প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
রায়হান চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। তার পিতা হারুন সাহেব একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকুরি করেন। তার মা আফরোজা হারুনও একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি করেন। রায়হান তার শ্রেণীর মধ্যে একজন মেধাবী ছাত্র এবং সে কখনো মিথ্যা কথা বলে না। এজন্যে তার সহপাঠী ও শিক্ষকরা তাকে খুব ভালোবাসেন। রায়হানকে প্রতিদিন তার পিতা স্কুলে নিয়ে যান। মাঝে-মধ্যে তার মা তাকে স্কুলে নিয়ে যান। রায়হানের পিতা হারুন সাহেব প্রতিদিন দেরি করে অফিসে যান। প্রতিদিনের মতো একদিন সকালে তিনি রায়হানকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্যে বের হলেন। এমন সময় তার অফিস থেকে তার ম্যানেজার তাকে কল করলেন। তিনি হারুন সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন, হারুন সাহেব আপনি কোথায়? আপনি এখনো অফিসে এলেন না। তিনি বললেন, স্যার আমিতো রাস্তায় যানজটে আটকা পড়েছি। আমি দশ-পনের মিনিটের মধ্যে অফিসে পৌঁছে যাবো।
রায়হান মনে মনে চিন্তা করলো যে, আব্বু এইমাত্র আমাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হলেন। অথচ তিনি তার স্যারকে বললেন তিনি যানজটে আটকা পড়ে আছেন। এর কয়েকদিন পর হারুন সাহেব রায়হানকে স্কুলে যাওয়ার জন্যে তৈরি হতে বললেন।
রায়হান তৈরি হয়ে এলে বাবা-ছেলে মিলে একসাথে নাশতার টেবিলে বসলেন। এমন সময় হারুন সাহেবের অফিস থেকে তার ম্যানেজার কল করলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হারুন সাহেব আপনি কোথায়? আপনি এখনো অফিসে এলেন না? তিনি তার ম্যানেজারকে বললেন, স্যার আমি আমার ছেলেকে নিয়ে তার স্কুলে আসছি। আমার আসতে একটু দেরি হবে। রায়হান মনে মনে আবার চিন্তা করলো যে, আব্বু আমাকে নিয়ে এখনো নাশতার টেবিলে অথচ তিনি তার ম্যানেজারকে বললেন, তিনি আমাকে নিয়ে স্কুলে আসছেন। এভাবে তিনি তার অফিসের ম্যানেজারের সাথে প্রায়ই মিথ্যা বলতেন।
রায়হান চিন্তা করে যে, মনে হয় এভাবে মিথ্যা কথা বলা কোনো অপরাধ নয়। তাই প্রায়ই আব্বু মিথ্যা কথা বলেন। একদিন সন্ধ্যাবেলা হারুন সাহেব তার অফিস থেকে বাসায় ফোন করলেন। তখন বাসায় কেউ নেই, শুধুমাত্র রায়হান একা। সে বাসায় একা একা বসে টেলিভিশন দেখছে। তার মা এখনো অফিস থেকে বাসায় ফিরেননি। বাসায় কেউ না থাকায় রায়হান ফোনটি রিসিভ করলো। হারুন সাহেব রায়হানকে জিজ্ঞেস করলেন, আব্বু তোমার আম্মু কেথায়? সে উত্তর দিলো, আম্মু রান্নাঘরে রান্না করছে। আর আমি পড়ার টেবিলে বসে অঙ্ক করছি। হারুন সাহেব ছেলের কথা শুনে ফোন রেখে দিলেন। এর দুই ঘণ্টা পর হারুন সাহেব বাসায় ফিরলেন। তিনি বাসায় ফিরে দেখলেন রায়হান বসে টেলিভিশন দেখছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আব্বু তোমার আম্মু কোথায়? সে উত্তর দিলো, আম্মু মোবাইলে ফ্লেক্সি দেয়ার জন্যে নিচে গিয়েছেন। হারুন সাহেব ফ্রেশ হওয়ার জন্যে বাথরুমে ঢুকলেন। বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখেন এখনো আফরোজা হারুন বাসায় ফিরেননি। তিনি রায়হানকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার আম্মু কোথায়? সে আমতা আমতা শুরু করলো। তিনি তাকে ধমক দিয়ে বললেন, কী আমতা আমতা করছো, তোমার আম্মু কোথায়? সে বললো, আম্মু এখনো অফিস থেকে বাসায় ফিরেননি। তিনি মোবাইল হাতে নিয়ে তার স্ত্রীর নাম্বারে কল দিলেন। কিন্তু তার নাম্বার বন্ধ দেখাচ্ছে। তিনি তার ছেলেকে গালিগালাজ করতে লাগলেন। এর আধা ঘণ্টা পর আফরোজা হারুন বিমর্ষ অবস্থায় বাসায় ফিরেন। হারুন সাহেব তাকে জিজ্ঞেস করলেন এতোক্ষণ কোথায় ছিলে? এতো বিমর্ষ কেনো? তিনি বললেন, আজ বাসায় ফেরার পথে আমাকে কিছু লোক কিডন্যাপ করতে চেয়েছিলো। আমার মোবাইলসহ সবকিছু ওরা নিয়ে গেছে, আমি কোনো রকম পালিয়ে এসেছি। হারুন সাহেব আরো রাগান্বিত হয়ে মিথ্যা কথা বলার জন্যে রায়হানকে মারধর করলেন। রাতে বিছানায় শুয়ে তিনি চিন্তা করতে লাগলেন, আমার যে ছেলে কোনদিন মিথ্যা কথা বলেনি সে কেনো আজ মিথ্যা কথা বললো। তার কারণ কী? চিন্তা করতে করতে তিনি আত্মোপলব্ধি করলেন। তিনি তার ছেলের সামনে তার অফিসের ম্যানেজারের সাথে প্রায়ই যে মিথ্যা কথা বলেন, এটা দেখে তার ছেলে এসব শিখেছে। তাই তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন আজ থেকে তিনি তার ছেলের সামনে এবং কোনো শিশুর সামনে কখনো মিথ্যা কথা বলবেন না। এমনকি জীবনে কখনো মিথ্যা কথা বলবেন না।