বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৭

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সংস্কার জরুরি

ড. এম. মেসবাহউদ্দিন সরকার
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সংস্কার জরুরি

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিযুদ্ধ চলছে। ইতোমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্নও হয়েছে। দেশে বর্তমানে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৩টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শেষে ক্লাসও শুরু করেছে। ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সবসময়ই নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্য আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত কয়েক বছর গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হলেও এবার কিছুটা ব্যতিক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে। ভর্তিতে দীর্ঘসূত্রতা, সাবজেক্ট পরিবর্তনে জটিলতা, বারবার ফি পরিশোধ করা ইত্যাদি নানা কারণে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে বেরিয়ে এসেছে। এগুলো হলো : জগন্নাথ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষা তো যে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ আলাদা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই।

একটি নির্দিষ্ট ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা একদিনে সমাপ্ত করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিগত কয়েক বছর ধরে। রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও এ পদ্ধতি অনুসরণ করছে। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো নিকটবর্তী এলাকায় ভর্তিকেন্দ্র নির্বাচন করার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের ভোগান্তি অনেক কমেছে। উদ্যোগটি খুবই প্রশংসনীয় হয়েছে সর্বমহলে। জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও এ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে। অভিভাবকরাও এমনটি চায়। ভর্তি পরীক্ষার ফি ৮০০, ৯০০, ১০০০ টাকা, কোথাও কোথাও ১৫০০ টাকাও। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ফি এ বছর ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে রাখা হয়েছে, যা যে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্তটিও সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু ক্যাম্পাসভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার ফলে সড়ক-মহাসড়কে গণপরিবহণের বিশাল বহর দেখা যায়। অত্যধিক ট্রাফিক জ্যামের কারণে অনেক শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষার আসনে বসতে পারে না। তবে এ সমস্যার সমাধান করা যায় অতি সহজে, যদি পরীক্ষা চলাকালীন পরিবহণ মালিক সমিতি স্বল্পমূল্যে/বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে এবং এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া ক্যাম্পাসে লাখ লাখ শিক্ষার্থী-অভিভাবকের সমাবেশ, তাদের খাওয়া-দাওয়া, পয়ঃনিষ্কাশন এবং হাঁটা-চলায় ক্যাম্পাসের রাস্তাঘাট, বাগান-বারান্দা ও জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। একাধিক দিনে যাদের পরীক্ষা আছে, এরকম দূরদূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা রাতযাপনে বেশ ভোগান্তিতে পড়ে। এ অবস্থার অবশ্যই নিরসন হওয়া উচিত।

অনলাইনে আবেদনের সময় শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি ফলাফলের সঙ্গে অন্য কিছু তথ্য শিক্ষা বোর্ডে রক্ষিত তথ্যের সঙ্গে ভেরিফাই করাতে হয়। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মোটা অঙ্কের ফি দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের সেই তথ্য কিনতে হয়। অথচ শিক্ষা বোর্ড এ তথ্য প্রস্তুত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় বাজেট আগেই পেয়ে থাকে, যার জোগান আসে এসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রাক্কালে। সুতরাং, একই কাজের জন্য শিক্ষা বোর্ডকে টাকা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এগুলো বিবেচনায় নিলেও আবেদন ফি আরও অনেক কমে আসবে। বর্তমান ডিজিটাল ও তথ্যপ্রযুক্তির সুবাদে ভর্তি পরীক্ষাতেও পরিবর্তন আনা দরকার। উন্নত বিশ্বে শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজের (প্রাথমিক ১২ বছরের শিক্ষা কার্যক্রম) ফলাফল দেখেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। তাদের এ সংক্রান্ত সব তথ্যই থাকে অনলাইনে ডাটাবেজে। আমাদের দেশেও এমনটি করা যেতে পারে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কর্তৃক শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসির প্রাপ্ত নম্বর এবং পছন্দের ক্রম অনুযায়ী মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে দিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) এ দায়িত্ব পালন করতে পারে। নিশ্চয়ই মনে আছে, দেশে করোনাকালে অ্যাসাইনমেন্ট/হোমওয়ার্ক থেকে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়েছিল, এমনকি এসএসসি রেজাল্ট থেকে এইচএসসির ফলাফল তৈরি করা হয়েছিল। ২০২৪’র জুলাই আন্দোলনের পর এইচএসসির চার-পাঁচটি পরীক্ষা থেকে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেই ফলাফল থেকেই এ বছরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

একটি মাত্র ভর্তি পরীক্ষার (এক ঘণ্টা/দুই ঘণ্টা/তিন ঘণ্টা) মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্তে আসা উচিত। প্রতিটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় একটি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমেই ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স, ফার্মেসি, বিবিএ কিংবা অন্য যে কোনো বিষয়ে ছাত্র ভর্তি করে থাকে। তাহলে সেই একই শিক্ষার্থীদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে একাধিক দিনে, একাধিক ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার আবশ্যকতা কতটুকু? বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আদলেও শিক্ষার্থীর চাপ অনেকাংশে কমানো যেতে পারে। আবার সব শিক্ষার্থী যাতে সমহারে সব সুযোগ কাজে লাগাতে পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এসব সিদ্ধান্তের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ’ শিক্ষকদের নিয়ে ইউজিসির তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠন করা যেতে পারে।

চলমান গুচ্ছ পদ্ধতিতে যেসব ত্রুটি রয়েছে, আইটি বিশেষজ্ঞ এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের সহায়তায় সেগুলো সংশোধন করে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি মাত্র গ্রহণযোগ্য ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা যেতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আইইএলটিএস/জিআরই/টোফেল মডেলের আদলে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে। তাহলে বিদেশে শিক্ষার্থীরাও ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইস, ইন্টারনেট এক্সেস এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। মোটকথা, ভর্তিযুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কোনো হয়রানি থাকবে না, খরচ হবে কম অথচ পদ্ধতিটি হবে সবার পছন্দের এবং আন্তর্জাতিক মানের, এমনটাই সর্বমহলের প্রত্যাশা। ড. এম. মেসবাহউদ্দিন সরকার : অধ্যাপক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, আইআইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়