প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৫, ২০:৩৫
মামলা প্রত্যাহার না করায় সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ

হাজীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল মান্নান খান বাচ্চুর বিরুদ্ধে আদালতে চলমান মামলা প্রত্যাহার না করায় বাদীকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ এনে মান্নান খান বাচ্চুর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন হাজীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আজাদ রহমান মাসুদ মজুমদার। শনিবার (১ মার্চ ২০২৫) সন্ধ্যায় হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মাসুদ মজুমদার সাবেক এই মেয়রের বিরুদ্ধে তাকে প্রাণনাশের চেষ্টা, দোকান ভাংচুরসহ মালামাল ও নগদ টাকা লুটপাটের অভিযোগ করেন। মাসুদ মজুমদার হাজীগঞ্জ বাজারস্থ মাম ফুডস্-এর স্বত্বাধিকারী।
প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে জানান, শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) রাতে মাম ফুডস্ থেকে সাবেক মেয়র মান্নান খান বাচ্চুর ভাই বাদল খানসহ অজ্ঞাতনামা লোকজন এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর সাবেক মেয়র বাচ্চুর মালিকানাধীন সান্ত্বনা মার্কেটে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে মেয়র বাচ্চু ও তার ভাইসহ অজ্ঞাত লোকেরা মারধর করেন।
এ সময় মাসুদ মজুমদারের দোকান মাম ফুডস্ ভাংচুর, মালামাল ও নগদ টাকা লুটপাট করে প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি করে। খবর পেয়ে পুলিশ ওইদিন রাতে সান্ত্বনা মার্কেট থেকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওইদিন রাতেই তিনি সাবেক মেয়র আব্দুল মান্নান খান বাচ্চু ও তার ভাই বাদল খানসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে বিবাদী করে হাজীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মাসুদ মজুমদার বলেন, আমি সাবেক মেয়র আব্দুল মান্নান খান বাচ্চুর ভাড়াটিয়া ছিলাম। তিনি ২০২২ সালে কোনো নোটিস ছাড়াই আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে ১৫ লাখ টাকার মালামাল ধ্বংস করে। তখনও আমি তার নিয়মিত ভাড়াটিয়া এবং তার কাছে আমার অগ্রিম ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা জামানত ছিলো।
আমার মালামাল ধ্বংস এবং ব্যবসায়িকভাবে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কারণে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই দেন-দরবার করেন। কিন্তু তিনি আমার জামানত ও ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করায় ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর আমি তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করি। ওই মামলায় তিনি দীর্ঘদিন হাজিরা না দিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আদালত তার বিরুদ্ধে সমন জারি করলে তিনি গত ২/৩ মাস ধরে মামলাটি মুভ করছেন।
এরই মধ্যে মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্যে মান্নান খান বাচ্চু আমাকে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে গত শুক্রবার রাতে তার ভাই বাদল খানসহ অজ্ঞাতনামা লোকজনকে নিয়ে আমার দোকানে আসেন। তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আমার দোকান ভাংচুর, মালামাল ও নগদ টাকা লুটপাট এবং আমাকে মারধর করেন। পরে তারা আমাকে জোরপূর্বক সান্ত্বনা মার্কেটে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, সান্ত্বনা মার্কেটে নিয়ে মান্নান খান বাচ্চু ও তার ভাই বাদল খানসহ অজ্ঞাতনামা লোকজন হত্যার উদ্দেশ্যে আমাকে মারধর করেন। জানি না কীভাবে খবর পেয়ে পুলিশ আমাকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে আলীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এ সময় আমি প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে থানায় এসে একটি অভিযোগ দায়ের করি। তবে ওই অভিযোগে অনেক কিছু লিখতে পারিনি। যার কারণ বলতে পারবো না।
মাসুদ মজুমদার বলেন, বিস্তারিত আমি আদালতে বলবো এবং সাবেক মেয়র আব্দুল মান্নান খান ও তার ভাই বাদল খানসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আদালতেই অভিযোগ দায়ের করবো। এখন আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আরিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পাপ্পু মাহমুদ, অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্, কার্যকরী সদস্য মহিউদ্দিন আল আজাদ, মেহেদী হাসান সর্দার, এনায়েত মজুমদার, সাইফুল ইসলাম সিফাত, সদস্য শাখাওয়াত হোসেন শামীম, সাংবাদিক কল্যাণ সমিতির অর্থ সম্পাদক জাহিদ হাসান, সদস্য জহির আহমেদ, নূর মোহাম্মদ, রিমেল ও রিয়াজ শাওনসহ অন্যান্য সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন।