শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৮

বিমূর্ত প্রভাব

বিমল কান্তি দাশ
বিমূর্ত প্রভাব

নিখিল বিশ্ব হরেক রকম পাগলের মেলা। কেউবা সম্পদশালী হওয়ার পাগল, কেউবা ভার্যা পাগল, কেউবা জ্ঞানার্জনের পাগল, কেউবা সংস্কৃতিমনা পাগল, কেউবা যশশ্বী হওয়ার পাগল, কেউবা পরনিন্দা চর্চার পাগল, আবার কেউবা যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় টিকে থাকার পাগল। এরাই পৃথিবীর নিকৃষ্টতম ক্ষমতা পাগল। এরা বুঝেও না বোঝার ভান করে। ক্ষমতার মসনদ এবং কারাগার নাতিদীর্ঘ দূরত্বে অথবা নির্বাসনে যাওয়ার পথও একেবারে সোজা-সরলরৈখিক।

ক্ষমতায় টিকে থাকার পথটি কিন্তু কোনো দিনই শ্বাপদসংকুল মুক্ত ছিল না।

১৭৫৭ সালে বাংলা-বিহার-ওড়িষার নবাবীর লোভে বঙ্গদেশ তথা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা বিলুপ্ত করেছিল পৃথিবীর নিকৃষ্টতম বেঈমান মীরজাফর। পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা হলেন মীরজাফর পরিবারের সাক্ষাৎ উত্তরসূরি। আর প্রধানমন্ত্রী হলেন লিয়াকত আলী খান।

ইসলামী প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তানের সংবিধান ১৯৫৬ সালে প্রণীত হয়েছিল। সেটি অনুযায়ী স্যার মালিক ফিরোজ খান নুনের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ইস্কান্দার মির্জা সামরিক স্বৈরশাসক হয়ে আসেন। আবার তাকে উৎখাত করে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান সমগ্র পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন এবং নতুন প্রণীত সংবিধান স্থগিত করেন। পাকিস্তানে সেনা শাসনের ইতিহাস মূলত ১৯৪৭ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত। এখনো সেনা শাসন উঁকিঝুঁকি মারছে। যা হোক পাকিস্তান কিন্তু বিভিন্ন মোড়কে আইয়ুব খান প্রণীত মৌলিক গণতন্ত্র দ্বারা শাসিত হচ্ছে। যার মূল বাণী হলো : তোমরা যে যাই বলো না ভাই, আমার কিন্তু সোনার হরিণটাই চাই।

পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানের স্বাধীন বাংলাদেশ। বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন স্বৈরশাসকের অপশাসনে বহু রঙ্গিন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এসব অপরিণামদর্শী শাসক জানতো না যে, “ইতিহাস বিদায় দেয় না, বলে, পরে দেখা হবে।” কারণ প্রেতাত্মাদের বিচরণে নিত্যতা রয়েছে। বিশ্বমানব জাতির মধ্যে মতান্তর নেই এমন কোনো স্থানই নেই। বিশ্ব নবীজির ওফাতের পর খোদ সৌদি রাজ্যে শুরু হয়ে গেল খোলাফায়ে রাশেদীনের চার খলিফার মধ্যে চতুর্থ খলিফার নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্ব, তাতেই সৃষ্টি হয়ে গেলো শিয়া-সুন্নির অযাচিত বিভাজন। তাতে ১২ ইমামে প্রথার অনুসারী শিয়া, আর নিরাকারের ইমামতির অনুসারীরা সুন্নি। এদের মধ্যে দেশে দেশে বিবাদ-বিসম্বাদ লেগেই আছে। পাশাপাশি বুদ্ধধর্মের তিনটি মতবাদ (১) স্বতন্ত্রবাদ, (২) অন্তর্ভুক্ততত্ত্ব ও (৩) বহুত্ববাদে কিন্তু অন্তর্দ্বন্দ্ব নেই বল্লেই চলে। খ্রিস্ট ধর্মের মূল মতবাদ একেশ্বরবাদী ধর্ম। নিউ টেস্টামেন্ট এবং ওল্ড টেস্টামেন্টে প্রায় একই মতবাদ ব্যক্ত আছে। আর সনাতনী হিন্দু ধর্ম মূলত বহুত্বের মাধ্যমে একেশ্বরবাদী হওয়া। এখানে আহ্বান যেমন নেই, তেমন বিসর্জনও নেই। সনাতন ধর্মে আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রকৃত কোনো রূপ নেই। এ পরমাপ্রকৃতির মহা বিশ্বই হলো মহামায়ার আসল রূপ। স্রষ্টার সৃষ্টি রহস্য আজও অনুন্মোচিত। কিঞ্চিত মাত্র উন্মোচিত। যা হলো দিবালোকে সালোকসংশ্লেষণ, রাতে শ্বসন-প্রশ্বেদন ক্রিয়ার সৃষ্টি। অক্সিজেন জীবের অস্তিত্বে অপরিহার্য আর কার্বন-ডাই অক্সাইড উদ্ভিদের অস্তিত্বে ব্যবহৃত হয়। এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়তই চলছে প্রাণী ও উদ্ভিদের পারস্পারিক নির্ভরশীলতার কর্মে। এর ব্যত্যয়ে ধরাধাম ভাগাড় হয়ে যাবে। সনাতনীরা এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশে বিভিন্ন উপাসনায় নিয়তই ব্যস্ত থাকে। এটা কিন্তু বহুত্বে বিশ্বাসী বোঝায় না।

পৃথিবীতে আগে এসেছে মানুষ, তার মধ্যে জন্মেছে মনুষ্যত্ব। মনুষ্যত্বের বিকাশে এসেছে ধর্ম। কাজেই মানুষের জন্যেই ধর্ম, ধর্মের জন্যে কিন্তু মানুষ নয়। মানুষের মনে শুভ-বৃত্তির পুষ্টি সাধন এবং আপন মন-সিন্ধুতে ধৈর্যের অবগাহন করাতে পারলেই প্রকৃত মনুষ্যত্বের উদ্রেক হবে। এতে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানব সমাজ সৃষ্টি হবে। যেখানে ধর্মীয় কলহের নিবৃত্তি হবে। বিমল কান্তি দাশ : কবি ও প্রবন্ধকার; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়