রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪৯

বদলে যাক শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতি

তাসনীম চৌধুরী
বদলে যাক শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতি

আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষার্থী আছে ১ কোটি ৯৭ লাখের বেশি, যা আগের বছরে ছিল ২ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার। (২০২৩ সালের শুমারি অনুযায়ী) এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পৃথিবীর কোনো কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। আমাদের এই ছোট্ট দেশের জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে পরিণত করার একটাই মাধ্যম আছে, তা হলো শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা যদি মানসম্মত না হয়, তাহলে দেশ ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রথম ধাপই হলো শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন। জনসাধারণকে ন্যূনতম শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অন্যান্য উন্নয়নের কাজ করলে সেটা সময়ের অপচয় আর উদ্যোগের পণ্ডশ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়।

তো শিক্ষাদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ যাঁরা করেন, তাঁরা হলেন শিক্ষক। বলা হয়, শিক্ষক হলেন একজন মালি, বিদ্যালয় একটি বাগান আর শিক্ষার্থীরা হলো চারাগাছ। যে বাগানের মালি ভালো, যত্নবান, সে বাগান হবে তেমনই সুন্দর আর গাছগুলো হবে পরিপুষ্ট। তবে আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতিতে শিক্ষকসুলভ মানসিকতা পরিমাপ করা যায় না। যেমন এখানে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়, যেটা খুবই গতানুগতিক। যাঁরা প্রার্থী থাকেন, তাঁরা সাধারণ যে শিক্ষা—বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান ইত্যাদির ওপর এমসিকিউ, পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। সে পরীক্ষায় একটি নির্দিষ্ট নম্বর পেলে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, ব্যস। যিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেন, তাঁর ‘প্রাথমিক শিক্ষা’ বিষয়ে না থাকে কোনো গবেষণা, না থাকে শিশুদের মন বোঝার ক্ষমতা। এর কারণ হলো, তিনি তো এ বিষয়ে পড়েননি। কেননা, পড়ার ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

শিক্ষকতা পেশায় আসার পর শিক্ষকদের আগে এক বছরের একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো, সিইনএড (সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন) নামে। মাঝে কিছুটা পরিবর্তন করে দেড় বছরের ডিপিএড প্রশিক্ষণ (ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন) করা হলো। এটাও পরিমার্জন করে বর্তমানে এই প্রশিক্ষণের মেয়াদ হয়েছে ১০ মাসের বিটিপিটি (বেসিক ট্রেনিং ফর প্রাইমারি টিচার্স) কোর্স। এ প্রশিক্ষণের ভেতরে প্রবেশ করলে নানা ধরনের দুর্বলতা, অসংগতি ও ঘাটতি দেখা যায়। সেটা ভিন্ন আরেকটা বিষয়। শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বছরে দু–একবার, যা অপর্যাপ্ত। প্রাথমিক স্তরের শিশুশিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের বয়স, মন ও সামর্থ্য বুঝে শিক্ষকেরা পাঠদান করতে পারেন না। এ কারণে শিশুরা আনন্দ পায় না।

উপরন্তু, শিক্ষকদের মধ্যে স্বভাবগত পার্থক্য ও শিক্ষাগত পার্থক্য অনেক বেশি। যেমন আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮১ জন। শিক্ষকদের মধ্যে ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৭ জন কমপক্ষে স্নাতক পাস, যাঁদের মধ্যে পিইএইচডি অথবা এমফিল ডিগ্রিধারী আছেন ৩৬ জন। মাস্টার্স পাস আছেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৭৯ জন। স্নাতক (সম্মান) ২১ হাজার ৪৩৫ জন, স্নাতক (পাস) ১ লাখ ৪ হাজার ৬১ জন। এ ছাড়া এমবিএ ডিগ্রিধারী ৫ হাজার ৯২৪, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ১ হাজার ৪৫৮, বিএসসি ইন অ্যাগ্রিকালচার ৩০৯, বিএসএস ডিগ্রিধারী ১০ হাজার ৮৫, কামিল ৫ হাজার ৭২, ফাজিল ১ হাজার ৯৯৬, এলএলএম ৩৩৫, এলএলবি ৩০৮, বিএড (অনার্স) ২৯৬, পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ১৩৩ জন [সূত্র: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট-২০২৪]।

এই যে শিক্ষার এত বৈচিত্র্য, তা শিশুদের কতটা কাজে লাগছে? এখানে ব্যক্তিগত দক্ষতা একেকজনের একেক রকম। অনেক উচ্চশিক্ষিত ও মেধাবী শিক্ষক আছেন, যাঁরা মোটেও আন্তরিক নন (সবার কথা বলছি না)। তাঁরা গাঁয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দেখে নাক সিটকান। অনেক শিক্ষক নিজেরাই নিজেদের মর্যাদা বোঝেন না, যার খারাপ প্রভাব পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর। একটি দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী যতটা গুরুত্বপূর্ণ, প্রাথমিক শিক্ষকদের গুরুত্ব তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কিন্তু এ কথাটা রাষ্ট্র ও সমাজ বুঝতে পারেন না, নাকি বুঝতে চান না!

মানসম্মত শিক্ষার জন্য মানসম্মত শিক্ষক প্রয়োজন। আর তাই শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতিরও পরিবর্তন প্রয়োজন। যেমন প্রাথমিক শিক্ষক পদে যাঁরা প্রার্থী হবেন, তাঁদের যোগ্যতা হিসেবে ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর দুই বছরের একটা প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। দুই বছরের প্রশিক্ষণে ছয় মাস থাকবে ব্যক্তিগত উন্নয়ন বা আত্মোন্নয়ন, দেড় বছর থাকবে শিশুতত্ত্ব, শিশুমনোবিজ্ঞান, শিক্ষাবিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান। পরীক্ষা হবে নৈর্ব্যক্তিক ও রচনামূলক। এরপর মৌখিক। এই পরীক্ষাগুলোয় উত্তীর্ণ হয়ে যখন একজন ব্যক্তি শিক্ষকতা পেশায় আসবেন, তখন তাঁকে দেওয়া হবে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ। সেটা হতে পারে দশ মাস থেকে এক বছরের। এভাবে যদি শিক্ষক নিয়োগ করা যায়, তাহলে প্রাথমিক শিক্ষার যে লক্ষ্যÑশিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, মানবিক, নৈতিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক ও আবেগিক বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্মবোধ, বিজ্ঞানমনস্কতা, সৃজনশীলতা ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করার যে দায়িত্ব ও কর্তব্য, সেটি পালনে সচেষ্ট হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন। তাই রাষ্ট্র বা সরকারের উচিত হবে অতি সত্বর শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতিতে সঠিক ও ইতিবাচক পরিবর্তন করা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়