বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৫, ০৯:১১

ভিডিও রেকর্ডিং ও সম্পাদনা

ড. এম. মেসবাহউদ্দিন সরকার
ভিডিও রেকর্ডিং ও সম্পাদনা

ক্যারিয়ার হিসেবে এই গ্রাফিক্স ডিজাইনিং কেন এত জনপ্রিয় তা অনেক মানুষেরই কৌতূহল। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের যুগে গ্রাফিক্স ডিজাইন ব্যতিত পুরো মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টই অচল। কারণ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য যা যা দরকার, তার বেশির ভাগই বানায় গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা। ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড, সোশ্যাল মিডিয়া কভার ফটো, টেলিভিশন কমার্শিয়াল, ইত্যাদির সবকিছুই গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজের ভেতরে পড়ে। এসব কারণেই গ্রাফিক্স ডিজাইনের গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে।

গ্রাফিক্স ডিজাইন হচ্ছে কোনো একটি ম্যাসেজ বা তথ্যকে সৃজনশীলতা দিয়ে রং, রেখা ও বিভিন্ন সেপের মাধ্যমে মানুষের সামনে তুলে ধরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখন এই তথ্য বা ম্যাসেজগুলো হয় মার্কেটিং সম্পর্কিত। মার্কেটিং বাদেও বিভিন্ন সেক্টর রয়েছে গ্রাফিক্স ডিজাইনের আওতায়। গার্মেন্টস সেক্টর তার মধ্যে অন্যতম। গার্মেন্টস খাতের যে কোনো পণ্য তৈরি করার আগে এর ডিজাইন করতে হয়। গ্রাফিক্স ডিজাইন পরিপূর্ণরূপে একটি সৃজনশীল পেশা।

এই পেশায় সৃজনশীলতাই মূল হাতিয়ার, পুঁথিগত বিদ্যা এখানে তেমন একটা কাজে আসে না। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে ওয়েবসাইটের কাজের জন্যে এখন গ্রাফিক্স ডিজাইন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এছাড়া বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানি আছে যারা তাদের প্রোডাক্টগুলো ভালোভাবে তাদের ওয়েবসাইটে ফুটিয়ে তুলতে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের সাহায্য নিয়ে থাকে। গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে কাজ করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, যে কোনো জায়গায় বসে এই কাজ করা যায়। প্রয়োজন শুধু একটি ল্যাপটপ ও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার।

এই পেশাটা সম্পূর্ণরূপে কাজের পারদর্শিতার উপর নির্ভর করে, উচ্চশিক্ষা এক্ষেত্রে খুব বেশি জরুরি নয়। বর্তমানে ফ্রিলান্সিংয়ের খুব বড় একটা অংশজুড়ে রয়েছে গ্রাফিক্স ডিজাইন। ছোট্ট একটি লোগো থেকে শুরু করে টেলিভিশন কমার্শিয়াল তৈরিসহ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সব সামগ্রী তৈরির ক্ষেত্রেই রয়েছে এর চাহিদা। এজন্য মার্কেটপ্লেসগুলোতে গ্রাফিক্স ডিজাইন রিলেটেড কাজ অনেক বেশি পাওয়া যায়।

ক্যাপকাটÑবর্তমান সময়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ভিডিও রেকর্ডিং এবং এডিটিং সলিউশন প্রোগ্রাম হলেও গ্রাফিক্স ডিজাইনেও এটি বেশ পারদর্শী, যা টিকটকের পেছনে থাকা একই কোম্পানি বাইটড্যান্স দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। এটি ওয়েব এবং ডেস্কটপ সংস্করণে পাওয়া যায়। পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএসের জন্য একটি অ্যাপও রয়েছে, যা যে কোনো ডিভাইস থেকে কনটেন্ট তৈরি এবং সম্পাদনা করা সহজ করে তোলে। এর মূল শক্তি হলো একক পরিবেশে রেকর্ডিং, সম্পাদনা এবং রপ্তানিকে একীভূত করে।

ইন্টারফেস খুবই ব্যবহারকারী-বান্ধব এবং সব স্তরের ব্যবহারকারীর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। স্ক্রিন, ক্যামেরা অথবা উভয় উৎস একসঙ্গে রেকর্ড করার সুযোগ এবং এর অসংখ্য ভিজ্যুয়াল ও অডিও প্রভাব ও প্রয়োগ ইত্যাদি নমনীয়তা, নৈমিত্তিক কনটেন্ট নির্মাতা এবং ভিডিও পেশাদার উভয়কেই কয়েক মিনিটের মধ্যে সর্বোত্তম ফলাফল অর্জন করতে দেয়। উপরন্তু ক্যাপকাট ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে।

এর ঘন ঘন আপডেটগুলোতে নতুন এআই চালিত বৈশিষ্ট্য, স্বয়ংক্রিয় চিত্র বর্ধন সরঞ্জাম, ব্যাকগ্রাউন্ড অপসারণ, স্বয়ংক্রিয় সাবটাইটেলিং এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা এটিকে একটি আধুনিক এবং প্রতিযোগিতামূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে শীর্ষে রাখে। ক্যাপকাট মূলত মোবাইল ডিভাইসের জন্য তৈরি করা। এটি একটি ফ্রি অ্যাপ। তবে এর একটি পেইড প্রো সংস্করণও রয়েছে, যা ক্লাউড স্টোরেজ এবং উন্নত বৈশিষ্ট্য প্রদান করে। এটি মূলত টিকটক ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি করা হলেও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের জন্যও ব্যবহার করা যায়।

ক্যাপকাটের অন্য প্রদান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো : ১. কর্মপ্রবাহ সরলীকরণ : সমস্ত ক্যাপচার, সম্পাদনা এবং রপ্তানি এক জায়গায় হয়, যা সময়ের অপচয় এবং প্রযুক্তিগত জটিলতা এড়িয়ে কাজ করে। ২. তাৎক্ষণিক সংস্করণ : রেকর্ডিং সম্পূর্ণ হওয়ার পর, ফাইলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যাপকাট টাইমলাইনে যোগ হয়ে যায়, যা পূর্বের রপ্তানি বা রূপান্তর ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে সম্পাদনা, ছাঁটাই, বর্ধিতকরণ বা রূপান্তর করতে দেয়। ৩. দ্রুত, ওয়াটারমার্ক-মুক্ত রপ্তানি : এটি লোগো যোগ না করেই প্রধান সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে সরাসরি প্রকাশ করতে দেয়, যা স্বাধীন নির্মাতা এবং ব্র্যান্ড উভয়ের জন্যই অপরিহার্য। ৪. গুণমান এবং ফরমেটের কাস্টমাইজেশন : প্রতিটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বা প্রকল্পের জন্য রেজোলিউশন, বিটরেট, ফ্রেমরেট এবং আকৃতির অনুপাত সামঞ্জস্য করতে পারে। ফলে ভিডিওর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে সর্বদা সর্বোত্তম ফলাফল অর্জন করতে সুযোগ করে দেয়। ৫. স্ক্রিন, ওয়েবক্যাম, অডিও রেকর্ডিং বা সংমিশ্রণ : ক্যাপকাট সম্পূর্ণ স্ক্রিন, নির্দিষ্ট উইন্ডোজ, ব্রাউজার ট্যাব এবং ওয়েবক্যাম রেকর্ড করা এবং সিস্টেম অডিও, মাইক্রোফোন অথবা উভয়ের মধ্যে বেছে নেওয়া যায়, যা সমস্ত ভøগিং, টিউটোরিয়াল, গেমপ্লে বা পডকাস্টের চাহিদা পূরণ করে। ৬. মাল্টি-স্ক্রিন/ক্যামেরা রেকর্ডিং : স্ক্রিন এবং ওয়েবক্যাম উভয়ই একসঙ্গে ক্যাপচার করা সম্ভব।

এর ফলে দুটি স্বাধীন ভিডিও স্ট্রিম তৈরি হয় যা ইচ্ছামতো একত্রিত করতে পারে (ছবি-মধ্যে-ছবি, ওভারলে, স্প্লিট স্ক্রিন ইত্যাদি)। এটি ভাষ্য টিউটোরিয়াল তৈরি, প্রতিক্রিয়া সময়সহ গেমপ্লে, অথবা পণ্য উপস্থাপনা তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ যেখানে উপস্থাপক সামগ্রীর পাশাপাশি উপস্থিত হন। ৭. কাস্টম অডিও নির্বাচন : শুধু সিস্টেম অডিও, শুধু মাইক্রোফোন, অথবা উভয়ই একই সময়ে ক্যাপচার করুন। উচ্চ মানের জন্য আপনি বহিরাগত মাইক্রোফোন সংযুক্ত করতে পারেন। এভাবে আপনার ভিডিওগুলো যতটা সম্ভব স্পষ্ট এবং পেশাদার শোনাবে। ৮. কোনো সময়সীমা নেই : অনেক বিনামূল্যের অ্যাপ বা বিল্ট-ইন রেকর্ডারের বিপরীতে, ক্যাপকাট রেকর্ডিংয়ের উপর সময় সীমাবদ্ধতা আরোপ করে না, যা দীর্ঘ বক্তৃতা, পডকাস্ট, ওয়েবিনার বা নিবিড় সেশনের জন্য অপরিহার্য। ৯. প্রাথমিক সম্পাদনা সরঞ্জাম : এতে দ্রুত ছাঁটাই, গতি নিয়ন্ত্রণ, ফর্ম্যাট রূপান্তর, আকার পরিবর্তন এবং অডিও এবং ভিডিও ট্র্যাক পৃথকীকরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে (বিস্তারিত, পেশাদার সম্পাদনার জন্য আদর্শ)। ১০. লাইভ স্ট্রিম রেকর্ডিং : যদি ইউটিউব, ফেসবুক অথবা নিজস্ব কোন প্ল্যাটফর্মে স্ট্রিম করা থাকে, তাহলে তা সম্পূর্ণ সম্প্রচার রেকর্ড করা, সম্পাদনা করা যায় ষ পাশাপাশি হাইলাইট, শর্টস, রিল বা প্রচারমূলক ভিডিও তৈরি করতে সহজেই ক্লিপগুলো পুনরায় ব্যবহার করা যায়।

ক্যাপকাট যদিও এডিটিংয়ের জন্য বেশি পরিচিত, এটি ওভারলে ব্যবহার করে মাল্টি-লেয়ার এডিটিং সমর্থন করে, যা দিয়ে জটিল জটিল ডিজাইন তৈরি করা সম্ভব। পণ্যের ছবি বা অন্যান্য ছবি এডিট করে সেগুলোকে আরও আকর্ষণীয় এবং টেক্সট ওভারলে ব্যবহার করে প্রচারমূলক ডিজাইনও তৈরি করা যায়। আবার ভিডিও এডিটিংয়ের সঙ্গে গ্রাফিক্স যুক্ত করে ইন্টারেক্টিভ এবং আকর্ষণীয় ডিজাইন তৈরি করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ভিডিওর সঙ্গে গান, সাউন্ড ইফেক্ট এবং মোশন গ্রাফিক্স যুক্ত করা যেতে পারে। ক্যাপকাট চীনে জিয়ানইং নামে পরিচিত।

প্রথম অবমুক্ত হয় চীন ২০১৯ সালে। ক্যাপকাট এর প্রথমে নাম ছিল ভায়ামেকার এবং পরে নামকরণ করা হয় ক্যাপকাট, যা কনটেন্ট স্রষ্টা, প্রভাবশালী, ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের জন্য একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় বিকল্প হয়ে ওঠে তাদের জন্য যারা তাদের মোবাইল, কম্পিউটার বা ওয়েব থেকে ভিডিও সম্পাদনা করতে চান। প্রথমদিকে এটি আইফোন এবং অ্যান্ড্রয়েডের জন্য বাজারে আসে।

২০২০ সালে পূর্বের নাম ভায়ামেকার থেকে ক্যাপকাট নামে পুনঃনামকরণ করা হয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে উন্মুক্ত করা হয়। এটিতে পরে ম্যাক এবং উইন্ডোজের জন্য ওয়েব এবং ডেস্কটপ সংস্করণ অন্তর্ভুক্ত হয়। ক্যাপকাট ২০২২ সালে ২০০ মিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারী মাইলফলক অর্জন করে। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অনুসারে, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে, এটি চীনের ডিসকাউন্ট খুচরা বিক্রেতা টেমুর পেছনে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় সর্বাধিক ডাউনলোড করা অ্যাপ ছিল। গুগল প্লে স্টোরে ক্যাপকাট ১ বিলিয়নেরও বেশিবার ডাউনলোড হয়েছে, যা ডিজিটাল সৃষ্টির জগতে এটি কতটা ব্যাপক হয়ে উঠেছে তা প্রতিফলিত করে।

লেখক : অধ্যাপক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ আইআইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়