মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

শিক্ষা ও জীবন গঠন

মুহাম্মদ ফজলুর রহমান

শিক্ষা ও জীবন গঠন
অনলাইন ডেস্ক

নতুন প্রজন্ম একটি দেশের ভবিষ্যৎ, জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক এবং মানব প্রজাতির ক্রমধারা রক্ষার হাতিয়ার। যোগ্যতা, বিজ্ঞতা, প্রাজ্ঞতা ও অভিজ্ঞতা এবং হিম্মত ও সাহসিকতার সাথে যুগ-জিজ্ঞাসার জবাবে তাদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এতে কোনোরকম ব্যত্যয় বা বিচ্যুতি সমাজ, সংসার, দেশ সবার জন্য ক্ষতিকর। দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, সমকালীন সমাজ ও পরিপ্রেক্ষিত বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিবর্তনকে সামনে রেখে নতুন প্রজন্মের বেড়ে ওঠা ও গড়ে ওঠার পন্থা- পদ্ধতি আবিষ্কার করার কোনো বিকল্প নেই।

উদীয়মান তারুণ্যকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়া, তাদের মধ্যে আশা জাগানো, ভরসার ক্ষেত্র তৈরি করা, স্বপ্নচারী হওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়া এবং তাদের আগ্রহ ও উদ্যমকে বোঝার চেষ্টা করার প্রচেষ্টাই তাদের সুপথে পরিচালিত করার উত্তম পন্থা হতে পারে। একটি মানব শিশুর সুন্দর চেহারা, চমৎকার গঠন ও মনোদৈহিক ভাবভঙ্গি ভালোবাসা ও প্রীতিময়তায় অন্যকে ধারণ করার চিহ্ন বহন করে। তবে সেগুলো সযত্নে গড়ে তোলার প্রয়োজন হয়। নতুবা তার এ ইতিবাচক দিকগুলো নেতিবাচকই শুধু নয়, ভয়ঙ্কর রূপও ধারণ করতে পারে। এ জন্যই মানব শিশুর শিক্ষার প্রয়োজন হয়।

মানুষের দেহ, মন ও আত্মা- এ তিনটি জিনিস নিয়ে মানুষ গঠিত। এ তিনটি জিনিসের উন্নতি সাধন ও উৎকর্ষতা বাড়ানোই শিক্ষার উদ্দেশ্য। শারীরিক দক্ষতা অর্জন, মনস্তাত্ত্বিক উৎকর্ষ সাধন এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটানোই শিক্ষার লক্ষ্য। দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাধারা, আত্মমর্যাদাবোধ ও মূল্যবোধ হলো মনস্তাত্ত্বিক উপাদান। আর নীতি ও আদর্শ হলো আধ্যাত্মিকতা। শিক্ষার সুফল পেতে, লক্ষ্য অর্জন ও উদ্দেশ্য সাধনে এই তিনটি ক্ষেত্রের সমন্বিত উন্নতি প্রয়োজন। এর জন্য প্রয়োজন সুচিন্তিত, সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত পাঠ্যক্রম। এ ক্ষেতে সামান্যতম বিচ্যুতিও উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করতে পারে।

দেশে কওমি ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় লক্ষ্যভিত্তিক সমন্বিত পাঠ্যক্রম না থাকায় এই শাখার শিক্ষার্থীদের মধ্যে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ থাকলেও শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিকটা সেভাবে গড়ে ওঠে না। ফলে সমাজের মূলধারায় যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে এবং বৃত্তি গঠনের জায়গায় তারা স্বাভাবিকভাবে পিছিয়ে থাকেন। সাধারাণ শিক্ষাব্যবস্থায় উপরিকাঠামোর দিকটি গুরুত্ব পেলেও মনস্তত্ত্ব গঠন ও আদর্শিক উন্নতির ক্ষেত্রে- বর্তমানে আমাদের সমাজ বাস্তবতায় কাঙ্ক্ষিত মানের অভাব রয়েছে। ইতিহাস, সাহিত্য, সামাজিক শিক্ষা প্রভৃতি শিক্ষার্থীর মনস্তত্ত্ব গঠন করে। অথচ এসব বিষয় আমাদের দেশে খুবই অবহেলিত। শুধু পরীক্ষার জন্য এগুলো পড়ানো হয়। কবিতা পড়ানো হয় গদ্যের মতো করে।

গদ্য আর পদ্য এক নয়। কবিতার সুর-ঝঙ্কার, ছন্দ শিক্ষার্থীর মনে বাড়তি আনন্দ দেয়। এ আনন্দ শিক্ষার্থীর মনস্তত্ত্ব গঠনে কাজ করে। কিন্তু যদি কবিতার সুরই না থাকে অথবা সুর বাজানো না হয় তা হলে কবিতা পড়ে লাভ নেই। কবিতার গভীর ভাব শিক্ষার্থীকে মননশীলতার দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু যদি একজন শিক্ষার্থীকে ভাবের গভীর গহিনে অবগাহন করানো না যায় তা হলে কবিতা পড়ানো বৃথা। ভাবের আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে কবিতা হলো যুগ-যুগান্তরের সিঁড়ি।

কবিতা মুখস্থ, কণ্ঠস্থ ও আত্মস্থ করার মাধ্যমে সেই সিঁড়িতে আরোহণ করার মাধ্যমে মনস্তাত্ত্বিক উন্নতির অনেক উপরে ওঠা সম্ভব। শিক্ষাব্যবস্থায় মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শুধু লিখিত পরীক্ষা নয়, মনস্তাত্ত্বিক ও আদর্শিক উন্নতি পরীক্ষারও ব্যবস্থা থাকা উচিত। শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ ও সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে শিক্ষার মান বাড়বে বলে আশা করা যায়। শিক্ষার উদ্দেশ্য আত্মগঠন।

তবে এর সাথে বৃত্তি গঠনও জড়িত। আত্মগঠন বৃত্তি গঠনকে সাহায্য করে। একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তিই সুন্দর ও সম্মানজনক বৃত্তি গঠন করতে সমর্থ হন। একজন শিক্তিত ব্যক্তির বৃত্তিহীন থাকার কথা নয়। যদি থাকেন তা হলে বুঝতে হবে সামগ্রিক চিন্তা ও পরিকল্পনায় গলদ আছে। আমাদের দেশে শিক্ষাবিত্তিক বৃত্তি গঠনের কথা ভাবা হয় না, ভাবা হয় পেশার কথা।

একজন শিক্ষার্থী সাহিত্যে উচ্চশিক্ষা নিয়ে কোনো বহুজাতিক কোম্পানির বিপণন বিভাবে চাকরি নিলে সেটা শুধুই একটি পেশা। আর যদি সেই তিনি শিল্প-সাহিত্যের কোনো একটি শাখায় বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেন, এবং সেই কেন্দ্রিক বৃত্তিতে নিয়োজিত হন তা হলে তা হলো শিক্ষাবিত্তিক বৃত্তি। পরিশেষে বলতে হয়, আমাদের শিক্ষার মান কতটুকু, পড়াশোনা করে সম্ভাবনার জায়গা কতটুকু তৈরি হচ্ছে- এগুলো ভাববার বিষয়। বস্তুবাদী ধ্যান-ধারণা এবং প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা একজন মানুষকে কতটুকু মানবিক করে গড়ে তোলে সেটাও ভাবনার বিষয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়