প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৩
সুভাষ সরকারের কবিতা
সুভাষ সরকারের কবিতা আকাশ-পাতাল
পাতালে না পৌঁছুলে কখনো আকাশের উচ্চতা মাপা যায় না।
মহল্লায় ফুটেছে ফাল্গুন। আগুনের রং দেখে
কত কী ভাবছে বিগত যৌবন দুই
আকাঙ্ক্ষার টংঘরে বসে।
গুচ্ছের গন্ধফুল নিয়ে একঝাঁক বুনোহাঁস
দুঃখের কবিতা শোনাতে এলো হাড়হাভাতের দেশে।এখানে নিষিদ্ধ নয় কেউ, এখানে বাউল বেশে জোনাকিরা একতারা হাতে।
পরিব্রাজক নিশিকান্ত হই, আলোতে অগ্নি যদি
ভস্মীভূত ছাই।
এই স্বপ্নের দেশে ধামসা মাদল আছে, প্রেম আছে, শুধু
বাজে না সানাই।আকাশে না ছুঁইয়ে হাত ঈশ্বরীরা পাতালে প্রবেশ করে না।
অজ্ঞাতবাসপর্ব
১
কান পেতে শুনি বাতাসে ঘুঙুর বাজছে, আরো কত সব...
এখানে পাণ্ডব যতটা চিনি, ততটাই অচেনা কৌরব।
যেপথে রাত্রি নামে, সন্ধ্যাকালেই
আমি তার জেনেছি গৌরব।
২
এই যে দেখছি মাটির সঙ্গে মিশে আছে ঘর, স্বপ্নের সঙ্গে দোনালা বন্দুক,
এখানে জন্মেছো এমন কেউ, এখানে বদলাচ্ছে এমন মানুষ
প্রকৃত যুদ্ধ যা, তা যদি বাধাও, আমি মুক্তিকামী।
দীঘা পুনর্বার
১
যদি ভালো গাও, লুকিয়ে লুকিয়ে শ্রোতা হই আমি।
কাল সারারাত জ্েযাৎস্নার আগুনে পুড়েছে মা-ভূমি।
পুড়েছে অমৃতলোক, জেলেপাড়া, ঝাউবনে যুবক-যুবতী।দীঘার সমুদ্রতট সফেদ ফেনায় মোড়া অসুখের স্মৃতি।
২
সেই যে প্রথম দেখা সেই শেষ দেখা ছিল গোপনে দীঘায়।
তারপর সন্ধে হ'ল, তারপর রাত্রি হ'ল বিবিধ ছায়ায়।
সেসব তুমিও বোঝ, আমাদের অনভিজ্ঞতায়...মৃত্যু শেখালো শুধু মৃত্যুকেও জয় করা যায়।
৩
তোমাকে আদর্শ ভেবে একদিন মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলামএখন দেখি না তা নয়, গোপনে পাতার ভাঁজে চিঠি আর খাম।
সময় বিরুদ্ধ ডাকে, তবু দেখ, পুনর্বার এসেছি দীঘায়
রাতের সর্বস্ব যদি, একদা-তোমার মতো, ধ্রুপদী শোনায়।
৪
যেভাবে তাকিয়ে আছো তাতে সব চেনা পথ শূন্যপথ ঠেকে।
বলো, বলো, বিরতির বাঁশি ঠিক কী শোনালো গোপনে তোমাকে।
আমার বিশ্বাস আজো তোমাতে অটুট তাই দীঘাতে এলাম।প্রিয় মাতৃমুখ, এভাবে তাকাও যেন স্নেহের অধিক কিছু মমতা পেলাম।
ধরা-ছোঁয়ার বাইরে যে মানুষটা
১
ধরা-ছোঁয়ার বাইরে যে মানুষটা, আজীবন তাকে ছুঁয়ে-পেতে চেয়েছি প্রকাশ্েয।
একটা কথাও না তার সঙ্গে, প্রতিদিন দুবেলা দেখছি যাকে।
এই পাওয়া-না-পাওয়ার মধ্েয অমিত শূন্যতা যাকে পাড়িয়েছে দীর্ঘ শীতঘুম,
জ্েযাৎস্নার সীমিত আগুন গায়ে মেখে আদৌ কি উজ্জ্বল সেই রাত্রির কুসুম?
২
অসূয়া পুষেছি বুকে, তৎসহ অজস্র কাম, আর
আমাকে যে অন্ধকারে হাঁটু গেড়ে করেছে প্রণাম
সেই একমরুভূমিব্যাপী দুঃখ রজঃস্বলা।
আমার পথিকসত্তা ক্রমশ দীর্ঘ হতে হতে হতে অচল যেখানে এসে
তার কাছেপিঠে জিরাফ-যন্ত্রণা ছাড়া কোনও মৃত্যুভূমি নেই।
অদ্ভুত একটা বেদনারঙের পাখি, আমি তার পালকে হাত দিয়ে
কিরাত-শিশিরে ভেজা কিনা দেখি।
আশ্বিনের আলাপী মেঘের মতো মুখ তুলে
ঝলসানো চোখে তার সূর্যাস্তের শেষ রশ্মিটুকু খুঁজি।
আমার এই অন্বেষণ ফিনিক্স পাখির মতন দাউদাউ নিজেকে পুড়িয়ে।
কবিতা কৃষ্ণপক্ষে
এবার না-হয় কিছু না-বলা কথা বিস্ফোরক হয়ে পৌঁছে যাক শহরের আনাচেকানাচে
কিছু অবাধ্য শব্দ ধারালো অস্ত্র হয়ে নামুক নাকাবন্দী গ্রামের রাস্তায়
অজেয় অক্ষরমালা জলপথে বায়ুপথে ছড়িয়ে পড়ুক নিষিদ্ধ লিফলেটে।এবার না-হয় কিছু যতিচিহ্ন চড়ুক শব্দভেদী তীরের ফলায়
কিছু বাঁকা শিরদাঁড়া মাড়িয়ে লাল বাড়িটা ঘিরে নিক প্রতিবাদের আ-কার ই-কার
একটা স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সাধু ও চলিত ভাষা মিলেমিশে হোক একাকার।এবার না-হয় কোনো কারাগারে হোক বিকল্প বানানের বর্ষযাপন
সব ক্রিয়াপদগুলো আজাদির আজ্ঞাবহ হয়ে চকিত আক্রমণে যাক
প্রচারে চড়ুক গলা স্বর-শাবকের।এবার না-হয় ণত্ব-ষত্ববিধি দাবানল হয়ে জ্বলুক জঙ্গলে
কারক-বিভক্তিসহ যাবতীয় ব্যাকরণ মিলে আরো লম্বা হোক মিছিলের শেষ
পথে নামো বাংলাভাষা জড়িয়ে মেদুর গায়ে দীপ্ত অগ্নিবেশ।