প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
জীবন সুন্দর তবে জীবনকে জীবনের মতো করে ভাবতে পারলে তা আরো দ্বিগুন সুন্দর হয়ে যায়। মানুষ সুদর্শন তবে তাদেরকে মানুষের চোখে দেখতে পারলেই তা সুদর্শন লাগে। আমরা মানুষ তাই সুদর্শন ব্যক্তি। তবে এমন ও মানুষ আছে যা আমাদের সমাজকে করে তুলেছে বিষাক্ত আর তিক্ততা তৃক্ততায় ভরা। যাদের জন্য সমাজের বেশির ভাগ মানুষের জীবন তিক্ততায় ভরে গেছে। না আছে চাওয়া না আছে পাওয়া আছে শুধু আহাকার আর শূন্যতায় গেরা। বলছিলাম সেই এক সমাজের একটি ছেলের আর্তনাদের কাহিনি। যা তাকে আজো ভয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
নাম তার আরফান। আর চারটা পরিবারের মতো আমাদের পরিবারটা ছিল না। যতটুকু পাওয়ার কথা তার চেয়ে ও অনেক পেয়েছি তবে যা চেয়েছি তা আর পাওয়া হয়নি। জন্মের পর থেকেই আদর ভালোবাসা বাবা মা কেমন ভাবে আদর করে ভালোবাসে তা আমার অজানা। তা আমি জানি না। তবে আমার জন্ম ধনি পরিবারে হয়েছিলো কোন কিছুর কমতি ছিলো না লোক বলে পরিবারের মা বাবা ছাড়া আর কেউ নাকি কখনোই আদর করে না ভালোবাসে না। তবে আমি পেয়েছি চাচা, চাচি, ফুফা-ফুপি প্রতিবেশিদের সবার থেকে এতো আদর পেয়েছি যে মনে হতো যে আদর তরা নিয়ে কারাকারি। সবার আদর পাওয়ার একটা কারণ আছে বটে তা হলো বাবার অনেক টাকা, বাবার টাকার কাছে সবাই সবাইকে বিক্রি করে দিয়েছিলো। বাবা মায়ের আদর দরকার হতো না কারন সবাই এতো পরিমান আদর দেখাতো যে আর কারো আদর ভালোবাসা প্রয়জনই হতো না। তবে সব থেকে দুঃখ জনক বিষয় হলো এইটা যে যখন জানি একটু একটু বুঝার বয়স হলো আমি বুঝলাম আসলে আমাকে কেউ ভালোই বাসে না।
সবাই বাবার টাকার জন্য ভালোবাসা দেখায় শুধু একজন ছিলো যে আমাকে সত্যিকারের ভালোবাসতো আর সে হলো আমার দাদু। যা ইচ্ছে যা চাওয়া পাওয়া তিনিই পূরণ করতেন আমার কোন ইচ্ছে তিনি অপূর্ন করতেন না। তবে সত্যিকারের ভালোবাসা যে বেশি দিন টেক না তা আমি আল্প বয়সেই বুঝতে পারি। চলে গেলেন আমাদের এতো হাহাকারের মাঝে রেখে। বিদায় নিলেন আমাকে আর্তনাদের দুনিয়াতে রেখে সবটা বোঝার আগেই চলে গেলো দাদু ও পারেতে। দাদুকে হারিয়ে অনেকে কষ্ট পেয়েছিলাম। তবে এতোটা ও ফিল করি নাই যে সে চলে গেলে আমি এতোটা একা হয়ে যাবো। জন্মের পর থেকেই বাবা ভাই কেনো যেনো অবহেলা করতো। সবার কাছে অবহেলার পাএ হয়ে গেলাম। যখন থেকে আমার বয়স ৮ বছর তখন আমার জীবনে এক কালো বৈশাগের ঝড় নেমে এসেছিলো। বাবার হাজার হাজার টাকার কাছে আমি হয়ে গেছিলাম আমারি এক দূর সম্পর্কের চাচার শিকার। চাচা আমার খুব আদর করার জন্য বাবার টাকা হাতানোর জন্য। আমাকেই আপহরন করে নিলো। বুঝতেই পারিনি তার সাথে সাথে তার কথা মতো তার সাথেই চলতে শুরু করলাম। দিন পেরিয়ে রাত নেমে এলো ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমি লঞ্চে। বয়স তখন আমার ৮ বছর। মায়ের জন্য কান্না করতে শুরু করে দিলাম। ছোট ছিলাম তাই চাচা আমার কান্না থামাতে পারলো না। একটা সময় সে নিজে বাঁচার জন্য আমাকে মাঝ নদীর মাঝে চলন্ত লঞ্চ থেকে ফেলে দেয়। পরে যাওযার পরে অনেক পানি খেয়েছিলাম হাউ মাউ করে।
হাত পা ছুটাছুটি করছিলো কেউ ছিলো না স্রোতে ভেসে যাচ্ছিলাম জ্ঞান হারালাম। তারপর কিভাবে বেঁচে গেলাম বুঝতেই পারলাম না। আল্লাহর রহমতে বেঁচে ফিরলাম মায়ের কোলে কিন্তু এই বেঁচে আসার পর থেকে যে আমার ভালোবাসার মানুষরা যে শত্রুর রূপান্তর হবে তা আমি কখনো ভাবি নি। আস্তে আস্তে একে একে শত্রু হতে লাগলো। নিজের বাড়িতে থাকাটাই এখন ঝুঁকিপূর্ন হয়ে উঠলো। বাড়িতে আর থাকা গেলো না। বাড়ি ছেড়ে চলে গেলাম আন্টির বাড়িতে সেখানে ৪-৫ মাস থাকি তার পর নানুর বাড়িতে চলে যাই সেখানে ৭-৮ মাস ছিলাম। সবার সাথে নতুন করে পরিচিত হওয়া। এতে সেখানে ও থাই মিটে নাই। সেখান থেকে ও চলে গেলাম ভাড়া বাড়িতে। সেখানে যাওয়ার পর একদম বন্দি হয়ে গেলাম। নানা মাঝে মধ্যে আসতো দেখা করে চলে যেতো। ভাড়া বাড়িতে এতো এই প্রথম মায়ের সাসন ভালোবাসা তৃক্ততা বিক্ততা সব পেলাম। এত সাসন আমার উপর দিয়ে যেতো ভাই যতো অন্যায় করতো সব দোষ আমাকে দিতো বাসায় যাই হতো তার ভার আমার উপর পরতো আর তা নিয়ে আমাকেই সাসন করতো পরিবারের ভিতরে আমি কেমন যেনো পর পর হয়ে যাচ্ছিলাম। কেমন যেনো পর করে দিচ্ছিলো। মা ভাই বোন থাকান স্বত্বেও সবাই সব সময় আমার দিকেই আঙ্গুল তুলে কথা বলতো। আর মনে হতো যে এখানে আমি থাকা না থাকা নিয়ে কারোর কোন থাথা ব্যথা নেই। কিন্তুু কেনো আমার সাথে এরুপ আচরন করে তা আমি জানতাম না। তো এভাবেই সবার কথা শোনে সবার সাথে বেড়ে উঠছিলাম। বাবা দেশের বাহিরে থাকতো তবে বাবার সাথে তেমন কোন কথাই খমার হতো না। যত টুকু প্রয়োজন ততটুকুই বলতাম। এর চেয়ে বেশি কথা বলা হতো না। আমি যখন ক্লাস সেভেনে উঠি তখন বাবা একে বারে চলে আসে। বাবা চলে আসার পর নিজের বাড়িতে চলে আসি।
আসার পর আবার স্কুল পরিবর্তন করলাম বাবা দেশে চলে আসার পর থেকে তেমন আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো না বড় ভাই ঢাকা চলে যায় পড়াশোনা ছেড়ে আর আমি এখনো কোন রকমের লেগে আছি আরকি। স্কুলে যেতাম পড়াশোনা করতাম আর স্বাভাবিক মতে বন্ধুদের সাথে যতটা মজা করা যায় ততটাই করতাম। তবে রোজ রোজ বাবার কাছে বিচার যেতো যে আমি নাকি খারাপ হয়ে যাচ্ছি খারাপ ছেলেদের সাথে চলি আরো অনেক কিছু। বাবা ও তাকে এতটাই বিশ্বাস করতো যে আমার কথা শোনার ও চেষ্টা করতো না। তার কথা শুনে বাসায় এসে আমাকে অনেক কথা বলতো। এভাবে একদিন থেকে দু'দিন, দু'দিন থেকে চারদিন যেতেই লাগলো। এভাবে করতে করতে বাবা আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া শুরু করলো। কোন টাকা দিতো না। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে দিবে না। কোন রকম ফ্রেন্ডদের সাহায্যে মাধ্যমিকের ফরম ফিলাপ করি। এমন এক অবস্থার পরে যাই যে, আমার পরিবার আমাকে বাসা থেকে বের করতে মানা করে দেয়। বাসা থেকে বের হতে দেয় না। আস্তে আস্তে কোন মতে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলাম। তবে কেউ আমার সাথে কথা বলে না তেমন। ভাই-বোন কেউ না। মা যাই বলে তবে কোন সাহায্য করতে পারে না। মা সাহায্য করলেই মায়ের সাথে খুব রাগারাগি করে বাবা। যা আমার মা একদমই চায় না। আমার মা খুব শান্ত। সে শান্তিতে থাকতে চায়। তবে বাবা রোজ রোজ ঝামেলা করে থাকে। যেটা মায়ের মোটে ও পছন্দ ছিলো না।
এভাবেই মাধ্যমিকের রেজাল্ট পেলাম। ভালোই হয়েছে। সেই খুশিতে বাবার কাছে গেলাম। খুশিতে বাবাকে সংবাদটি দিলাম। কিন্ত কোন কিছু না বলে চলে যায়। কলেজে ভর্তি হবার সময় এসেছে তখন ও বাবাকে বলি কিন্ত বাবার একটাই কথা যেনো আমি ভর্তি না হই। বাবার কথাতে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। বাবার মুখে মুখে আমি কোন কথা বলি নি। চুপ করে শুনে গেছি কথা গুলো। কিছু বলার মতো ভাষা আমার জানা ছিলো না। কলেজে আবেদনের তারিখ চলে আসে। আমি কাউকে না জানিয়ে আবেদন করি। প্রাইভেট কলেজে চাঞ্চ পেয়েছি। ভর্তি হবার তারিখ চলে আসে বাবা কে জানাই বাকা সেই দিন খুব বকা দিয়েছিলো। কেনো তাকে না জানিয়ে আবেদন করলাম। কেন করলাম। তার কথা কেনো শুনি নাই। ভাইয়ের কাছে জানাই তবে ভাইয়ের ও একই কথা। কেনো কলেজে পড়বো। শুধু শুধু টাকা নষ্ট করবো কেনো। কোন কাজ করলেই তো পারি। কোন কিছু বলার সাহস হয় নি। তবে বাবার কাছে টাকা চাইলে বাবা মানা করে দেয়। ভাইয়া ও টাকা দিতে মানা করে দেয়। তাদের হাতে, পায়ে ধরি কিন্ত আমার ভর্তি হবার টাকা কেউ দিতেছিলো না। সবাই শুধু একটাই কথা আমি যেনো ভর্তি না হই। আমি আমার মতো করে চেষ্টা করতে লাগলাম। খাওয়া-দাওয়া কিছুই করতে পারছি না। কি করবো ? কিভাবে এতো টাকা মেনেজ করবো সেটাই বুঝতেছিনা। কারো কাছেই সাহায্য পাচ্ছি না। এক বন্ধুর থেকে টাকা ধার নিয়ে ভর্তি হলাম। বাড়ির সবাই আমার সাথে কথা বন্ধ করে দেয়। কেউ কথা বলে না। কলেজে যাওয়ার মতো টাকা নাই। বাবা টাকা দেয় না। ভাই ও দেয় না।
এই বয়সে আমি আমার বাবার সাথে কথা বলি না। আমি বলতে চাই তবে বাবা আমার সাথে কথা বলে না। মাকে যতটুকু কাছে পেয়েছি যতটুক আদর পেয়েছি তার থেকে এক চিমটি ও বাবার কাছ থেকে পাই নাই। আমার মনে পড়ে না বাবা কখনো আমাকে কোলে নিয়েছে কিনা। কখনো আমাকে খাবিয়ে দিয়েছে কিনা। কখনো আমাকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছে কিনা। মনে পড়ে না আমার। মনে নেই আমার। আমার ইচ্ছে কি ? আমার চাহিদা কিসে ? কেউ জানে না। কখনো আমার বাবার কাছে আমি বলতে পারি নি। আমি আমার ইচ্ছে , চাহিদা নেই বললেই চলে। ছোট বেলা থেকেই চাওয়া পাওয়ার ইচ্ছে নাই।
মা এখন আর তেমন কিছু বলে না। আর টাকা মা কই পাবে। মা আমাকে দিবে তাই মাকে ও টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এই অবস্থাতে কি করবো ?কিভাবে করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পরে টুকি টাকি কাজ শুরু করে দিলাম। যখন যেমন কাজ পেতাম তখন সেটাই করতাম। যে যেই কাজে যেতো তার সাথে আমি ও যেতাম। এভাবেই নিজের চলার মতো টাকা যোগাড় করা শুরু করে দিলাম। আমি এসব কাজ না পারলে ও চেষ্টা করতাম ওতো টাকা দিতো না আমাকে তবে সামান্য আর আমার কাজ বুঝে পারিশ্রমিক পেতাম। বাসায় যতক্ষণ থাকতাম ততক্ষণ আর কারো সাথেই কথা হতো না। কেউ কথা বলতো না। আমি কারো কাছেই আবদার করতে পারি না। আমার ইচ্ছে আমার চাহিদা কোন কিছুই তাদের যায় আসে না।
এখন আমার মনে হচ্ছে আমার কোন অস্তিত্বই নেই। আমাকে তাদের কোন প্রয়োজন নেই। আমি থাকা না থাকা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নাই। এতিমের থেকে ও বড় এতিম আমি নিজে। এতিমের মতোই কুলিগিরি করে দিন চলি। বড় লোকেই ছেলে তবে আমি এতিম। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করি না। দিনে রাতে এক বেলা খেয়ে বেঁচে আছি। জীবন চালিয়ে নিচ্ছি এভাবেই। ঘরে মা বাবা ভাই বোন সবাই আছে। নেই তাদের মাঝে আমি। আমার অসুস্থ তা কাউকে কাদায় না। আমার তিক্ততা কাউকে দেখাই না।
মায়ের ভালোবাসা আছে। যতটুকু আছে আলহামদুলিল্লাহ। তার জন্যই আমি এখানে পরে আছি। তার জন্যই ঠাঁই পাচ্ছি। সবাইকে আমি খুব ভালোবাসি তবে কেউ আমার কথা শুনতে চায় না। কেউ আমাকে বুঝে না। বুঝার চেষ্টাও করে নি। আমাকে সবাই তুচ্ছ মনে করে। আমি শুধু তাদের ভালোবাসা চাই। তাদের সবার ভালোবাসা পাওয়ার আশাই এখানে পড়ে আছি।