প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:১৫
প্রয়োজন তথ্য-প্রযুক্তি বিজ্ঞানের সুষ্ঠু ব্যবহার
অনেকদিন আগের কথা। ছোটবেলায় বাড়ি, বাড়ির বাইরে কিছু দূর যেতাম, ভাবতাম এটাই বুঝি পৃথিবী। এর বাইরে আর কিছু নেই। কিন্তু যখন বাবার হাত ধরে সমুদ্র দেখতে যেতাম, তখন বুঝতাম কতো বিশাল সমুদ্র! অবাক হয়ে যেতাম। তাকিয়ে থাকতাম অনেক দূর পর্যন্ত। তখন মনে হতো এর চেয়ে বিশালতা বুঝি আর নেই। বড়ো বড়ো জলের তরঙ্গ এসে সমুদ্রের তীরে আছড়ে পড়তো। নোনা জলের ঢেউগুলো পা ভিজিয়ে যেতো। ছোট ছিলাম বলে সমুদ্রের গভীরতা নিয়ে ভাবার প্রশ্নই আসে না, তবে হতবাক হতাম। আকাশে তাকাতাম, সূর্য দেখতাম; রাতের আকাশে চাঁদ দেখতাম। তখন ভাবতাম এটাই হয়তো সবকিছু। এর চেয়ে বেশি কিছু নেই। পরে আস্তে আস্তে জানতে শিখলাম, সৌরজগত বলতেও একটা জগত আছে। যেখানে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, শনি, বৃহস্পতি সহ আরো অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপগ্রহ মিলে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরছে। ভাবতেই শরীরটা শির শির করে উঠে। আর এই যে ছোটবেলায় বলা হতো, সাগরের ওপারে কোনো কূল নেই, তাও আবার বঙ্গোপসাগরের তীরে মায়ের পাশে কোনো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে লোকমুখে জনশ্রুতি হিসেবে শুনেছি। বঙ্গোপসাগর তো একটা উপসাগর। একটা মহাসাগরের অংশমাত্র। তাহলে কূল নেই, অসীম বলা যায় কী করে?
আজ থেকে ৬-৭ হাজার বছর আগেও মানুষ মনে করতো, সে যেই অঞ্চলে আছে, সেই অঞ্চলেই পৃথিবীটা সীমাবদ্ধ। এভাবে যতোই দিন যাচ্ছে, বিজ্ঞানের আবিষ্কারে নতুন নতুন উদ্ভাবন হচ্ছে, আর আমরা ভোগ করছি।
যুগে যুগে বিজ্ঞানীরা আসবে, যাবে। আরো আরো নতুন নতুন ধারণার জন্ম দেবে। এই একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীদের যেই ধারণা বা যে তত্ত্ব আবিষ্কার হবে, আগামী শতাব্দীর বিজ্ঞানীরা হয়তো তা ভুল প্রমাণ করবে। আর ভুল প্রমাণ করতে না পারলে তা নির্দ্বিধায় মেনে নেবে। এটাই বিজ্ঞান।
বিজ্ঞান মানুষের জীবনযাত্রাকে গতিশীল করেছে, অভিজাত শ্রেণীতে রূপান্তরিত করেছে। মানুষের বিজ্ঞান-গবেষণা-চর্চার ফসল আজ মানুষ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। মানুষ আজ দেশ হতে বিদেশে খুব সহজে বিনিময়, লেনদেন আদান-প্রদান করছে। তবে এসবই সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বিজ্ঞান মানুষের অগ্রগতিতে পরম বন্ধু হয়ে থাকবে। সুতরাং সৃষ্টির আদিকাল থেকে যে পৃথিবী ছিল অপার বিস্ময় ও রহস্যের স্থান, সে পৃথিবীকে মানুষ হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় যেন মানুষের কাছে অসম্ভব বলে আর কিছুই নেই।
প্রাচীনকালে জীবনযাপনের এক পর্যায়ে মানুষ পাথরে পাথর ঘষে আগুন আবিষ্কার এবং পশু শিকারের জন্যে অস্ত্র হিসেবে গাছের ডাল ও পাথর ব্যবহার করতে শেখে। আর তখন থেকেই শুরু হয় বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। তারপর থেকে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত মানুষ নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশায় মনোনিবেশ করছে।
তবে বর্তমানে এ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে বিজ্ঞানের সুষ্ঠু ব্যবহার ছাড়া স্বনির্ভরতা অর্জন সম্পূর্ণ অসম্ভব। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিস্ময়কর উদ্ভাবনীর কারণে আজ বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য প্রসারে, দৈনন্দিন জীবনযাপন ও বিনোদনের ক্ষেত্রে সীমাহীন অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। যেমন, পরিধেয় বস্ত্র, কালি, কলম, কাগজ, ঔষধপত্র, কৃষি উৎপাদন, খনিজ পদার্থ উত্তোলন ও ব্যবহার, খাবার তৈরির জন্যে গ্যাস, স্টোভ, বৈদ্যুতিক চুল্লি, খাবার গরম করার জন্যে ওভেন, সংরক্ষণের জন্যে রেফ্রিজারেটর, বিনোদনের জন্যে টেলিভিশন, রেডিও, ভিসিডি, ডিভিডি, টেলিফোন, ই-মেইল, ফ্যাক্স, বিভিন্ন যানবাহন, বিমান, সোলার-চালিত যানবাহন, ছাপাখানা, ফটোকপিয়ার, প্রিন্টার, চিকিৎসা ও কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতি বিজ্ঞানেরই অবদান। কম্পিউটার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও মহাকাশ অভিযানসহ জীবনের সকল স্তরে যুগান্তকারী ও বিস্ময়কর অগ্রগতি বিজ্ঞানশিক্ষারই ফসল। সুতরাং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং জীবনচলার পথকে সুন্দর করার জন্যে চাই সুষ্ঠু বিজ্ঞান শিক্ষা। কিন্তু এসবের বিপরীতে যদি একটু চিন্তা করি, তাহলে যতো রকমের অঘটন পৃথিবীতে ঘটছে, তা’ কোনো না কোনোভাবে বিজ্ঞানের অপব্যবহারের কারণেই ঘটেছে ও ঘটছে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সুতরাং বিজ্ঞানের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমেই মানুষ বিশ্বের মূল স্রোতধারায় এগিয়ে যেতে পারবে, অন্যথায় পৃথিবী নামক গ্রহটিকে আমরাই বসবাসের অনুপযোগী করে তুলবো, যাতে পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা সুন্দর পৃথিবী দিতে পারবো না। বিজ্ঞানের আশীর্বাদ ব্যবহারের সীমাবদ্ধতাও থাকা দরকার; কিন্তু যথেচ্ছ ব্যবহারে আমরা বার বার ধ্বংসের দিকে, ক্ষতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্বে এখন বিজ্ঞানের জয়জয়কার। কোথায় বিজ্ঞানের ছোঁয়া নেই? সর্বত্র বিজ্ঞানেরই আধিপত্য রয়েছে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় যে, আমরা বিজ্ঞানকে সহজভাবে ব্যবহারের চাইতে অপব্যবহারটাই বেশি করছি। এটা নিশ্চিত যে, বিজ্ঞানের কারণে দিনদিন জীবনযাত্রা সহজ হয়েছে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে পাওয়া যন্ত্রচালিত গাড়ি যখন ছিলো না, তখন বিশ মাইল হেঁটে যাওয়া অসম্ভব ছিলো না। কিন্তু বিজ্ঞানের বদৌলতে যাতায়াত সহজ হওয়াতে আমরা অলস হয়ে যাচ্ছি, আর রোগ-ব্যাধি দেহের মধ্যে বাসা বাঁধছে। মানে আমরা বিজ্ঞান থেকে সুবিধা নিচ্ছি বিশ্বের চলমান স্রোতধারায় যুক্ত হতে। কিন্তু বিজ্ঞানের সুষ্ঠু ব্যবহার আমাদের মধ্যে হচ্ছে না। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিজ্ঞান মানুষের সুবিধা লাভ করে, বিজ্ঞান মানুষের জীবনকে অনেক উপায়ে উপকৃত করে। এটি আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে, রোগ নিরাময় করতে, নতুন জিনিস আবিষ্কার করতে-করাতে এবং আমাদের চারপাশের বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝার উন্নতি করতে সহায়তা করে। কিন্তু বিজ্ঞানের কারণেই আমরা ভুল তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে অসুস্থ করে ফেলছি পরিবেশকে।
অতীতের মানুষগুলো তাদের স্বপ্নের মধ্যে ভবিষ্যতের আশা খুঁজে বেড়াতো। মানুষের স্বপ্ন ছিল পাখির মতো আকাশে উড়বার। মানুষ একদিন স্বপ্ন দেখতো কীভাবে অন্ধকার তাড়ানো যায়। বিজ্ঞান আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে জীবনযাত্রাকেও ব্যাহত করে ফেলছে। ফলে আমরা বিশ্বের চলমান স্রোতধারায় যুক্ত হতে পারছি না। আর যতোটুকু যুক্ত হতে পারছি, তা’ যথার্থ নয়। নিম্নে তার কিছু বিষয় বোঝানোর চেষ্টা করা হলো।
বিশ্ব এগিয়ে চলছে বিজ্ঞানের আশীর্বাদে। নতুন খাদ্য উৎপাদনে বিজ্ঞান প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে সহায়তা করেছে, যা’ আমাদের বিশ্বের সকল মানুষের জন্যে খাদ্যের যোগান দিচ্ছে। খাদ্য সরবরাহেও উন্নত প্রযুক্তি চালু হয়েছে; ফলে দ্রুতই পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের দোরগোড়ায়। খাদ্যকে আরো পুষ্টিকর করে তুলতে সহায়তা করছে বিজ্ঞান। খাদ্য নিরাপত্তায় উন্নত ব্যবস্থাপনায় আমাদের খাদ্যের যোগান দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু খাদ্য পুষ্টিকর করার স্থলে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার ও খাদ্যে ফরমালিন মেশানোর কারণে খাদ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং খাদ্য নিরাপদ থাকছে না। কেননা কীটনাশক ও ফরমালিনও বিজ্ঞানের অবদান; কিন্তু আমরা তা’ সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করছি না।
এটা স্বীকার করতেই হবে যে, স্বাস্থ্যসেবায় বিজ্ঞানের অবদান অনেক। যেমন-বিজ্ঞান নতুন ওষুধ এবং চিকিৎসার পদ্ধতি আবিষ্কার করতে সহায়তা করেছে। এর ফলে রোগ নিরাময় এবং মানুষের জীবন বাঁচানো সহজ হয়। কিন্তু এতেও ভেজাল প্রবেশ করেছে। অনেক অভিযোগ আছে যে, ঔষধেও ভেজাল থাকায় মানুষ সুস্থ হয় না বা ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যুবরণ করে। ভুল রিপোর্টে মানুষের জীবনহানি পর্যন্ত ঘটে। বিজ্ঞানীরা নতুন ওষুধ আবিষ্কার করেছেন, যা ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং অন্যান্য মারাত্মক রোগের চিকিৎসা করতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যা রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্যে অনেক কার্যকর। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ভ্যাকসিন, অ্যান্টিবায়োটিক এবং বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করেছে, যা উল্লেখযোগ্যভাবে সংক্রামক রোগের প্রভাব কমিয়েছে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করেছে। চিকিৎসা প্রযুক্তির অগ্রগতি, ডায়াগনস্টিক টুলস এবং অস্ত্রোপচারের কৌশলগুলোও স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করেছে এবং আয়ু বৃদ্ধি করেছে। বিজ্ঞানীরা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে নতুন ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করছেন, যা রোগ নিরাময়ের আরো কার্যকর উপায় প্রদান করে। কিন্তু এতো ভালো কিছুর পরেও যদি সুষ্ঠু ব্যবহার করা না হয়, তাহলে মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানের আবিষ্কারের প্রতি সন্দেহ বৃদ্ধি পাবে ও অভিশাপ হিসেবে গণ্য করবে।
বিজ্ঞানের অবদান নতুন পরিবহন প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে সহায়তা করেছে, যা’ আমাদের ভ্রমণকে আরো দ্রুত, সহজ এবং আরো দক্ষ করে তুলেছে। কিন্তু উন্নত পরিবহনের কারণে অপরাধ প্রবণতাও বেড়ে গেছে; অর্থাৎ সুষ্ঠু ব্যবহার করছি না। এতে দুর্ঘটনায়ও পরিবহন, সম্পদ ও জবিননাশের মতো ক্ষয়ক্ষতি ঘটছে। ফলে আমরা বিশ্বের চলমান স্রোতধারায় এগিয়ে যেতে পারছি না।
বিজ্ঞান প্রযুক্তিগত অগ্রগতি চালায়, যা’ কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট এবং অগণিত অন্যান্য ডিভাইসের বিকাশের দিকে পরিচালিত করে, যা’ যোগাযোগ, তথ্য অ্যাক্সেস এবং দৈনন্দিন জীবনকে রূপান্তরিত করেছে। প্রযুক্তি দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা এবং সংযোগ উন্নত করে। কিন্তু সুষ্ঠুভাবে আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, ইন্টারনেটের অপব্যহার আমাদের কতোটা ক্ষতির দিকে ধাবিত করছে। সুতরাং আমরা বলতেই পারি যে, সুষ্ঠুভাবে বিজ্ঞান ব্যবহার করা হচ্ছে না। আর সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে না বলে নতুন আবিষ্কারকে মানুষ ভয় পায়। নতুন প্রযুক্তি মানুষ প্রাথমিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করলেও সুষ্ঠু ব্যবহার না হওয়ায় ক্ষতির মাত্রা দেখে পিছিয়ে যেতে চায়। বিজ্ঞানীরা নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন, যা আমাদের জীবনকে আরো সহজ এবং আরো কার্যকর করে তুলেছে। কিন্তু সঠিক ব্যবহার না করার ফলে ক্ষতির পরিমাণের দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে।
বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানুষ জল-স্থল, অন্তরীক্ষ জয় করেছে। সর্বক্ষেত্রে আজ বিজ্ঞানের জয়যাত্রা পরিলক্ষিত। ‘শিক্ষাপদ্ধতি ও নেতৃত্বের গুণাবলি’ নামক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, গণিত, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, মহাকাশবিজ্ঞান, প্রকৌশল, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, ভূ-তত্ত্ব, নৃ-তত্ত্ব, স্থাপত্য ও কম্পিউটার-বিজ্ঞান প্রভৃতির উদ্ভব হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন থেকেই। পবিত্র ধর্মগ্রন্থে অসংখ্যবার সমুদ্র, নদী, উদ্ভিদ, পানি, মাটি, পৃথিবী, ঝরণা, পাখি, মহাকাশ, তারকারাজি ইত্যাদি সৃষ্টির গুরুত্ব নিয়ে গবেষণা করতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা নতুন পণ্য আবিষ্কার করেছেন, যা আমাদের জীবনকে আরো আরামদায়ক ও উপভোগ্য করে তুলেছে; পাশাপাশি সুষ্ঠু ব্যবহার না হওয়ায় আমাদের আরামদায়ক ও উপভোগ্য হলেও সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে ক্ষতির মাত্রাও কম হচ্ছে না। বিজ্ঞান আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করছে, কিন্তু অন্যদিকে অনেক কিছু কেড়েও নিচ্ছে; রোগ নিরাময় করছে দ্রুত, কিন্তু আমাদের আয়ুও কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে নতুন আবিষ্কারে সুষ্ঠু ব্যবহার না থাকার কারণে ভীতিকর পরিস্থিতিরও সৃষ্টি করে।
বিজ্ঞান আমাদের চারপাশের বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝার উন্নতি করতে সহায়তা করে, ফলে কোনো কিছুই গোপন থাকছে না। এতেও আমরা আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিই। যেমন-অস্ত্রের আবিষ্কার দুষ্টকে দমনের জন্যে। কিন্তু তা’ শক্তি প্রয়োগের জন্যে ব্যবহার আমাদের স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করে দেয়।
সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুতের মতো টেকসই এবং পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎস বিকাশে বৈজ্ঞানিক গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই অগ্রগতিগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করতে এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বের প্রচারে অবদান রাখে। কিন্তু বিপরীতে অতিরিক্ত ব্যবহারে পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে দ্রুত গতিতে।
নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানের অবদানে কৃষির উন্নতিতে আমরা পিছিয়ে নেই। জিনগতভাবে পরিবর্তিত ফসল, নির্ভুল চাষের কৌশল এবং উন্নত সারসহ কৃষিতে বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন ফসলের ফলন বৃদ্ধি করেছে, খাদ্য নিরাপত্তা উন্নত করেছে এবং কৃষির পরিবেশগত প্রভাব কমিয়েছে। কিন্তু এতে করে আমরা অলস হয়ে যাচ্ছি। পরিশ্রম করাটা আমরা কমিয়ে দিচ্ছি। ফসলের ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবহার না হওয়ায় আমরা নিরাপদ খাদ্য পাচ্ছি না।
সুষ্ঠু ব্যবহারের ফলে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান জনস্বাস্থ্যের উদ্যোগ, স্যানিটেশন অনুশীলন এবং রোগ প্রতিরোধের কৌশলকে অবহিত করে। বিশুদ্ধ জল, সঠিক স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধির অনুশীলনগুলো সমস্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল, যা স্বাস্থ্যকর কমিউনিটিতে অবদান রাখে। ফলে মানুষ সুস্থতার সাথে বসবাস করতে পারছে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা শিক্ষাগত অগ্রগতিতে অবদান রাখে, যা উন্নত শিক্ষার পদ্ধতি, শিক্ষার উপকরণ এবং শিক্ষাগত প্রযুক্তির দিকে পরিচালিত করে। এটি ব্যক্তিদের আরও কার্যকরভাবে জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করতে সহায়তা করে। কিন্তু সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা না হলে সফলতা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সুষ্ঠু ব্যবহারে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি আবাসন, নগর পরিকল্পনা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সমাধান প্রদান করে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অবদান রাখে। যদিও আমরা বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করে থাকি, তবুও এটি লক্ষ্য করা অপরিহার্য যে, বিজ্ঞান নৈতিক প্রশ্নও উত্থাপন করে এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের দায়িত্বশীল ও নৈতিক ব্যবহার ব্যক্তি ও সমাজের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটিকে সর্বাধিক করার জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে প্রয়োগবিধি প্রয়োজন।
লেখক : সাবেক বিভাগীয় সম্পাদক, পাঠক ফোরাম’, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।