প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
ঈদে বাড়ির সবাই সবার ইচ্ছে মতো কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছে,কিন্তু সেখানে আদিলও তার পরিবার একদমই ব্যতিক্রম। এ বছর তাদের পরিবারের কেউ ঈদের কোনো কেনাকাটা করেনি। আদিল তার মা বাবার কাছে গিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো, তাকে ঈদের নতুন জামা-কাপড় কিনে দিতে হবে। কিন্তু আদিলের পান ব্যবসায়ী বাবা ছেলের আবদার রাখতে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে আদিলের কান্নার মাত্রা ততই বেড়ে চলছে।
তাঁর কান্না সহ্য করতে না পেরে, শেষ মেষ চাঁদ রাতে ছেলে কে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে গেছে তার মা বাবা, সাথে ছিলো আদিলের আরও দুই ভাই বোন। সাধ্যের মধ্যে গরীব অসহায় বাবা তার ছেলে মেয়েদের মুখে যতটুকু সম্ভব হাসি ফুটানোর চেষ্টা করেছেন। তবে সেখানে বাদে আরেক বিপত্তি! আদিল আবদার করে বসে সে বাঙ্গি সু ছাড়া জুতাই কিনবে না।
ছেলের মুখে এমন সু এর নাম শুনলো যেটি এর আগে কখনো শুনেনি। তাও অসহায় বাবা তার সন্তানের আবদার রাখতে খোঁজ করতে লাগলো বাঙ্গি সু'র। এই দোকান ঐ দোকান ঘুরে কোনো দোকানেই পেল না আদিলের স্বপ্নের সেই বাঙ্গি সু। এক দোকানে সু জুতা পছন্দ হলো আদিলের তবে সেটি বাঙ্গি সু নয়, তাও সেই জুতা জোড়ার দাম ১৫০০ টাকা।
ছেলে মানুষি আদিল দামের কথা না চিন্তা করেই জুতা জোড়া কিনার জন্য বেকুল হয়ে পড়লো। আর ঐদিকে বাবা তার অসহায় চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে, কি করবে উনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। আবার ছেলেকেও বুঝাতে পারছেনা ওনার পকেটের অবস্থা। দোকানির সাথে অনেক্ষণ ধর দামাদামি করেও কোনো লাভ হলোনা। দোকানদার মাত্র ১০০ টাকা কমিয়ে অর্থাৎ ১৪০০ টাকায় বিক্রি করতে রাজি হয়েছে। ছেলের আবদারের কাছে অসহায় বাবা আবার এক দোকান থেকে অন্য দোকান ঘুরাঘুরি করতে লাগলো, ছেলের পছন্দের বাঙ্গি সু তো পেলোই না ঐ জুতা ছাড়া অন্য কোনো জুতা আদিলের পছন্দও হয়নি।
এমনকি সে বলে দিছে এই জুতা ছাড়া কিনবেই না। আবার এই জুতা না কিনে দিলে সে বাড়িতে যাবেনা বলে জানিয়ে দিলো। ছেলের আবদার রাখতে, তাই ঘুরেফিরে আবার সেই দোকানে আসলো জুতা নেওয়ার উদ্দেশ্যে, কিন্তু জুতার যে দাম বললো দোকানী ঐ টাকা দিয়ে ওদের পরিবারের ১০ দিনের খাবার হয়ে যাবে, অথচ সেখানে এক জোড়া জুতার দাম ১৪০০ টাকা। জুতা কিনতে না পেরে আদিল কান্না করা শুরু করে দিলো, ছেলের এ দৃশ্য দেখে আদিলের বাবা মা দুজনের চোখে মুখে রাজ্যের হতাশা কাজ করতে শুরু করলো।
আজ টাকার জন্য ছেলেকে ছেলের পছন্দ মতো এক জোড়া জুতা কিনে দিতে পারেনি। এ কথা ভাবছে আর আদিলের মা হাউ মাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ছে এবং উনি কান্না মাখা কন্ঠে বলতে লাগলো বাবা আমরা গরীব মানুষ এতো টাকা কই পামু জুতা কিনার জন্য, ঠিক মতো তো তিন বেলা ভাতই খাইতে পারিনা। ওর বাবা পান বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চালায়। সেখানে ওদের ৩ ভাই বোনের ঈদের জামা-কাপড়,জুতা কীভাবে কিনে দেই!
রাত যখন ১:৩০ মিনিট তখন অনেকেই দোকান বন্ধ করে চলে গেছে। চাঁদ রাত হওয়ায় বাজারের কয়েকটা জামা-কাপড় আর জুতার দোকান খোলা ছিলো। তখনও বাবা তাঁর ২ সন্তান কে নিয়ে এ দোকান ঐ দোকান ঘুরছেন, আর মা তার কোলে ছোট্ট ১ বছরের শিশু বাচ্চা কে নিয়ে রাস্তার পাশে বসে আছে। যদি কোনো ভাবে ছেলের পছন্দের জুতা কিনে দিয়ে তাকে বাড়ি ফেরানো যায়।