প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:৪৫
২৮ বছর ধরে চরম সংকটে লক্ষ্মীপুরের বিসিক শিল্পনগরীর সম্ভাবনা

গত ২৮ বছর ধরে গ্যাস-পানি সংকট, ভেতরের অংশে সড়ক খানাখন্দে ভরপুর, অপরিকল্পিত ড্রেনেজে ব্যবস্থা, লোডশেডিংসহ নানা সংকটে লক্ষ্মীপুরের একমাত্র ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। এসব সমস্যার কারণে গড়ে উঠছে না শিল্প-কারখানা। প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সংকটে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। প্লট বরাদ্দ নিলেও অর্ধেক প্রতিষ্ঠানই উৎপাদনে যেতে পারেনি।
|আরো খবর
অথচ মেঘনাপাড়ের এ জনপদে সস্তা শ্রম, দেশের ২১টি জেলার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যাপক কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়। বিসিকে পরিকল্পিত উন্নয়ন হলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বদলে যাবে এ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান, এমনটাই আশা স্থানীয়দের। এসব নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কার্যকর সুফল হচ্ছে না, জানান ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর শহরে বাঞ্ছানগর এলাকায় ১৬ একর জমিতে ১৯৯৭ সালে শিল্পায়নের মাধ্যমে বেকার সমস্যা সমাধান ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়। ২০০০ সাল থেকে প্লট বরাদ্দ হয়। এরমধ্যে তিন স্তরে ৫৪টি শিল্প ইউনিটের জন্যে ৯৯টি প্লট বরাদ্দ হয়। বর্তমানে ৩০টি ইউনিট চালু রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে বিসিকের দিকে একটু এগুলেই দেখা যায় বেশ কয়েকটি বড়ো গর্তে পানি জমে আছে। ভেতরে রাস্তা, ড্রেনেজ সমস্যা প্রকট। সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত; মালামাল পরিবহনে ট্রাক-পিকআপ ভ্যানসহ যানবাহন চলছে হেলেদুলে। ধুলাবালিতে একাকার। ড্রেনে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে মশা-মাছির দাপট চলছে। বর্ষা এবং সামান্য বৃষ্টি হলে ভেতরে হাঁটু পানি জমে থাকে। ভেতরে ২০-২৫টি প্লট খালি রয়েছে। সেখানে আশপাশের লোকজন গরু-ছাগল চরায়। এছাড়া সীমানা প্রাচীর না থাকায় চুরি-ছিনতাইসহ অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য অয়েল মিল, বেকারি, চকলেট তৈরি, সয়াবিন প্রক্রিয়াকরণ, অটোরাইস মিল ও মবিল রিপ্যাকিং মিল রয়েছে।
পশ্চিম লক্ষ্মীপুর এলাকার নারী শ্রমিক ফাতেমা বেগম জানান, বিসিকে তিনি প্রতিদিন হেঁটে আসেন। মাঝেমধ্যে রিকশা নিলেও ভেতরে আসতে চান না রিকশাচালক। বৃষ্টি হলে হাঁটু পানি মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই তরুণ উদ্যোক্তা জানান, এখানে পরিবেশ অনুকূলে রয়েছে। তবে সহজে আশানুরূপ ব্যাংকঋণ পাওয়া যায় না। অনেক সময় শ্রমিকের বেতন দিতেও হিমশিম খেতে হয়। এ অবস্থায় লোকসানের কারণে ফ্যাক্টরি বন্ধ রেখেছেন।
চাঁদপুরের ট্রাকচালক হুমায়ুন কবির বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে বহু ট্রাকসহ পরিবহন দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। বিসিকের ভেতরের রাস্তাগুলো খুবই নাজুক। এতে প্রায়ই যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। চালকরাও এখানে আসতে চায় না।
কোয়ালিটি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক এম এ রহিম সাংবাদিকদের বলেন, বিসিকে বিক্ষিপ্তভাবে নয়, সমন্বিত উন্নয়ন প্রয়োজন। কয়েক বছর ধরে রাস্তার কারণে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্যে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। দুর্বল ড্রেনেজের কারণে পানি জমে মেশিন ও কাঁচামাল নষ্ট হয়। সহজ শর্তে ব্যাংকঋণ না পাওয়ায় উদ্যোক্তারা সময়মতো কল-ফ্যাক্টরি চালু করতে পারছে না বলে জানান তিনি।
সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে বড়ো সমস্যা হিসেবে লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক মো. ফজলুল করিম এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের জনবলেও ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে সড়ক ও ড্রেনের কাজ এবং অন্য সমস্যাগুলো সমাধানের কাজ হবে। অর্থনৈতিক সংকট, মালিকানা মামলাসহ বিভিন্ন কারণে কিছু প্লট খালি রয়েছে, তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।।







