প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮
প্রকৃতির সান্নিধ্যে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে
একদিনের ডে ট্যুর হিসেবে দেশের যে কোন স্থান থেকে চট্টগ্রাম ভ্রমণ বেশ আরামদায়ক ও উপভোগ্য। বিশেষ করে পরিবারের সবাই কিংবা বন্ধুবান্ধব মিলে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম যাওয়ার মজাই আলাদা।
ঘুরতে ভালোবাসেন অথচ চট্টগ্রাম ভ্রমণ করেননি এমন বাংলাদেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না। অবশ্য অনেকে কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান চলে যাবার সময় চট্টগ্রামে নামতে ভুলে যান। কিন্তু পর্বতপ্রেমি পর্যটকদের ভুলে গেলে চলবে না যে, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শত বছরের ইতিহাস। সড়ক ও আকাশ পথেও যাওয়া যায় এই বন্দর নগরীতে। আমরা গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম বিভাগীয় একটি জেলা চাঁদপুর থেকে।
বহুদিন হলো পরিবারের সবাইকে নিয়ে দূরে কোথাও যাওয়া হয়নি। হঠাৎ সিদ্ধান্ত হলো- বন্দর নগরী ইতিহাস ঐতিহ্যে ঘেরা চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা। সেই সাথে আরো সিদ্ধান্ত হলো আরামদায়ক ও নিরাপদ ভ্রমণের একান্ত বাহন ট্রেনের বিষয়টিও। যেই ভাবা সেই কাজ। চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী একমাত্র আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কেটে নিলাম অনলাইনে। ভোর ৫টায় চাঁদপুর থেকে রওনা দিয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় গিয়ে পৌঁছলাম বাংলাদেশ পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের অত্যাধুনিক স্টেশন চট্টগ্রামে। স্টেশনের পাশেই একটি রেস্টুরেন্টে দ্রুত সকালের নাস্তা সেরে ১৫০ টাকা দিয়ে সিএনজি ভাড়া করে চলে গেলাম চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকার প্রকৃতির মাঝে অনন্য সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র ফয়’স লেক-এ। জনপ্রতি ৪০০ টাকা টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকতেই মন জুড়িয়ে যায় সৃষ্টিকর্তার অপরূপ নিদর্শনে। চোখে পড়ে লেকের অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ড। কর্তৃপক্ষের সাজানো স্থাপনার পাশাপাশি প্রকৃতির মাঝে নির্জনতায় অবকাশ যাপনের জন্য এই জায়গাটির কিছু দূরে দেখতে পাই বেশ কিছু রিসোর্ট। সি-ওয়ার্ল্ডের পাশেই এর অবস্থান। রিসোর্টেও যেতে হয় বোটে চড়ে। চড়ার সময় উপভোগ করা যায় স্বচ্ছ পানির দুই পাশে গাছগাছালি বেষ্টিত ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়। আর এইসব পাহাড়ের মাঝেই নির্জনতায় সময় কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা এসব রিসোর্ট।
১৯২০ সালে বেঙ্গল রেলওয়ের খনন করা এ কৃত্রিম হ্রদটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কনকর্ড ফয়েজ লেক কনকর্ড নামে একটি বিনোদন উদ্যান স্থাপন করে। যেখানে দর্শনার্থীদের জন্য হ্রদে নৌকাভ্রমণ, রেস্তোরাঁ, ট্র্যাকিং এবং কনসার্ট এর আয়োজন করা হয়ে থাকে বিভিন্ন উদযাপনে। বর্তমানে এখানে বিরল প্রজাতির পাখি এবং পার্কে হরিণ দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা সেখানে প্রায় ২ ঘণ্টার মত প্রকৃতির নিদর্শন ঘুরে দেখে বের হতেই রাস্তার অপর পাশে দেখি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা গেইট। জনপ্রতি ৭০ টাকা টিকেট কেটে চলে গেলাম চিড়িয়াখানায়। ১৯৮৯ সালে যাত্রা শুরু করা এ চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে অধিকাংশ প্রাণীই প্রথমবারের মত দেখতে পাই আমরা। যা আমাদের কাছে খুবই ভালো লেগেছিল। এগুলো দেখার পরেই পাহাড়ে ওঠার জন্য নির্মিত লাল বাগিচায় সাজানো দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি। ছবি তোলার জন্য এটি একটি অন্যতম স্পট বলে মনে করি আমরা। চিড়িয়াখানা থেকে বেরিয়ে একটু সামনে এসে একটি লোকাল হোটেলে দুপুরে খাবার খেতে খেতে ততক্ষণে সময় দুপুর ২টা।
পাহাড়তলীর খুলশির এই স্থান থেকে ১৪০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে চলে যাই আগ্রাবাদ চৌমুহনী মোড়ে। পরিবারের প্রায় ৭ জন সদস্যকে নিয়ে যাওয়ায় রাত্রি যাপনের জন্য সেখানে একটি হোটেলে গিয়ে উঠি। সবাই ফ্রেশ হয়ে খুব দ্রুত বের হয়ে ৩২০ টাকা দিয়ে চলে যাই চট্টগ্রাম শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সমূখে। সেখানকার দৃশ্য উপভোগ করে ২০ মিনিটের মধ্যেই ১৫০ টাকা সিএনজি ভাড়া করে পাড়ি দেই বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী পতেঙ্গায়। কর্ণফুলী নদী আর বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বিকেলের সূর্যাস্ত দেখার এক অন্যরকম অনুভূতি করতে পেরেছি খুব অল্প সময়ে। সাথে নদী ও সাগর ঘিরে রয়েছে অপেক্ষমাণ ছোট-বড় জাহাজ। সড়কের পাশেই রয়েছে নৌ বাহিনীর ঘাঁটি, বন্দরের জেটি এবং প্রজাপতি পার্ক। এইসবগুলো কাছাকাছি হওয়ায় ঘুরে দেখতে পেরেছি একসাথেই। পরিবার পরিজন কিংবা বন্ধু বান্ধব নিয়ে ঘুরে দেখার এক অন্যরকম স্থান এই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। এখানের বার্মিজ মার্কেট থেকে পরিবারের সদস্যরা কেনাকাটা করে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। ততক্ষণে সময় হয়ে গিয়েছে রাত প্রায় ৮টা। ফ্লাইওভার দিয়ে যেতে যেতেই উপভোগ করি চট্টগ্রাম শহরের রাতের মুগ্ধতা। আগেই অনলাইনে ট্রেনের টিকেট বুকিং দিয়ে রাখা পরদিন সকালে নাস্তা করে স্টেশনের উদ্দেশ্যে হোটেল ত্যাগ করে চলে যাই। এবং দুপুরের মধ্যেই নিজ জেলা শহরে পৌঁছেছি।
কিভাবে যাবেন- ঢাকা থেকে সড়ক, ট্রেন এবং আকাশপথে তিন মাধ্যমেই চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। এছাড়া চাঁদপুর থেকে রেল ও সড়কপথে যাওয়া যায় বন্দর নগরী এই চট্টগ্রামে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে এসি-নন এসি বিভিন্ন পরিবহণ চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে গেলেও যাওয়া যায় আরো কম সময়ে। আর সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম পৌঁছানোর জন্য চট্টগ্রামগামী বিমান ব্যবহার করা যেতে পারে। এ বাহনগুলোতে আসন ও মানের উপর ভাড়া নির্ধারণ হয়ে থাকে। একদিনের ভ্রমণ হলে নাও থাকতে পারেন। তবে চট্টগ্রামে আরো সময় থাকতে চাইলে নিতে হবে আবাসিক হোটেল। শহরের সবকটি পয়েন্টে রয়েছে ছোট বড় শত শত হোটেল। মান অনুসারে ভাড়াও নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে অনেকগুলো হোটেলের মান ভালো হলেও ভাড়া খুবই কম। যেমনটি আমরা ছিলাম আগ্রাবাদ চৌমুহনী মোড়ে অবস্থিত হোটেল হিলটন সিটি-তে। কম খরচে এই হোটেলটি অত্যন্ত মান সম্মত। যাতায়াত ও খাওয়ার ব্যবস্থা হোটেলের নিচেই।