সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৬

দেবদাস কর্মকারের কবিতা

অনলাইন ডেস্ক

শালদা

সীমানা পেরুলেই দৃশ্যমান ধোঁয়ার পাহাড়

শীর্ষ থেকে ক্রমশ নিচে নামি

পিঙ্গল বর্ণের দিগন্ত ফুটে উঠে দূরে

উলটকম্বলের সবুজ পাতা কাঁপে বাতাসে

অঘ্রাণের পিরপিরে শীত, রেল ব্রীজের নিচে স্বল্প জলের নদী শালদা,

গুরুত্বহীন রেল স্টেশনে সারাদিন এক-আধটা ট্রেন থামে

মানুষের জীবনে যে গতি আছে স্টেশন মাস্টার কে দেখে তা বোঝার উপায় নেই

তার উঠান জুড়ে লকলকিয়ে বাড়ে পুঁইয়ের ডাটা

তারই পাশে উসকোখুসকো চুলের ছোট্ট মেয়েটি উদলা শরীরে খেলে বেড়ায়।

আকাশ মাটি ঘেরা গৃহস্থের বাড়ির মধ্যেই সীমান্ত,

প্রহরীর মতো জেগে আছে ভৌগোলিক পিলার

সাতপুরুষের ভিটেমাটি এখানকার শস্যশিল্পীদের,

কতোগুলো যুদ্ধ বণিকের মতলবি চাকুর টানে

কোনো এক ক্রান্তিকালে নিসর্গ মৃত্তিকা ভাগ হয়,

সাতপুরুষের ঋণ দীর্ঘশ্বাস বুক ভেদ করে জাগে

সন্ধ্যায় নারকেল গাছের মাথার ওপরে উঠে চাঁদ

রূপার শরীরে নিসর্গ মৃত্তিকায় বয়ে যায় শালদা।

২৮ নভেম্বর ২০২৫; ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২।

গোধূলির শ্রেষ্ঠ গল্প হয়ে এসো

আমার চোখে লেগে প্রান্তরের বাতাস ফিরে যায়

মনে হয় নিজের মধ্যেই রুদ্ধ হয়ে আছি

শাদা বুক থেকে বেরিয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস

সারা মাঠ ভারি হয়ে নামে কুয়াশা বলয়

ক্রমাগত সবকিছুই চলে হয়তো উপায় নেই বলে ।

শিকড় আঁকড়ে থাকি

হয়তো তাতে শূন্যতা ভরে উঠে

চারপাশে কতো কিছু হয়, কতো বড়ো বড়ো কিছু

গালভরা কথা ভূমিকম্প, রাজনীতি, সূর্যাস্ত জন্ম মৃত্যু,

কানাগলির মোড় বেয়ে মৃদু আলো আসে

আসে ফেরিওয়ালা-ক্লান্ত ভিখারি

ডানে-বাঁয়ে উত্তরে দক্ষিণে কতো রহস্য নীল হয়ে থাকে

মনে মনে ভাবি, একটি জন্মে কতো কিছু দেখলাম

সত্য মিথ্যা, জন্মের সমান দীর্ঘ মিথ্যার দৌরাত্ম্য

যখোন বেদনার চোখে মেঘ জমে থাকে

তখনও রঙিন ফুলের মতো স্বপ্ন দেখি

ভাবনার অভ্যাসে তোমার কথাও মনে আসে

আপাদমস্তক তুমি যেন খণ্ড খণ্ড হয়ে আছো,

এখোন আমার চোখে গোধূলির প্রান্তরের হাওয়া

উদগ্রীব ওষ্ঠাধরে চিত্রিত উষ্ণ আলো

তবুও বলি এই আকাশ মৃত্তিকা ঘেরা পথে

অখণ্ড রূপে শুধুই যদি একবার

পশ্চিম আকাশে যেমন হঠাৎ উদ্ভাসিত দুর্লভ প্রতিবিম্ব

না হয় গোধূলির শেষ শ্রেষ্ঠ গল্প হয়েই এসো।

৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ঢাকা, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

আমি মুগ্ধ হতে চাই

যদি শব্দহীন হয়ে যাই তবে যেন সবকিছু ঠিক

আজকাল গা সওয়া হয়ে গেছে সব

নির্বাচন করতে ভয় হয়, যদি ভুল বলি কিছু

ভেতরে ভেতরে ঘূর্ণি তবু যেন চুপ

চারদিকে শুধু ঝরে পড়ার শব্দ

সংসার দেশ পারিপার্শ্বিক সবকিছুই

আমি শুধু বেমানান আশ্চর্যের মতো।

আমার কোনো নাম নেই রোমাঞ্চ নেই

দিগন্তে মিলিয়ে যায় আমার আকাশ

খুব ভারি ছিন্ন শির দুহাতে তুলে ধরি

ক্রমাগত আঁকড়ে ধরি আয়ু

দূরে নিমজ্জিত মৃত্যুলোক

চারিদিকে কী বীভৎস নিষ্ঠুরতা

সহস্র রক্তলোলুপ উন্মত্ত মানুষ

আমি কেবলই শব্দহীন চেয়ে থাকি দূরে ।

দেশ জুড়ে এতো বিভক্তি

আমার কোনো সংঘ নেই,

আমি শুধুই মুগ্ধ হতে চাই

যখোন ছিন্ন করে কঙ্কাল গ্রন্থি

তনুশ্রী নেমে আসে পথে

আবেগের বেলাভূমে সন্ধ্যা আলোর মেয়েটি

কোনো নিরাশা নেই তার আছে স্বপ্ন

রাশি রাশি আগামী বিকারহীন সত্তার ভিতরে।

২১ নভেম্বর ২০২৫, ঢাকা, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

আদিম অন্ধকারে এস ডি সুব্রত

ফিরে যেতে চাই না আদিম অন্ধকারে

কূপমণ্ডুকতার যূপকাষ্ঠে কেন বলি হবো

আলোর পথে সভ্যতার সাথে

কেন এখন পিছিয়ে থাকবো

ফিরে যাবো গুহায় প্রস্তর যুগে?

প্রগতির পথে শিল্পের সৌন্দর্যে আজ

দেখি এ কোন্ আস্ফালন

বড়োই উল্টো যাত্রা যেন

সত্যের আড়ালে এ কোন্ দুরভিসন্ধি ছদ্মরূপে!

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়