প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১৪:৩৫
ফরিদগঞ্জের বাজারগুলোতে বেড়েছে ভিক্ষাবৃত্তি; ব্যবসায়ীদের মাঝে অস্বস্তি
আয় শূন্য হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। কাজ না পেয়ে পথে পথে ভিক্ষা করছেন হতদরিদ্ররা। তারা এখন গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে না গিয়ে বাজারমুখী হচ্ছেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারগুলোতে আগের চেয়ে তুলনামূলক ভিক্ষুক বেড়েছে। বাজারের অলিগলির দোকানগুলোতে হাত বাড়াচ্ছেন ভিক্ষার আশায়।
জানা গেছে, এলাকার বিভিন্ন হতদরিদ্র পরিপূর্ণভাবে খাবার না পেয়ে এবং ওষুধের টাকা রোজগার করতে না পারায় এখন ভিক্ষা করছেন। আগে যেসব নারী বিভিন্ন বাড়িতে গৃহশ্রমিকের কাজ করতেন, তারাও এখন বেশি ইনকামের আশায় ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়েছেন। এছাড়া এদের মধ্যে অনেকেই বেশি ইনকামের আশায় লোভে পড়ে এমনিতেই ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়েছেন।
গত কয়েক মাস উপজেলার বাজার গুলোতে ঘুরে বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে ভিক্ষুকের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেশি। যার মধ্যে বেশি ভিক্ষা বৃত্তি দেখা যায় ফরিদগঞ্জের চান্দ্রা বাজার, পাটোয়ারী বাজার, রুপসা বাজার, ফরিদগঞ্জ বাজার, মুন্সিরহাট বাজার, গৃদকালিন্দিয়া বাজার, কালিরবাজার, গোয়াল ভাওর বাজার, দক্ষিণ রামপুর বাজার, নয়ারহাট বাজার সহ আরো কয়েকটি বাজারে। এদের মধ্যে পোশাক আশাক দেখে কিছুটা আঁচ করা যায়, মধ্য বয়সি নারীর সংখ্যাই বেশি। তারা এর আগে রাস্তায় নামেন নি, তারা পেশাদার ভিক্ষুক ও নন। শ্রমজীবী এসব নারী বিভিন্ন ধরনের কাজের সঙ্গেই সম্পৃক্ত ছিলেন। অনেকটা সামাজিক মর্যাদা নিয়েই তারা জীবন-যাপন করতেন। কিন্তু সময়ের ফেরে এখন তাদের পথে নামতে হয়েছে। তবে বাজারগুলোর অনেক ব্যবসায়ীর ধারণা এরা পেশাদার বিক্ষোভ নন। এরা অনেকে নিজেদের সাজসজ্জার চাহিদা মেটানোর জন্য নিজ এলাকা থেকে দূরের এলাকায় গিয়ে এই ভিক্ষাবৃত্তি করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এই প্রতিনিধিকে জানান, রুপসা বাজারে এমন কিছু ভিক্ষুক ভিক্ষা করে যাদের দৈনিক আয় প্রায় ৮শত থেকে ১হাজার টাকা। এবং এরা মাসে ২/৩ দিন বাদ দিয়ে প্রতিদিনই এ কাজ করে। কিন্তু টাকা কি করে জিজ্ঞেস করলে তাদের নাকি অভাব সারেনা বলে জানান। জৈনক এক চিকিৎসক বলেন তার জানা মতে একজন মহিলা ভিক্ষা করেন, কিন্তু তার ভিক্ষা করার মতো কোনো অবস্থা তিনি দেখেন না। চান্দ্রা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন দৈনিক কমপক্ষে ৫০/৬০ জন ভিক্ষুক আসে। হাট-বাজারের দিন এর সংখ্যা আরো অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু এদের মধ্যে পোশাক-আশাক, কথার ধরন এবং শরীরের গঠন দেখে অনুমান করা যায় এরা অনেকে মধ্যবয়সী ও আরো কম বয়সের। এবং এদের দেখে বোঝা যায় এরা পেশাদার ভিক্ষুক না। এদের মধ্যে অনেকে লোভে পড়ে ভিক্ষা করে। কারণ চান্দ্রা বাজারের মতো বাজারে ভিক্ষার উদ্দেশ্যে একটি চক্কর দিলেই দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ইনকাম কোন ব্যাপার না। এদের পরিচয় বা বাড়ি কোথায় জানতে চাইলেও বলে না।
ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন বাজারের অনেক ব্যবসায়ী অত্যান্ত অসস্থিতে বলেন ভিক্ষুকদেরকে দৈনিক এক থেকে দেড়শ টাকা দিতে হয়। এবং এখন ভিক্ষুকদের মধ্যে অনেকে দুই টাকা-তিন টাকা দিলে নিতে চায় না।
ছদ্ম নাম মতিন হোসেন, তার নাকি বাতের সমস্যা, তাই তিনি ভিক্ষা করছেন। কিন্তু তাকে গত ক বছর প্রতিনিয়ত দেখা যায় অনায়াসে সুস্থভাবে বিভিন্ন রাস্তায় হাঁটাচলা করতেছেন, এবং তিনি বিভিন্ন দোকানে এবং বাজারে আসা কাস্টমারদের কাছ থেকে ভিক্ষা করছেন। তার পিছু পিছু ঘুরে অনুমান করা গেছে তিনি এক ঘণ্টায় প্রায় ১০০ টাকার মতো উত্তোলন করেছেন। এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলে তাদের সঠিক ঠিকানা এবং কথার মিল পাওয়া যায়নি।
ফরিদগঞ্জে একজন ভিক্ষুকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তার বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায়। এতদূর এসে কেন ভিক্ষা করছেন, তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ফরিদগঞ্জেরও অনেক লোক তাদের এলাকায় গিয়ে ভিক্ষা করে।
অন্যদিকে মহিলা ভিক্ষুকদের সাথে কথা বলে তাদের স্বামীর নাম, গ্রামের নাম জানতে চাইলে তারা কোনরকম পরিচয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এবং এতকিছু জানার কি দরকার বলে চলে যান। চান্দ্রায় একজন ভিক্ষুকের সাথে কথা হলে তিনি তার বাড়ি পাইকপাড়ার চৌরঙ্গী এলাকার একটি বাড়ির নাম বলে, কিন্তু নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় সেই বাড়িতে কোন ব্যক্তি ভিক্ষাবৃত্তির সাথে জড়িত নয়।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের সাথে ফরিদগঞ্জের ভিক্ষাবৃত্তি বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ফরিদগঞ্জে নতুন এসেছি, এবং বিভিন্ন ভাবে জানতে পেরেছি এখানে ভিক্ষুকের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। এবং এদের মধ্যে অনেকেই আছে সত্যিকার অর্থেই ভিক্ষুক। এবং অনেক ভিক্ষুক আছে এরা পেশাদার ভিক্ষুক না, এরা লোভে পড়ে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়েছেন। তবে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় কত সংখ্যক বিক্ষোভ আছে তার সঠিক হিসাব দিতে তিনি একমাস সময় নিয়েছেন।