প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:৪৭
হাজীগঞ্জে চলিত মৌসুমে আলু উৎপাদন ধ্বস
হাজীগঞ্জে চলিত মৌসুমে আলু উৎপাদনে ধ্বস নামবে। প্রখমত মৌসুম শুরুর দিকে বৈরি আবহাওয়া আর আলু চাষে কৃষকদের কোন প্রনোদনা না থাকায় এই সমস্য দেখা দিয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। তবে সব মিলিয়ে চলিত মৌসুমে আবহাওয়া ফের বিদ্রোহ না করলে পিয়াজ,সরিষা, রসুনসহ অন্য সকল রবি শষ্য উৎপাদনে কৃষককে বেগ পেতে হবে না বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,আলু চাষের চলিত মৌসমের শুরুর দিকে অর্থাৎ গত ডিসেম্বর আলু চাষ করার কয়েক দিনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় “জাওয়াদ“ এর প্রভাবে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে আলুর জমিতে পানি জমে যায়। একই সাথে সরিষা, পিয়াঁজ, রসুন ও শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে করে প্রথম দিকে রোপনকৃত আলুর জমি সবটাই নষ্ট হয়ে যায়। ফের কৃষকরা এই ফসলগুলোকে রোপন করতে বাধ্য হয়। মূলত চলিত মৌসুমে ৯০ ভাগ কৃষককে আলুসহ অন্য সকল রবি শষ্য দুই বার রোপন করতে হয়েছে। এতে করে চলিত মৌসুমের ফসল তোলার পর কৃষকদেরকে লাভের অংকে ছেয়ে ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি বলে মত দিয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ২০২১-২২ অর্থবছরে হাজীগঞ্জে ৬০৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়ছে ১৮ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। যা গত বছর ছিল (২০২০-২০২১ অথ-বছর) ৭৮০ হেক্টর। অর্থ্যাৎ এ বছর আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১৭৫ হেক্টর। এই লক্ষ মাত্রার কমার প্রধান কারন হচ্ছে ঘূর্নিঝড় জাওয়াদ।
এছাড়াও চলতি বছর ৪৮০ হেক্টর জমিতে ২৭২ মেট্রিক টন সরিষা, ৩৭ হেক্টর জমিতে ২২২ মেট্রিক টন রসুন ও ৬৫ হেক্টর জমিতে ৫২০ হেক্টর পেঁয়াজ চাষাবাদ হয়েছে।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে সবছে বেশি আলু চাষ হয় কালচোঁ দক্ষিণ, কালচোঁ উত্তর, রাজারগাঁও, দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নে। অন্য সকল ইউনিয়নগুলো আলুসহ মশলা চাষ হয়ে থাকে যা পরিমানে পর্যাপ্ত না।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ আসার আগেই অধিকাংশ কৃষক আলুর জমি তৈরি করাসহ আলুর বীজ রোপন করে ফেলেন। এরই মধ্যে জাওয়াদের কারনে টানা তিন দিনের বৃষ্টির পানি সেই জমিতে আটকে যাওয়ার রোপনকৃত আলুর জমিসহ বীজ আলু নষ্ট হয়ে যায়। মূলত জমি অনাবাদী না রেখে কৃষক দেনা পাওয়া করে ফের সেই সকল জমিতে আলুর চাষ করে।
উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের কালচোঁ গ্রামের কৃষক আবুল খায়ের জানান, তিনি আড়াইকানি (৩’শ শতাংশ) জমিতে আলু চাষ করেছেন। গাছের অবস্থান দেখে বুঝা যাচ্ছে, ফলন ভালো হবে। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায় তার কোন বিশ্বাস নেই।
কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের কৃষক আলী আক্কাস জানান, গত বছরও আলুর ফলনও ভালো হয়েছিল। তাই এবার নিজের ২ কানি (২৪০ শতাংশ) জমি আরো বর্গা নিয়েছি ৩ কানি। মোট ৫ কানি (৬ শতাংশ) জমিতে আলু চাষ করেছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম গত সপ্তাহে যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে ফসলের কোন ক্ষতি হয়নি। নতুন করে কোন দূর্যোগের সম্মুখিন না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করা যায়। তবে চলতি বছরে আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমেছে প্রায় ২’শ হেক্টর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলু, সরিষা, রসুন ও পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের আশা করছি। এ সময় তিনি আরো জানান, চলতি বছর ২৫০ জন সরিষা এবং ২০ জন রসুন ও পেঁয়াজ চাষীকে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন ও শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই সময় প্রায় ২৮০ হেক্টর আলুর বীজ, ৪০৫ হেক্টর সরিষা বীজ, ৬১০ হেক্টর শীতকালীন সবজি ও ১৫ হেক্টর রসুনের বীজ নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়াও ৪০ হেক্টর জমির বপনকৃত পেঁয়াজের অর্ধেকেরও বেশি নষ্ট এবং ৫০৫ হেক্টর জমির বোরধানের বীজতলার প্রায় ১০ শতাংশ নষ্ট হয়েছিল।