বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৯

স্বপ্নবাজ তৃষ্ণার ছুটে চলা

মো. মাসুদ হোসেন
স্বপ্নবাজ তৃষ্ণার ছুটে চলা

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর এক উক্তিতে বলেছেনÑপৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। তেমনি বর্তমানে নারীরা কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। তারা তাদের নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ঘরে বাইরে সব পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছেন। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। অনলাইন ব্যবসায়ের প্রবর্তনের ফলে নারীরা আরও বেশি পরিমাণে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছেন। তেমনি সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য একজন মডেল চাঁদপুর সদর উপজেলার সফল নারী উদ্যোক্তা ফারজানা ইসলাম তৃষ্ণা। ফেসবুকে রয়েছে তার ‘ঞৎরহধ-তৃণা’ নামের একটি পেইজ। সেখান থেকেই চলে ফারজানার অনলাইন ব্যবসার সকল কার্যক্রম। অনলাইনের পাশাপাশি সরাসরিও গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিয়ে থাকেন পণ্য। অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্বপ্নচূড়ায় পৌঁছানোর লড়াইয়ে প্রথমে তিনি একাই লড়ে গেছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে এসব শাড়ি, থ্রিপিস সহজ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী সংগ্রহ করে থাকেন তিনি। এছাড়াও নিজের পছন্দের মতো ডিজাইন দিয়েও তাঁতিদের কাছে থেকে শাড়ি তৈরি করে নিয়ে থাকেন।

প্রত্যন্ত গ্রামের একজন সাধারণ মেয়ে ছিলো তৃষ্ণা। আর পাঁচটা সাধারণ কিশোরী মেয়ের মতোই চলছিলো তাঁর জীবন। কিশোরী বয়সেই মনে অনেক স্বপ্ন বুনে রেখেছে সে। এ দিকে বয়স যখন ১৭ বছর হঠাৎ মারা যায় তার ব্যাংকার বাবা। পরিবারের ৩ মেয়েকে নিয়ে তার মা অসহায় হয়ে পড়ে। পরিবারের বড় সন্তান হওয়াতে সমাজের নানা মানুষ নানান রকম কথা বলতে থাকে। শুনতে হয়, মেয়ে মানুষ লেখাপড়া করিয়ে কী হবে। ছেলে হলে না হয় লাভ হতো। মেয়ে বড় হওয়াতে গ্রামের মানুষেরা বলতে থাকে বিয়ে দিয়ে দিতে। এক পর্যায়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ২০১৬ সালে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয় তৃষ্ণার। সে ঘরে জন্ম নেয় একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান। কোন এক সমস্যার কারণে ৬ বছরের মাথায় ইতি টানতে হয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনের। তৃষ্ণা যখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে জর্জরিত, তখন অনলাইনে কয়েকটি ট্রেনিং করে ঘরে বসেই শুরু করেন তার ব্যবসা কার্যক্রম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খোলেন একটি পেইজ। ঞৎরহধ-তৃণা নামের সেই পেইজে নারী ও শিশুদের বিভিন্ন পোশাকের ছবি আপলোড করেন। এর পর একটি দুটি করে অর্ডার আসতে থাকে। এখন তার অনলাইন শপে প্রতিদিনই বাড়ছে পণ্যের ক্রেতা। প্রথমে হ্যান্ড প্রিন্টের বিভিন্ন সামগ্রী হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের দেশিয় শাড়ি, থ্রিপিস, হেন্ডপ্রিন্ট ড্রেস, চায়না ব্যাগ, জুয়েলারি ও প্রসাধনী সামগ্রী নিয়ে কাজ করেন তিনি।

নিজের জমানো ১৫০০ টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করা ব্যবসা আর পরিবারের উৎসাহে সেই ব্যবসা এখন চালাচ্ছেন ফারজনার তিন বোন মিলে। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ধীরে ধীরে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজ এলাকাসহ চাঁদপুরে পরিচিতিও লাভ করেছেন এ নারী। উদ্যোক্তাজীবনে পরিবার থেকে ভালোই সাড়া পাচ্ছেন জানিয়ে ফারজানা ইসলাম তৃষ্ণা বলেন, আমার পুরো যৌথ পরিবারের সবাই আমাকে সাপোর্ট ও সহযোগিতা করেছে। বিশেষ করে আমার মা আমাকে খুব সহযোগিতা করেছে। আমি যখন কাজ শুরু করি, তখন অনেকে অনেক বাজে কথা বলেছিল। সেসব বাজে কথা এবং ঝামেলা থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে আমার মা। তিনি আরো বলেন, সমাজ আমাকে একদিন সবদিক থেকে বিমুখ করেছিল। কিন্তু আমি জানতাম পরিশ্রম আর চেষ্টা অক্ষুণ্ন রাখলে জয় আসবেই। যে সমাজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, সেই সমাজ আজ আমাকে সম্মান করে। আমি মনে করি এই সম্মান আমার না, আমার কাজের। এর মধ্যে সকলের দোয়ায় দুইবার লাখপতিও হয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তৃষ্ণা বলেন, ব্যবসা নিয়ে আমার একটা লক্ষ্য আছে। যেদিন লক্ষ্য পূরণ হবে সেদিন সবাইকে মাসিক আয়ের তথ্যটা বলবো। আপাতত এই বিষয়ে বলতে চাই না। তিনি বলেন, আমার মূল বিষয় হলো সাফল্য। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের সহযোগিতা পেলে সেই স্বপ্নচূড়ায় পৌঁছাতে পারবো ইনশাআল্লাহ। আমার সফলতার গল্প পড়ে যেন আরও ১০ জন মেয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন এবং সফলতা অর্জন করেন। তৃষ্ণা বলেন, নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আমার পরামর্শ- স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। তাই বলবো, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে অবশ্যই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হবে। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, তবে ইচ্ছা থাকলে তা ওভারকাম করা সম্ভব। স্বপ্ন, সামান্য পুঁজি আর পরিশ্রম থাকলেই অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়