শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২০:৩৪

২৪ বছরের বঞ্চনার অবসান

অবশেষে শিক্ষক কাউছার ভূঁইয়া ফিরলেন নিজের আঙ্গিনায়

অবশেষে শিক্ষক কাউছার ভূঁইয়া ফিরলেন নিজের আঙ্গিনায়
প্রবীর চক্রবর্তী

গ্রামের নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে গ্রামের আরো কয়েকজনের সাথে কাউছার আহমেদ ভূঁইয়াও এগিয়ে আসলেন। নিজের বাড়ি থেকে কাঠ, বাঁশ সংগ্রহ করে দিনরাত কষ্ট করে গড়ে তোলেন পশ্চিম লড়ুয়া কেরামতিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসাটি। সেই মাদ্রাসাতেই শুরু করেন শিক্ষকতা। কিন্তু মাদ্রাসাকে ঘিরে কিছু কুচক্রী মহলের কারণে হঠাৎ করেই তাঁর শিক্ষকতা জীবনে নেমে আসে কালো মেঘ। ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে তিনি চাকরি হারিয়ে ফেলেন। শুরু হয় তাঁর চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য দোড়ঝাঁপ। স্থানীয় থেকে শুরু করে প্রশাসন, আদালত এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে দৌড়াতে দৌড়াতে মাঝে চলে গেছে ২৪টি বছর। বলতে গেলে তাঁর পরিণত জীবনের অর্ধেক সময় চলে যায় পথে পথে। চাকরি ফিরে পাওয়ার অনিশ্চয়তার এই দীর্ঘ পথে একসময় তিনি হতাশ হলেও হাল ছেড়ে দেন নি। আল্লাহর ওপর ভরসা করে পথচলা অব্যাহত রেখেছেন।

অবশেষে তিনি তাঁর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। প্রতীক্ষা ও বঞ্চনার অবসান হলো সোমবার (৭ এপ্রিল ২০২৫)। দীর্ঘ আইনী লড়াই শেষে আদালত ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক তিনি শিক্ষক হজিরা খাতায় স্বাক্ষর ও শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেন। এমন আলোচিত ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের। কাউছার আহমেদ ভূঁইয়া সোমবার যখন মাদ্রাসায় যান, তখন মাদ্রাসার সুপার (ভারপ্রাপ্ত) ফয়েজ বক্স তাঁকে ফুল ও দোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বরণ করে নেন।

কাউছার আহমেদ ভূঁইয়া জানান, ১৯৯৩ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তিনি এখানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তৎকালীন মাদ্রাসা সুপারের অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের জের ধরে ২০০১ সালে তৎকালীন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে মামলায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রতিবাদী হওয়ায় মাদ্রাসার সুপার ২০০২ সাল থেকে তার বেতন ভাতাদি বন্ধ করে দেন। এক পর্যায়ে তাকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেন। বাধ্য হয়ে তিনি ১/১১ সময়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন এবং প্রতিকার না পেয়ে তিনি চাঁদপুর দেওয়ানি আদালতে (১১/২০১০) মামলা দায়ের করেন। আদালত তাঁকে বেতন-ভাতাদিসহ স্বপদে বহাল করার নিদের্শনা দেন। যা সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত বহাল থাকে। একইভাবে মাউশিও চিঠি দিয়ে কাউছার আহমেদকে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের নির্দেশনা দেন।

অবশেষে চলতি বছরের ১৩ মার্চ মাদ্রাসার সভাপতি ইউএনও সুলতানা রাজিয়া মাদ্রাসার সভা করে কাউছার ভূঁইয়াকে মাদ্রাসায় যোগদান নিশ্চিত করেন। এরই প্রেক্ষিতে সোমবার (৭ এপ্রিল ২০২৫) সকালে তিনি মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন এবং শ্রেণি পাঠদানে যোগ দেন।

ক্লাসে ফিরতে পেরে তিনি নিজেকে সবচেয়ে সুখি মানুষ হিসেবে অভিহিত করে কাউছার আহমেদ বলেন, যতদিন বেঁচে থাকবো শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে বিলিয়ে দেবো।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য শাহীন মাহমুদ, আলী শাহ, সাবেক সহ-সভাপতি আ. গনি মাস্টার, মাদ্রাসার শিক্ষক প্রতিনিধি জয়নাল আবেদিন, মৌলভী মোক্তার আহমেদ, মুনছুর আহমেদ, সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান, এলাকাবাসীর মধ্যে আলমগীর ভূঁইয়া, আবু তাহের ভূঁইয়া, উজ্জ্বল ভূঁইয়া প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়