প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ২০:০৮
নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের কুফল!
মতলব উত্তরে ধনাগোদা নদীর তীব্র ভাঙ্গনে ৫ কিলোমিটার এলাকা হুমকির মুখে

মেঘনা-ধনাগোদা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন যেনো থামছেই না। যত্রতত্র এই বালু উত্তোলনের কারণে ধনাগোদা নদীর তীরবর্তী মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল, কালীপুর থেকে কালিরবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত নদী তীরে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তীব্র ভাঙ্গনে ৫ কিলোমিটার এলাকার মানুষ হুমকির মুখে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে ধনাগোদা নদীর প্রবেশ মুখের চরকালিপুরা ও ষোলআনী এলাকা মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন বালু উত্তোলনের জন্যে ইজারা দিচ্ছে। বালু উত্তোলনের ইজারা মুন্সিগঞ্জ জেলায় দিলেও বালু উত্তোলনের জন্যে তারা চলে আসে মতলবের নদী তীরবর্তী এলাকায়। ইজারাদার ইজারা নিয়েছেন মুন্সিগঞ্জ জেলায়, অথচ বেশিরভাগ সময় বালু উত্তোলন করেন চাঁদপুর জেলায়। ধনাগোদা নদী অঞ্চলে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৪ মাসে ৪টি অভিযানে ১৭টি ড্রেজার, ১১টি বাল্কহেড, ২টি স্পীডবোট, ২টি ইঞ্জিন চালিত নৌকাসহ ৪০ জনকে আটক করা হয়। যা প্রমাণ করে এই নদীতে ব্যাপক হারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অবৈধভাবে বালু কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সংগঠন ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
বালু উত্তোলন মতলব উত্তরের সীমানা ঘেঁষা হওয়ায় ষাটনল, কালীপুর, বেলতলীসহ বেশ কিছু অঞ্চল নদী ভাঙ্গনে আরো বেশি হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে জানান ষাটনল ও কালীপুর অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
সরজমিনে দেখা যায়, অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর মিলনস্থলের ষাটনল থেকে কালিরবাজার পর্যন্ত ক'টি স্থানে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। ৫ কিলোমিটার এলাকা হুমকির মুখে। ভাঙ্গনের ফলে হুমকির মুখে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজার, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, বসতবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা। পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মঞ্জুর আমীন স্বপন জানান, এ এলাকায় নদীর আচমকা ভাঙ্গনের ফলে বাজারের ব্যবসায়ী, স্থানীয় বসতি, কালীপুর স্কুল এন্ড কলেজ, কালীপুর সপ্রাবি, কালীপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ফয়েজ আহম্মেদ মেমোরিয়াল হাসপাতালসহ এই অঞ্চলের মানুষরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বালু মহালের নামে ইজারা দেয়া (যা মতলব উত্তরের জন্যে খুবই হুমকির ও আতংকের এবং মেঘনা ধনাগোদা বেড়িবাঁধটিও ঝুঁকিতে রয়েছে) তা বন্ধ করা জরুরি ।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ধনাগোদা নদীতে অবৈধভাবে বালু কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের (পাউবোর) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম শাহেদ বলেন, ধনাগোদা নদীর কালীপুর, খাগুরিয়া, হাপানিয়া, নবীপুরসহ কয়েকটি অঞ্চলে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে নদীর তীর ও সেচ প্রকল্প বাঁধ রক্ষায় ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানাবো।