প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২১, ২২:৩১
কলেজে ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যাকুলতা-১৪
করোনায় পড়ালেখা ছেড়েছে অনেকে, শীঘ্রই সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে ঝরে পড়বে আরো শিক্ষার্থী
করোনা মহামারিতে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। একের পর এক ছুটি বাড়নোর ফলে ক্রমাগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ২০১৯ সালে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পর করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির কারনে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দেওয়া ছাড়া ২য় বর্ষে প্রমোশন পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। নবম-দশম শ্রেণিতে কোনো প্রকার পরীক্ষা না দিয়ে নভেম্বরে ৪ বিষয়ে বোর্ড পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে বর্তমান দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।
|আরো খবর
এইচএসসিতে গত ব্যাচ অটোপাশ পেলেও বর্তমান ব্যাচকে ডিসেম্বরে চার বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে বলে জানানো হয়। জেএসসি ও প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই শিক্ষা বিভাগের।
শিক্ষা ব্যবস্থার এমন হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতিতে কেমন চলছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম? কেমন আছে তাদের মানসিক অবস্থা? তা' জানতে চাঁদপুর কন্ঠের ধারাবাহিক আয়োজন 'কলেজে ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যাকুলতা' এ পর্বে চাঁদপুর কন্ঠের মুখোমুখি হয়েছেন ফরিদগঞ্জের কালির বাজার কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার। চাঁদপুর কন্ঠকে জানিয়েছেন করোনায় হঠাৎ করে থমকে যাওয়া শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে তার ভাবনা সম্পর্কে।
চাঁদপুর কন্ঠ : করোনায় কেমন চলছে পড়ালেখা? খাদিজা আক্তার : করোনায় কারো পড়াশোনাই ভালো চলছে না। বিশেষ করে গ্রামের স্টুডেন্টদের। আর নিম্নবিত্ত যারা তারাতো তিন বেলা ঠিক মতো খেতেও পারছেনা। পড়াশোনার জন্য খরচ জোগানের কথা বাদই দিলাম।
চাঁদপুর কন্ঠ : মানসিক অবস্থা কেমন? খাদিজা আক্তার : এমন একটা আতংকের ভিতর মানুষ আছে যে, মানসিক অবস্থা প্রচণ্ড রকম খারাপ থাকারই কথা। আমার ঠিক তাই আছে।
চাঁদপুর কন্ঠ : আপনি কি মনে করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সময়ের দাবী?
খাদিজা আক্তার: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে এই মূহুর্তে স্কুল খোলাটা ভালো সিদ্ধান্ত বলে হচ্ছে না। কেননা করোনার টিকা ১৮ বছরের নিচে দেওয়ার নির্দেশ এখনো দেয়া হয়নি। তাই রিস্ক নেওয়া ঠিক হবে না। স্কুলের শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরলে পরিবারে লোকজনও আক্রান্ত হতে পারে। কলেজ আর ভার্সিটির কথা আলাদা, কেন-না তারা করোনার টিকা নিতে পারবেন।চাঁদপুর কন্ঠ : অনলাইন পাঠদান কতোটা ফলপ্রসূ হচ্ছে বলে মনে করেন? খাদিজা আক্তার : অনলাইনে পাঠদানের জন্য শিক্ষার্থীদের অনেক ভালো হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ক্লাস করে না, কেন-না এভাবে পড়াশোনা হয়না। শিক্ষকদের সঠিক গাইডলাইন যেটা শ্রেণিকক্ষ থেকে পাওয়া যায়, অনলাইনে সেটা সম্ভব নয়।
চাঁদপুর কন্ঠ : শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে কতোটা উপকৃত হচ্ছে বলে মনে করেন? খাদিজা আক্তার : হুদাই। আজাইরা অ্যাসাইনমেন্ট। আমাদের যদি এক্সাম নিতে হয়, তাহলে আমাদের পড়ার সুযোগ দেওয়া হোক। শুধু শুধু অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে প্যারা দিয়ে লাভ নাই। রাত জেগে স্টুডেন্টরা অ্যাসাইনমেন্ট কপি করে অসুস্থ হয়ে যায় আর এক্সামের পড়া পড়তে পারে না।
চাঁদপুর কন্ঠ : স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে আপনার মতামত কী? খাদিজা আক্তার : সরকার যদি পারতো তাহলে আরও আগেই খুলে দিতে পারতো। যাই হোক সময় অনেক গড়িয়ে গেছে। একটা চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন। অনেক ঘুরানো হয়েছে। আমরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেছি অনেক। সামনে এক্সাম হলেও বেশিরভাগ স্টুডেন্টই খারাপ রেজাল্ট করবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সপ্তাহে অন্তত: ২দিন করে হলেও ক্লাস শুরু করা যেতে পারে।
চাঁদপুর কন্ঠ : করোনায় পড়ালেখা ছেড়েছে বা বিয়ে হয়ে গেছে বা কাজে জড়িয়েছে, এমন কোনো সহপাঠী আছে কি? থাকলে তাদের সংখ্যা কত? খাদিজা আক্তার : অনেকেই ছেড়ে দিয়েছে পড়ালেখা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শীঘ্রই না খুললে ঝরে পড়ার হার আরও বাড়বে। আমার জানা মতে আমার ফ্রেন্ড ৫ জনের বিয়ে হয়ে গেছে। সংখ্যাটা এর থেকেও বেশি হতে পারে।