প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২১, ১৪:৩৩
স্কুল-কলেজ ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যাকুলতা-০২
প্রতি সপ্তাহে শিফটিং করে হলেও স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হোক
টানা ৫৩০ দিন বন্ধ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনলাইনে পাঠদান অব্যাহত থাকলেও বাসায় থাকতে থাকতে বহু শিক্ষার্থীই এখন অভিভাবকদের কাছে বোঝা মনে হচ্ছে। কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থনে যোগ দিতে বলছেন বহু অভিভাবক। এতদিনে অনেক শিক্ষার্থী কাজে যোগ দিয়ে পড়ালেখার ইতিও টেনে ফেলেছেন। বহু ছাত্রী নিরবে নিভৃতে বরণ করে নিতে হয়েছে বাল্য বিয়েকে। যারা এখনও পড়ালেখা চালিয়ে যাবার সংগ্রাম করছেন, ব্যাকুল হয়ে আছেন স্কুল-কলেজে ফেরার তাদের মানসিক অবস্থা ও ভাবনা নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের বিশেষ আয়োজন 'স্কুল-কলেজে ফিরতে ব্যাকুল শিক্ষার্থীরা'। এই পর্বে কথা বলা হয় চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভার্সিটিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী মোঃ রিয়াজ রহমান রিফাতের সাথে।
|আরো খবর
- বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বারবার পেছানোটা কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কি-না? - হ্যাঁ অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাবই বেশি দেখা গেছে। কারণ অনেক শিক্ষার্থীরা একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় আর সেই মোতাবেক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। কিন্তু বারংবার তারিখ পরিবর্তন হওয়ার কারণে অনেকে অধৈর্য হয়ে পড়ালেখার স্পিরিট টা হারিয়ে ফেলেছে এবং যারা আর্থিকভাবে তেমন স্বচ্ছল না তারা নিজের আর পরিবারের কথা ভেবে খরচ চালাতে গিয়ে রোজগারের উদ্দেশ্যে নেমে গেছে। তাই অধিকাংশের কথা চিন্তা করলে নেতিবাচক প্রভাবটাই বেশি পড়েছে।
- করোনায় কেমন চলছে পড়ালেখা? - মন্থর গতির ন্যায়। পরীক্ষা হবে কি হবে না, কবে হবে? যদি হয় আশেপাশে রোগের ছড়াছড়ি, অসুস্থতার মিছিল আর পরিবার প্রিয়জনদের জীবিকার তাগিদে ছোটাছুটি সবমিলিয়ে জী্নটাকে বিভিষিকাময় করে তুলেছে। বিষণ্ণ জীবন পড়ালেখায় মন বসতে দেয় না।
- মানসিক অবস্থা কেমন? - করোনাকালে সবথেকে বেশি যদি ক্ষতি হয়ে থাকে তবে তা মানসিক অবস্থারই। হ্যাঁ আমরা সবাই আর্থিক বা অসুস্থতার পাশাপাশি গুরুতরভাগে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত।
- পড়ালেখা যেহেতু প্রায় বন্ধ। বিকল্প কোন কাজ করছেন কী? - না হাতের কোনো কাজ শেখা হয়নি। কিন্তু অনেক কিছুর বাস্তব, ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা নিয়েছি। চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় সিভি জমা দেয়া, চাকরির ওয়েবসাইট ভিজিট করা, বিভিন্ন চাকরি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করা,স্বশরীরে পরীক্ষা দেয়া ইত্যাদি। করোনার প্রভাবে ইন্টারের পরই জীবিকার পেছনে ছুটতে হচ্ছে।
- আপনি কি মনে করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সময়ের দাবী? - হ্যাঁ আর এটা শুধু সময়ের নয় বরং যৌক্তিক এবং নাগরিক অধিকার বলে মনে করছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা মাদক, নেশা, ক্ষতিকারক আসক্তিকর অনলাইন গেইম, নেতিবাচক অনলাইন প্লাটফর্ম এসবের দিকে ঝুঁকছে। শুধুমাত্র সময় কাটছে না বলে। তাই এখনি সেরা সময়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার।
- প্রায় ৫৩০ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। আপনার প্রতিক্রিয়া কী? - মনে হচ্ছে এ দেশে কখনোই কেউ শিক্ষিত হয়নি বা একাডেমিক শিক্ষা লাভ করেনি। যে যার মত কাজ করছে, চাকরির পেছনে ছুটছে নয়তো বাবা-মা-কে পুঁজি সংগ্রহ করে ব্যবসা করবে বলে জ্বালাচ্ছে। এসব এই ৫৩০ দিন বন্ধেরই ফল কারণ পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে বড় অসুখ যে বেকারত্ব। আমরা কলেজ পড়ুয়ারা এখন অভিভাবকদের কাছে বেকার ছেলের মতই বোঝা।
- অনলাইন পাঠদান কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে বলে মনে করেন? - আমাদের সমগ্র দিক বিবেচনা করতে হবে।পড়াশোনা শুধু শহরের গুটিকয়েক শিক্ষার্থীরা করে না, গ্রামে শিক্ষার্থীরাও করে। বরং গ্রামে শিক্ষার্থীর হার বেশি। এদের মধ্যে অধিকাংশেরই ঘরে নেট থাকে না। এন্ড্রয়েড ফোনের অভাব। তো তারা ক'দিন মানুষের ফোন দিয়ে বা ঘরের সামনে বসে, মাঝ উঠানে দাড়িয়ে বা ছাদের মধ্যে ক্লাস করবে? ওয়াই-ফাই এর কথা বললে সেটা গ্রামে একেবারেই দুষ্কর। আর যারাই অনলাইনে পড়াশোনা করছে তারা শুধু বসে সময় কাটাচ্ছে আর দেখে দেখে হোমওয়ার্ক করছে এতটুকুই। দিনশেষে জ্ঞানভান্ডার শূন্য।
- স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে আপনার মতামত কী? - স্কুল-কলেজ তো অবশ্যই খুলতে পারে। প্রয়োজনে একই প্রতিষ্ঠানের মোট শ্রেণিকে অর্থেক করে প্রতি সপ্তাহে তিনদিন করে শিক্ষার্থীদের সশরীরে পাঠদান শুরু করা যেতে পারে। অথবা একই শ্রেণির মোট শিক্ষার্থীর ৫০ শতাংশ প্রথম তিনদিন ও বাকি ৫০ শতাংশ সপ্তাহের শেষ তিনদিন এনে ক্লাস করালে নির্দিষ্ট দূরুত্ব বজায় রেখে ক্লাস করানো যেতে পারে। ক্লাসের কার্যক্রম শুরু করার আগে সবগুলো ক্লাস স্যানিটাইজ এবং ক্লিন গ্যাসের মাধ্যমে পরিষ্কার করে নিতে পারে। সেই সাথে ক্লাসে শিক্ষার্থীরা ঢোকার সময়ও ওদের স্যানিটাইজ নিশ্চিত করতে পারে। অন্যদিকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালে তাঁদেরও অর্ধেক করে স্বল্পসংখ্যক স্টুডেন্ট ক্লাসে রেখে সপ্তাহ ভাগ করে ক্লাস নেয়া যেতে পারে। সাথে স্যানিটাইজ তো অবশ্যই করতে হবে। যে সকল শিক্ষার্থী নূন্যতম অসুস্থ থাকবে তাদের ছুটির আগাম ঘোষণা দিয়ে রাখা যেতে পারে। চাইলেই সম্ভব। শুধু প্রয়োজন একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বদিচ্ছা।