শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৭

ভালোবাসার মৃত্যু

মানিক দাস
ভালোবাসার মৃত্যু

চারিদিকে ঘোর অন্ধকার। দূরে বনবাদরে ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকছে। জোনাকিরা আলো জ্বেলে চলছে। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে চকিদারগণ। অর্থাৎ জনগণের নিরাপত্তা দিয়ে বাঁশি বাজিয়ে জানান দিচ্ছে পাহারায় তারা। গ্রামের মাতাব্বর রাখাল বাবু। তাকে সবাই শ্রদ্ধা-সম্মান করে। রাখাল বাবুর দুটি কন্যা। বড় কন্যার নাম অন্তরা। অন্তরা বুঝের হওয়ার পর থেকে গ্রামের কোলাহল ছেড়ে চলে আসে শহরে। সে চলে আসে চাঁদনগর নামের শহরে মামার বাসায়। এখানেই সে বড় হতে থাকে।

শ্যামলা বরণের তরুণী অন্তরা। গ্রামে রাখাল বাবুর সম্মান থাকলেও শহরে তার নেই তেমন মাতব্বরি। অন্তরা দেখতে-শুনতে তেমন সুন্দরী না হলেও দিপুর চোখে সে রূপসি। তাই তো দিপু অন্তরাকে মনে মনে অনেক ভালোবাসে কিন্তু কখনো সাহস করে অন্তরাকে মুখ খুলে বলতে পারেনি। জোড় পুকুরের চার পাড়ে বিকেলে সব বয়সী মানুষের আড্ডা জমে। কেউ ফঁসকা আবার কেউ ঝালমুড়ি আবার কেউবা ভাজাপুরি খেতে খেতে গল্পে মশগুল থাকে। অন্তরাও তাদের মতো একজন। প্রায় বিকেলেই সে তার বান্ধবীদের নিয়ে এখানে চলে আসতো। এসব খেয়ে আড্ডা দিত। একদিন দিপু নাট্যকলা থেকে বের হয়ে বন্ধুদের নিয়ে চলে আসে জোড় পুকুরের পারে। দিপকের চায়ের স্টলে বসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। চা আর সিগারেট খাচ্ছে, এমনি সময় দিপুর দৃষ্টি চলে যায় রহিম কাকার ঝালমুড়ির চটির দিকে। দেখে অন্তরা তার বান্ধবীদের নিয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছে। দেখে অন্তরা বান্ধবীদের সাথে হাসাহাসি করছে। দিপু একপলকে চেয়ে থাকে খানিক সময়। এর মাঝে অন্তরা বান্ধবীদের নিয়ে বাসার পথে হেঁটে যায়। দিপু ওর হেঁটে যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে। দিপু বন্ধুদের বিষয়টি বুঝতে দেয় না। তারাও চলে আসে দিপকের চায়ের স্টল থেকে।

রাত বিদঘুটে অন্ধকার। নিস্তব্দতার মাঝে কোথাও জনমানবে কোলাহল নেই। সন্ধ্যা থেকেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা। বিদ্যুৎ চমকানোর আলো চোখে এসে পরছে। এরই মাঝে কান্নার সুর ভেসে আসছে। দিপু কান পেতে শুনছে। বৃষ্টির রাত কোথায় যাবে কার কান্না কীভাবে বুঝবে। হঠাৎ মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে পাশের বাড়ির কাকি মা ফোন করে বলে তোর কাকাকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। কেমন যেন করছে? দিপু মানবতা ফেরিওয়ালার মতো বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে যায় ডাক্তার বাড়িতে। নিপেন্দ্র ডাক্তার বাবুকে সাথে নিয়ে কাকি মার বাড়িতে যায়। নিপেন্দ্র ডাক্তার কাকা বাবুকে দেখে দিপুকে ডেকে বলে তোমার কাকা বাবুতো আর পৃথিবীতে নেই। তখন বাড়ির মানুষের কান্নার রোল আরো বেড়ে যায়। এমনিভাবে বৈড়ি আবহাওয়ার রাত কেটে যায় দিপুর। সকাল হতে না হতে বৃষ্টি কিছুটা কমতে শুরু করে। দিপু তার পার্শ্ববর্তী বাড়ির কাকা বাবুর দাহ কাজ নিয়ে ব্যস্ত। দুপুরের পর শ্মশানে দাহ কাজ করা হয়। দিপু তার বাসার পাশে যারই কোনো বিপদের কথা শুনে সেখানেই ঝাঁপিয়ে পরে। এক কথায় বলা চলে দিপু একজন মানবতার ফেরিওয়ালা।

আজ কিছুদিন ধরে দিপুর সাথে দূর থেকে অন্তরার দেখা নেই। দিপু চিন্তা করে অন্তরার কী? আবার ভাবে না তাহলে কোনো না কোনোভাবে সে জানতে পারতো অন্তরার কী হয়েছে। বিকেলে দিপু নাট্যকলার বারান্দায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। এ সময় দেখে অন্তরা রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দিপুকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। দিপুও হাসে। পরদিন সকালে কোনো এক কাজে দিপু যায় এক স্কুলের সামনে। দেখে সেখানে অন্তরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। দিপু তাকে চোখের ভাষায় ডাকলো। অন্তরা সায় দেয়। এগিয়ে এসে বলে বলেন কী বলতে চান। দিপু বলে আমাকে যেখানেই দেখেন তাকিয়ে তাকিয়ে হাসে আবার কী যেন বলেন? না কিছু না? আচ্ছা আপনার সাথে আবার কখন দেখা করতে পারি। অন্তরা বলে কিছু সময় পর আমি আবার এখানে আসবো। দিপু জানতে চায় কিছু সময় বলতে কক্ষনো। অন্তরা বলে ঘণ্টাখানেক পর। দিপু তার ব্যক্তিগত কাজ সেরে আবার চলে আসে সেই স্কুলের সামনে। দিপু হঠাৎ দেখতে পায় অন্তরা কাছাকাছি দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। এবার অন্তরা ডাকে দিপুকে। দিপু কাছে যায়। অন্তরা বলে আসুন সামনে যাই। তারপর দুজনে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় বিশাল জলরাশির পাড়ে। যেন মনে হয় ওরা কতদিনের পরিচিত, এমনভাবে হাঁটছে আর কথা বলছে। এমনি সময় স্কুল ছুটির ঘণ্টা দেয়। অন্তরা বলে আজ চলি কালকে আসবেন কথা বলবো। রাত যে কী ভাবে দিপুর কাটছে সেও জানে না। ভোর রাতে দূর মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। দিপু বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি করছে। এর মাঝে চোখে একটু ঘুম চলে আসে। চোখ মেলে দেখে সকাল সাড়ে ৮টা বেজে গেছে। দিপু হাত-মুখ ধুয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। সেই স্কুলের সামনে গিয়ে দেখে অন্তরা রাস্তায় পায়চারি করছে। দিপুকে দেখে সে এগিয়ে আসে কী আপনার আসতে দেরি হলো। দিপু কিছু না বলে চুপ করে থাকলো। অন্তরা বলে আসেন কালকের জায়গায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে দিপু আর অন্তরা গল্পে মেতে উঠে। ধীরে ধীরে তারা অনেকটা ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। এমনি ভাবে কেটে যায় বেশ কিছু দিন। দেখতে দেখতে ঘনিয়ে আসে শারদীয় দুর্গা পূজা। অন্তরাদের বাড়িতে জাঁকজমকভাবে শারদীয় দুর্গা পূজা হয়। অন্তরা পূজার জন্য বাড়ি যায়। এ যাওয়া যে দিপুর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবে তা কেউ জানতো না। অন্তরাদের বাড়িতে ধুমধামভাবে দুর্গা পূজা হচ্ছে। বাড়িভর্তি লোকজন আশা-যাওয়া করছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে কতেক লোক অন্তরাদের গ্রামে তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে। সেখান থেকে তারা অন্তরাদের বাড়িতে পূজা দেখতে আসে। তাদের মধ্য থেকে কোনো এক শহরের যুবকের চোখে অন্তরাকে ভাল লেগে যায়। পূজার এ কদিন যুবকেরা অন্তরাদের বাড়িতে যাতায়াত করে। শারদের শুভ্রতায় পূজা উপলক্ষ্যে অন্তরা শাড়ি পরেছে। ওই যুবকের চোখে অন্তরা যেন একটা পরীর মতো। দেখতে দেখতে শারদীয় দুর্গা পূজা শেষ হয়ে যায়। আসে অন্যপূর্ণা দেবী লক্ষ্মী পূজা। দুদিন পরই লক্ষ্মী পূজা। গৃহে গৃহে আনন্দ বয়ে চলছে। গৃহে লক্ষ্মীদেবী প্রবেশ করেছে। রাত পোহালে লক্ষ্মী পূর্ণিমা। অন্তরা ওদের ঠাকুরঘর সুন্দরভাবে আলপলায় সাজিয়ে তুলেছে। দেখতে দেখতে লক্ষ্মী পূজা শেষ হয়ে যায়। অন্তরা শহরে চলে আসতে চায় পরিবারের পক্ষ থেকে বাধা আসে। না এখন বাড়ি থেকে কোথাও যাওয়া যাবে না। তোকে পাত্র পক্ষ দু-একদিনের মধ্যে দেখতে আসবে। মা এসব কী বলছো অন্তরা এ কথা বলে। আমারতো একটা মতামত তোমাদের নেয়া উচিত ছিল। আর আমি তোমাদের বলে দিচ্ছি আমি এখন বিয়ে করবো না। কেন তুই এমন কথা বলছিস। অন্তরার মা জানতে চায়। তখন অন্তরার ছোট বোন তার মাকে বলে দেয় মা দিদি কাকে যেন ভালোবাসে। ছেলেটা নাকি ভীষণ ভালো। না আমি এসব মানবো না। আমরা যেখানে বিয়ে ঠিক করবো সেখানেই বিয়ে হবে। পাত্র অন্তরাকে দেখতে আসে। তাদের কাছে কন্যা পছন্দ হয়ে যায়। তবে অন্তরার সাথে আর দিপুর কোনো দেখা সাক্ষাৎ নেই। দিপু চিনে না অন্তরাদের গ্রামের বাড়ি। দিপু বহু চেষ্টা করেও অন্তরার গ্রামের সন্ধান পায় না। এদিক অন্তরার বিয়ের দিন-ক্ষণ ঠিকঠাক হয়ে যায়। অগ্রহায়ণ মাসে বিয়ে অন্তরার। অন্তরা দিপুর সাথে দেখা করতে ফন্দি আটে। মাকে বলে শাড়ি আমি পছন্দ করে কিনবো। তার কথা মতো শহরে আসে দুদিনের জন্য এ সুযোগে অন্তরা দিপুর সাথে দেখা করে কালি মন্দিরে। বলে তুমি কিছু একটা করো, আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। দিপুর মাথায় যেন বাজ পরে। কাল আমি বাড়ি চলে যাব, এই বলে অন্তরা দিপুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। এ বিদায় যে দিপুর প্রেয়সী অন্তরার শেষ বিদায় হবে দিপু তা কল্পনা করেনি কোনো দিন। এ যেন দিপুর জীবনের ভালোবাসার মৃত্যু হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়