রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৯

শিক্ষকদের রাজনীতি ও নৈতিকতা

মো. হোসেন বেপারী
শিক্ষকদের রাজনীতি ও নৈতিকতা

একজন শিক্ষক রাষ্ট্রের জন্যে যোগ্যতাসম্পন্ন সুনাগরিক গড়ার কারিগর। একজন শিশুর ক্ষেত্রে অভিভাবকের পরই শিক্ষকের স্থান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রক্ত-মাংসের একজন শিশুর মননশীলতার নির্মাতা তিনি। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর এই মেরুদণ্ডের গঠন ও পুনর্গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা অগ্রগণ্য। শিক্ষার্থীদের মননশীলতা গঠনে, তাদের মধ্যে নিহিত সম্ভাবনাকে প্রস্ফুটিত করতে ও জ্ঞানের আলোয় সমাজকে প্রজ্বলিত করতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেন শিক্ষকরা। তাঁরা কেবল শিক্ষাবিদই নন, শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শক ও অনুপ্রেরণাদাতা।

একজন ভাল শিক্ষক মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন, মানুষের কল্পনাকে প্রজ্বলিত করতে পারেন, শেখার প্রতি ভালবাসা জাগিয়ে তুলতে পারেন। তবে শিক্ষকতার পাশাপাশি কিছু কিছু শিক্ষক জড়িয়ে পড়ে রাজনীতিতে। রাজনীতির সীমাহীন দুর্বৃত্তায়নের কারণে রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণের মিশ্র প্রভাব দেখা দিয়েছে। অপরাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পড়েছেন বেশিরভাগ শিক্ষক। তাই শিক্ষকরা এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাঙ্গনে আর রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক অঙ্গন মনোযোগ দেওয়া এখন সময়ের দাবি। শিক্ষকরা সর্বোতভাবে শিক্ষার প্রসারে যুক্ত থাকলে জাতি উপকৃত হবে। আর কলুষিত রাজনীতিতে যুক্ত হলে শিক্ষা এবং রাজনীতি দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতির পটপরিবর্তনের পর শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটছে অনেক। তবে এটির পেছনে শিক্ষকতার মতো মহান পেশার দায় নেই। এটি কলুষিত রাজনীতির প্রতিক্রিয়া। যারাই বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সুবিধা নিয়েছেন, শিক্ষক হওয়ার পরও তারা লাঞ্ছিত হয়েছেন। এটা অধিকাংশের ক্ষেত্রেই তাদের কর্মফল বলা যায়। যদিও এরকম লাঞ্ছনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। কেউ অপরাধ করলে রাষ্ট্রীয় আইনে তার বিচার হতে পারে।

বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে, তখনই ফায়দা নিতে ও প্রভাব বিস্তার করে রাজনীতির পটভূমি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে আরেকটি দল। এ সময়টাকে কাজে লাগিয়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার হিড়িক তৈরি হয়। পতিত রাজনৈতিক দল সমর্থিত শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে মূলত রাজনৈতিক কারণ। ইন্ধন দিয়েছেন একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারাও। যার চিত্র ও বর্ণনা ওঠে আসে একাধিক গণমাধ্যমেও।

শিক্ষকরা সর্বদা শ্রদ্ধেয় এবং সম্মানিত ব্যক্তি। শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারা আমাদের সঠিক পথে চলতে সাহায্য করেন এবং ভবিষ্যতে সফল হতে অনুপ্রাণিত করেন। তারা আমাদের এমন জ্ঞান দেন যা আমাদের জীবনকে সামগ্রিক অগ্রগতিতে সাহায্য করে। তাই প্রশ্ন ওঠে, নেতা-নেত্রীর ইন্ধনে সেই শিক্ষকদের দু’নয়নের অশ্রু ঝরানো শিক্ষার্থীরা কতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছেন? পৃথিবীতে মাতা-পিতার পর যে শিক্ষকের স্থান, তাকেই যদি লাঞ্ছিত করা হয়, তবে তাদের অর্জিত শিক্ষা থেকে কি পাবে দেশ? স্বাধীন বাংলায় শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে বের করে দেয়ার ঘটনায় তাদের মানবিক শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাদের আগামী ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রচ্ছন্নতার ইঙ্গিত দেয়।

পরিশেষে বলতে হয়, পদমর্যাদার লোভে শিক্ষকদের রাজনীতিতে না জড়ানোই উত্তম। কারণ শিক্ষকরা মেধা দিয়ে তৈরি করে আদর্শ মানুষ, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তারা দেশ ও সমাজ রক্ষার কারিগর। তারা সুনাগরিক গড়তে সক্ষম হলে রাষ্ট্র পাবে যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়