শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪, ০০:০০

‘একইরকম কাজে ছেলেদের উৎসাহ দিচ্ছে আর মেয়েদের কথার দ্বারা দমিয়ে দিচ্ছে’

মিজানুর রহমান রানা ॥
‘একইরকম কাজে ছেলেদের উৎসাহ দিচ্ছে আর মেয়েদের কথার দ্বারা দমিয়ে দিচ্ছে’

তাঁর নাম শিরিন আখতার, বয়স ৩৪ বছর, পড়াশোনা অনার্স-মাস্টার্স (বাংলা), বৈবাহিক অবস্থা বিবাহিত, পেশায় একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। অনলাইন মাধ্যমে তিনি নিয়মিত কন্টেন্ট তৈরি করছেন। তাঁর সাথে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়। বিস্তারিত আগ্রহী পাঠকের জন্যে হুবহু তুলে ধরা হলো :

তথ্য ও প্রযুক্তি কণ্ঠ : আপনি কীভাবে এ পেশায় যুক্ত হলেন?

শিরিন আখতার : পড়াশোনা শেষ করার পরে একটা রং কোম্পানিতে ইনফরমেশন সুপারভাইজার পদে জব (চাকুরি) পেয়েছিলাম। ওখানে সেক্সুয়ালি এসল্ট হই! কোম্পানিতে অভিযোগ দিলে পুরো কোম্পানি ওই লোকের পক্ষ নেয়। কারণ সে ছিলো কোম্পানির কর্মকর্তা এবং আমি ছিলাম ভেন্ডরের। ভেন্ডরও আমার পক্ষ নেয় না। প্রচণ্ড মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি। স্বামীর পরামর্শ মতো চাকুরিটা ছেড়ে দিই। সংসারে মন দিই। কিন্তু আশেপাশের মানুষগুলো প্রতিনিয়ত খোঁচা দিয়ে থাকে। ছোটবড় কথা শোনাতে থাকে, ‘আমি অযোগ্য আমার দ্বারা কিছু হবে না’।

এরপর সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে ঘরমুখো হয়ে পড়ি। ডিপ্রেশনে ডুবে যেতে থাকি একটু একটু করে। স্বামীর পরামর্শে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হবার চেষ্টা করি। আমি যেহেতু শিক্ষিকা ছিলাম, তাই অতিরিক্ত ফান, কৌতুক আর হ্যাংল্যামো দেখে ছাত্ররা কীভাবে আদব-কায়দা ভুলে গিয়ে ভুল পথে হাঁটতে চলেছে সেটা অনুভব করে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে কন্টেন্ট বানাবো। এভাবেই আমার পথচলা শুরু।

তথ্য ও প্রযুক্তি কণ্ঠ : কন্টেন্ট তৈরি করে আপনার কেমন আয় হচ্ছে?

শিরিন আখতার : কেবল শুরু করেছি, বলার মতো আয় হচ্ছে না। তবে শীঘ্রই হবে আশা করি এবং সেই অনুযায়ী নিত্যনতুন কন্টেন্ট তৈরি করে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে আয়ের জন্যে দিনরাত পরিশ্রম করছি। আমি পারবো ইনশাআল্লাহ।

তথ্য ও প্রযুক্তি কণ্ঠ : অনলাইনে কন্টেট তৈরি করে সহজে (দ্রুত) আয় করতে আপনি নিজস্ব কোন্ কোন্ বিষয় বা যোগ্যতাকে বেশি প্রাধান্য দেন?

শিরিন আখতার : ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি আমার ভীষণ রকমের ভালোলাগা। দর্শনীয় স্থান ঘুরতে ভালোলাগে। এই দুইটার মিশেল ঘটিয়ে দর্শকচাহিদা পূরণ, ইতিহাসকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং সেই সাথে অর্থ উপার্জন এই চিন্তাধারাটাকেই কাজে লাগাই আমি। অবশ্যই আমি আমার ইতিহাসপিয়াসী মনটাকেই প্রাধান্য দিই।

তথ্য ও প্রযুক্তি কণ্ঠ : আপনার কাজে আপনাকে কে কে সহযোগিতা করেন?

শিরিন আখতার : প্রথমত আমার স্বামী, তারপরে আমার হাতেগোণা ক’জন বেস্টফ্রেন্ড আছে তারা।

তথ্য ও প্রযুক্তি কণ্ঠ : অনলাইন তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে নানা ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে একদল সংঘবদ্ধ প্রতারক। এ ধরনের কোনো প্রতারণা, ঈভটিজিং বা হেনস্থার কবলে কি আপনি পড়েছেন? এসব বিষয় থেকে কীভাবে সাধারণ মানুষ রক্ষা পেতে পারে?

শিরিন আখতার : জ্বী পড়েছি। ফেসবুক মনিটাইজেশন পেতে গেলে ষাট হাজার মিনিট ওয়াচটাই কিনতে হয়। প্রথমে একটা গ্রুপ থেকে একজনকে এক হাজার টাকা দেই এবং টাকা পাবার সাথে সাথে আমাকে ব্লক করে দেয়। ফ্রড এলার্ট শিরোনাম দিয়ে ওই গ্রুপে পোস্ট দিলে আরেকজন বলে এরা তো ফ্রড, এদের টাকা দিয়ে লাভ নেই, আপনি আমাকে ৭৫% অগ্রিম করুন একদিনের মধ্যে ওয়াচটাইম কমপ্লিট করে দেবো। ওকে সাড়ে সাতশো টাকা দিলে সেও আমাকে ব্লক করে দেয়।

শুধু এই বিষয়গুলোই নয় আজকাল মোবাইল নাম্বার, হোয়াটসআপ, ম্যাসেঞ্জারে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অনেক লিংক পাঠানো হয়, যেগুলোকে ফিশিং লিংক বলে। এগুলোতে টাচ্ করার সাথে সাথে সবধরনের একাউন্ট এমনকি ফোনও হ্যাক হয়ে যাবে, তাই এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

তথ্য ও প্রযুক্তি কণ্ঠ : বলেছিলেন চাকুরি করতে গিয়ে যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছেন। এখন যে পেশায় (অনলাইন প্ল্যাটফর্ম) কাজ করছেন, এখানে কি কোনো প্রকার হেনস্থা বা অসম্মানের শিকার হতে হয়?

শিরিন আখতার : এখানে তো আমি নিজেই নিজের পেজ বা চ্যানেল চালাই। তাই জোরজবরদস্তির বিষয় আসে না তবে কমেন্টবক্সে বা ইনবক্সে কিছু খারাপ মানুষ স্ল্যাং ইউজ করে, আজেবাজে কথা বলে। প্রিয়জনরা বুঝায় ওদের পারিবারিক শিক্ষা ভালো না বা হিংসার বশবর্তী হয়ে এগুলো করে। তাই দেখেও না দেখার ভান করে থাকি, কখনও কখনও রিপ্লাই দিলে আরও বেশি খারাপ ভাষায় আক্রমণাত্মক কমেন্ট লেখে। খারাপ লাগে ভীষণ। দিনশেষে আমরাও তো মানুষ!

তথ্য ও প্রযুক্তি কণ্ঠ : অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অর্থ আয় করতে গিয়ে একজন ছেলে এবং একজন মেয়ে কতটুকু বিভাজনের শিকার হয়?

শিরিন আখতার : যদিও কাজ শুরু করেছি অল্প ক’মাস, কিন্তু অনলাইন জগতে আছি এক যুগেরও বেশি সময়। আমি দেখেছি ছেলেরা কোনো কন্টেন্ট বানালে শিক্ষিত দর্শক হোক অথবা অশিক্ষিত দর্শক হোক ছেলেদের এপ্রিশিয়েট করে, এগিয়ে যাবার জন্যে শুভ কামনা জানায়। অথচ সেই কোয়ালিটির কাজ মেয়েরা করলে ওই দর্শকগুলোই ৩৬০ক্ক ঘুরে গিয়ে উপদেশ দেয়া শুরু করে। পর্দা করুন, ভাত রান্না করুন, সংসার সামলান, স্বামীর সেবা করুন, সারাক্ষণ অনলাইনে পড়ে থাকেন, আপনার সংসার সামলায় কে? আপনার স্বামী কিছু বলে না আপনাকে? মানে যে ব্যক্তিটা কোনোদিন মসজিদের বারান্দায় পা রাখেনি সেও ইসলামী জ্ঞান দেয়। কিছু ছেলেমেয়ে অবশ্যই অপসংস্কৃতি ছড়াচ্ছে তাদের সবাই বুলিং করে সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু আমরা যারা চেষ্টা করছি সমাজকে ভালো কিছু দেবার, সেই স্টেজটাতে একই দর্শক একই রকম কাজে ছেলেদের উৎসাহ দিচ্ছে আর মেয়েদের কথার দ্বারা দমিয়ে দিচ্ছে।

তথ্য ও প্রযুক্তি কণ্ঠ : এই যে বললেন, কিছু ছেলেমেয়ে অবশ্যই অপসংস্কৃতি ছড়াচ্ছে তাদের সবাই বুলিং করে, সেটা কি ধরনের এবং কেনো?

শিরিন আখতার : সোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এমন একটা প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে এক দেশের সংস্কৃতি আরেকদেশে এভাবে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই যারা কন্টেন্ট তৈরি করে তাদের উপরে একটা অলিখিত দায়িত্ব থাকে নিজ দেশকে রিপ্রেজেন্ট করার। অশ্লীলতা, উদ্ভট সাজসজ্জা আর অঙ্গভঙ্গি দিয়ে যেসব কন্টেন্ট তৈরি হয় সেগুলো ফরেন কান্ট্রির দর্শকরা দেখলে নিশ্চয়ই ভাবে বাংলাদেশের কালচারটা বুঝি এরকমই। তাই যেসব দর্শকের রুচিবোধ আছে তারা অবশ্যই প্রতিবাদ করে। মার্জিতগণ মার্জিত ভাষায় প্রতিবাদ করেন আর যাদের ভাষাজ্ঞানের ঘাটতি আছে তারা স্ল্যাং ইউজ করে, খুব খারাপ ভাষায় প্রতিবাদ করে। এগুলোও ঠিক নয়; কারণ বাইরের লোকজন তো কমেন্টগুলোও পড়ে। যেমনটা আমি বাইরের কান্ট্রির কন্টেন্ট দেখার সময় ওদের কমেন্টগুলোও ফলো করি।

তথ্য ও প্রযুক্তি কণ্ঠ : অনেকেই বলেন, বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতারণার কারণে এক্ষেত্রে ধস নেমেছে। আপনার এ বিষয়ে কোনো ভালো-খারাপ অভিজ্ঞতা আছে?

শিরিন আখতার : শুধু আমাদের দেশে নয়, এটা একটা গ্লোবাল সমস্যা। একটা প্রোডাক্ট দেখিয়ে আরেকটা প্রোডাক্ট পাঠানো, অ্যাডভান্স নিয়ে প্রোডাক্ট না পাঠানো বা এসব তো অহরহ ঘটছে। শুধু যে অনলাইন ব্যবসায়ীরা প্রতারণা করে ব্যাপারটা তেমন নয়, ক্রেতারাও কিন্তু প্রতারণা করে। অর্ডার দিয়ে প্রোডাক্ট রিসিভ না করা, ব্যবহার করে নষ্ট করে তারপর ফেরত দেবার জন্য ফোর্স করা, ফেরত না নিলে খারাপ রিভিউ দেওয়া এসব তো আছেই। আমি আমার তিনটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। একটা ভিডিও মেকিং কিট নিয়েছিলাম ঈদের আগে। ছয় সাতটা আইটেমের সমন্বয়ে ফুল সেট। ওটার একটা পার্টসও কাজ করছে না। পেইজটায় যোগাযোগ করলে আমাকে ব্লক করে দেয়। বেলিফ্যাট কমানোর জন্য সোয়েট স্লিম বেল্ট দেখলাম। দুইহাত দিয়ে টেনে টেনে দেখাচ্ছে কতোটা শক্ত। ওটা হাতে পাবার পরে পরতে গিয়ে দেখি হাঁটু থেকে উপরের দিকে উঠার আগে ফেঁসে গিয়ে দুভাগ হয়ে গেলো। ওদের সাথে যোগাযোগ করলে ওরাও ব্লক করে দিলো। রিসেন্ট একটা ঘটনা। ডেনিমের একটা টপস অর্ডার করেছিলাম। হাতে পেয়ে দেখি কাপড়ের মান অত্যন্ত নিম্ন। মনে হচ্ছে কেউ বছরখানেক ইউজ করেছে। তারপরে একদম সিনা থেকে নিচের ঝুল অবধি একই মাপের। কোমরের কাছটায় যে একটা খাঁজ কাটতে হয় সেটা নেই। ওটা পরলেই কেমন যেনো পাগলের মতো দেখাচ্ছে। হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রেখে দিয়েছি। দ্বিতীয়বার ছুঁয়ে দেখিনি আর।

তথ্য ও প্রযুক্তি কণ্ঠ : আপনি মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অনলাইন ব্যবসার ভবিষৎ কী?

শিরিন আখতার : একটা সাইকেল চালাতে গেলেও সেটার ম্যানুয়েল আছে। প্রপারলি শিখে তবে সাইকেল চালানো যায়, ঠিক তেমনি অনলাইন ব্যবসার কিছু নিয়মকানুন আছে, রুলস এন্ড রেগুলেশনস আছে। বর্তমানে যে হারে একজনকে দেখে আরেকজন অনলাইন বিজনেসে নেমে পড়ছে, এভাবে চলতে থাকলে খুব বেশিদিন ভালো চলবে না। তবে প্রপার ট্রেইনিং, ধৈর্য, মনোবল, সততা এবং বিজনেস করার ইচ্ছে থাকলে এখানেও সফল হওয়া সম্ভব। যারা মনেপ্রাণে অনলাইন বিজনেসকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চায় তারা অবশ্যই সফল হবে এবং নিউএজ জব হিসেবে অনলাইন বিজনেসও বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়