প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩
আগুনের নদী
এক.
রাত ১২টা। ঠিক এই সময়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে ছাত্ররা শ্লোগান শুরু করেছে। ‘আমি কে? তুমি কে? রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’
ছাত্রদের প্রচণ্ড চিৎকার-চেঁচামেচি চলছে। ওরা কোটা আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত। ঠিক এই সময়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে গাড়িতে করে যাচ্ছিলো আমিনুল। সে ছাত্রদের শ্লোগান শুনে গাড়ির কাচটা বন্ধ করে। কিছুক্ষণ যানজট। তারপর গাড়ি ছুটে চলে গন্তব্যে।
ঢাকা বোট ক্লাব। তুরাগ নদীর তীরে নির্মাণ করা হয়েছে এ বোট ক্লাবটি। নান্দনিক স্থাপনায় নির্মিত ক্লাবে মদ খেয়ে ফুর্তি করার জন্যে বেশ ক'টি কক্ষ রয়েছে। ক্লাবটি তিনতলা একটি স্থাপনা। যার নিচ তলায় রয়েছে বসার জায়গা আর দ্বিতীয় তলায় রয়েছে মদের বার। আর তৃতীয় তলায় রয়েছে স্বল্প সময়ের জন্যে রুম ভাড়া নেওয়ার ব্যবস্থা। যেখানে অবৈধ কার্যকলাপ চলে দীর্ঘদিন ধরে।
আমিনুল ক্লাবটির দ্বিতীয় তলায় বেশ কিছুক্ষণ ধরেই মদ পান করছিলো। সে অপেক্ষায় আছে লিডারের একটি সঙ্কেতের। তার লিডার আন্ডারওয়ার্ল্ডের একজন মাফিয়া ডন। আমিনুল উত্তরা এলাকায় তার অনুগত অন্যতম। লিডার হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেজ দিয়েছিলো, ‘রাত তিনটার ফ্লাইটে অনন্যা নামের এক নারী বিমানবন্দরে নামবে। তার ব্যাগ বদল করে একশত সোনার বার দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সোনার বারগুলো অনন্যা নামের নারীর কাছ থেকে নিয়ে জায়গামতো পৌঁছে দিতে হবে।
ঠিক রাত দুটোয় বোট ক্লাব থেকে বের হলো সে। বাইরে তার নিজস্ব গাড়ি অপেক্ষা করছে। যেই মাত্র গাড়িতে প্রবেশ কতে যাবে, এমন সময় হঠাৎ করেই তিনজন ছিনতাইকারী তার সামনে চাকু ধরে বললো, ‘যা আছে বের কর। না হলে এই চাকু পেটে ঢুকিয়ে দিবো।’
আমিনুল হাসলো। তারপর গাড়ি থেকে মাথাটা পেছনে ঘুরিয়ে দেখলো তিনজন চাকু হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মদ পান করা ঢুলুঢুলু চোখে আমিনুল ধীরে ধীরে তাদের কাছে এগিয়ে যাচ্ছে আর পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে তাদের সামনে ছুড়ে মারলো। এ সময় একজন টাকাগুলো তুলতে লাগলো।
আমিনুল আরও কাছে গেলো, অন্য পকেট থেকে রিভলভারটা বের করে টাকা তোলা লোকটিকে বললো, ‘হেই, টাকাগুলো আমার পকেটে ঢুকিয়ে দে। তারপর ঠিক উল্টো দিকে তিনজন মিলে দৌড় দিবি, পেছন ফিরে তাকাবি না।’
তিন ছিনতাইকারী জীবনে এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সামনে পড়েছে। চোরের ওপর বাটপারী বলে একটা কথা আছে, তারা মনে মনে সেটাই ভাবছে।
সুবোধ বালকের মতো লোকটা আমিনুলের পকেটে টাকাগুলো ঢুকিয়ে দিলো। আমিনুল রিভলভারটি তাদের দিকে তাক করতেই পড়িমড়ি করে দৌড়ে পালালো তিন ছিনতাইকারী। পেছন ফিরে আর তাকালো না।
আমিনুল গাড়ি স্টার্ট করলো, তারপর তাদের পেছনে পেছনে গাড়ি চালিয়ে যেতে যেতে তিনজনের মাথায় পর পর তিনটা গুলি চালিয়ে দিলো। মাটিতে পড়ার আগেই তিন ছিনতাইকারীর জীবন সাঙ্গ হয়ে গেলো।
রাত পৌনে তিনটা। বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলো আমিনুল। কিছুক্ষণ বিমানবন্দরের বাইরে বসে সিগারেট টানলো। তারপর তিনটা ১৫ বাজতেই দেখলো হোয়াটস অ্যাপে লিডারের দেওয়া ছবির সাথে মিলে যাওয়া এক নারী দুটি লাগেজ নিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালো।
আমিনুল গাড়ি চালিয়ে একটু সামনে এসে ওই নারীর সামনে এসে নেমে জিজ্ঞাসা করলো, ‘ম্যাডাম, টেক্সি লাগবে?’
মেয়েটা বললো, ‘আপনারটা তো প্রাইভেট কার। আপনি কি উত্তরা যাবেন?’
‘জ্বি। যাবো। প্রাইভেটকার হলেও আমি রাতে যাত্রী ভাড়া নেই। টাকার দরকার তো।’
‘উত্তরা ১২ নাম্বার সেক্টর, কত টাকা দিতে হবে?’
‘আপনি যা দেন, সমস্যা নেই, উঠুন।’
মেয়েটা গাড়িতে উঠে বসলো। আমিনুল উত্তরা ১২ নাম্বারে না গিয়ে ১০ নাম্বারের একটা বাড়ির সামনে এসে থামলো। তারপর গাড়ি থেকে নেমে বললো, ‘ম্যাডাম নামুন।’
‘কিন্তু এটা তো ১২ নাম্বার নয়, এটা ১০ নাম্বার রোড। আপনি তো ভুল করেছেন।’
এ সময় আমিনুল হঠাৎ করেই একটা রুমাল মেয়েটার নাকে চেপে ধরলো। তারপর মেয়েটাকে কাঁধে করে তিনতলার ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলো।
ফ্ল্যাটে ঘুমাচ্ছিল রাকিব। তাকে তুলে নিচে গাড়ি থেকে ব্যাগটা আনতে আদেশ দিলো আমিনুল।
সকালে ঘুম ভাঙলো মেয়েটার। তারপর সে চারদিকে তাকিয়ে পাশে আমিনুলকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে বললো, ‘আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো? কী চান আপনি?’
এ সময় আমিনুল উঠে বসলো, তারপর তাকে বললো, ‘তোমার নাম অনন্যা, তাই না?'
‘আপনি আমার নাম জানলেন কী করে?’
‘আমি সবই জানি। এখনই তুমি দেখবে আমি আর কী কী জানি।’
এ কথা বলে আমিনুল তার মোবাইলে ধারণ করা একটা ভিডিও অনন্যার সামনে মেলে ধরলো। অনন্যা সেই ভিডিওটা দেখে আতঙ্কে জ্ঞান হারালো।
ঘরময় সশব্দে হেসে উঠে আমিনুল। মুখের অবয়বে ভেসে উঠে ক্রুর চিন্তা। তারপর অনন্যাকে টেনে তুলে পাশের বেডে শুইয়ে দেয় সে।
(চলবে)