প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
আমি কবি বা লেখিকা কোনটাই নই। তবুও লিখতে খুব ভালোবাসি বরাবর। একটা সময় ছিলো যখন আমি কবিতা লিখতাম। নিজেকে কবিতাতেই খুঁজে বেড়াতাম। কবিতাতেই হারিয়ে ফেলতাম নিজেকে।জীবন যুদ্ধে লড়াই করতে করতে নিত্য দিনের লেখা গুলো ও চোখ বুঝলো তারা ও হারিয়ে যেতে লাগলো। হাতে আর কলম উঠে না কয়েক মাস। কিছু লিখা আর ডাইরী টা ও হারিয়ে গেছে। কিছু দিন থেকে আবার নিজের ধারা লিখতে শুরু করলাম। কলম দিয়ে লিখা কমই হয়। সব ফোনেই লিখে রাখি। ঐযে সব সময় ফোন হাতে থাকে আর এ যুগের মেয়ে তাই আর কি। এখন মোবাইল ভরসা। আমার প্রতিটি গল্প নিজের দেখা ও বাস্তব নিজের সাজানোর। লেখার মধ্যেই আমার বেঁচে উঠা। লেখার মধ্যেই আমার বেড়ে উঠা।
এই দাড়া, তোর সাথে কথা আছে।
কথা আছে আমার সাথে?
কেন আমি তোর সাথে কথা বলতে পারি না নাকি?
না, না, ঠিক তা নয়, বল কি বলবি?
আমি শিমু। কলেজ স্টুডেন্ট। এখন কোচিং থেকে বের হচ্ছি। বাকিরা অলরেডি বের হয়ে গেছে। শুধু একজন আছে হয়তো সেই আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। এমকে আমার কলেজ ফ্রেন্ড।
এমকে : শুনলাম তুই নাকি পিকনিকে যাবি না?
আমি : হুম, ঠিকই শুনেছিস।
এমকে : কেন যাবি না? জানতে পারি কি?
আমি : দেখ জোর করিস না। আর এটা আমার কাছে ভালো লাগছে না। সব এক সাথে। যদি কাছে হতো তাহলে যাওয়া যেতো তবে ছেলে মেয়ে এক সাথে এটা আমার মোটে ও পছন্দ নয়। সব বন্ধুরা একসাথে পিকনিক করতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক নয়। তবে যেখানে আমার মন বসে না সেখানে আমি যাই না। আর সব থেকে বড় কথা আমার ইচ্ছে করচ্ছে না যেতে তাই যাবো না বলছি। আর এত কারণ যেনে কি হবে হে?
এমকে : আমরা তো সবাই বন্ধু তাই না?
আমি : আমার ইচ্ছে করছে না তাই আমি যাবো না।
এমকে : (রাগি হয়) এটা তোর কেমন ইচ্ছে? পিকনিক করার কারন কোন প্রেম ভালোবাসা করা তো নয়। সব বন্ধু বান্ধব মিলে একটু সময় কাটাবো একসাথে। সবাই মিলে একটু মজা করবো এই তো।
আমি : তাতে সমস্যা কোথায়? আমি বাদে সবাই তো আছেই।
এমকে : তোকে ও থাকতে হবে। তুই ও আমাদের মধ্যে একজন।
আমি : সরি, আমি যাবো না। আর এখন আমি আসছি। আমার কাজ আছে। আশা করি তোর কথা শেষ।
কথাটা বলে পা বাড়াতেই বাধা পেলাম। এমকে আমার ডান হাত ধরে আছে। মেজাজটা খুব খিটখিটে হয়ে গেলো। তবে কোচিং রুমের সামনে তাই কোন রকম রিয়েক্ট করলাম না। আমি এমনিতে খুব রাগি ও বদমেজাজি প্রকৃতি মেয়ে। একা থাকতেই বেশি পছন্দ করি। যাই হোক সে আমার হাত ধরে আছে, ওনার হাতের স্পর্শে শান্ত হয়ে ওর দিকে তাকালাম আর বললাম।
আমি : কিরে, কি করছিস এটা, আমার হাত ছাড়।
কোন শব্দ নেই হাতের বাধনটা আরো দৃঢ় হলো। এক ছাটকায় টান দিয়ে আমাকে ওর আরো কাছে নিয়ে দাড় করালো। আমি ওর খুব কাছে। ওর চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে আছি। শরীরের ভিতরে একটা অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে। যা অন্য কোনো দিন করে নি। আবার ভয় যে লাগছে না তাও নয়। কি করতে চাচ্ছেও। এরকম কেন করছে? আমাকে বললো,
এমকে : তুই পিকনিকে যাবি।
আমি : (বিরক্ত কণ্ঠে) তোর কথায়?
এমকে : হ্যাঁ, আমার কথাতেই যাবি। আর হা সামনের মোড় থেকে বাস ছাড়বে সময় মতো ওখানে চলে আসবি।
এবার সত্যি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। আমার সাথে কেউ এভাবে কোন দিন কথা বলে নি। কেউ আমাকে এভাবে হুমকি দেয় নি। নিজের ইচ্ছেই চলেছি। আর আজ কিনা সে আমাকে হুম...
আমি : কি করবি না আসলে?
এমকে : বেশি কিছু করবো না। তোর বাসায় গিয়ে তোকে তুলে নিয়ে আসবো।
কথা বলতে বলতে কখন যে হাত ছেড়ে দিলো বুঝতেই পারি নি। কোন কথা আর বাড়ালাম না। বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সেও আর কোন কথা বললো না। কিযেনো ভাবতে ভাবতে বাড়িতে এসে পৌঁছালাম।
প্রেম কি জিনিস সবে মাত্র বুঝতে শিখেছি। ছোট বেলা থেকেই নানু বাড়িতেই বড় হয়েছি। নানু-নানা, মামা-মামি সবাইকেই পেয়েছি। পাইনি শুধু বাবা নামে মানুষটিকে। পাইনি তার পরিবারের কাউকেই। যখন প্রথম স্কুলে পা রেখেছিলাম তখন চারপাশেই দেখতাম আমার বয়সী বাচ্চা রা তার বাবার হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছে। তাদের কত আবদার তাদের বাবাদের কাছে। আর আমি একা। আমার আবদার মা ছাড়া কারো কাছেই ছিলো না। কৌতুহল বসতো একদিন মাকে প্রশ্ন করলাম। আচ্ছা মা আমার বাবা নেই কেন? মা উত্তরে বলেছিলো,
মা : তোকে কে বলেছে সবার বাবা থাকে।
আমি : তোমারও তো বাবা আছে। তো আমার বাবা কেন নেই?
মা একটু হেসে আবারও বললো,
মা : কে বলেছে তোর বাবা নেই। ছিলো তো তোর বাবা। তবে এখন নেই।
আমি : কেন নেই? কোথায় গেছে?
মা : হারিয়ে গেছে।
হারিয়ে গেছে মানে বোঝার বয়স তখনও আমার হয়ে উঠেনি। তাই হয়তো সেদিন কিছুই বুঝি নি। মা একদিন বলেছিলো,
মা : আমি তো তাকে ধরে রাখতে পারি নি। বড় হয়ে তাকে খুঁজে এনে ধরে রাখিস। যাতে আর কখনো হারিয়ে না যায়।
এই কথার ও অর্থ সেদিন বুঝি নি। কিন্ত এখন বেশ বুঝতে শিখেছি। সেদিনের কথা গুলোর মানে এখন বুঝি। আর আস্তে আস্তে অনেকের কাছে অনেক কিছুই শুনেছি। মিথ্যে ছিলো না কথা গুলো। সত্যি হলে সে একবার হলেও আমাদের খোঁজ নিতে আসতো। কিন্ত না সে আমার কথা ও মনে রাখে নি মার কথা তো বাধই দিলাম। আমরা কেমন আছি ভালো নাকি খারাপ কোন খোঁজ নেয় নি। যে মানুষটা আমাকে ছেড়ে আমার মাকে ছেড়ে হারিয়ে গেছে। এত বছর পর আমি আবারও তাকে খুঁজে বের করার প্রশ্নই উঠে না। তাকে ছাড়া এতদিন খারাপ ছিলাম ভালো ছিলাম দুটোই মানিয়ে নিয়েছি। ভবিষ্যত ও তাকে ছাড়া আমরা ভালোই থাকবো। আমি কখনো বাবার নাম করিনি। মাও তার নাম নেয় নি। মা একটা চাকরি করে। প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। মা আর আমার জীবন দিব্যি চলে যাচ্ছে। আর মা শিক্ষক বলে আশে-পাশের সবার থেকেই সম্মান পেয়ে বড় হয়েছি। তার মধ্যে নানার বাড়িতে থাকি। মামারা খুব আদর করে। তাদের আদরের জন্য বাবার আদরের কোন ত্রুটি বা অভাব বোধ হয় নি। কিন্ত আমার প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে, এসব আমি বিশ্বাস করি না। এসব সম্পর্ক আমার মোটে ও পছন্দের নয়। তাই আমার সামনে এসব কেউ আলোচনা করলে আমি যেই জায়গা থেকে বেরিয়ে যাই। একটা কথা সবার মুখেই শুনে বড় হয়েছি। যে প্রত্যেক মেয়ের কাছে তার মা বেস্ট। আমার কাছে ও ব্যতিক্রম কিছুই নয়। আমার কাছে ও আমার মা বেস্ট। আমি আমার মায়ের মতো হতে চাই। তাই মতোই একা বাস করতে চাই। কারো সাথে কোন কিছু শেয়ার করে নয়। নিজের পায়ে নিজে দাঁড়িয়ে একাই জীবন ধারা শেষ করতে চাই। আমার মায়ের মতোই সিঙ্গের মাদার হতে চাই। কিন্ত আমার তো বাবা ছিলো। আমি বাচ্চা পাবো কোথায়? এক আন্টির প্রশ্ন ছিল এটা। আমি এই যুগের মেয়ে বড় হয়েছি। বুঝতে শিখেছি। জানি এখন বাচ্চা দত্তক নেওয়া যায়। তাই উত্তরটা দিতে দেরি হয়নি অনাথ আশ্রম কিংবা চাইল্ড হোম। কিন্ত তার আগে আমাকে মা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। পড়া শেষ করে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। আর সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছিলাম ও। কিন্তু একদিন...
ভালোবাসা নামক মায়াজালে জড়াতে চাইনি কখনো। কিন্ত হঠাৎই নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়েছি। হ্যা জীবনের প্রথম আমি প্রেমে পড়েছি। যদিও এই প্রেমে কোন প্রত্যাশা নেই আমার। কারণ আমি নিজেকে তার যোগ্য মনে করিনি। কিন্ত আজ সে নিজেই আমার উপর এত অধিকার দেখালো কেন? তাহলে কি সেও, নো নো নেভার। তা তো নয়। তার তো একটা প্রেমিকা আছে। তাহলে কি ওটা শুধুই বন্ধুত্বের অধিকার? শুধুমাত্র বন্ধুত্বের অধিকারে সে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেতে পারে? না অনেক ভেবেও এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। আচ্ছা সেকি তাহলে আমার মনের কথা জেনেছে? কিন্ত কিভাবে? একথা তো এখনো আমি কাউকেই বলি নি। আমি তো কারো সাথেই কোন কিছুই শেয়ার করি নি। মনের কথা জানা তো অসম্ভব!
যাই হোক, দুদিন কেটে গেছে। সেদিনের কথাও আমি ভুলে গেছি। এটা আমার বাজে অভ্যাস। যা আমার পছন্দ না তা আমার মনে থাকে না। অতি সাধারণভাবেই বড় হয়েছি। অল্প বয়সে বাস্তবের কঠোরতা অনুভব করেছি। বাস্তবতা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাই আবেগ প্রবণ আমি নই। বরং আবেগ সংযত কি করে রাখতে হয় তো আমি ভালো করেই জানি।
মামা বাড়িতে স্থান পেয়েছিলাম। আমাকে জন্ম দেয়ার পর থেকেই মামার বাড়িতেই থাকি। এর জন্য মাকে প্রতি মুহূর্তে দাম দিতে হয়েছে। তা আমার কিছুই অজানা নয়। খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি। শুধুমাত্র আমার জন্য, আমাকে ভালো রাখতে মাকে কত যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়েছিল। বাড়তি যন্ত্রনা আমি বর্তমানে আর দিতে চাই না। আমি পিকনিকে যেতে চাইলে মা মানা করবে না তবে মাকে বাড়ির অন্যান্যদের কাছে জবাবদিহী করতে হবে। আমার জন্য মা তা ও করে নিতে রাজি আছে আমি জানি। তবে তা আমি চাই না। তাই এ ব্যাপারেও মাকে কিছুই বলিনি।
আজ পড়া ছিলো, তার মুখোমুখি হতে হলো। পড়ার সময় সব স্বাভাবিকভাবেই চললো। তবে পড়া শেষে বের হওয়ার পরেই পিছন থেকে তার কণ্ঠ ভেসে এলো আমার কানে।
এমকে : শোন শিমু।
আমি : হুম বল।
এমকে : তারপর বল কি ঠিক করলি?
আমি : কি ঠিক করবো? আর কোন ব্যাপারে?
এমকে : কি ব্যাপারে মানে? তুই কি বলতো?
আমি : কিসের কি ঠিক করবো? তা তো বলবি নাকি?
এমকে : তুই পিকনিকে যাবি কিনা?
আমি : না যাবো না।
এমকে : সত্যি তো?
আমি : জি¦ সত্যি।
এমকে : ওকে ঠিক আছে আল্লাহ হাফেজ।
আমিও আল্লাহ হাফেজ বলে হাটতে লাগলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। ওর সামনে বেশিক্ষণ থাকলে আমার ভয় লাগে। ঠিক ওকে নয় কেন জানি ওর সামনে থাকলে নিজেকেই ভয় পাই। আমি চাই না যে আমার মনে বাস করে সে আমার দূর্বলতা জানুক। তাই আমি নিজেকে তার থেকে আড়ালেই রাখতে চাই।
আজ আমাদের কোচিংয়ের সকলে পিকনিকে যাওয়ার দিন। ছয়টার সময় যাওয়ার কথা। হয়তো সবাই বেরিয়ে গেছে। আমি সকালে উঠেই নামাজ পড়ে বই নিয়ে বসে আছি। পড়তে আজ একটুও ভালো লাগছে না। এভাবে চলতে থাকলে নির্ঘাত এ বছর ফেল করবো। ছোট বেলা থেকেই সব ক্লাসে প্রথম স্থান অর্জন করেছি। আর এখন ঠিক মতো পড়তেই পারছি না। বই খুললেই তার ছবি ভেসে উঠে। আমিও ভেসে বেড়াই গোপন এক অদৃশ্যহীন প্রেমের অভিসারে। আচ্ছা প্রেমে পড়লে কি সবারই এমন হয়। মনের দোলাচল ভাঙল মায়ের ডাকে। মা ডাকছে। আজ মায়ের ছুটি। ভেবেছিলাম মাকে নিয়ে আজ কোথাও একটু ঘুরে আসবো। তবে পরিবারের চাপে তা ও হলো না।
মা : শিমু, এই শিমু বাহিরে আয়।
মায়ের ডাকে ঘর থেকে ছুটে এলাম।
আমি : কি হলো মা ডাকছো কেন?
কথাটা শেষ করতে পারলাম না। সামনে দাড়িয়ে আছে এমকে এক গাল হাসি নিয়ে।
মা : কিরে তুই। পিকনিক আছে জানাসনি যে, টাকাও তো নেসনি। নিজের থেকেও দিয়েছিস আমাকে বলবি তোনাকি? আমি কি তোকে কোন কিছুতে মানা করি নাকি?
আমি : (আশ্চর্য হয়ে) না মানে, টাকা তো...
মা : আর বোঝাতে হবে না, যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়। তোকে নিয়ে যেতে এসেছে। সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে তুই গেলেই গাড়ি ছাড়বে। এমকের দিকে তাকাতেই দেখছি ও এখনও হাসছে। ও এসেই মাকে ওর মতো করে বুঝিয়ে নিয়েছে। মা ওকে আগে থেকেই চিনে জানে। হঠাৎই উপরে বড় মামার ঘরের জানালায় চোখ গেলো। দুই মামি দাঁড়িয়ে আছে। বুঝলাম আমি বের হলেই বাড়িতে একটা ঝড় উঠবে।
আমি : এমকে আমিতো বলেছি আমি যাবো না। তো কেন এসেছিস? ও কিছু বলার আগেই মা আমাকে ধমক দিলো।
মা : ভাগ্যিস এসেছে। খুব বড় হয়ে যাওনি। যে সব সিদ্ধান্ত তুমি নিবে। যাও রেডি হয়ে নাও।
আর কিছু বলতে পারবো না। মার উপর কথা বলার সাহস নেই। তাই চলে এলাম রেডি হতে।
আমারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনেকটাই দূরে চলে এসেছি। আমি পিকনিকে যাওয়ার জন্য কোন টাকা দেই নি। তাও যেতে হচ্ছে খুব বিরক্ত লাগছে। চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছি। একটা ও কথা বলিনি আর সেও না। এমকে বলে উঠলো...
এমকে : প্লিজ, সাইকেলে উঠো। এত রাস্তা হাটতে পারবো না।
আমি : এসেছিস কেন? আমি বলছি আসতে?
এমকে : আমি তো বলছিলাম ওই তুই না আসলে তুলে নিয়ে আসবো।
আমি : তাহলে আমার সাথে হেঁটে যেতে হবে। কত শখ আমি নাকি তার সাইকেলে উঠবো।
এমকে : অন্য কারো সাইকেলে উঠবে নি? ডাকবো কাউকে?
মাথাটা গরম হয়ে গেলো। ইচ্ছে করছে তারে কতক্ষণ পানিতে চুবাই। না শিমু শান্ত হ, শান্ত।
এমকে : কিরে কিছু তো বল?
আমি : পিকনিকের আমার টাকা কি তুই দিয়েছিস?
এমকে : কোথায়? আমি তো নিজেরটাই দেইনি।
আমি : মানে?
এমকে : সাইকেলে চেপে বসছি আয়।
আমি : উঠবো না আমি।
এমকে : রাস্তার মধ্যে জোর করলে ভালো হবে কি?
ওরে বিশ্বাস নাই। করতেই পারে। মানসম্মান তাহলে আর থাকবে না। তাই ব্যাক সিটে উঠে বসলাম।
আমি : এমকে, কোথায় যাচ্ছি?
এমকে : তোকে নিয়ে পালাচ্ছি।
এটা কেমন কথা? কি করতে চাইছে? কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? একটু চিন্তায় পরলাম। না কোন ভয় কাজ করছে না। মনে হচ্ছে না ও আমার কোন ক্ষতি করবে বলে। মনে তবুও সাহস রাখলাম। সাইকেল থেমে গেছে।
এমকে : চল, নাম।
আমি : পার্কে। এখানে তো আজ সকালেই মায়ের সাথে আসতে চেয়েছিলাম। আর আমার মন ও এখানেই আসতে চেয়েছিলো।
এমকে : কিরে কি ভাবছিস এত? জায়গাটা পছন্দ হয় নি?
আমি : কিন্ত মাকে তো তুই পিকনি...
বলা শেষ হবার আগেই সে বললো।
এমকে : সরি, আন্টিকে কিভাবে বলি যে আমরা আলাদা ঘুরতে যাবো। বললে তো তোকে আমার সাথে আসতে দিতো না।
আমি : (রেগে) তুই আমার মাকে মিথ্যা বলেছিস?
এমকে : ও ধস ৎবধষষু ংড়ৎৎু, ঢ়ষবধংব চল এখন ভেতরে।
ওর উপর রাগ করবো নাকি জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানাবো বুঝতে পারছি না। ও নিজের অজান্তেই আমার ইচ্ছে পূরণ করলো। অনেকটা সময় ভেতরে বসেছিলাম।
এমকে : কি ভাবছিস এতো?
আমি : কই কিছু না তো?
এমকে : কিছু তো ভাবছিস। ও ধস ংঁৎব. আমাকে কেন বলবি কে আমি?
আমি : সেটাই তো কে তুই?
এমকে : আমার দিকে তাকিয়ে বল তো।
আমি : চোখ সরিয়ে বললাম কে তুই হে?
এমকে : পালাচ্ছিস আমার থেকে নাকি নিজের থেকে?
কোন উত্তর জানা নেই আমার বুঝতে পারছি না কি বলবো। হ্যাঁ পালাতে চাই তবে নিজের থেকে। যাতে ও কাছে ধরা না পরি সেই ভয়ে। আবার সেই স্পর্শ। ও আবার আমার হাত ধরেছে।
আমি : হাত ছাড় এমকে।
এমকে : ছাড়বো না। ছাড়ার জন্য তো ধরি নি।
আমি : মানে?
এমকে : (বিরক্ত হয়ে) আমি কি ডিক্সেনারী যে বার বার মানে বুঝাবো। তোর হাত ধরার অধিকার আমার আছে তাই ধরেছি।
আমি : কে বলছে অধিকার আছে?
এমকে : হ্যাঁ আছে।
আমি : কে দিলো?
এমকে : তোর প্রতি আমার ভালোবাসা।
এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। না ওর চোখে মজা বা ছলনা নয়। কিন্তু এটা কি বলছে ভালোবাসা! ও তো অন্য একজন কে ভালোবাসে...
এমকে : কি ভাবছিস আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি? তাও তোর উপর কেন অধিকার দেখাচ্ছি? কেন ভালোবাসার কথা বলছি? এই আমি কখনো তুই শিমু ছাড়া অন্য কাউকে কোন দিন ভালোবাসি নি। এটা একটা নাটক ছিলো তোকে বোঝানোর জন্য।
আমি : মানে?
এমকে : ওহহহ আল্লাহ। এই মেয়েটা এমন কেন? শোন যেদিন তোকে দেখি সেদিন থেকেই তোকে আমার ভালো লাগে। তার পর কখন যে তোর প্রেমে পড়ে গেছি নিজে ও জানি না। আর তোর আমার প্রতি মনোভাব জানতেই ওই নাটক।
আমি : অন্যরা জানে কি?
এমকে : না, আমি যা বলছি তা বাদে কিছুই জানে না।
আমি : আসছি আমি। আমার সম্পর্কে তুই কি জেনেছিস জানি না। আমি আমার কোন অধিকার তোকে দিতে চাই না। ভালোবাসার জন্য কোন সময় আমার কাছে নেই।
এমকে : জানি তো। তোর লক্ষ্য কি তাও আমি জানি। তোকে বেধে রাখতে চাচ্ছি না আমি। তুই তোর লক্ষ্যে এগিয়ে যাস। আমি বাধা দিবো না। কিন্ত কখনো যদি তোর মনে হয় তুই খুব ক্লান্ত, তুই হারিয়ে গেছিস, তোর বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন তখন না হয় একটু সময় দিস। ভালোবাসার অধিকার আছে। ওই অধিকার কোন শিকল হয় না। আমি তোকে আমার মতো করে না তোর মতো করে চাই। তোকে ভালোবাসি তাই তোর স্বপ্ন টাকে ও ভালোবেসে তোর মনের মতো করে সাজাতে চাই।
আমি : কিন্ত আমি তো তোকে ভালোবা...
এমকে : (এক জাটকায় তার বুকে টেনে নিলো) বল এবার বাসিস না ভালো আমায়।
কি করে বলবো বাসি না। আমি তো তাকে খুব ভালোবাসি। আমার আত্মা জানে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি। ওর চোখে চোখ রেখে এত বড় মিথ্যা কথা আমি কি করে বলবো?
এমকে : তুই কি বলতে চাস। বল, যা বলবি আমার চোখে চোখ রেখে বলবি। সত্যি করে বলবি। তখন তুই যা বলবি তাই মেনে নিবো। কোন প্রশ্ন করবো না।
তবুও নির্বাক আমি। পারবো না ভালোবাসি না এটা বলতে। নিজেকে ভাষাতে আমি পারবো না। আর আমাকে নিয়ে আমার মায়ের স্বপ্ন মিথ্যা করতে ও পারবো না। মায়ের এক একটা প্রতিশোধ আমাকে নিতেই হবে।
এমকে : তুই আমার এটা আমি বুঝে গেছি। তুই তাড়ালেও তোর থেকে দূরে যাচ্ছিনা। তোর ছায়া হয়ে থাকবো চিরকাল, চিরদিন। মনে রেখো। খুব ভালোবাসি তোকে। এই অধিকার থেকে তুই ও আমাকে বঞ্ছিত করতে পারবি না।