শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২২, ২৩:২৭

সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

কাজী শাহাদাত
সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

আমি যখন ২৫ বছরের টগবগে যুবক, পেশা গ্রহণের আগ্রহের চেয়ে সাহিত্যের নেশায় ছিলাম বুঁদ হয়ে, তখনই (১৯৮৬ সালে) সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সাহিত্য মাসিক ‘নির্ভীক’-এর পর মাসিক ‘নির্ঝর’ প্রকাশ করতে গিয়ে সাহিত্য আন্দোলনের মাধ্যমে সাহিত্য চর্চার গুরুত্ব উপলব্ধি করে সাহিত্য সংগঠন গড়ে তুলি। নাম দিই ‘নির্ঝর সাহিত্য চক্র’। প্রতি সপ্তাহে এ সংগঠনের আয়োজনে সাহিত্য আসর বসতো। এক পর্যায়ে এ আসরটি স্থানীয় লেখক ও সাহিত্যানুরাগীদের কাছে যেনো সাহিত্যের মধুচক্রে পরিণত হয়। আর এর মধ্যমণি বা প্রাণে পরিণত হন অধ্যাপক কবি খুরশেদুল ইসলাম। তিনি তাঁর ছাত্র কবি আবদুল্লাহিল কাফীর আমন্ত্রণে এসেছিলেন এই আসরে এবং কালক্রমে তিনিই হয়ে যান আশির দশকের প্রায় মাঝামাঝি চাঁদপুরে সৃষ্ট সাহিত্য আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। এই আন্দোলনের ঢেউ আঘাত হানে জেলা প্রশাসকের বাংলোয়। ১৯৮৬ সালে চাঁদপুরের দ্বিতীয় জেলা প্রশাসক হিসেবে এস. এম. শামসুল আলম যখন কর্মরত, তখন চাঁদপুরের মুখপত্র ছিলো দুটি সাপ্তাহিকÑ‘চাঁদপুর বার্তা’ ও ‘রক্তিম আভা’। এ দুটি পত্রিকায় নির্ঝর সাহিত্য চক্রের সাপ্তাহিক সাহিত্য আসর, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রকাশনাসহ সার্বিক কর্মকাণ্ডের খবর ফলাও করে ছাপা হতো। এসব খবর মনোযোগ দিয়ে পড়তেন জেলা প্রশাসকের সহধর্মিণী কবি সাবিনা আলম। তিনি তাঁর স্বামীর পূর্ববর্তী কর্মস্থল ঝালকাঠিতে জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় সাহিত্য পরিষদ গঠনের সদ্য অর্জিত আনন্দ-অভিজ্ঞতায় ভুগছিলেন। সেমতে চাঁদপুরেও এমন কিছু করা যায় কি না সেটা নিয়ে তাঁর স্বামীকে তাগিদ দিচ্ছিলেন।

জেলা প্রশাসক ১৯৮৬ সালের মে মাসের কোনো একদিন নির্ঝর সাহিত্য চক্র তথা চাঁদপুরের তৎকালীন সাহিত্য আন্দোলনের মুখ্য ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক কবি খুরশেদুল ইসলামকে তাঁর বাংলোয় চায়ের আমন্ত্রণ জানালেন। তিনি যথাসময়ে বাংলোয় গেলে জেলা প্রশাসক এবং তাঁর স্ত্রী ঝালকাঠির আদলে জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় চাঁদপুরে একটি সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিলেন।

কবি খুরশেদুল ইসলাম তাঁর নিজ জেলা সদরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে চাকুরির সময় সাহিত্য একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিষ্ঠা করার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ছিলেন। চাঁদপুর সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে বদলি হয়ে এসে তিনি চাঁদপুরেও অনুরূপ সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠার সুপ্ত ইচ্ছা পোষণ করে আসছিলেন। কিন্তু নির্ঝর সাহিত্য চক্রের সাথে তাঁর সক্রিয় সংশ্লিষ্টতায় তিনি তাঁর সে ইচ্ছা বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হননি। কিন্তু জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব পেয়ে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদলে ‘সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর’ নামে সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়ে বসেন। এ প্রস্তাব বাস্তবায়নে তিনি নির্ঝর সাহিত্য চক্রের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তা-ব্যক্তিদের এই একাডেমির ভালো পদে রাখার আবদারও করেন। তাঁর প্রস্তাব ও আবদার দুটোই গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পশ্চিম পাশে বর্তমানে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের বহুতল ভবন যেখানে অবস্থিত, সেখানেই ছিলো তখনকার জেলা প্রশাসক কার্যালয় তথা কালেক্টরেট ভবন। এই ভবনের দোতলায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে ১৯৮৬ সালের ৬ জুলাই জেলা প্রশাসক সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর-এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। একাডেমির প্রথম কমিটিতে জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে সভাপতি, অধ্যাপক কবি খুরশেদুল ইসলাম মহাপরিচালক, অধ্যাপক কবি জাকির হোসেন মজুমদার সহকারী মহাপরিচালক এবং আমি (কাজী শাহাদাত) প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব লাভ করি। জেলা প্রশাসক এই একাডেমির জন্যে আসবাবপত্র ক্রয়সহ আনুষঙ্গিক ব্যয় মিটাতে দশ হাজার টাকার নগদ অনুদানও প্রদান করেন। শুধু তা-ই নয়, রাতারাতি এই একাডেমির অফিস হিসেবে মিশন রোডস্থ ‘গিরিধাম’-এর দোতলাটি ব্যবহারের জন্যে বরাদ্দ প্রদান করেন।

স্বল্প সময়ে জেলা প্রশাসক সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর-এর স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের জন্যে চাঁদপুর শহরের জে.এম. সেনগুপ্ত রোডস্থ জোড়পুকুর পাড়ে খাস জমি বরাদ্দ দেন, যেখানে জেলা পরিষদ, চাঁদপুর-এর অর্থায়নে দুবছরের মধ্যে মিলনায়তনসহ চারকক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবন গড়ে ওঠে। যেটি ১৯৮৮ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আলী হায়দর খান উদ্বোধন করেন। এরই মধ্যে একাডেমীর গঠনতন্ত্র অনুমোদন ও নূতন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। গঠনতন্ত্র প্রণয়নসহ প্রতিষ্ঠাকালীন সকল কাজে আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করা সত্ত্বেও সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর-এর প্রধান সম্পাদক পদে আমার থাকাতো দূরের কথা, নির্বাহী সদস্য হিসেবেও ঠাঁই হয়নি।

তারপর অপ্রিয় ও কষ্টকর অনেক কথা। সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর-এর প্রতিষ্ঠায় নির্ঝর সাহিত্য চক্রকে অনেকটা বিসর্জন ও বিলুপ্ত করায় সেটির পুনরুজ্জীবন আর ঘটেনি। নিজের সাহিত্যানুরাগ ও সাহিত্য চর্চাকে চাঁদপুরের সাপ্তাহিক পত্রিকা ও লিটল ম্যাগাজিনগুলোকে কেন্দ্র করেই বাঁচিয়ে রাখলাম। এক পর্যায়ে সাপ্তাহিকের আদলে সাহিত্য পত্রিকা ‘বিকাশ’ বের করলাম। কয়েকটি সংখ্যা বের করলেও জেলা প্রশাসকের অনুমোদন তথা ডিক্লারেশন পেলাম না। ‘বিকাশ’-এর সাথে সংশ্লিষ্ট লেখক জিলানী রিপন অনেকটা জেদের বশেই তার বড় দুভাই যথাক্রমে দৈনিক ইত্তেফাকের ক্রাইম রিপোর্টার, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ক্র্যাব)-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাকারিয়া মিলনকে সম্পাদক ও ইত্তেফাকের চাঁদপুর প্রতিনিধি গোলাম কিবরিয়া জীবনকে নির্বাহী সম্পাদক করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীর আন্তরিক তদবিরে ‘সাপ্তাহিক চাঁদপুর’ নামে একটি সংবাদপত্র প্রকাশের নেপথ্যে জোরালোভাবে কাজ করেন। এ পত্রিকায় আমি প্রথমে স্টাফ রিপোর্টার এবং পরবর্তীতে বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগদান করি। এখানে ১০ বছর কাজ করার সময়ই প্রথমত সাপ্তাহিক হাজীগঞ্জে যুগ্ম সম্পাদক ও পরে চাঁদপুর কণ্ঠে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করি। ১৯৯৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর কণ্ঠ সাপ্তাহিক থেকে দৈনিকে উন্নীত হলে এর প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ¦ অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশার আমাকে প্রধান সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেন। সাহিত্য একাডেমীর প্রধান সম্পাদক পদটি বিলুপ্ত হবার প্রায় একযুগ পর চাঁদপুর কণ্ঠে পেলাম একই নামের পদ। যে পদে প্রায় ২৪ বছর ধরে কর্মরত আছি।

সাহিত্য একাডেমীর নূতন নেতৃত্বে প্রথমাবস্থায় কার্যক্রম ভালোভাবে চললেও স্বল্প ক’বছরের ব্যবধানে, বিশেষ করে অধ্যাপক কবি খুরশেদুল ইসলামের বদলির কারণে তিনি মহাপরিচালক পদে ইস্তফা দিলে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পালাক্রমে এই পদে অধিষ্ঠান হতে থাকে। তাঁদের পেশাগত ব্যস্ততার কারণে তাঁরা সাহিত্য একাডেমীর কার্যক্রমে সক্রিয় হতে পারেননি। যার ফলে নিষ্ক্রিয়তা ও নিশ্চলতায় আক্রান্ত হয় এই একাডেমী। চাঁদপুরের তরুণ লেখকসহ সচেতন অনেকেই প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। বিবৃতি দেন, বক্তব্য দেন। তালাবদ্ধ একাডেমী প্রাঙ্গণ পরিণত হয় গরু-ছাগল বিচরণের মোক্ষম স্থানে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হয়। চাঁদপুর লেখক পরিষদসহ সমমনা সাহিত্য সংগঠনগুলোর সদস্যরা করেন মানববন্ধন। টনক নড়ে চাঁদপুরের ষোড়শ জেলা প্রশাসক (বর্তমানে খাদ্য সচিব) মোঃ ইসমাইল হোসেনের। তিনি গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে নির্বাচিত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলে আমি (কাজী শাহাদাত) মহাপরিচালক পদে নির্বাচিত হই এবং ২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করি।

জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেন ছিলেন প্রচণ্ড সাহিত্যানুরাগী। তিনি সাহিত্য চর্চাকে বেগবান করতে নিয়মিত সাহিত্য আসর আয়োজনের তাগিদ দেন এবং জেলাব্যাপী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন গ্রুপে সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এমতাবস্থায় আমরা পেয়ে যাই আরেক সাহিত্যানুরাগী, কবি, প্রবন্ধকার, চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রথম কালচারাল অফিসার হিসেবে ওই সময় যোগদানকারী সৌম্য সালেককে। তাঁর সঞ্চালনায় ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি বুধবার থেকে একাডেমীতে শুরু হয় নবপর্যায়ের সাহিত্য আড্ডা বা আসর। গেল প্রায় আট বছরে ৭৭টি মাসিক সাহিত্য আড্ডায় তিন শতাধিক নবীন-প্রবীণ কবি-লেখক-সাহিত্য অনুরাগী অংশ নেন। বস্তুত এই আসর থেকেই চাঁদপুরের সাহিত্য আন্দোলন পায় সম্পূর্ণ নূতন মাত্রা ও আশাব্যঞ্জক গতিশীলতা। যার ফলস্বরূপ সাহিত্য সাময়িকীসহ বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা (কাব্যগ্রন্থ, গল্পগ্রন্থ, প্রবন্ধগ্রন্থ) প্রকাশের হিড়িক পড়ে। সাহিত্য একাডেমীর বার্ষিক প্রকাশনা বের করার উদ্যোগও নেয়া হয়। সাহিত্য একাডেমি থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ছোটকাগজ ‘উছল’-এর সমৃদ্ধ একটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। যাতে জাতীয় ও স্থানীয় লেখকরা লিখেছেন। স্থানীয় কবি-লেখক-সংগঠকদের নানামুখী কার্যক্রমে চাঁদপুরে সাহিত্য আন্দোলনের পুনর্জাগরণ সৃষ্টি হয়। সপ্তদশ জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করলেন মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল। তিনি প্রথম ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে সরকারের অনুমোদনক্রমে চাঁদপুরের নামকরণ করেন ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’। তিনি ব্র্যান্ডিংকেন্দ্রিক চাঁদপুরের ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও সাহিত্যাঙ্গনে ব্যাপক জোয়ার সৃষ্টির জন্যে বার বার প্রবল তাগিদ দেন এবং বহুবিধ কার্যক্রম হাতে নেন। আমরা এ সুযোগে চাঁদপুরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সাহিত্য সম্মেলন করার জন্যে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানালাম। তিনি এ সম্মেলন আয়োজন সহজতর করার জন্যে আয়োজক হিসেবে সাহিত্য একাডেমীর সাথে জেলা শিল্পকলা একাডেমিকে জুড়ে দেন। অবশেষে ৬ মে ২০১৭ তারিখে ব্যাপক অংশগ্রহণ ও আশাব্যঞ্জক সাফল্যে চাঁদপুরের ইতিহাসে প্রথম সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যাতে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক (পরবর্তী সময়ে সভাপতি) দেশখ্যাত লোকসাহিত্য বিশারদ, প্রফেসর ড. শামসুজ্জামান খান প্রধান অতিথি এবং তাঁর বন্ধু, চাঁদপুরের কৃতী সন্তান, স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী হাশেম খান উদ্বোধক হিসেবে যোগদান করেন। এক্ষেত্রে সদ্যপ্রয়াত শ্রদ্ধেয় শামসুজ্জামান খানের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা ছিলো অবিস্মরণীয়। আমরা তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। এ সম্মেলনে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস ও জাকির তালুকদার এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব কবি আমিনুল ইসলাম যুক্ত ছিলেন। সাহিত্য সম্মেলন উপলক্ষে সাহিত্য একাডেমীর বার্ষিক প্রকাশনা ‘উছল’-এর সমৃদ্ধ সংস্করণ বের হয় এবং চাঁদপুরের প্রধান দৈনিকগুলোতে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়, যাতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

প্রতিবছর জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার সহযোগিতায় সাহিত্য একাডেমীর আয়োজনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একাডেমীর নির্বাহী সদস্য শহীদ পাটোয়ারীর সাংগঠনিক দক্ষতায় চাঁদপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত হয় বইমেলা। একাডেমীর সাহিত্য আড্ডার সাথে সংশ্লিষ্টদের সক্রিয়তায় এই মেলার আঙ্গিক পরিবর্তন হয় এবং পরিসর বৃদ্ধি পায়। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে চলতি ২০২১ সালে এ মেলার আয়োজন সম্ভব হয়নি। গত বছর চাঁদপুরে দ্বিতীয় সাহিত্য সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত থাকলেও করোনার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে আমরা বসে থাকিনি। সাহিত্য একাডেমীর নিজস্ব প্রকল্প হিসেবে একাডেমী ভবনের পাশে বিদ্যমান গ্যারেজকে গোডাউনে পরিণত করে ভাড়া দেয়া হয়েছে এবং জেলা পরিষদের অর্থায়নে একাডেমী ভবনের ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। এতে একাডেমী-মিলনায়তনের ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে একটা টেকসই আর্থিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে সাহিত্য একাডেমী। আর ব্যাংকে স্থায়ী আমানত তো রয়েছেই। এখানে এটা না লিখলে অপূর্ণতা থেকে যাবে যে, চাঁদপুরের পঞ্চদশ জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহা সাহিত্য একাডেমীর আর্থিক অনটন দূরীকরণে লটারীর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেন এবং ভবনের পাশে সেমি-পাকা স্থাপনায় একাডেমীর আয় বৃদ্ধিতে গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণ করেন।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি মোঃ মাজেদুর রহমান খানের পরিকল্পনা ও উদ্যোগে আমরা জেলা প্রশাসক পাণ্ডুলিপি পুরস্কার আহ্বান করি। এ প্রতিযোগিতায় মনোনীত হওয়ার পর লেখক ইকবাল পারভেজের কবিতার বই ও সৌম্য সালেকের প্রবন্ধগ্রন্থ সময় প্রকাশ থেকে একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করি। এ দুটি গ্রন্থের প্রকাশনা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তৎকালীন এমপি বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের সময়ে সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের জন্মদিনে (২০ নভেম্বর ২০১৯) একটি জাতীয় মানের সেমিনারের আয়োজন করি, যেটি ছিলো নাসিরউদ্দীনকে নিয়ে সারাদেশের মধ্যে একটি ব্যতিক্রম আয়োজন। একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা এ সেমিনারে মুখ্য আলোচকের আসন অলঙ্কৃত করেন।

এরই মধ্যে আসলো স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ। একই সাথে চলে করোনার প্রকোপ। এমতাবস্থায় বন্ধ হয়ে যায় সাহিত্য আড্ডাসহ স্বাভাবিক অন্য কার্যক্রম। তবে আমরা বসে থাকিনি। আমরা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘সুবর্ণ-শতক’ নামে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিলাম। এ উদ্যোগের পেছনে চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের অর্থায়ন ও আন্তরিক সহযোগিতা এবং সদ্যবিদায়ী জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের লেখা প্রদানসহ সমর্থন ছিলো স্মরণযোগ্য। আমাদের এই প্রকাশনায় সদ্যপ্রয়াত কালজয়ী ব্যক্তিত্ব আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, বাংলা একাডেমীর চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন, চাঁদপুর সদরের এমপি বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, মুজিব জন্মশতবার্ষিকী বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবি কামাল চৌধুরীসহ দেশের অনেক বিজ্ঞজনের লেখা পেয়েছি। ফলে প্রকাশনাটি নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ হয়েছে।

২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে ২০তম জেলা প্রশাসক হিসেবে অঞ্জনা খান মজলিশ যোগদানের পর করোনা প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ‘সুবর্ণ-শতক’ প্রকাশ এবং অনলাইনে সাহিত্য বিষয়ক একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করা অন্য কোনো ছোট-বড় কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছিল না। করোনা প্রকোপ কিছুটা কমলে জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর-এর কার্যক্রম জোরদারে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে নির্বাহী পরিষদের সভা ডাকেন। তাঁর সাথে পূর্ব আলোচনাক্রমে পরদিন ১ অক্টোবর রোটারী ভবনে অনুষ্ঠিত হয় ‘সুবর্ণ-শতকে’র পাঠ পর্যালোচনা অনুষ্ঠান। এতে অবসরপ্রাপ্ত সচিব দেশের প্রখ্যাত ছড়াকার ফারুক হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কথাসাহিত্যিক মঈনুল হাসানসহ আরো অনেক বিগদ্ধজন আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও গেলো ফেব্রুয়ারিতে দেয়ালিকা প্রতিযোগিতা, সুবর্ণ-শতক পাঠ প্রতিযোগিতা, হেমন্তে নবান্ন উৎসব ও ‘ঋতুশ্রী’ নামে সাহিত্য সংকলন প্রকাশ করা হয়। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়