প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৯
খণ্ডে খণ্ডে অখণ্ড জীবন

পঁচিশতম পর্ব
পৃথিবী দাঁড়িয়ে নেই। নিরন্তর চলমান। পৃথিবীর গতির সাথে পাল্লা দিয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও গতিময়। চাঁদপুর জেলা ব্র্যান্ডিং ও চাঁদপুর জেলা সাহিত্য সম্মেলন পার হতে না হতেই আমরা পড়ে গেলাম এসডিজির জোয়ারে। দুহাজার পনের সালের একত্রিশে ডিসেম্বর শেষ হয়ে যায় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য। এর পরপরই শুরু হয় এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে টেকসই উন্নয়নের সতেরটি অভীষ্ট ঠিক করে এক অভিযাত্রার সূচনা হয়। এটি হলো মূলত দুহাজার ত্রিশ সালের মধ্যে সবার জন্যে অধিকতর ভাল এবং টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণের একটি নীলনকশা। এতে সতেরটি অভীষ্টের একশো ঊনসত্তরটি লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে, যার একশো তেত্রিশটি নির্ধারক আছে।
এই সতেরটি এসডিজি হলো : সব ধরনের দারিদ্র্য বিলোপ (এসডিজি ১); ক্ষুধা মুক্তি (এসডিজি ২); সবার জন্যে সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ (এসডিজি ৩); সবার জন্যে মানসম্মত শিক্ষা (এসডিজি ৪); লিঙ্গ সমতা (এসডিজি ৫); নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন (এসডিজি ৬); সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ্বালানি (এসডিজি ৭); সবার জন্যে শোভন কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (এসডিজি ৮); শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো (এসডিজি ৯); অসমতার হ্রাস (এসডিজি ১০); টেকসই নগর ও জনপদ (এসডিজি ১১); পরিমিত ভোগ ও উৎপাদন (এসডিজি ১২); জলবায়ু কার্যক্রম (এসডিজি ১৩); জলজ জীবন (এসডিজি ১৪); স্থলজ জীবন (এসডিজি ১৫); শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান (এসডিজি ১৬) এবং অভীষ্ট অর্জনে অংশীদারিত্ব (এসডিজি ১৭)। দুহাজার সতের সালের মাঝামাঝিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় এসডিজি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার স্থান ছিলো চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ। চাঁদপুর থেকে মান্যবর জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ছয়জনের একটা দল এতে অংশগ্রহণ করে। ডিসি অফিসের এপি হারুণ, মতলব দক্ষিণের ইউএনও, হাজীগঞ্জের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও তৎকালীন সরকার দলীয় শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদকের এই দলে বেসরকারি অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে আমিও অন্তর্ভুক্ত হই। কর্মশালায় এক এক জেলার দল তাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে। আমাদের দলের পক্ষে আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত হই প্রস্তাবনা উপস্থাপনে। আমাদের মূল উপস্থাপনা ছিলো নদীমাতৃক পর্যটন ও নিরাপদ পর্যটক-নৌযানের উদ্ভাবন বিষয়ে। আমাদের প্রস্তাবনা ভালোভাবে গৃহীত হয়। যে যার মতো করে গেলেও জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে তাঁর সাথে চট্টগ্রাম নিয়ে যান এবং যাত্রাপথে বিবিধ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। আমার কাজ ছিলো মূলত তাঁর পরিকল্পনার সবল ও দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করা। অর্থাৎ একজন ভালো শ্রোতা হওয়া। তবে এ আলোচনা আমাদের এসডিজির প্রস্তাবনা তৈরিতে সহায়ক হয়। সকাল দশটায় শুরু হওয়া কর্মশালা বিকেল পাঁচটায় শেষ হয়। আমরা সেদিনই চাঁদপুরে প্রত্যাবর্তন করি। সরকারের এটুআইয়ের পক্ষ থেকে এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে পরিকল্পনা দেওয়া হয়, প্রথমে জেলায় ও পরে উপজেলায় এসডিজি কর্মশালা করতে। সেই ধারাবাহিকতায় দুহাজার সতের সালের তৃতীয় ভাগে চাঁদপুর জেলাব্যাপী এসডিজি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আট উপজেলার আটটা দল, জেলাপ্রশাসনের একটা দল, চাঁদপুর পৌরসভার একটা দলসহ মোট দশটি দল অংশগ্রহণ করে। প্রতিটি দলে দশজন করে সদস্য ছিলেন। জেলা পর্যায়ের এসডিজি কর্মশালার পর শুরু হয় উপজেলা পর্যায়ের পর্ব। এ পর্বে আমাকে কোন দলে না রেখে র্যাপোটিয়ার হিসেবে রাখা হয়। ফলে দায়িত্ব বেড়ে যায় এবং কাজটি আমি উপভোগ করি। ইতোমধ্যে দুবার এসডিজি কর্মশালায় অংশ নেওয়ার দরুণ আমি হয়ে উঠি রিসোর্স পার্সনের মতো। ফলে চিন্তা-ভাবনায় এগিয়ে থাকার সুযোগ পেয়েছি ভালোভাবেই। পাঞ্জেরী-দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও এ দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আমরা বিষয়বস্তু নির্বাচন করেছি। জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছেন। জনপ্রতিনিধি হতে শুরু করে সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, নারী নেতৃত্ব, তরুণ সমাজের প্রতিনিধি, জেলা পুলিশ, সাংবাদিক, লেখকসহ সবাই এতে কম-বেশি অংশগ্রহণ করেছেন। এসডিজি কর্মশালাগুলো বেশ কার্যকর হয়েছিল। কারণ এর আগে অনেকেরই এসডিজি সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। কেউ কেউ জানতোও না, এসডিজি আসলে কী দূরদর্শিতা ধারণ করে।
এর মধ্যে দেখতে দেখতেই দুহাজার আঠারো সালের বইমেলা এসে গেলো। আমার ব্যস্ত সময় কাটতে থাকলো। সে বছর ঢাকা অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আমার পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়েছে। একটি হলো উপন্যাস, 'ঘুমের মধ্যে লীলা আসে'। এটা দৃষ্টি প্রকাশনী হতে প্রকাশিত হয়। দৃষ্টি প্রকাশনীর কর্ণধার কবি ও নির্মাতা বীরেন মুখার্জী বইটির প্রকাশক। বইটি উৎসর্গ করেছিলাম আমার বড়দা প্রকৌশলী আশীষ বড়ুয়াকে। এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন জনপ্রিয় অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে যোগাযোগ করে আমার বাল্যবন্ধু সৌরিণ দত্ত। সে নিজেই বলেছিলো, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। সাথে আরও ছিলেন খ্যাতিমান কবি ফরিদ আহমেদ দুলাল। দুলাল ভাই উপন্যাসের নাম শুনে বলেছিলেন, এই শিরোনামে একটা অসাধারণ কবিতাও হতে পারে। সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কবি ও ' এবং মানুষ' সম্পাদক আনোয়ার কামাল ভাই। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আমার পত্নী মুক্তা পীযূষ, আমার দুছেলে প্রত্ন-প্রখর, আমার বন্ধু ও বর্তমানে প্যাথলজির অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর এবং তার পত্নী ডা. রিজোয়ানা। আমাদের পারিবারিক স্বজন প্রণব রায় চৌধুরী রাজনও সেদিন উপস্থিত ছিলেন তার শত ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে। আমার ইমিডিয়েট ছোটবোন রূপা ও তার বর সঞ্জয় মুৎসুদ্দি, আমার ভাগ্নে মশিয়ঁ, ভাগ্নী দীপা এবং বিটিভির শিল্পী ও গীতিকার শামসুল হুদা ভাইও সেদিন ছিলেন। আরও মজার বিষয় ছিলো, আমার উপন্যাসের সেই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে একসাথে আমরা তিন পীযূষ উপস্থিত ছিলাম। আমি পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, প্রধান অতিথি পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আমাদের পারিবারিক অভিভাবক ও শিল্পী-গীতিকার পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী দাদা। তিনি পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তাঁর বই তুলে দেন উপহার হিসেবে। আমার অন্যান্য বইগুলো ছিলো : কারুবাক হতে 'প্রজ্ঞা-প্রসূন' এবং 'কল্পকুসুম', শৈলী প্রকাশন হতে 'বদ্বীপ হতে বাংলাদেশ ' এবং য়ারোয়া প্রকাশবী হতে ' মুক্তিবীর '। প্রজ্ঞা-প্রসুন ছিলো প্রবন্ধ সংকলন, কল্পকুসুম ছিলো ছোটগল্প সংকলন, বদ্বীপ হতে বাংলাদেশ বইটি বাংলাদেশের জন্ম-ইতিহাসকেন্দ্রিক কিশোর কাব্যগ্রন্থ এবং 'মুক্তিবীর' ছিলো কিশোর গল্প। এ বইমেলায় 'কল্পে গল্পে ইলিশ' নামে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে একটা গল্প সংকলন বের হয়। জেলা প্রশাসক মহোদয় চেয়েছিলেন, এতে আমার একটা ইলিশ-গল্প যেন ছাপা হয়। আমি সেই মত একটা গল্প জমা দিলাম। কিন্তু সম্পাদনার দায়িত্বে থাকা তৎকালীন এডিসি, আইসিটি ও শিক্ষা, আমার গল্পটাকে স্থান সংকুলান না হওয়ার অযুহাতে প্রকাশিত হতে দেননি। আমার গল্পটা ছিলো 'জাগরণ ' শিরোনামে। পরে অবশ্য এই গল্পটি আমার নিজের গল্পগ্রন্থসহ আরও কয়েকটি পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকী এবং ছোট কাগজে নিজের স্থান করে নিয়েছে। এ গল্পটিতে আমি লোকজ সংস্কৃতির উপাদান ব্যবহার করেছিলাম, জাটকা নিধন রোধ কল্পে। কবিগানের মধ্য দিয়েই কবিয়ালরা জাটকা নিধনের বিপক্ষে জনমত তৈরি করেছেন।
দুহাজার আঠার সালের ফেব্রুয়ারি যেমন আমার জন্যে পাঁচটা বই নিয়ে এলো, তেমনি আমার জন্যে একটা দুঃসংবাদও নিয়ে এলো। আসলে, এটা দুঃসংবাদ নয়, সুখেরই বটে। চাঁদপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মহোদয় যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে পদায়িত হয়েছেন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের পরিচালক পদে। আমার জন্যে দুঃখের এ কারণে যে, তিনি আমাকে আপন ছোটভাইয়ের মতোই স্নেহ করতেন। নিজের চিকিৎসার ছোটখাট সমস্যার সমাধান যেমন আমার কাছে চাইতেন, তেমনি কোনো লেখালেখির যোগাযোগের বিষয় আসলে আমাকে স্মরণ করতেন বা ডেকে পাঠাতেন তাঁর কার্যালয়ে। পারিবারিকভাবে আমার পরিবারকে স্বজনের তালিকায় তিনি অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছিলেন। ভাবী ছিলেন ইডেন কলেজের সহযোগী অধ্যাপক। তিনিও আপন দেবরের মতোই জানতেন। তাঁর ছেলের সাথে আমার ছেলেদেরও ভালো সখ্য হয়। জেলা প্রশাসক মহোদয় চাঁদপুর ছেড়ে যাওয়ার আগে নেজারত ডেপুটি কালেক্টরকে বার বার তাগাদা দিচ্ছিলেন যাতে আমার সৃজনশীল কর্মকে মূল্যায়ন করে একটা সনদ দেওয়া হয়। বিশেষ করে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের সাথে দীর্ঘদিন আমি যে কাজগুলো করেছি সেগুলোর মূল্যায়ন করে আমার ভূমিকা পর্যালোচনা করা। তাঁর দেওয়া সে সনদটি আমার এক অনন্য প্রাপ্তি। তাঁর আগ্রহে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকেও আমি সহযোগিতা করি। বিশেষ করে বিনামূল্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গৃহহীনদের গৃহ দানের প্রকল্পে। এ বিষয়ে চারটি প্রকাশনা হয়, যার সবক'টিতে আমার লেখা ও পরিকল্পনা আছে। এ প্রকল্পটি দলগতভাবে জনপ্রশাসন পদক লাভ করে। মার্চের পাঁচ তারিখে তিনি সপত্নী চাঁদপুর ত্যাগ করলেন এবং ঐদিনই যশোর থেকে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে জনাব মাজেদুর রহমান খান চাঁদপুরে যোগদান করেন। একজন জেলা প্রশাসকের বিদায় ও একজন জেলা প্রশাসকের বরণের মাঝখানে যে সময়, তা কিন্তু বেশ জটিল। এ সময়টায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব শওকত ওসমানকে দেখেছি, বেশ দক্ষতার সাথে তিনি পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন।
নূতন জেলা প্রশাসক চাঁদপুরে যোগ দিয়েই বেশ কর্মব্যস্ত সময় পার করতে শুরু করলেন। একদিকে চাঁদপুর সার্কিট হাউজের ঊর্ধমুখী সম্প্রসারণ ও সজ্জাকরণ এবং অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চাঁদপুরে আগমনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসনের বেশ কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে। সার্কিট হাউজের ভিআইপি কক্ষ সাজাতে গিয়ে তিনি স্থানীয় শিল্পীর আঁকা ছবির বেশ কদর করলেন। তিনি এসে বিকেলে পদপরিক্রমায় শহরটিকে চিনতে শুরু করলেন। হাঁটতে হাঁটতে ভিখারীদের মানবেতর জীবনের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পড়লেন। তাঁর দানশীলতা ও মানবিকতা দেখে দলে দলে ভিখারীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বারান্দায় ভিড় জমায়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ কার্যালয়টি কার্যত একটি লঙ্গরখানায় পরিণত হয়ে পড়ে। তিনি এদের সরকারি সাহায্য থেকে দিয়েছেনও প্রচুর। তবে একসময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রয়োজনসূত্রে যাতায়াতকারী অনেকের কাছে ভিখারীদের এই সমাগম হাঙ্গামার মতো মনে হতে থাকে। পূর্বতন জেলা প্রশাসক সরকারের একটি উদ্যোগ, 'ভিখারীহীন বাংলাদেশ' সফল করার জন্যে বিভিন্ন পেশাজীবীদের কাছ থেকে একদিনের বেতন সংগ্রহ করেন। কেউ কেউ হাসিমুখে এতে এগিয়ে আসেন, আর কেউ কেউ একদিনের বেতন জমা দিলেও বিষয়টির সমালোচনা করেন। ফলে ভালো একটি উদ্যোগ নিরঙ্কুশ সমর্থন পেলো না। ভিখারীমুক্ত চাঁদপুর গড়ার সংগৃহীত তহবিলটি ব্যাংক হিসাবে আলাদা করে জমা করা হয়। প্রায় সোয়া কোটি টাকা সংগৃহীত হয়। এটাকা দিয়ে গৃহহীন ভিখারীদের মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করার চিন্তা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক বদল হওয়ায় প্রকল্পটি ঝুলে যায়। বদলির আগে পূর্বতন জেলা প্রশাসক তাঁর সময়ের গৃহীত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন বিষয়ে একটি প্রকাশনা বের করেন। এতে বিগত তিন বছরের সকল কর্মসূচি ও পরিকল্পনা লিপিবদ্ধ থাকে, যাতে ভবিষ্যতের কাছে তা প্রয়োজনমাফিক উপস্থাপন করা যায়। এ প্রকাশনাটির নামকরণ ও প্রচ্ছদ পরিকল্পনার বিষয়েও আমার শ্রম ও সময় জড়িয়ে আছে।
দুহাজার আঠার সালের মার্চ মাস থেকেই চাঁদপুরে সাজ সাজ রব। কেননা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসবেন স্কাউটদের কমডেকা উদ্বোধন করতে। কমডেকা হলো মূলত স্কাউটদের কমিউনিটি ডেভেলপিং ক্যাম্প।
দুহাজার আঠার সালের একত্রিশে মার্চ থেকে পাঁচ এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে হাইমচর উপজেলার তিন নং আলগী দূর্গাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের 'চরভাঙ্গায়' মেঘনার তীরে ষষ্ঠ জাতীয় কমডেকা অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রতিপাদ্য ছিলো, 'টেকসই সমাজ বিনির্মাণে স্কাউটিং'। কমডেকার সাথে পরোক্ষভাবে আমিও যুক্ত। যদিও আমি নিজেও একজন প্রাক্তন কাব এবং স্কাউট। কমডেকা উদ্বোধনকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে আমার লেখা চাঁদপুরের উন্নয়নমেলার থিম সং কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে। আমি এ খবরটা পাওয়ার পর কিছুটা শিহরিত ছিলাম। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকা থেকে রাসেল হাসানকে পাঠানো হয়েছিলো বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে কমডেকা কাভার করতে। তার প্রতিবেদনে আমার লিখিত থিম সং ও কোরিওগ্রাফির বিষয়টা বেশ গুরুত্ব পায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উল্লসিত ছিলেন এ কোরিওগ্রাফির উপস্থাপনে। পরবর্তীকালে অবশ্য থিম সংটিকে সময়োপযোগী করা হয় হালনাগাদ বিষয় যুক্ত করে। (চলবে)