ বিয়ের দিন পাকাপোক্ত করতে আসতে চাচ্ছে। জোসেফ হাওলাদার বলেন আগামী সপ্তাহের বৃহস্পতিবার আপনারা আসেন। তারপর অপেক্ষার প্রহর শেষ করে পাত্রপক্ষ এসেছে বিয়ের কথা হয়েছে এখন তারা আংটিবদল নিয়ে কথা বলতে চায়। তারা চায় আজই বিয়ের পর্ব শেষ করতে তখন জোসেফ হাওলাদার বলেন আপনারা যে আমাদের কিছুই বলেন নি আগে। এক পর্যায়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। ঝুমুর চলে যায় শ্বশুর বাড়ি। এভাবে তাদের বিয়ের তিন বছর কেটে গেল। ঝুমুর একটু নীরব প্রকৃতির মেয়ে, সেসব সময় শান্তশিষ্ট থাকতে পছন্দ করে। ঝুমুর খুব পরহেজগার মানুষ। সে সপ্তাহে চারটি রোজা রাখে, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে। পর্দায় চলাচল করে। এক কথায় ডুমুর ফুলের মতো। ঝুমুর এখন অনার্স কোর্সে। তার প্রতিষ্ঠানের নাম তৃণমূল সরকারি কলেজ। সে খুব ভালো মত পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ একদিন চিঠি আসে তাদের বাসায়! চিঠিতে লেখা তার স্বামীর চাকুরী চলে গেছে এবং সে কোম্পানী লুটপাট হয়েছে বলে বন্ধ করে দেওয়া হয়। লুটপাট হয়েছে এ বিষয়টা ঝুমুর শুনেছে। তাই বলে যে একিবারে বন্ধ হয়ে যাবে সেটা সে বুঝতে পারেনি। চিঠি আাসার পনেরো দিন পর তার স্বামী বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতেছে। উনি বলেন, পরিবারের খরচ, তোমার পড়াশোনার খরচ এগুলো আমি কোথা থেকে আনব। বাসা থেকে শুরু করে সকলে দেখোনা কেমন আচরণ করতেছে। তখন সে বল্লো থাক চিন্তা করোনা রিজিকের মালিক আল্লাহ। নিশ্চয়ই উনি কিছু একটার সন্ধান করে দিবেন। ঝুমুর গভীর রাতে সৃষ্টিকর্তার নিকটে জায়নামাজে দুইহাত তুলে কাঁদে এবং সকল কিছুর জন্য সেফা চান। যেহেতু ঝুমুরের বাবা ব্যবসায়ী উনি বলেছেন তার ব্যবসায় যোগ দিতে। পরে ঝুমুর বলে নাহ বাবা আমরা চেষ্টা করি দেখি কী করতে পারি। ধৈর্য্য ধরে থাকি। আর আমি আমার মত করে দেখি কোন চাকুরী পাই কি-না। আল্লাহ বলছে চেষ্টা করতে। আমি শোকরিয়া আদায় করে সবর করে থাকি।

ঝুমুর আরো বলে বাবা, একদিন আমার ও সব হবে! তবে কষ্ট হবে একটু, আর সময় লাগবে, প্রচুর ধৈর্য্য লাগবে তবে সব হবে! আর বাবা পরিস্থিতি নিয়ে কখনো হতাশ হতে নেই, আল্লাহ চিরকাল কাউকে শূন্য রাখেনা। কোন না কোন কিছু দিয়ে ঠিকই পূর্ণ করে দেন। আমিও নিরাশ হবোনা ইনশাআল্লাহ্। বিপদের চূড়ান্ত পর্যায়ে আল্লাহর সাহায্য আসে।

ঝুমুরের পড়াশোনা খুব ভাল। সে সেমিস্টার পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। যেহেতু তাদের কলেজ সরকারি। তাই পিন্সিপাল সাহেব তার মার্ক দেখে উপরোক্ত কর্মীদের সাথে কথা বলে তাকে সোর্স কোম্পানিতে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত করেছেন এবং সকল প্রকার কাগজ পত্রের সমস্যা উনি সমাধান করে উনি নিজে সোর্স কোম্পানীর আইডি কার্ড ঝুমুর কে দিয়েছেন। ঝুমুরের পড়াশোনা, ঘর সামলিয়ে বেশভালোই কেটে যাচ্ছে তাদের জীবন। ঝুমুর রোজ গাড়ি দিয়ে অফিসে যাতায়াত করে। সে বয়সে ছোট হলেও কাজের দক্ষতা দেখিয়ে সকলের মন জয় করে নিয়েছে। তাকে স্যালুট জানায় সকল স্টাফ, কলিগরা।

এরাই মধ্য সে অনেক বিদেশী ক্লাইন্ডের মিটিং করেছেন এবং কোম্পানির শেয়ার অনেক বাড়িয়েছেন। নিজে কয়েকটা প্রজেক্টের কাজ করেছেন। বহুরাত নিদ্রাহীন কাটিয়ে সে এখন অনেকটা প্রতিষ্ঠীত করেছে নিজেকে। এখন সে মাস্টার্স পাস করেছে। ভালো রেজাল্ট ও কাউন্ট করেছে। অফিস থেকে, কলেজ থেকে সে অনেক ট্রপি পেয়েছে। তার নিজের মতো করে নিজেকে অনেক গুছিয়ে নিয়েছে। একদিন সে শুয়ে শুয়ে ভাবে আমি তো আল্লাহর অশেষ কৃপায় সকল কিছু স্থায়ীভাবে গুছিয়ে এনেছি।এবার তাহলে আমি মাতৃত্বের স্বাদ নেয়ার পদক্ষেপ নেই।

সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ঝুমুর একজন কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তার নাম রেখেছেন ইমতিহান ফারহানি। তাকে অনেক আদর স্নেহ করে লালন-পালন করতেছেন এবং ফুটফুটে কন্যা সন্তান নিয়ে খুব খুশিতেই কেটে যাচ্ছে তাদের দিন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়