প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২১, ১১:৩৯
স্কুলে ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যাকুলতা-০৭
করোনার কারনে আমার স্বপ্নগুলো স্বপ্নই রয়ে গেল
করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা অনেকেই বিষন্নতায় ভুগছেন। এই সময়ে তাদের চিন্তা চেতনার উপর ভিত্তি করে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজনে শিক্ষার্থীদের জন্য 'স্কুলে ফিরতে শীক্ষার্থীর ব্যাকুলতা' শীর্ষক শিরোনাম, কথা হয় বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী আরিশা আদ্রিয়ান সোহার সাথে। তার সাথে কথা হলে সে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের সম্পাদকের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায় এমন একটি সুন্দর আয়োজনের জন্য।
|আরো খবর
তার ব্যাকুুলতা ব্যক্ত করে সে জানায়, করোনা ভাইরাসের জন্য প্রায় দীর্ঘ ১ বছর ৬ মাস ধরে স্কুল বন্ধ, পড়া নেই, খেলা নেই, মজার টিফিন নেই, সবচেয়ে বেশি যেটা মিস করি তাহলো বন্ধুদের সাথে দেখা নেই। আগে আমাদের স্কুলে যেতে ইচ্ছে করতো না, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমরা কি ভুল করতাম। ভাবতাম স্কুল মানে শুধু পড়া আর পড়া। কোনো মজা নেই। বসে বসে শিক্ষকের কথা শোনা আর লেখাপড়া।
আমি যখন চতুর্থ শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠি তখন ৩ মাস ক্লাস করতে পেরেছি । কিন্তু তার পর করোনার প্রকোপে স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। ভেবেছিলাম কত মজা স্কুলে যেতে হবে না। কিন্তু আমার ধারনা সম্পূর্ণ ভুল।
আগে প্রতি বছরে আন্তঃ প্রাথমিক ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হতো। স্কুলের সকল শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতো । কেউ ক্রিড়া প্রতিযোগিতায়, কেউ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতো । আমি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। কবিতা আবৃত্তি,উপস্থিত বক্তৃতা ও একক অভিনয়ে অংশ গ্রহন করতাম। যারা স্কুল, উপজেলা,জেলা, বিভাগে প্রথম হতো তারা জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিতে পারত। আমি দুই বার চাঁদপুর জেলা থেকে বিভাগে অংশ গ্রহণ করে জাতীয় পর্যায়ে অংশ গ্রহন করেছিলাম । এছাড়াও জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা, শিশু কিশোর প্রতিযোগিতা, বিজয় ফুল প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।
কিন্তু সেসব এখন কোথায় আর কোনো প্রতিযোগিতাও নেই। আমার বাসা বাবুরহাট, আমি বিষ্ণুদী আজিমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করতাম। সকাল ৭ টায় কোচিং ছিল তাই ৬টায় ঘুম উঠে কোচিং এ যেতে হতো, তারপর আরেকটা কোচিং এ যেতে হতো , সেটা শেষ করে স্কুলে যেতাম, কিন্ত এখন সব বন্ধ। অনলাইনে ক্লাস হতো, কিন্তু অনলাইনে কি স্কুলের সেই মূহুর্তগুলো পাওয়া যায়। সরকার শিক্ষার জন্য টিভিতে, মোবাইলে ক্লাস করার সুযোগ করে দিলেও স্কুলেতো যেতে পারছি না। সব স্মৃতিগুলো কেমন হারিয়ে যাচ্ছে, বন্ধুরা কাছে থেকেও দুরে চলে যাচ্ছে।
পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়, ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা সে'কি ভোলা যায়।।
এমনি করে পঞ্চম শ্রেণির ধাপ শেষ হয়ে গেল। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দেওয়াও হলো না, ভর্তি পরিক্ষা হলো লটারির মাধ্যমে । স্বপ্ন ছিল মাতৃপীঠ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হবো। ভাগ্যের বিধিবাম লটারিতে নাম আসলো অপেক্ষমান তালিকায়। স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে গেল। অতঃপর বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ভর্তি হলাম। এখন সেখানেই অধ্যায়ন করছি, কিন্তু ক্লাস করতে পারছি না। আগের মতো স্কুল মাঠে খেলতে পারছি না, এসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে কিছুদিন আগে থেকে। ১বছর ৬ মাস ধরে স্কলু বন্ধ। নতুন স্কুলে যাব, নতুন স্কুলের ড্রেস পরবো। আলাদা স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু নতুন স্কুলের ড্রেসটাই এখনো পড়তে পারলাম না। তাই কবির ভাষায়....
সাদা আর নীলে মিলে
গায়ের পোশাক
নীল মোজা কালো জুতো
পড়ে পড়ে থাক।দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কারো স্কুল, কারো কলেজ, সব বন্ধ। ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়েছে। মানুষ ভ্যাকসিন নিচ্ছে, আমরা আশা করি আমরা আবার স্কুলে ফিরে যেতে পারব, স্কুলের মাঠে খেলতে পারব, স্কুলের বারান্দায় বসে বন্ধুদের সাথে প্রাণ খুলে মনের কথা বলব, গানের কলি খেলব। সেইসব দিন আবার ফিরে আসবে। এই প্রত্যাশাই রইল।