বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ
  •   চাঁদপুর সদরের শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের মান্দারি লোহাগড় গ্রামে দুটি পুকুরে বিষ দিয়ে ১৫ লাখ টাকার মাছ নিধন
  •   গৃহবধূ আসমার খুনিদের বিচারের দাবিতে ফরিদগঞ্জে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
  •   কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ
  •   হাজীগঞ্জের সন্তান অতিরিক্ত ডিআইজি জোবায়েদুর রহমানের ইন্তেকাল

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৪, ১২:২৭

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ম্যাচে থাকা শিক্ষার্থীরা ইফতার করতে পারছে না

অনলাইন ডেস্ক
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ম্যাচে থাকা শিক্ষার্থীরা ইফতার করতে পারছে না

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম জনসাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। এদিকে মাহে রমজান উপলক্ষে পণ্যের দাম আরও বাড়াতে সবার নাভিশ্বাস উঠেছে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাজারে সরকারি থেকে নির্ধারিত করে দেয়া পণ্যের দাম অসাধু ব্যবসায়ীরা তোয়াক্কা করছে না। ভোক্তা অধিদপ্তর কিছুতেই যেন ঠেকাতে পারছে না দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি।

খাদ্যপণ্যের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ম্যাচে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর। সেহরি আর ইফতারে নানা পদের আয়োজন এখন মেসের শিক্ষার্থীদের জন্য যেন রাজকীয় খাবার। সাদা ভাত আর ডিম ভাজি দিয়ে করছে ইফতার শহরের বিভিন্ন ম্যাচের শিক্ষার্থীরা। ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ায় গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এ অবস্থায় মাস শেষে হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ফলে বাজারের খরচে টান পড়েছে শিক্ষার্থীদের। তাই সাদা ভাত ডিম ভাজি দিয়েই ইফতার সারছেন তারা। চাঁদপুর শহরের বেশ কটি ম্যাচ ঘুরে ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এমনি তথ্য জানা গেছে।

চাঁদপুর সরকারি কলেজ ও আল-আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের আশপাশে গড়ে উঠেছে কটি ম্যাচে । চাঁদপুর সরকারি কলেজের পাশে প্রভাত ম্যাচে থাকেন সরকারি কলেজের বেশ কজন শিক্ষার্থী। গত বুধবার ২০ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টায় প্রভাত ম্যাচে গিয়ে দেখা যায়, রাতের জন্য খিচুড়ি রান্না হয়েছে । সেই খিচুড়ি দিয়েই ইফতারের আয়োজন করছেন সব শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য খাবারের বাটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই বাটিতে কিছুটা খিচুড়ি আর বয়লার মুরগির পা, গলা আবার কারো বাটিতে ছোট এক টুকরো মাংস । আল-আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের পাশেই একটি ম্যাচ রয়েছে যেটির নাম আদর্শ ম্যাচ। সেখানে ইফতারের আগে মুহূর্তে গিয়ে দেখা যায়, সব শিক্ষার্থী ইফতারের জন্য তৈরি হচ্ছে। চিড়া ভিজিয়ে হাল্কা লবণ দিয়ে ইফতার তৈরি করেছেন। শহরের আরও কিছু ম্যাচ ঘুরে প্রায় একই চিত্র দেখা যায়। এবারের রমজানে ম্যাচে থাকা অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইফতারের মেন্যুতে খেজুর, কলা, তরমুজ, পেঁপে, আনারস, বেল, আঙুর, আপেল, কমলা এ ধরনের ফল দেখেননি।

অশ্রুসিক্ত চোখে ম্যাচে থাকা এক শিক্ষার্থী বলেন, রমজানে এখন পর্যন্ত খেজুর বা ফল দিয়ে ইফতার করতে পারেনি। ফলমূলের বাড়তি দামে ইফতার আয়োজনে ফল এখন তাদের জন্য বিলাসিতা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির কারণে কমিয়ে দিয়েছে তাদের ইফতারের প্রয়োজনীয় আইটেম। প্রভাতি ম্যাচে থাকা চাঁদপুর সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আওলাদ বলেন, গত বছরের রমজানে আমরা কিছুদিন ভালো ইফতার করতে পেরেছিলাম। তারপর শিক্ষার্থীদের আর্থিক সংকটে ইফতার আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়। আর এ বছরের প্রথম রোজা থেকেই ম্যাচে ইফতারের আয়োজন নেই। রাতের খাবার দিয়েই ইফতার করতে হচ্ছে। আইটেম বলতে ভাত-তরকারি কখনো খিচুড়ি করা হয়। এটি দিয়েই রাতের সেহরির খাবার এবং ইফতার একসঙ্গে চলে। কষ্টের মধ্যেই এখন ম্যাচে থাকতে হচ্ছে। কারণ এ বছর সর্বনিম্ন খেজুরের দাম ৪০০ টাকা, ছোলা-বুট-মুড়ির দামও বেড়েছে। তাই ম্যাচের সব শিক্ষার্থীর সিদ্ধান্তে এবার ম্যাচে ইফতারের আলাদা আয়োজন নেই।

একই কলেজের শিক্ষার্থী তালেব হাসান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ইফতার খুবই নিম্নমানের। গতবার যে টাকায় ইফতার করতাম সেই টাকায় এবার অর্ধেকও হয় না। কারণ সব কিছুর দাম বেড়েছে। গত বছরে আমরা ১ হাজার টাকায় ২২ জনের ইফতার কিনতাম। সেখানে বেশ কয়েক রকমের ফল থাকতো। আর এ বছরে ১ হাজার টাকা নিয়ে ফলের ধারে কাছেও পৌঁছানো যাচ্ছে না। এছাড়া ইফতার বাদে দুই বেলার খাবারেও প্রভাব পড়েছে।‌ আগের চেয়ে খাবারের মান কমেছে কারণ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, আমরা যারা ম্যাচে থাকি সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আর ম্যাচে থাকা শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ সময় আর্থিক অনটন লেগেই থাকে। আমরা অনেকেই টিউশনি করে মাস চালাই। এর মধ্যেই রমজানে বাজারের যে অবস্থা আমাদের ওপর খুব চাপ পড়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্যও পুষ্টিকর‌ খাবার প্রয়োজন। সারাদিন রোজা শেষে ইফতারের সময় একটু ফলমূল খাব সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। আগে ইফতারে যে পুষ্টিকর খাবারগুলো খেতাম এবার সেইগুলো আর কেনা হচ্ছে না‌। রমজান মাসে আমাদের পক্ষ থেকে একটা দাবি থাকবে, শিক্ষার্থীদের জন্য রমজান মাসজুড়ে সরকারের পক্ষ থেকে অল্প টাকায় ইফতার বিক্রির ব্যবস্থা করা হলে খুব ভালো হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়