প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:২৮
অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা স্ত্রীকে ‘তুই মরে যা' বলা সেই স্বামী আটক

যৌতুকের জন্যে নির্যাতনের মুখে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী গৃহবধূ মিতুর স্বামী রাকিব হোসেনকে আটক করেছে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ। যৌতুকের জন্যে নির্যাতন ও গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে হত্যা প্ররোচনার অভিযোগে নিহত মিতুর বাবা দুলাল গাজী বাদী হয়ে মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে রাকিবকে আটক করা হয়। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের।
জানা গেছে, তিন বছর আগে পারিবারিকভাবে রাকিবের সঙ্গে মিতুর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্যে মিতুর ওপর নির্যাতন চলছিলো। এক পর্যায়ে রাকিবকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেওয়া হয়, যা পরে সে বিক্রি করে দেয়। এরপরও সে বাবার বাড়ি থেকে আরও টাকা আনার জন্যে চাপ দিতে থাকে মিতুর ওপর। সম্প্রতি রাকিব শ্বশুরের কাছে দু লাখ টাকা বা একটি অটোরিকশা দাবি করে। তা না দেওয়ায় গত ১৬ অক্টোবর মিতুকে বেদম মারধর করে এবং বলে, ‘তুই মরে যা, এই নে কেরোসিন, তুই নিজেই আগুন দিয়ে মর।’ এরপর মিতু নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় শাশুড়ি হাসিনা বেগম সবকিছু দেখলেও বাধা দেননি।
অগ্নিদগ্ধ মিতু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর ২০২৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মিতু মৃত্যুর আগে তার পরিবারের কাছে জানান, স্বামী রাকিব তাকে মারধর করে ঘরে আটকে রাখে। এরপর দোকান থেকে কেরোসিন এনে দিয়ে বলে, ‘তুই ফাঁসি না দিয়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে মর।’ এরপর রাকিব নিজেই তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
নিহত গৃহবধূ মিতু দুই সন্তানের জননী। তার দু বছর বয়সী এক কন্যা ও মাত্র দু মাসের এক পুত্রসন্তান রয়েছে। এই ঘটনায় মিতুর বাবা দুলাল গাজী ফরিদগঞ্জ থানায় স্বামী রাকিব, শ্বশুর আহসান মাঝি ও শাশুড়ি হাসিনা বেগমকে আসামি করে হত্যা প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে মিতুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বামী রাকিব ও তার বাবা-মা গা-ঢাকা দেন। মামলার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে স্বামী রাকিব (২৫) কে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে উত্তর হাঁসা গ্রামের আহসান মাঝির ছেলে।
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম জানান, গৃহবধূ মিতুর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা প্ররোচনার মামলায় স্বামী রাকিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।