প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:৪৪
ফরিদগঞ্জে সড়কে যেনো ট্রাক্টরের মিছিল! চলছে কৃষি জমির মাটি কাটার মহোৎসব
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করছেন কৃষকরা। কেউ অর্থের কারণে, কেউ ইটভাটা দালালদের খপ্পরে পড়ে, কেউ ধানের আবাদে ক্ষতির মুখে পড়ে। খনিজ ও জৈব উপাদান বিশেষ করে হিউমাস (জৈব কণা) সমৃদ্ধ মাটির এই অংশ তুলে ফেলার কারণে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। আর সরকারের আইন ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আইনের শেকল ভেঙ্গে সড়কে যেনো চলছে ট্রাক্টরের মিছিল। পুরো উপজেলাজুড়ে কৃষি জমির মাটি কাটার মহোৎসবে রূপ নিয়েছে।
|আরো খবর
সিআইপি বাঁধ তথা চাঁদপুর সেচ প্রকল্প তৈরির পর গড়ে প্রায় ১০/১৫ ভাগ আবাদি জমি কমে গেছে উল্লেখিত কারণে। যদিও সঠিক পরিসংখ্যানে এই চিত্র আরো ভয়াবহ হতে পারে আশঙ্কা সচেতন মহলের।
কৃষি জমিতে হালচাষের জন্য আমদানিকৃত মাহিন্দ্র ট্রাক্টরে বডি সংযুক্ত করে সড়কে কখনো কৃষি জমির মাটি, কখনো ইট-বালু পরিবহন করছে এই অবৈধ মোটরযান। অদক্ষ চালক দিয়ে পরিচালিত এ ট্রাক্টরের গতির কারণে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ট্রাক্টরের চলাচল দেখে মনে হচ্ছে, সড়কে ট্রাক্টরের মিছিল চলছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, এক শ্রেণির ট্রাক মালিক ও চালক কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে মাটি কিনে নিচ্ছে। প্রতি ট্রাক মাটি তারা বিক্রি করছে ১৪০০ থেকে ২০০০ টাকা।
রূপসা উত্তর ইউনিয়নের গাব্দেরগাঁও, পাড়াগাব্দেরগাঁও গ্রাম, পাইকপাড়া ইউনিয়নের সাহাপুর, ইছাপুরা, দায়চারা, কড়ৈতলী চৌরাস্তা, ভাওয়াল গ্রাম, চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের গুপ্তের বিল, আলোনিয়া গ্রাম, গুপ্টি ইউনিয়নের গল্লাক, খাজুরিয়াা গ্রাম, সুবিদপুর ইউনিয়নের কামতা, সুবিদপুর গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে।
ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকাতে এসব কাজ চলছে, তবে কৌশলে। জমির মালিক ও মাটি কাটার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা বলেন, বসতভিটা ভরাট ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের জন্যে মাটি কাটা হচ্ছে। কোনো কোনো স্থানে মাটি কাটার কাজে এক্সেভেটর (খনন যন্ত্র), যা ভেকু নামে পরিচিত তা ব্যবহার করা হচ্ছে।
গুপ্তের বিল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কৃষি জমিতে দুই থেকে আড়াই ফুট গভীর করে খনন যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে মাটি কাটা হচ্ছে। জমির পাশে দাঁড়ানো ট্রাকে মাটি তুলছেন শ্রমিকেরা। বোরোর আবাদ শুরু না হওয়ায় ট্রাকগুলো জমির মাঝখান দিয়ে চলাচল করছিল। এসব জমিতে দুই থেকে আড়াই ফুট গভীর করে মাটি তোলা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি গ্রামে ঘুরে দেখা যায় প্রায় সব ক’টি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সাহাপুর গ্রামের দুটি স্থানে অনবরত চলছে ফসলি জমি কেটে পুকুর ও ঝিল করার কাজ।
কৃষি জমির মাটি ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পদপদবীধারী নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকা প্রভাবশালী চক্র। ফলে নির্বিকার সাধারণ কৃষকরা।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন সচেতন নাগরিক বলেন, বিভিন্ন সময়ে ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রশাসনের লোকজন আসলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তাদের কি অপরাধীরা মানছে না, নাকি ম্যানেজ হচ্ছে বিষয়টি আমাদের বুঝে আসছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্লোল কিশোর সরকার বলেন, কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার কারণে আগামীতে কৃষি আবাদ হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা নজরদারি করছি, তথ্য পেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে থাকি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সঠিক তথ্য পেলে এসবের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।