প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
কবির বকুলের জন্যে অশেষ শুভ কামনা
চাঁদপুর শহরে জন্মগ্রহণকারী কবির বকুলের বয়স এখন পঞ্চান্ন। ১৯৮৬ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি যখন কবিতা ও গান লিখা শুরু করেন এবং নিজেদের ছোট্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘ড্রিম ভিডিও সোসাইটি’তে প্রায় সারা বেলা সময় কাটাতেন, তখন তাঁর মধ্যে খুব চঞ্চলতা লক্ষ্য করা যেতো। এর মধ্যে অসাধারণ সৃষ্টির উন্মাদনা যে নিহিত ছিলো, সেটাকে বন্ধু ও শুভাকাক্সক্ষীদের কেউ কেউ পাগলামো মনে করতো। নিজের লেখা কবিতার বই স্থানীয় ছাপাখানায় ছেপে নিজেই বিলি করতেন। তাঁর বড় বোন মোরশেদা খানম বেবীও ছিলেন একজন কবি, যিনি আশির দশকে চাঁদপুরের সাহিত্য আন্দোলনকে বেগবান করতে রেখেছেন অসামান্য ভূমিকা। বোনের সাহিত্য চর্চার প্রভাব যে তাঁর ওপর কম-বেশি কাজ করেছে, সেটা ধারণা করা যায়। এক সময় বোন সংসার গড়ে সাহিত্য চর্চায় কিছুটা থেমে গেলেও কবির বকুল এক মুহূর্তের জন্যেও থামেন নি। এই যে না থামা অর্থাৎ অবিরাম লেগে থাকা-এটা কবির বকুলকে নিয়ে গেছে শুধু খ্যাতির শিখরে নয়, বলা যায় সর্বোচ্চ শিখরে।
|আরো খবর
কবির বকুল ১৯৮৮ সালে প্রথম ১৩টি গান লিখে কণ্ঠ শিল্পী তপন চৌধুরীকে দেন। সেখান থেকে দুটি গান দুটি অ্যালবামে আসে। প্রথম গানটি গেয়েছেন দেশের প্রখ্যাত কণ্ঠ শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। এভাবে কবির বকুলের শুরুটা হয়ে গেলো ‘ওয়েল বিগান ইজ হাফ ডানে’র মতো। প্রচন্ড ধার্মিক বাবা আলহাজ¦ প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী কবির বকুলের জন্যে প্রকাশ্য প্রতিকূলতা সৃষ্টি না করলেও মা নাজমা আক্তার ও বড় ভাই এনাম খান মুরাদের আনুকূল্য, সর্বোপরি কবির বকুলের অদম্য স্পৃহা তাঁকে সংগীতে প্রতিষ্ঠা লাভের মূলধারার দিকে ধাবিত করে। ১৯৯৩ সালে রাজধানীতে দৈনিক ভোরের কাগজে যোগদান করেন এবং পরের বছর ১৯৯৪ সালে ‘অগ্নি সন্তান’ চলচ্চিত্রে প্রথম গান লিখেন, যে গানের জন্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গীতিকারের মনোনয়ন পেয়ে যান। বস্তুত এ প্রণোদনাতেই তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তাঁর গান লেখা শুরুর ২০ বছর পূর্তিতে ২০০৮ সালে (যখন তাঁর বয়স ৪২ বছর) তিনি সেরা গীতিকার হিসেবে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তার পরের দু বছরও (২০০৯ ও ২০১০ সালে) যখন এই পুরস্কার তাঁর করায়ত্ত হয়, তখন সারাদেশে হৈচৈ পড়ে যায়। গীতিকার হিসেবে খ্যাতির শিখরে আরোহন করেন তিনি। তিন বছর বিরতিতে ২০১৩ সালে ৪র্থ বার, পাঁচ বছর বিরতিতে ২০১৮ সালে ৫ম বার তিনি একই পুরস্কার লাভ করে গীতিকার হিসেবে নিজের খ্যাতিকে সর্বোচ্চ শিখরের দিকে নিয়ে যান। চার বছর বিরতিতে চলতি ২০২২ সালে যষ্ঠবারের মতো এই পুরস্কার প্রাপ্তির তালিকায় তাঁর নাম দেখে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তিনি পৌঁছে গেছেন খ্যাতির শিখর-চূড়ায়। তিনি এখন পর্যন্ত ৮ শতাধিক ছায়াছবির জন্যে গান লিখেছেন এবং সব মিলিয়ে পাঁচ হাজারের বেশি গান লিখেছেন।
কবির বকুল গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছয় বার অর্জন ছাড়াও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার পেয়েছেন তিনবার (১৯৯৮, ২০০৬ ও ২০১৩) এবং টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্রাব) পুরস্কার পেয়েছেন চারবার (২০০৪, ২০০৫, ২০০৬ ও ২০১৭)। তাঁর করায়ত্ত হয়েছে অন্তত আরো সাতটি উল্লেখযোগ্য পুরস্কার। সেগুলো হচ্ছে : বাংলাদেশ প্রযোজক সমিতি পুরস্কার-২০০১, বিনোদন বিচিত্রা পুরস্কার-২০০৯, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড-২০০৪, ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড, নিউইয়র্ক-২০১৫, চ্যানেল এস (যুক্তরাজ্য) অ্যাওয়ার্ড-২০১০, চাঁদপুর সেন্ট্রাল রোটারী ক্লাব আজীবন সম্মাননা-২০১৪ ও সিনে জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (সিজেএফবি) অ্যাওয়ার্ড-২০০৫।
গীতিকার হিসেবে প্রায় পাঁচ হাজার গান রচনা করে এবং একের পর এক সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত হয়ে কবির বকুল সংগীত জগতে যে উজ্জ্বল আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছেন, তাতে তিনি পৌঁছে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। সেজন্যে তাঁকে শুধুমাত্র চাঁদপুর জেলার কৃতী সন্তান বললে ভুল হবে, তিনি বাংলাদেশের বরেণ্য এক মেধাবী সন্তান। তাঁর জন্যে এখন অপেক্ষা করছে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক কিংবা স্বাধীনতা পুরস্কার। আমরা গীতিকার হিসেবে কবির বকুলের ধারাবাহিক সাফল্য এবং সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।