প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২১, ১৮:৪৫
স্কুলে ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যাকুলতা-৮
শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা পায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষে
নাম তার অর্থ। বয়স প্রায় ৮/৯ বছর । স্কুল ড্রেসের জামাটি গায়ে দিয়ে যন্ত্রদানব ট্রাক্টরের উপর খেলা করছে। তার সাথে আরেক ছোট বন্ধুও রয়েছে। মোটরযান থামিয়ে প্রথমে একটি ছবি তোলার পর নাম জিজ্ঞেস করার পর বলল সে ফরিদগঞ্জ বালিকা উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।
|আরো খবর
এখানে কেন এই প্রশ্নের উত্তরে সে বললো, বাড়িতে আর ভাল লাগে না তাই খেলতে রাস্তার পাশে এসেছি। স্কুল ভাল লাগে এই প্রশ্নের উত্তরে একটু হতচকিত হয়ে নিজের গায়ে থাকা স্কুল ড্রেসটির তাকিয়ে ,একটু ভেবে ভাল লাগে বলেই ভো দৌড়।
তার সাথে কথা বলার সময়ই সায়েম নামে আরেক শিশু ওই গাড়ীটির দিকে ছুটে গেল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কিসে পড়। বলল সে উম্মে কোরআন ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। এখন প্রতিদিন তাদের ক্লাস হয়, ভাল লাগে। তবে তার বাবা নিয়ে না যাওয়ায় গত কয়েকদিন তার মাদ্রাসায় যাওয়া হয়নি। দুইটি শিশুর স্কুলে যাওয়ার ব্যাকুলতা স্পষ্ট তারা ঘরে নয়, শিক্ষাঙ্গনে থাকতেই পছন্দ তাদের।
মায়ের সাথে ঔষধের জন্য আসা সাহাপুর মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া জানায়, বাড়িতে ভাল লাগে না। তাই মায়ের সাথে বাজারে এসেছে। স্কুলে স্যারদের কথা মনে পড়ে , বলল হ্যা।
জিহাদ স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। তাকে কাছে ডেকে কোথায় গেলে জিজ্ঞেস করতেই বলল স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে গেছি। পাশে থাকা লিটল ফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বলল, আমি এই স্কুলের ৫ম শ্রেণির পড়ি। স্কুল বন্ধ থাকায় ভাল লাগে না। মাঝে মাঝে স্যারেরা আমাদের খোঁজ খবর নেয়। পড়া দেখিয়ে দেয়।
বল হাতে বন্ধুদের সাথে খেলতে বেড়ুবে এমন সময় সামনে পেয়ে নাম ও স্কুলের কথা বললে সে জানায়। তার নাম ইয়াছিন আরাফাত রিজভী। ফরিদগঞ্জ আর্দশ একাডেমীর ৯ম শ্রেণির ছাত্র। স্কুলের সময়ে খেলতে ভাল লাগছে এমন প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, কি করবো স্কুল বন্ধ। বাসায় বসে থাকতে ভাল লাগে না, বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলতে বের হয়েছি। স্কুল খুললে ভাল লাগবে। এই প্রশ্নের জবাবে বললো অবশ্যই। পড়ালেখা ছাড়াও স্যার ও বন্ধুদের সাথে নিয়মিত দেখা হবে, কথা হবে। এটার মতো আনন্দ আর কোথাও নেই।
সৌপ্তিক ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের বর্ণমালা কিণ্ডারগার্টেনে বর্তমানে কেজি শ্রেণিতে পড়ছে। তাকে স্কুল ভাল না বাসা ভাল জিজ্ঞেস করতেই উত্তর খুজে পেল না। পরে বলল স্কুলে গেলে মজা লাগে। বন্ধুদের সাথে খেলতে পারে। তার বাবা দন্ত চিকিৎসক জানালো, কয়েকদিন পুর্বে তার চেম্বারে তার ছেলের ক্লাসের একটি শিশুকে নিয়ে এসেছিল তার অভিভাবক। সৌপ্তিকও সেই শিশুটি পরস্পরের বন্ধু ছিল বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও কল দিয়ে তার ছেলের সাথে ওই শিশুটির যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও একে অপরকে চিনতে পারেনি। গত দেড় বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ থাকায় শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক যেই আবহ তথা বন্ধুত্ব, খেলাধুলা, মানসিক ও শারিরিক বিকাশ গড়ে উঠার যেই সম্ভবনা ছিল, তা স্তিমিত হয়ে গেছে।
সৌপ্তিকের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান মাামুন হোসাইন জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারীতে সে আমাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। ভর্তির পর তার দুষ্টুমি এবং অমনযোগিতা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছিল। কিন্তু ১৭ মার্চ করোনা ভাইরাস জনিত কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত প্রায় তিন মাসে আমি তার মধ্যে অভাবনীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করি। প্রতিদিন স্কুলে আসার কারণে সে আগের চেয়ে মনযোগি হয়, দুষ্টুমি কম করে। স্যার বা ম্যাডামদের কাছে পড়া বলতে চেষ্টা করছে। অর্থাৎ তার শারিরিক ও মানসিক বিকাশ দ্রুত উন্নতি হতে থাকে। স্কুল যদি বন্ধ না হতো আমি বিশ্বাস করি, সৌপ্তিক তার ক্লাসের সেরা একজন শিক্ষার্থী হতো।
করোনা আমাদের জীবন থেকে শুধু প্রায় দেড় বছর কেড়ে নেয়নি। কেড়ে নিয়েছে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। খেলাধূলা থেকে বিচ্যুত শিশুরা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। হয়ে পড়ছে খিট খিটে স্বভাবের।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফেরার ব্যাকুলতার কথা জানিয়ে একজন কলেজ শিক্ষক বলেন, যতই অনলাইন বলুন আর গুগলমিট বলুন, শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা পায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসে শ্রেণি শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমেই। করোনা কালিন হয়তবা আমরা অনলাইন এর মাধ্যমে চেষ্টা করেছি। প্রথম দিকে শিক্ষার্থীদের এতে আগ্রহ দেখা গেলেও পরে তা অনাগ্রহে পরিনত হয়। তবে বর্তমানে এসাইনমেন্ট নিয়ে যাওয়া ও জমার মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করছে। যা তাদের মানসিক শক্তিকে কিছুটা হলেও প্রশস্ত করছে।