প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২২, ১১:২৫
হাজী মোঃ কাউছ মিয়ার আজ ৯৩তম শুভ জন্মদিন
বাংলাদেশের শীর্ষ করদাতার অনন্য রেকর্ড অর্জনকারী প্রবীন ব্যবসায়ি ও সমাজ সেবক হাজী মোঃ কাউছ মিয়ার ৯৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বরে জন্ম নেওয়া হাজী মোঃ কাউছ মিয়া সবার মুখে মুখে দানবীর এবং দেশের শ্রেষ্ঠ করদাতা হিসেবেই পরিচিত। কেননা ১৯৮৮ ও ৯৮ এর ভয়াবহ বন্যাসহ দেশের সকল দুর্যোগে এবং সবশেষ ২০২০ এর করোনাকালীন সময়ে মানুষের মাঝে কোটি কোটি টাকার ত্রাণ সামগ্রী বিলিয়ে দিয়ে তিনি দানবীরের সুনাম ধরে রাখেন। কোনরকমের রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত না থেকে এককভাবে তিনি তাঁর ২৪ বছর বয়স থেকে ব্যবসা ও মানবসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।
|আরো খবর
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের(এনবিআর) ব্যবসায়ী বিভাগে শীর্ষ স্বতন্ত্র করদাতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছেন।রাজস্ব প্রদানে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ধারাবাহিকভাবে ২০বার সিআইপি মর্যাদার রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।দেশের শীর্ষ করদাতার স্বীকৃতি অর্জনের অনন্য রেকর্ড এখন তার।
২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জম্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে সমগ্র বাংলাদেশে একমাত্র তিনিই মুজিব বর্ষের সেরা করদাতা সম্মাননা দেয় সরকার।দীর্ঘ বছর যাবত কর দেয়ায় তাকে এ বিরল সম্মাননায় ভূষিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়। কর প্রদানে সততা আন্তরিকতা ও সব প্রণোদনার কারণে তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
২০১৬ -১৭ কর বছরে তাকে ঢাকা জেলার কর বাহাদুর পরিবার হিসেবে স্বীকৃতির দেওয়া হয়।
পাকিস্তান আমলেও ১৯৬৭ সালে সর্বোচ্চ করদাতার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।১৯৫০ সালে তিনি প্রথম ব্যবসা শুরু করেন এবং ১৯৫৮ সাল থেকে অদ্যবদি কর দিয়ে আসছেন।
তিরানব্বই বছর বয়সেও হাজী মোঃ কাউছ মিয়া ব্যবসার কাজে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন। তিনি হাকিমপুরী জর্দা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা।ব্যবসায়ী জগতে তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।যার কোন ব্যাংক ঋণ নেই।উল্টো ব্যাংকগুলো তার টাকা খাটায়। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়,তিনি ৯২ বছর বয়স পার করে আজ ৯৩ বছরে পা রাখতে যাচ্ছেন দেশের প্রবীন পুরনো ঢাকার এই ব্যবসায়ি।
হাজী মোঃ কাউছ মিয়া ১৯৩১ সালের ২৬ আগস্ট চাঁদপুর সদরের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারের
মরহুম হাজী আব্বাস আলী মিয়া ও মরহুমা হাজী মোসাম্মৎ ফাতেমা খাতুনের ঘরে জন্ম নেন। তাঁর মমতাময়ী মা ছিলেন জমিদার কন্যা। সাত জমিদারের নাতি ছিলেন তিনি। হাজী বাড়ি নামে পরিচিত তাদের বাড়ি।
আরও জানা যায়, কাউছ মিয়া ১৯৪৫ সালে অষ্টম শ্রেণি পাস করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাঢোলে আর পড়াশোনা এগোয়নি। পুরাণবাজার মধু বাবুর স্কুলে পড়েছেন তিনি।তার বাবা চাইতেন না তিনি ব্যবসা করেন।পড়ালেখা চালিয়ে যাবার জন্য বলতেন।কিন্তু কাউছ মিয়ার মন পড়ে থাকত ব্যবসার দিকে।
১৯৫০ সালে চাঁদপুরের পুরাণবাজারে স্টেশনারী ব্যবসা শুরু করেন। মায়ের দেয়া আড়াই হাজার টাকাই ছিল তার ব্যবসা করার প্রথম মুলধন।ওই সময় দেশের প্রসিদ্ধ এই ব্যবসায়ি এলাকায় তৎকালীন সময়ে তার ৬টি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিলো।ওই সময় ১৮টি ব্র্যান্ডের সিগারেট, বিস্কুট ও সাবানের এজেন্ট ছিল তার। ২০ বছর তিনি চাঁদপুরেই ব্যবসা করেন। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন এবং তামাকসহ অন্যান্য ব্যবসা শুরু করেন। প্রায় অর্ধশত আইটেমের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বয়সের কারণে অনেক ব্যবসা ছেড়েও দিয়েছেন।নদীপথে পণ্য পরিবহনের জন্যে মোঃ কাউছ মিয়ার বেশ কিছু কার্গো জাহাজও রয়েছে। সেগুলো এখন তার ছেলেরা পরিচালনা করেন।সূত্র মতে, কাউছ মিয়া তার মরহুম পিতা-মাতার নামে উত্তর তারাবুনিয়া আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয় এবং চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ড রোডে (কবি নজরুল সড়কে) মায়ের নামে ফাতেমা খাতুন মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও চাঁদপুর গুয়াখোলা আবাসিক এলাকায় মদিনা জামে মসজিদ এবং স্ট্র্যান্ড রোডে আল-আমিন স্কুলের পাশে বোগদাদীয়া জামে মসজিদ করে দিয়েছেন। এ দু’টি মসজিদের মোতওয়াল্লির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
তথ্য সূত্র জানা গেছে, কাউছ মিয়া ১৯৮৮ সালে হাকিমপুরী জর্দা তৈরি এবং বাজারজাত শুরু করি। এটি ছিলো তখন কুটির শিল্প। ঐ সময়ে আমার প্রতিষ্ঠানে ৪/৫ জন শ্রমিক কাজ করতো। সরকার ১৯৯৯ সালের জুন মাসে জর্দার উপর ভ্যাট আরোপ করে। তখন বছরে ট্যাক্স প্রদান করতাম প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। বর্তমানে সম্পূরক শুল্কসহ ট্যাক্স প্রদান করছি প্রায় ৯ কোটি টাকা। বর্তমানে জর্দা ব্যবসার পাশাপাশি ঢাকা ও চাঁদপুরে কৃষি ও গরুর খামারসহ তার খরিদকৃত জমি ও বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে।
বয়স যাই হউক মনের দিক থেকে তিনি এখনো প্রানবন্ত।
তিনি মনে করেন, মানুষ যদি শারীরিক ভাবে এবং মনের দিক থেকে সুস্থ থাকে সেটি আল্লাহর নেয়ামত। আল্লাহর নেয়ামত ছাড়া কেউ সুস্থ থাকতে পারে না। এ জন্য রাব্বুল আলামীনের কাছে শুকরিয়া আদায় করেন তিনি। মানবসেবার মধ্য দিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে সবার দোয়া চান।