প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০
আগুনের নদী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
দুই.
পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে বয়ে যাচ্ছে এক বিচিত্র নদী। এতে নেই কোনো পানির প্রবাহ। এর মধ্য দিয়ে শুধু প্রবাহিত হচ্ছে আগ্নেয়গিরি ও লোহিত লাভা। অনেক দূরের একটি রেস্ট হাউস থেকে দেখতে এ যেন দৃষ্টিনন্দন আগুনের নদী।
ইরফান অধরাকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ-পশ্চিম আইসল্যান্ডের এই আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত দেখার জন্যে এ রেস্ট হাউজে আসে। শুক্রবার পর্যন্ত এটি অনেক অনেক লাভা নির্গত করেই চলছে।
ইরফান জানতে পারে এ অগ্ন্যুৎপাতের এক দিন পর থেকে লাভার প্রবাহ শুরু হয়। লাভার স্রোত আইসল্যান্ডের গ্রিনডাভিস শহরে আঘাত হানে। তবে আগে থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। প্রায় চার হাজার মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
অগ্ন্যুৎপাতের জেরে আগ্নেয়গিরিতে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ফাটল থেকে ঊর্ধ্বে উঠে আবার ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ছে লাভা। এ যেন ‘প্রকৃতির আতশবাজি।’ রাতে এ দৃশ্য অনন্যসুন্দর একটি আবহ সৃষ্টি করে। আগ্নেয়গিরির কারণে পার্শ্ববর্তী ব্লু-লেগুন নামের জনপ্রিয় স্পা সেন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই এলাকায় পর্যটকদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই ইরফান ও অধরা খুব কাছে যেতে পারছে না।
রেস্ট হাউজটির নাম ‘লা লিকাস’। চারদিকে মনোরম পরিবেশ। এখান থেকেই আগ্নেয়গিরি ও লোহিত লাভা স্পষ্ট দেখা যায়।
একটা চেয়ারে ইরফান আর পাশাপাশি বসে আছে অধরা। ইরফান ভাবছে অধরার কথা। আর অধরা ভাবছে ইরফানের কথা--কে এই ইরফান? হঠাৎ করেই এয়ারপোর্টের তার সাথে দেখা। তাকে দেখেই অধরার মনে হলো কতযুগ আগের চেনা এই যুবক। কাছাকাছি এসেই সুন্দরভাবে হেসে তার কাছে জানতে চায়, ‘এখানে ক’দিন থাকার মতো রেস্ট হাউজ কোথায় আছে?’
অধরা তার মতোই একজন বাংলাদেশী হিসেবে কয়েকটা রেস্ট হাউজের নাম বলে দেয়। এমনিভাবেই তার সাথে পরিচয়। এই পরিচয়েই যে এতোটুকু গড়াবে কে জানতো?
ইরফান ভাবে, অধরার কথামতো একটা হোটেলে উঠেছিলো সে। হোটেলটির নাম- আয়রন অ্যাডভেঞ্চার হোটেল। লক্ষ্য করলো হোটেলটি অত্যাশ্চর্য স্থাপত্য। পরিবেশ বান্ধব ডিজাইনে মনকাড়া। এটি অনেক বিলাসবহুল আরাম উপভোগ করার সময় আইসল্যান্ডের প্রাকৃতিক বিস্ময় অন্বেষণ করার জন্যে অতুলনীয়। যাই হোক, অধরার মুঠোফোন নাম্বার নিয়ে এসেছিলো সে। পরদিনই তাকে ফোন দেয় এবং এখানে আসতে বলে। তারপর তার কাছে কিছু কিছু বিষয় জানতে চায়। যার মিশন নিয়ে বাংলাদেশ থেকে সে এসেছে।
সে অধরাকে প্রশ্ন করে, ‘তুমি এখানে কতদিন যাবত আছো?’
অধরা উত্তর দেয়, ‘চার-পাঁচ বছর হয়েছে।’
‘তোমার বাবা-মা?’
‘আমাদের পুরো পরিবার স্লোভেনিয়ায়। আমি এখানে পড়াশোনার জন্যে এসেছি।’
‘পড়াশোনা শেষ হয়েছে?’
‘হ্যাঁ। হয়েছে। তবে এখন চাকুরি করছি একজন চিকিৎসক হিসেবে।’
ইরফান আর কোনো প্রশ্ন করছে না। ভাবছে।
এ সময় অধরা ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, ‘গত ডিসেম্বর থেকে পঞ্চমবারের মতো এ আগ্নেয়গিরিটিতে অগ্ন্যুৎপাত হলো। অগ্ন্যুৎপাতের স্থান থেকে আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকজাভিক মাত্র ৩০ মাইল দূরে। এ থেকে সৃষ্ট গ্যাসের কারণে রাজধানীর বাতাস দূষিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা। সুন্দনুকুর নামের ওই আগ্নেয়গিরিটি ৮০০ বছর সুপ্ত অবস্থায় ছিল। তিন বছর আগে এটি সক্রিয় হয়।’
‘তুমি তো দেখছি অনেক কিছুই জানো’। অধরার দিকে তাকিয়ে হাসলো ইরফান।
অধরাও হেসে বললো, ‘আইসল্যান্ড’ নামটি শুনলে মনে হতে পারে এই দেশটি বরফে আবৃত কোনো একটি দেশ। আইসল্যান্ডে পা রাখার আগপর্যন্ত আমার নিজেরও একই ধারণা ছিল এ দেশটিকে ঘিরে, কিন্তু যখন এর আগে আইসল্যান্ড ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হলো, তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলাম, যা শোনার সঙ্গে সঙ্গে যে কোনো মানুষের চক্ষু চড়ক গাছে পরিণত হওয়ার উপক্রম হবে।’
ইরফান আগ্রহ প্রকাশ করে জানতে চাইলো, ‘কী অভিজ্ঞতা? মারাত্মক কিছু?’
অধরা বলতে লাগলো, ‘সময়টা ছিলো ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি। ইউরোপে তখন শীত তীব্রভাবে জেঁকে বসেছে। এমন একটি সময় পুরো আইসল্যান্ড ভ্রমণের পরিকল্পনা করি, আমার সহপাঠীরা এ পরিকল্পনায় সায় দিচ্ছিলো না। কিন্তু আমি একেবারে নাছোড়বান্দা, কারও কথায় কোনো ধরনের কর্ণপাত না করে নিজের ইচ্ছাতেই এ সময়টা বেছে নেই আইসল্যান্ড ভ্রমণের জন্যে। নাম যেহেতু আইসল্যান্ড এবং ইউরোপের অনেক দেশে তখন রীতিমতো তুষারপাতও শুরু হয়ে গেছে, তাই শুধু আইসল্যান্ড ভ্রমণের উদ্দেশে আগের থেকে শীত নিবারণের জন্যে বিশেষ কিছু ভারী পোশাক কিনে রেখেছিলাম।’
ইরফান মনোযোগ দিয়ে অধরার অধিক কথাগুলো শুনছিলো। এ সময় বাংলাদেশ থেকে কল আসে। অধরা কথা থামিয়ে ইঙ্গিতে বললো, ‘কথা বলো, কথা বলো।’
ইরফান অধরার কাছ থেকে একটু দূরে গিয়ে ফোন রিসিভ করে কথা বলতে লাগলো। তারপর ওপাশ থেকে যা শুনলো তাতে সে রীতিমতো অবাক হয়ে গেলো। প্রশ্ন করলো, ‘খণ্ডিত লাশ!’
কথাটা অধরার কানে গেলো। ইরফান কথা শেষ করে এসে অধরার পাশে বসলো। তার মনে এখন অনেক কিছু চলছে। অধরা প্রশ্ন করলো, ‘কার খণ্ডিত লাশ?’
ইরফান কোনো উত্তর দিলো না। অধরাকে বললো, ‘তারপর বলো, তোমার সেই ভিন্ন অভিজ্ঞতার গল্প।’
অধরা বলতে শুরু করলো, ‘২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট থেকে উইজ এয়ারের ফ্লাইটে আইসল্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। সেদিন বুদাপেস্টে তীব্র তুষারপাত হচ্ছিল, তাই মনে একধরনের বাড়তি রোমাঞ্চ কাজ করছিল। যদিও আইসল্যান্ড ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কোনো দেশ নয়, তবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে গঠিত কমন বর্ডার ফ্রেমের অন্তর্ভুক্ত যে দেশগুলো রয়েছে তার একটি। অর্থাৎ সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর তালিকায় আইসল্যান্ডের নাম রয়েছে।’
‘তাই নাকি?’ অবাক হলো ইরফান।
‘হ্যাঁ, স্লোভেনিয়া যেহেতু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত এবং একই সঙ্গে সেন জেনভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর তালিকায়ও স্লোভেনিয়ার নাম রয়েছে, তাই স্লোভেনিয়ার অস্থায়ী রেসিডেন্সের সুবাদে আমার আইসল্যান্ড ভ্রমণের সৌভাগ্য হয়েছে। যদিও স্লোভেনিয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলোর মাঝে একটি, তবে এখনো দেশটির অবকাঠামো পুরোপুরি আশানুরূপভাবে গড়ে ওঠেনি। বিশেষত দেশটিতে গণপরিবহন সেবার মান ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে।’
‘আচ্ছা।’ মনোযোগ সহকারে ইরফান অধরার কাহিনী শুনছে আর ভাবছে পরবর্তী প্ল্যান সম্পর্কে।
‘দেশটির একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইয়োজে পুচনিক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট রাজধানী লুবলিয়ানা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। তবে এ এয়ারপোর্টটি আয়তনে খুবই ছোট এবং দুর্বল অবকাঠামোর জন্যে খুব বেশি একটা ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটের দেখা মেলে না সেখানে। এমনকি স্লোভেনিয়ার স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের নিজ দেশের বিমানবন্দরের পরিবর্তে প্রতিবেশী দেশ ইতালি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি কিংবা ক্রোয়েশিয়ার বিমানবন্দরগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে।’
‘ওহ। তোমার কাছে অনেক কিছু জানা যাচ্ছে, যা আমি আগে জানতাম না।’ ইরফান বললো।
‘স্লোভেনিয়াতে আমার পরিবারের বসবাস ভিপাভাতে, যেটা ইতালির সীমান্তের খুবই নিকটে অবস্থিত ছোট্ট একটি মফস্বল এলাকা। ভিপাভা থেকে রাজধানী লুবলিয়ানা হয়ে বুদাপেস্টের লিটজ ফ্যারেঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট পযন্ত পৌঁছাতে ছয় থেকে সাত ঘণ্টার মতো সময় লাগে। আবার যেহেতু আমার ফ্লাইট ছিলো ভোর সাড়ে চারটার দিকে, তাই এয়ারপোর্টের বাইরে অন্য কোথাও রাত অতিক্রম করার মতো সুযোগও ছিলো না। বুদাপেস্টের দুর্যোগময় আবহাওয়ার জন্যে সে যাত্রায় ফ্লাইট ছেড়ে যেতে বেশ বিলম্ব হয়েছিল।’
‘বাহ। চমৎকার। শুনতে খুব ভালো লাগছে তোমার ভ্রমণের কাহিনী।’ ইরফান উৎসাহ দিলো।
‘প্রায় চার ঘণ্টার যাত্রা শেষে আইসল্যান্ডে পোঁছলাম। সুমেরু রেখার কাছাকাছি হওয়ায় আইসল্যান্ড নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এ তিন মাস বলতে গেলে দিনের প্রায় ২৪ ঘণ্টা ঘুঁটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা থাকে। সূর্যের আলো দেখা গেলেও সেটা খুব বেশি সময়ের জন্যে স্থায়ী হয় না। অন্যদিকে মে, জুন ও জুলাই এ তিন মাস বলতে গেলে দিনের প্রায় সমগ্র অংশে সূর্যালোকের দেখা মেলে। এমনকি ঘড়ির কাঁটায় যখন রাত ১২টা তখনো সূর্য অন্ত যায় না। এ ঘটনাকে ‘মিড নাইট সান’ বলা হয়ে থাকে।’
‘ওহ, এই কথা কয়েকবার শুনেছিলাম। তোমার মুখে শুনে আরও ভালো লাগলো।’ বললো ইরফান।
‘অ্যারোপ্লেন থেকে নেমে এয়ারপোর্টে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে ইমিগ্রেশন পুলিশের সঙ্গে অফিশিয়াল কাজগুলো সেরে ফেলতেই এক অফিসার হাসিমুখে আমাকে আইসল্যান্ডে স্বাগত জানালেন। এরপর তিনি নিজে থেকে আমাকে আইসল্যান্ডিক ভাষার কিছু শব্দ শেখাতে শুরু করলেন। যেমন ‘গোয়ান ডাগিন’-এর অর্থ শুভ সকাল কিংবা ‘টাক’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ধন্যবাদ ইত্যাদি। আইসল্যান্ডের ভাষা একটি জার্মানিক ভাষা। তাই আইসল্যান্ডিক শুনতে কিছুটা জার্মান ভাষার মতোই মনে হয়। জার্মান, ডাচ, ইংরেজি, সুইডিশ, ড্যানিশ, নরওয়েজীয় এসব ভাষা জার্মানিক ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত।’
ইরফান অধরার রোমাঞ্চ কাহিনী শুনছিলো। মেয়েটা অনেক কথা বলতে পারে, ভাবে সে। এই মেয়েকেই তার দরকার। মেয়েটা মনে হয় এই দেশের সব অলিগলি চেনে। একে দিয়েই তার মিশনের কাজ সাকসেস করা সম্ভব।
অধরার চোখে ইরফানের অন্যমনস্কতা ধরা পড়ে। সে বললো, ‘তুমি কী ভাবছো? শুনছো না আমার কথা? নাকি বিরক্ত লাগছে?
‘না। না। বিরক্ত লাগছে না। তুমি বলতে থাকো।’ ইরফান সায় দেয়। এমন সময় ইরফানের ফোনটা আবারও বেজে উঠলো।
অপর প্রান্ত থেকে বলতে লাগলো, ‘স্যার ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সেতুর নিচ থেকে উদ্ধার মাথা বিচ্ছিন্ন মরদেহটি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর বলে জানা গেছে। হত্যার শিকার ওই ছাত্রের নাম তুষার আহমেদ। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষে পড়তেন। তার বাড়ি ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের তারাটি গ্রামে। সে ওই গ্রামের ইউসুফ আলী মণ্ডলের ছেলে। পরিবারের সঙ্গে সে থাকতো ঢাকায়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে তার মরদেহটি উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। নদীর পাড়ে সকাল ৮টার দিকে পলিথিনে মোড়ানো খণ্ডিত মাথা দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। তাকে গত রাতে কোনো একসময় হত্যা করে দুর্বৃত্তরা মরদেহ ফেলে রেখে গেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। জানা গেছে, কাটা মাথার পাশে একটি প্যান্ট, বিছানা চাদর ও টেবিল ক্লথ পড়ে ছিলো।’
‘আচ্ছা।’
‘সুতিয়া নদীসংলগ্ন ইউপি সদস্য ফয়জুর রহমান তুহিন-এর কাছ থেকে জানা গেছে, সকালে সেতুর নিচে একটি খণ্ডিত মাথা দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী জানান। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে সেখান থেকে ব্রিফকেসে বিচ্ছিন্ন দেহ উদ্ধার করে। সাথে আমাদের টীমও ছিলো।’
‘ওহ, আচ্ছা। ছেলেটির নাম তাহলে তুষার আহমেদ?’
‘জ্বি স্যার।’
‘কীভাবে নিশ্চিত হলে?’
‘স্যার কোতোয়ালি থানার ওসি সাহেব জানিয়েছেন, ‘সেতুর নিচ থেকে গলাকাটা মাথা ও ব্রিফকেস থেকে তুষার আহমেদের দেহটি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক ধারণা শনিবার রাতের কোনো একসময় তাকে এখানে হত্যা করে ব্রিফকেসে ভরে লুকানোর চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। যুবকের শরীর ও মাথার চামড়া চুলসহ এমনভাবে তারা তুলে ফেলেছে যে, পরিচয় শনাক্ত করতে আরো ভালোভাবে জানার চেষ্টা চলছে।’
‘আচ্ছা, আরও ভালোভাবে জেনে আমাকে জানাবে।’
‘ওকে স্যার।’
অধরা এতোক্ষণ কথাগুলো শুনছিলো। সে প্রশ্ন করলো, ‘কী হয়েছে? কোনো সমস্যা?’
‘না, কোনো সমস্যা না। আসলে আমার এক কলিগ আমাকে অফিসের বিষয়ে কিছু ইনফরমেশন দিচ্ছিল।’
‘আসলে তোমার পরিচয়টাই তো জানা হলো না।’
‘আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে অফিসার পদে চাকুরি করি। এখানে দুই সপ্তাহের ছুটি নিয়ে এসেছি তো। তাই অফিস সহকারীরা আমাকে সব সময় অফিসের সবকিছু ইনফর্ম করে। আচ্ছা। তোমার কাহিনীটা বলো, শুনতে বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে।’
‘কেন?’
‘বেশিরভাগ মানুষ তার জীবনের বেড়ে উঠা, প্রেম ভালোবাসা, কষ্টকর স্মৃতি ইত্যাদি নিয়ে গল্প করে। সেগুলো প্রায় সবারই সমান সমান। একটু ঊনিশ-বিশ। তাই শুনতে তেমন একটা আগ্রহ জাগে না। কিন্তু তোমার কাহিনীটা আসলেই ভ্রমণ কাহিনী। এসব কাহিনী শুনে রাখলে পরবর্তীতে কাজে লাগে।’
‘ওহ, হা হা হা’। অধরা মজা পেয়ে হাসলো। তার হাসিটা প্রাকৃতিক, একদম খাঁটি, ভেজাল নেই।
বেশিরভাগ নারীরা মনের মধ্যে এক, আর মুখে আরেক। যদিও পুরুষের বেলায়ও এমনটাই বলা যায়। তবুও পুরুষরা নারীদের কাছ থেকে একটু কাঁটার আঘাত পেলে, একটু যন্ত্রণা পেলে, কষ্ট পেলেই সব নারীকে একই সুতোয় গেঁথে ফেলে এবং একই কাতারে সামিল করে দোষ দিতে থাকে। ভাবছে ইরফান।
(চলবে)