প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:২৬
স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
বন্ধু চল রোদ্দুরে
|আরো খবর
মন কেমন মাঠজুড়ে
খেলবো আজ ওই ঘাসে
তোর টিমে তোর পাশে।মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী আমি। এই স্কুলের ছাত্রী হিসেবে আমি স্বভাবতই খুব গর্ব অনুভব করি। বর্তমান মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির মমতাময়ী মা এই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। আমার সৌভাগ্য মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের মায়ের সাথে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ হয়েছিলো। তিনি মাতৃপীঠের স্মৃতি বর্ণনা করেন গড়গড় করে।
জেলার শ্রেষ্ঠ সরকারি বিদ্যালয়ে ১০টি বছর কাটিয়েছি। ১৯৭০ থেকে ১৯৮০। স্বাধীন বাংলাদেশের সেই উন্মাদনার দিনগুলো। আহা কী আমুদে জীবন ছিলো তখন! চাঁদপুরের মাটি ছিলো নরম, ভেজা ভেজা। চারদিক সবুজ আর জলে ঘেরা। সেই ভেজা মাটিতে সবুজ ঘাস নতুন সোনামাখা রোদে চিকচিক করতো। চারপাশে নদী-খাল-পুকুর। জোয়ারে চারপাশের পানি ফুলে উঠে। ভাটায় নেমে যায়। নদীর সাথে প্রত্যেকটি পুকুর, লেকের সংযোগ ছিলো। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে আমরা জোয়ারের নতুন জলের আবেশ নিতাম। স্কুলে যাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো ছিলো। কিন্তু ছুটির পর আসার সময়, তেমন তাড়া নেই। দলবেঁধে দাঁড়িয়ে যেতাম লেকের পাড়ে। একটি-দুটি রিকশা ক্রিং ক্রিং শব্দ করে ছুটে চলেছে। ছোট ছোট মাছেরা উদ্দেশ্যহীনভাবে এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করছে। হয়তো এটিই ওদের জলকেলি। কখনো সাঁতার প্রতিযোগিতা দেখতাম।
তখন দুই শিফ্টে ক্লাস হতো। বিদ্যালয়টি ছিলো সোয়া একতলা, আমরা তা-ই বলতাম। নিচে তিনটি শ্রেণিকক্ষ, টিচার্স রুম, ল্যাবরেটরি ও বড় আপার রুম। দ্বিতীয় তলায় পশ্চিম দিকে দুটো ক্লাসরুম ছিলো। বাকিটা রেলিংবিহীন ছাদ। পেছনের মাঠে দুটো টিনের চালার একটি তুলনামূলক ছোট, পাশে পুকুর যেটি ছিলো মজুমদার বাড়ি লাগোয়া। অন্যটি একটু বড় ঘর ছিলো। যেখানে আমাদের প্রায়শ টিফিন তৈরি হতো। সেই টিফিন নিয়ে মজার এক ঘটনা আছে। সেটি স্মৃতি কথা না বলাই শ্রেয়।
বাউন্ডারি ইটের নয়, ছিলো বেড়ার। পেছনের বেড়া গলিয়ে কত মেয়ে যে পাশের ছায়াবাণী আর চিত্রলেখা হলে সিনেমা দেখতে চলে গেছে, তার আর ইয়ত্তা নেই। ধরাও পড়েছে, বিচারের মুখোমুখিও হয়েছে। ফলে চালু হলো টিফিনের পর রোল কল করা। নেড়া তো আর সাধে বেলতলায় যায় না! আমখাওয়া, আইসক্রিম, কানুদার থেকে বেড়ার ফাঁক দিয়ে বেতফল, আচার কিনে খাওয়া, নির্মল সে আনন্দ আজও স্মৃতিতে জ্বলজ্বল। প্রাইমারি সেকশানটা সকালের শিফট্ েহতো, আর হাই স্কুলটা দুপুরের শিফ্ট হতো।
সামনের মাঠে অ্যাসেম্বলি হতো। মাঠের পশ্চিম দিকটাতে একটু ঢালু মাঠ ছিলো। পুরোটাই সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত ছিলো। একটি আমগাছ ছিলো এ মাঠে। এখান থেকেই কাঁচা আম পেড়ে খেতাম আমরা। ছুরি-চাকু দিয়ে কেটে নয়, দরজা আর ফ্রেমের ফাঁকে আম ঢুকিয়ে টুকরো করে লবণ-মরিচ দিয়ে কাঁচা আম খেতাম মারামরি করে। জিভে জল চলে এলো। সাহান আরা, সাহিদা, চন্দনা, রঞ্জনা, বেলি, তাসলিমা, ফিরোজা, ইয়াসমিন-১, ইয়াসমিন-২, অঞ্জনা, চন্দনা, রোকেয়া, রওশন, লিপি, সিলভি, আক্তার, অনুভা আরও কত নাম হারিয়ে গেছে স্মৃতির অতলে।
আমাদের সময়ে মা-বাবারা স্কুলে দৌড়াদৌড়ি করতেন না। আমরা নিজেরাই অর্থাৎ একা একা স্কুলে আসা-যাওয়া করতাম। এমনকি রিকশাও আমাদের জন্যে বরাদ্দ ছিলো না। অবশ্য তখন জনসংখ্যা এবং যানবাহন অনেক কম ছিলো। ফলে আমরা অনেক বেশি নিরাপদ ছিলাম। অনেক বেশি বড় লোকের ছেলে-মেয়েও রিকশায় চলাচল করতো না। আমরা কচি-কাঁচা করতাম, গালর্স্ গাইড করতাম। এখন যেখানে স্টেডিয়াম সেখানে তখন বিস্তৃর্ণ সবুজ মাঠ, সেই মাঠে সব বন্ধুরা মিলে পায়ে হেঁটেই যেতাম এবং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক শিক্ষাসহ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতাম। সেই সোনালি দিনগুলো এখন শুধুই স্মৃতি।
যাই হোক, স্কুলের কথায় ফিরে যাই। এতোদিন আগের কথা খুব বেশি মনে নেই। তারপরও যতোটুকু মনে আছে সেটিও কম নয়! ফুলু দিদিমণি, রওশন আপা, হালিম স্যার, পূর্ণিমা দিদিমণি, প্রভা দিদিমণি, আর আমাদের খেলার টিচার সায়েদা আপা কি স্মার্ট এদের কথা বেশি মনে পড়ে।
ফুলু দিদিমণির কথা দিয়ে শুরু করি। দিদিমণি সেলাই শেখাতেন। নকশি করা রুমাল, কাটা থেকে ডিজাইন করা। টেবিল ক্লথ কাটা থেকে নকশি করা। শেমিজ কাটা থেকে সেলাই করা। রান ফোঁড়, বখিয়া ফোঁড়, চেইন ফোঁড়, লেজি-ডেজি, মাছি ফোঁড়, ক্রসটিচ, কত ফোঁড় আমাদের শিখিয়েছেন। বাসাটা ছিলো সম্ভবত এখন যেখানে মুন্সেফপাড়া সেখানটায়। শনি ও রোববার বন্ধের দিনে কত গিয়েছি দিদিমণির বাসায়। হয়তো তিনি তখন রান্না করছেন বা তরকারি কুটছেন। এতোটুকুও বিরক্ত না হয়ে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন সঠিক সেলাই পদ্ধতি। খুব শুকনো ছিলেন দিদিমণি। একটু বেশি বয়সেই বিয়ে হয়েছিলো। পরে সন্তান প্রসবের সময় মারা গেলেন। শুনেছি দিদিমণির ছোট বোন রিক্তাদি টিচার হিসেবে জয়েন করেছেন। চেহারাটা আজও স্মৃতিতে আছে।
আমাদের সাঈদা আপা। খেলাধুলা আর গার্হস্থ্য বিজ্ঞান পড়াতেন। ব্যবহারিকের রান্না হতো মেয়েদের নিয়ে। হাতে-কলমে রান্না শিখতো সোনার মেয়েরা। মাড় দেয়া সুতি শাড়ি, ইস্ত্রিভাঙা টান টান ইয়া লম্বা আপা। আইটসাইট শরীরের বাঁধন। সাঈদা আপা গলায় ঝুলানো হুইসেল, ঠোঁটে চেপে ফুরুৎ করে হুইসেল দেন। নির্দেশনা দেন উঁচু গলায়। সেই স্মৃতি, সেই দৃশ্য আজও চোখে এঁটে আছে। এতোটা স্মার্ট, নির্ভিক দিদিমণিদের হাতেগড়া এ আমরা। সপ্তাহে আমাদের একদিন খেলার ক্লাস ছিলো, ইনডোর গেম, আউটডোর গেম। ক্লাসে ইনডোর গেম যেমন : লুডু, কেরাম, দাবা ও কড়ি। মাঠে-দড়ি লাফ, বৌচি, কানামাছি, গোল্লাছুট, কুতকুত, দাঁড়িয়াবান্ধা ইত্যাদি খেলা হতো। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময় যারা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করবে, মাসব্যাপি চলতো তাদের প্র্যাকটিস। হাইজাম্প, লংজাম্প, বর্ষা নিক্ষেপ, রিলে-দৌড় ইত্যাদির প্র্যাকটিস হতো অনেকদিন ধরে।
খুব ছোট বেলার বন্ধুদেরদের সাথে একটি খেলাÑ
‘ওপেনটি বায়স্কোপ
রায়টেনে টেলেস্কোপ
চুলটানা বিবিয়ানা
সাহেব বাবুর বৈঠকখানা...কি মিষ্টি মধুর খেলা!আমাদের পূর্ণিমা দিদিমণির গায়ের রং ছিলো কাঁচা হলুদের মতো। ধীরস্থির, চুপচাপ। ধর্মের ক্লাস এবং গ্রন্থাগারের ক্লাস নিতেন। আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বী যারা তারা হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি সংস্কৃত পড়তাম। সপ্তাহে একদিন গ্রন্থাগার ক্লাস হতো, সেদিন আমরা বই এনে ক্লাসে পড়তাম এবং বই ইস্যু করে বাসায় এনে পড়তাম। মুসলমানরা ধর্মের পাশাপাশি আরবি পড়তো। স্যারের নামটি মনে নেই।
মনে রাখতে হবে, স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে, কুদরাত-এ-খোদা শিক্ষা কমিশন দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন। কারণ শিক্ষার মাধ্যমেই সুশিক্ষিত সোনার মানুষ গড়ে তুলবেন। হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণ, গবেষণাভিত্তিক পড়াশোনা ছিলো লক্ষ্য। যা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী সেই হালটি ধরেই এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে।
যখন ডে শিফট্ েপড়ি তখন একটু বড় হয়েছি। স্বপ্নরঙ্গিন মন। আমাদের অনেক টিচারের মধ্যে আমাদের স্বপ্নের আদর্শের টিচার ছিলেন বড় আপা সখিনা খাতুন, লীলা দিদিমণি, ফরিদা আপা, আবু আপা ও সাঈদা আপা।
বাংলার জাদুকরি দিদিমণি ছিলো লীলা দিদিমণি। সেই আমলে ম্যাডাম ডাক ছিলো না। ছিলো দিদিমণি/আপা। হৃদয়ের সাথে নিবিড় বন্ধনে মিশে আছে সেসব দিদিমণি/আপা ও স্যারেরা।
মনে পড়ে সুন্দর সুস্মিতা, প্রিয়ংদা, ¯েœহময়ী লীলা দিদিমণির সুফিয়া কামালের ‘সাঁঝের মায়া’ কবিতা পড়ানোর ভঙ্গিটা। ‘দক্ষিণা দানিয়া গেলো, বিচিত্র রঙের তুলি তার/বুঝি আজি দিনশেষে নিঃশেষে সে করিয়া উজাড়/দানের আনন্দ গেলো শেষ করি মহাসমারোহে/সুমধুর মোহে ধীরে ধীরে ধীরে/প্রদীপ্ত ভাস্কর এসে বেলাশেষে /দিবসের তীরে /ডুবিলো যে শান্ত মহিমায়/তাহারি সে অস্তরাগে বসন্তের/সন্ধ্যাকাশ ছায়--। সূর্যাস্তের যে মায়াবী বন্ধন, সে বন্ধনে তিনি আমাদের সকলের হৃদয় মন্দিরে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন, থাকবেন।
ফরিদা আপা ছিলেন আমাদের নান্দনিক ও আদর্শের টিচার। যেমন লম্বা, তেমনি ফিগার, তেমনি সুন্দর, এর সাথে যোগ হয়েছে তার পড়ানোর নান্দনিক স্টাইল। কী তাঁর উচ্চারণ! কী তাঁর অপূর্ব ভঙ্গি! তিনি যে শুধু পড়াতেন ভালো, তা নয় তিনি ভালো নাচও জানতেন, ভালো কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং সাংগঠনিক দক্ষতাও ছিলো অনেক। আমরা তখন ক্লাস এইটে পড়ি, ফরিদা আপা আমাদের ইংরেজি ১ম পত্র পড়ান। তিনি আমাদের ইংরেজি রিডিং পড়া নিতেন। বই ধরার স্টইলটি সঠিক হতে হতো। অর্থাৎ মধ্যমা ও অনামিকা আঙ্গুল বইয়ের বাইরের দিকে এবং বৃদ্ধাঙ্গুল, কনিষ্ঠা, তর্জমা ভেতরের দিকে থাকবে। পড়া না পারলে তো বটেই বই ধরার ব্যত্যয় ঘটলেও হাতে পাঁচ বেত বরাদ্দ ছিলো, প্রচুর কড়া ছিলেন আবার আদরও করতেন। তাই ইংরেজি ক্লাসের আগে আমাদের পালপিটিশন বেড়ে যেতো, পড়ার ধুম পড়ে যেতো। ইরেজিতে তো আমাদের কাছে এমনিতেই কঠিন! দিদিমণির ওই সুন্দর হাতের বেত কেউ খেতে চাইতাম না। আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্রী ছিলো তাসলিমা আক্তার। ও আমার চেয়েও বেশি গল্পের বই পড়তো এবং ক্লাসে বসেই ইংরেজি ব্যাখ্যা, প্রশ্নোত্তর মুখস্ত করে ফেলতো। মাতৃপীঠ স্কুলে ১০ বছর পর একটি মেয়ে বৃত্তি পায়। সে আমাদের এই সোনার মেয়ে তাসলিমা। আমরা সেদিন স্কুল ছুটি নিয়েছিলাম। তখন বৃত্তি পাওয়া ১ম শ্রেণি পাওয়া মুখের কথা ছিলো না। তখনকার দিনে ৬০ মার্কস পেলে ৩ বার করে খাতা দেখা হতো। কেনো ৬০ পেলো? মনে হতো টিচারদের বাবার বাড়ির সম্পত্তি! সেই তাসলিমা এখন অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা। তাসলিমা আর আমি খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। এখনও এ বন্ধুত্ব অটুট।
যাই হোক, ফিরে আসি আমাদের সকলের প্রিয় সেই ফরিদা আপার কথায়। ক্লাস এইট বা নাইনে যখন পড়ি তখন রবীন্দ্র জন্মোৎসব উপলক্ষে ফরিদা আপার পরিচালনায় ‘অভিসার’ নৃত্যনাট্য অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আমিও অংশগ্রহণ করি। দিদিমণি ছিলেন অবিবাহিত, থাকতেন লেডিপ্রতিমা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের হোস্টেলে। আমি নাচের সুবাদে অনেকবার দিদিমণির রুমে গিয়েছি দিদিমণির সাথে সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়েছে।
গঙ্গা স্যার পড়াতেন রসায়ন পদার্থ, ভবতোশ স্যার পড়াতেন গণিত। শেষদিকে ইংরেজি পড়াতেন নূর খান স্যার।
আজ একটি অপ্রিয় কথা না বললেই নয়। সেই সময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে বেশিদিন হয়নি। অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। তখনও আমরা আমাদের স্কুলের ল্যাবরেটরিতে লিটমাস, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন নাইট্রোজেন আ্যমোনিয়া গ্যাসের প্রস্তুতপ্রণালি ব্যবহারবিধি দেখেছি, শিখেছি, হাতে-কলমে করেছি। কিন্তু আমাদের বাচ্চাদের কাছে খবর নিলে জানবেন, তারা লিটমাস, বিকার, ফানেল ছবিতে দেখেছে, বাস্তবে নয়। অথচ কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয় এ ল্যাবগুলোর জন্যে। বায়োলজির টিচার আমাদের ছিলো না। কোনো লেডি ডাক্তার এসে আমাদের বায়োলজি পড়াতেন।
আমাদের বড় আপার কথা না বললেই নয়, দেখতে ছোটখাটো। কিন্তু স্মার্ট ছিলেন খুব। প্রচুর তেজস্বিনী ছিলেন। আসলে তখন পড়ালেখা করাটা এতো সহজসাধ্য ছিলো না বিশেষ করে মেয়েদের, সুতরাং উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়েরাই উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে চাকুরি করতে আসতেন।
১৯৮০ সালে আমরা এসএসসি পরীক্ষা দিই। সেবারই প্রথম লেডিপ্রতিমা স্কুলে সেন্টার পড়ে। লেডিপ্রতিমার বড় আপা মোমেনা খাতুন। তিনি যেমন লম্বা-চওড়া তেমনি খানদানি। এই সেন্টার নিয়ে দুজনের মধ্যে যথেষ্ট বাক্বিত-া। কে কাকে ছেড়ে কথা কয়? আমাদের বড় আপা তার মেয়েদের সিট লেডিপ্রতিমায় হবে, মানতে নারাজ। শেষ পর্যন্ত ঘোষণা দেন, ‘আমার মেয়েরা আর্মি অফিসারদের সামনে পরীক্ষা দিলেও ১০০% পাস করে আসবে’। আসলেই আমরা সবাই পাস করে আসলাম।
তখনকার শিক্ষকরা আমাদের শাসন করবেন, মারবেন, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো। কারণ বাসায় যেমন আমাদের মা-বাবা আমাদের অভিভাবক। বিদ্যালয়ে শিক্ষক আমাদের অভিভাবক। যে আদরটা পেয়েছি সেটা এখনও অনুভবে আছে।
আমাদের সময়ে পড়ালেখার পাশাপাশি বইপড়া, খেলাধুলা, সেলাই, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন রবীন্দ্র, নজরুল, জসীমউদ্দীন ইত্যাদি জন্মদিবস মৃত্যুদিবস আমরা পালন করতাম। সেখানে কবিতা আবৃত্তি, নাচ, গান সবই অনুষ্ঠিত হতো। আর আমরা স্কুলঘর সাজাতাম ঘুড়ির কাগজের হাতে তৈরি করা শিকল, ঝালর, খেজুর গাছের ডাল, ফুল, কামিনি গাছের পাতা ইত্যাদি দিয়ে। আমরা নিজেরাই করতাম। শিক্ষকরা নির্দেশনা দিতেন।
কিন্তু জীবনের গতিময়তায় সময় গড়িয়ে যায়। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। জানতে ইচ্ছে করে দিদিমণি/স্যারেরা কে কোথায় আছেন? সময় গড়িয়ে যায়। স্মৃতি রয়ে যায়।
সেই রাস্তাটি মনে পড়ে এখনো। যেখানে স্কুলটি আমার ছিলো দাঁড়িয়ে। সেটি জুড়েই ছিলো আমার ছোট্ট পৃথিবী। আর এখন আমি অন্য পৃথিবীর বাসিন্দা।
তৃপ্তি সাহা : লাইব্রেরি উন্নয়ন কর্মকর্তা, মাউশি; সাবেক গ্রন্থাগারিক : চাঁদপুর সরকারি কলেজ।