সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫৮

হৃদয়বতী

মিজানুর রহমান রানা
হৃদয়বতী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

ছয়.

হরকত উদ্বিগ্ন। বস ইমতিয়াজ কল ধরছে না। তাই কী করবে সে বুঝে উঠতে পারছে না। হোটেল প্রবালের বারান্দায় পায়চারী করছে।

রাসেল বললো, ‘চলেন ভাই, কামডা আমরাই সাইরা ফালাই।’

‘দূর, লোকজন লাগবো না। দুইজন মিললা চারজনের সামলাইবো ক্যামনে? তুই কি পাগল হইয়া গেছস নাকি?’

ঠিক সেই সময়েই হরকতের মুঠোফোনে কল এলো। খুশি হলো হরকত। কল রিসিভ করে বললো, ‘বস, তিনটা মায়া।’

‘কোথায়?’

‘বীচে বস।’

‘নিয়া আয় তাহলে।’

‘না, বস। দুইজনে পারা যাইবো না। লগে একটা সাপও আছে।’

‘আচ্ছা। তাহলে নিয়াজ, শাহীন ও শিহাবকে পাঠাচ্ছি। তারাই কাম সারবো। ঠিক আছে?’

‘ঠিক আছে বস।’

হরকতের সাথে ইমতিয়াজ কথা শেষে বেশ খুশি হয়। একসাথে তিনটা মেয়ে। বেশ ভালোই হবে। কানাডায় তার পল্লীতে রমরমা ব্যবসা হবে। ভাবতে ভাবতে সে ওসি প্রদীপ কুমারকে ফোন দেয়। তারপর বলে, ‘বীচে তিনটা মেয়েকে আমার ছেলেপুলেরা তুলে আনতে যাবে। আর তোমার কাজ হচ্ছে সাথের ছেলেটাকে এনে গারদে ঢুকিয়ে একটা মামলা দিয়ে দেওয়া। এর জন্যে খরচপাতি দেওয়া হবে। বুঝলা।’

‘ঠিক আছে, ব্যাপার না।’ উত্তর দিলো প্রদীপ।

ওসি প্রদীপের কাছে এগুলো ডাল-ভাত। দীর্ঘদিন যাবত সে এই থানায় কাজ করছে। ধরে ধরে মানুষকে এনে ক্রসফায়ার করে সাগরে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু তার আগে তার পাওনাগুলো বুঝে নিয়েছে।

টেকনাফের এই এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক ওসি প্রদীপ। পকেটমার, ছিনতাইকারী, মাদক-ইয়াবা ব্যবসায়ী, নারী ব্যবসায়ীসহ যত অপরাধী আছে, তাকে বখরা না দিয়ে পার পায় না। আবার মতের অমিল হলে কোটি টাকা দিলেও মাত্র একটা গুলি খরচ করে মানুষটাকে ওপারে পাঠিয়ে দিতে তার হাত কাঁপে না।

অবশ্য এগুলো সে সব সময় নিজে করে না। এএসআই লিয়াকত তার বিশ্বস্ত সঙ্গী। বেশিরভাগ কাজ লিয়াকতই করে। তাই সে লিয়াকতকে কল দিলো, তারপর বলে দিলো, ‘বীচে তিন সুন্দরীর মাঝে একটা কালো সাপ আছে, তারে ধরে এনে থানায় টাঙ্গাও।’

লিয়াকত আর দেরি করে না। ফোর্সসহ চলে যায় সী-বীচে। তারপর হাজির হয় ইরফান ও অনন্যাদের সামনে।

লিয়াকতকে দেখে ইরফান প্রশ্ন করে, ‘কী হয়েছে ভাই?’

মিটিমিটি হাসছে লিয়াকত। সে জানে এই যুবককে ধরে নিয়ে থানায় টাঙ্গিয়ে রক্তাক্ত করাটা তার কাছে কোনো ব্যাপারই নয়। কিন্তু যুবকটাকে কেনো যেনো একটু অন্য রকম মনে হচ্ছে। আর্মি-মিলিটারী নয়তো? তার চুলগুলো ঠিক আর্মিদের মতোই ছাঁটা। লিয়াকতের হাসিতে ভাটা পড়লো। কিন্তু ওসি প্রদীপের আদেশ মানতেই হবে। আজ চার বছর যাবত টেকনাফে তো তারাই রাজত্ব চালাচ্ছে। এখানে কোনোকিছু ভাবার অবকাশ নেই। আদেশ মতোই কাজ করতে হয়।

ইরফান আবারও বললো, ‘তোমাদেরকে কে পাঠিয়েছে? কী উদ্দেশ্য? আমরা কোনো অপরাধ করেছি?’

কথাটা শেষ না হতেই ইরফানের হাতে হাতকড়া পড়লো। তারপর সঙ্গী চারপাঁচজন কনস্টেবল মিলে তাকে পাকড়াও করে নিয়ে যেতে চাইলো।

অনন্যা সামনে এসে বাধা দিয়ে মরিয়া হয়ে পথরোধ করে দাঁড়ালো। তারপর লিয়াকতকে প্রশ্ন করলো, ‘ভাই, ওনাকে কী অপরাধে নিয়ে যাচ্ছেন?’

লিয়াকত মজা পেলো যেনো। সে বললো, ‘আমি কখনও কারো প্রশ্নের উত্তর দেই না। থানায় গিয়ে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এই লোকটাকে। আর তোমরা অপেক্ষা করো, তোমাদের জন্যও ব্যবস্থা করা হয়ে গেছে।’

স্কুটারের আওয়াজ পেয়ে পেছন ফিরে তাকালো অনন্যা। হেলমেট পরে চারটি মোটরসাইকেল এদিকেই আসছে।

ইরফানকে জোর করে গাড়িতে উঠাচ্ছে ওরা। এ সময়ই হেলমেট বাহিনী এসে ছোঁ মেরে তিনবোনকে তিনটি স্কুটারে তুলে নিলো। ওদের চিৎকার চেঁচামেচি কারও কানেই পৌঁছলো না। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়